| 29 মার্চ 2024
Categories
ক্রিকেট খেলাধুলা সাক্ষাৎকার

১৯৮৮-র পর থেকে মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে চাপা হয়নি: শচীন টেন্ডুলকার

আনুমানিক পঠনকাল: 8 মিনিট

ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার এবং মানুষ শচীন টেন্ডুলকার। কোনটাকে আমরা ভালো করে চিনি? বেশির ভাগই বলবেন, ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার। ঠিকই তো। কয়েক বছর আগে তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। এর মধ্যে মানুষ টেন্ডুলকারকে আর কতটাই বা চেনা যায়; কিন্তু এখানেই রয়েছে আসল গুগলি। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে একদিকে যেমন ক্রিকেটকে ভুলে যাননি, তেমনই নিজের জীবনের যেসব অপূর্ণ ইচ্ছা, ক্রিকেটার থাকাকালীন যেগুলো সম্ভব হয়নি, সেগুলো এবারই তিনি সম্পূর্ণ করতে চান।

৪৭ বছরের একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ। নিজের পরিবারকেই এবার বেশি সময় দিতে চান তিনি। ক’জন শুনেছেন শচীন ভালো রাধুঁনে? বা ক’জন জানেন, শচীন শেষবার ট্রেনে ভ্রমণ করেন প্রায় ৬ বছর আগে। এ কথাও কেউ জানেন কী, যে শচীন শেষবার মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে উঠেছেন ১৯৮৮ সালে! এরকমই নিজের জীবনের অনেক কথা, যা সচরাচর কোনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন না, তাই উঠে এল।

প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩, প্রায় তিন বছর হয়ে গেল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আপনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন। সেই কাগজটা কি এখনও রেখে দিয়েছেন?

শচীন: হ্যাঁ, রেখে দিয়েছি। যাদের ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম, তাদের নামটাই শুধু ওতে লিখে রাখা ছিল। যাতে কাউকে মিস না করে যাই।

প্রশ্ন : সেই বক্তব্যে আপনি জানিয়েছিলেন যে, বাবা আপনাকে বলেছিলেন, সাফল্যের কোনো শটকার্ট হয় না…

শচীন: হ্যাঁ, বাবাই আমাকে প্রথম একথা শিখিয়েছিল যে সাফল্যের কোনো শটকার্ট হয় না। আমি এটা আমার ছেলেদের বলেছি। ঠিক যেভাবে আমার পরিবার আমাকে কোনোরকম চাপ দেয়নি, আমিও সেভাবে আমার ছেলেমেয়েদের ওপর কোনো চাপ দিই না। কারণ, যে কোনো ব্যক্তির সাফল্যের জন্য পরিবারের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেমেয়েদের সাফল্য বিচার করার থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমার কাছে বড়। তাই আমার ছেলেমেয়েরা ভালোবেসে যেটা করবে, তাতেই আমি খুশি। কেননা, ওরা জানে আমি কোনো দিন ওদের চাপ দেব না।

প্রশ্ন : আপনি বাড়িতে অনেক সময় কাটিয়েছেন, আপনার মা নিশ্চয়ই ভীষণ খুশি হতেন?

শচীন: খুবই খুশি হতেন। এখন আরও বেশি সময় কাটাই বলে আরও খুশি হন। যদিও আগের চেয়ে আমার ঘোরাঘুরি অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সেগুলো সবই ছোট ট্রিপ। তাই আমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসে আমার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই।


প্রশ্ন : আপনাকে বেশি সময় পায় না বলে আপনার ছেলেমেয়েরা এখনও অভিযোগ করে? কীভাবে ওদের টিনএজ সমস্যাগুলোকে সামলান?শচীন: সত্যি কথা বলতে, আমার সন্তানরা কোনো দিনই আমাকে পায়নি বলে অভিযোগ করেনি। ওরা জানত আমার কেরিয়ারের ব্যাপারটা। আমি কী চাই, সেটা বুঝত। এখন সত্যি অবাক লাগে যে, যখন আমি সময় দিতে পারছি, তখন ওরা যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু যখনই আমরা সুযোগ পাই, তখনই একসঙ্গে সময় কাটাই এবং সেই মুহূর্তগুলো খুবই সুন্দর। ওদের জীবনে কী চলছে না চলছে, সেটা জেনেও বেশ ভালো লাগে।প্রশ্ন : সারা এবং অর্জুন এখন টিনএজার। শচীন টেন্ডুলকারের ছেলেমেয়ে হওয়ার চাপটা ওরা কীভাবে সামলায়?শচীন: সারা এবং অর্জুন এভাবেই জন্মেছে। ফলে ওদের কাছে শচীন টেন্ডুলকারের ছেলেমেয়ে হয়ে বেঁচে থাকাটা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারুর সঙ্গে ওদের তুলনা করতে হয়নি, ফলে সেভাবে কোনো চাপও ছিল না কোনো দিন। এই নিয়ে বেশ কয়েকটা মজার ঘটনাও রয়েছে। অর্জুনের তখন ৬-৭ বছর বয়স। আমি তখন তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাচ্ছিলাম বলে সমালোচনা করায়, ওর এক সহপাঠীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। আবার নার্সারিতে পড়ার সময় সারাকে যখন হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছিল খবরের প্রতিবেদন সংগ্রহ করার, তখন ও আমাকে নিয়ে লেখা খবরের কাটিংগুলোই জমিয়ে রাখত।

প্রশ্ন : অর্জুনের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা নিয়ে আপনি কিছু বলবেন? বাঁ-হাতি সিমার নাকি ব্যাটসম্যান, কোন ভূমিকায় ওকে দেখতে আপনি পছন্দ করবেন?

tendulkar

শচীন: আমার মনে হয় ও কী হতে চায় সেটা নিয়ে আমাদের কারোর আলোচনা করা উচিত নয়। অর্জুনের যা বয়স, সেই বয়সের ক্রিকেটারদের কোনও চাপ দেওয়া উচিত নয়। যখন থেকে ও ক্রিকেট খেলাটাকে বেছে নিয়েছে, তখন থেকে আমি জানতাম, সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি ওর পাশে আছি এবং সবরকম জ্ঞানও বিতরণ করে নিতে রাজি। আমরা খেলাটাকে নিয়ে মাঝে-মাঝেই আলোচনা করি; কিন্তু আমি কখনওই ওকে চাপ দিই না। আমার মতে, ও নিজে যেভাবে খেলাটা খেলছে, সেভাবেই ওকে খেলতে দেওয়া উচিত। খেলাটাকে উপভোগ করুক এবং ওর যা হতে ইছে করবে তাই হয়ে উঠুক। সিমার হোক বা ব্যাটসম্যান, সেটা সম্পূর্ণ ওর ইচ্ছা।

প্রশ্ন : আপনি কী নিজের পরিবারের জন্য রান্না করেন?
শচীন: হ্যাঁ, পরিবারের জন্য মাঝে-মাঝেই রান্না করতে হয় আমাকে। তবে বেশিরভাগই অবসেরর দিনে। (হেসে) আমার মনে হয় আমার রান্না এতটাই ভাল যে, আপনাকে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যে ওদের কেমন লাগছে।

প্রশ্ন : অবসরের পর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে কতটা সময়া কাটাচ্ছেন? নিশ্চয়ই আপনার কোনও বিশেষ বন্ধু রয়েছে?

শচীন: খুব ঘনঘন না হলেও, যখনই সময় পায় তখনই আমরা দেখা করি। বেশ কিছুদিন পরপরই দেখা হয়। এছাড়া বিয়ে, জন্মদিন বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান থাকলে তখন বেশ কিছুটা সময় কাটাই আমরা।

প্রশ্ন : মুম্বাই ক্রিকেট নিয়ে আপনি কতটা ভাবেন?
শচীন: ক্রিকেটার হিসেবে আমার বেড়ে ওঠা বা উন্নতি, যা হয়েছে সবই মুম্বইয়ে। কলোনি থেকে ময়দান এবং সেখান থেকে মুম্বাই দল, এর পর ভারতীয় ক্রিকেটের নামজাদা খেলোয়াড়দের সঙ্গে একইসঙ্গে বেড়ে ওঠা। আমি যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি। ফলে, আমার শিক্ষাটা আরও মজবুত হয়েছে। মুম্বাইয়ের ক্লাব সংস্কৃতিটা যে কোনও উঠতি খেলোয়াড়ের পক্ষে বেড়ে ওটার জন্য আদর্শ।

প্রশ্ন : আমেরিকায় অল স্টার লিগের সময় আপনার নাম ধরে ‘শচীন, শচীন, শচীন’ চিৎকার হয়েছে। খেলোয়াড় জীবন শেষ হওয়ার পরে আপনি কি এটা মিস করেন?

শচীন: (হেসে) ঠিক মিস করি একথা বলা যাবে না। কারণ, মানুষ আমাকে এগুলো মিস করতে দেয়নি। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন, মানুষের অফুরন্ত শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা পেয়েছি। আমেরিকাতে গিয়েও একই জিনিস দেখলাম। তিনটে ম্যাচ খেলেছি এবং প্রত্যেকটাতেই মানুষ আমাদের নাম ধরে চিৎকার করেছে। অন্ধ্র প্রদেশের কোনও গ্রামই হোক বা কোনও পণ্য উদ্বোধন, যেখানেই যাই না কেন, মানুষ আমাকে ভালবাসায় ভরিয়ে দেয়। এতেই আমি বুঝতে পারি, আমার ভিতরে কত বড় ঈশ্বর রয়েছেন।

প্রশ্ন : উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে বসে প্রত্যেক বছর ম্যাচ দেখার কোনও বিশেষ কারন আছে নাকি?
শচীন: প্রত্যেক বছরই রয়্যাল বক্সের জন্য আমি আমন্ত্রণ পাই এবং সেখানে হাজির হয়ে খুব খুঁটিয়ে টেনিস দেখি। উইম্বলডনের টেনিস দেখার মতো অভিজ্ঞতার কোনও তুলনা হয় না। ছোটবেলা থেকেই আমি টেনিস দেখতে বেশ ভালবাসতাম এবং র্যাকেট জাতীয় খেলার মধ্যে টেনিসই আমার কাছে সেরা।

প্রশ্ন : ডিআরএস নিয়ে আপনার কী মত?
শচীন: ডিআরএস হল এমন একটা পদ্ধতি, যেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বদল আনতে পারে; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, প্রযুক্তি যাই হোক না কেন, তার একটা মান থাকা উচিত। কোন বোর্ডের অধীনে খেলছ, সেটা আলাদা ব্যাপার। তবে এমন কোনও প্রযুক্তি, যেটা একেবারে ঠিক সিদ্ধান্ত নেয় বা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি যায়, সেগুলোকে সমর্থন করা উচিত।

প্রশ্ন : গোলাপি বলে খেলা নিয়ে কী বলতে চান?
শচীন: আমি এখনও গোলাপি বলে খেলিনি। কিন্তু খেলার ভালর জন্য আমি পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং উদ্ভাবনের পক্ষে। তাই আমার মতে, এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। আরও কিছু ম্যাচে পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে, সন্ধেবেলায় গোলাপি বল কেমন কাজ দিচ্ছে। যদি বেশ কিছু মাঠে গোলাপি বলে খেলা হয়, তবে টেস্টের চরিত্রটা আমূল বদলে যেতে পারে।

প্রশ্ন : মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফি জিততে পেরে কেমন লেগেছিল?
শচীন: অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যখনই মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছি, তখনই একটা বিশেষ অনুভূতি ছিল। মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার থাকার সময় আমার বেশ কিছু ভাল স্মৃতি আছে। সবথেকে ভাল লাগার ব্যাপার, যাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, তারা আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। লাহলিতে আমার শেষ রঞ্জি ম্যাচটা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি ভাগ্যবান যে, ওই ম্যাচে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পেরেছিলাম। দলের একজন বর্ষীয়ান সদস্য হিসেবে এটা ভেবে ভাল লাগে যে, তরুণদের নিজের মতো করে শিক্ষা দিতে পেরেছিলাম এবং ওদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছিলাম।

প্রশ্ন : ভারতের বর্তমান ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে কী বলবেন? ধাওয়ান, বিজয়, পুজারা, বিরাট, রোহিত, রাহানে…
শচীন: নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ওরা খুবই প্রতিভাবান এবং ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। বয়সও ওদের সঙ্গে আছে। ফলে, আগামী বেশ কয়েক বছর ওরা একসঙ্গে খেলতে পারবে একথা বলাই যায়। অজিঙ্ককে আমি বহুদিন ধরে চিনি। ওর কাজের ধরন আমার বেশ ভাল লাগে। ওর মতো দায়িত্ববান ক্রিকেটারও খুব কম আছে। খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছে ও। ফলে আমরা বলতেই পারি, ভারতীয় ক্রিকেট ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।

প্রশ্ন : বোলিং একাডেমিগুলোতে প্রচুর টাকা ব্যয় করা হলেও, ভারতের সেভাবে ধ্বংসাত্মক পেসার উঠে আসছে না। অথচ প্রত্যেকটা দেশের অন্তত একজন করে রয়েছে। আপনার কী মনে হয় না, গতির দিক থেকে ভারত পিছিয়ে পড়ছে?
শচীন: একদমই না। আমার মনে হয় এটা একটা ভুল ধারণা। ভারতে প্রচুর দক্ষ ফাস্ট বোলার আছে, যারা নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে বল করতে পারে। ৯০- এর দশকে আমি এমন অনেক বোলারের সঙ্গে খেলেছি, যারা নিয়মিত ১৪০-এর ওপরে বল করতে পারে। এবং এখনকার সময়েও আমাদের দলে মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, বরুণ অ্যারন এবং উমেশ যাদবের মতো পেসার রয়েছে, যারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ফলে, এই ধারণা শুধু আমার মনে সীমাবদ্ধ। ভারত যে গতির দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে, এটা আমি কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি নই। পার্থ, ডারবান বা লর্ডসে আমাদের বোলাররা জিতিয়ে এসেছে।

sachin

প্রশ্ন : শেষবার কতদিন আগে আপনি লোকাল ট্রেনে চেপেছেন?
শচীন: (ভেবে) আমার মনে হয় ৬ বছর আগে দিল্লি থেকে দেরাদুনে ছোট একটা সফরে যাওয়ার সময়ে শেষবার আমি ট্রেনে ভ্রমণ করি। এছাড়া, ১৯৮৮-র পর থেকে মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে চাপা হয়নি।

প্রশ্ন : আপনি যখন মুম্বাইয়ে দোকান-বাজার করতে যান বা কোথাও খেতে যান, তখন মানুষ আপনাকে তা করতে দেয়?
শচীন: শপিং করতে যাওয়াই বলুন বা খেতে যাওয়াই বলুন, প্রায় ২৫ বছরের সাধারণ লোকের মতোই মুম্বাইয়ে যাতায়াত করছি। এখনও আমি বেরই কিন্তু আগের থেকে পরিকল্পনা করে তবেই। মানুষের ভালবাসার জন্য যেখানেই যাই, সেখানেই মানুষ আমাকে ঘিরে ধরে। এই নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। কারণ ওদের ভালবাসার জন্যই আমি আজ এই জায়গায়।

প্রশ্ন : মুম্বাইয়ের স্ট্রিট ফুড কী আপনি মিস করেন? যদি মানুষের ঘেরাও থেকে বাঁচিয়ে আপনাকে মুম্বাইয়ের স্ট্রিট ফুড খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আপনি কী খাবেন? ভেলপুরি? সেভ পুরি? বড়া পাও? পাওভাজি না সামোসা?

শচীন: সত্যিই আমি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়াটা ভীষণ মিস করি; কিন্তু কিছু লোক আছেন, যারা আমাকে এই খাবারগুলো ঘরে পৌঁছে দেন। নিশ্চয়ই বাইরে আবার খেতে যেতে পারলে খুব ভাল লাগবে। তবে ঠিক কী খাব তা নিয়ে কোন বাছবিচার নেই। আমি সবকটাই খেতে ভালবাসি।

প্রশ্ন : আপনার জীবনকাহিনী নিয়ে কীরকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন? এটা করা হবে কি না ঠিক হয়েছে?

শচীন: আমি অভিভূত। আমার সমর্থকেরা আমাকে প্রচুর নাম লিখে পাঠিয়েছেন। নাম এখনও ঠিক হয়নি। তবে আমাদের কাছে বেছে নেওয়ার জন্য প্রচুর বিকল্প রয়েছে।

প্রশ্ন : মারাঠি কিংবা অন্য কোনও ভাষায় আর বই লেখার ইচ্ছে রয়েছে?
শচীন: এক্ষুণি সেরকম কিছু পরিকল্পনা নেই। প্রথমটা লিখতেই অনেক সময় লেগেছে এবং আমার প্রচুর শক্তি বেরিয়ে গেছে। আমার প্রতি মিনিটের কার্যকলাপ একজনকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেটাও স্ট্যাটিস্টিক্সসহ। ফলে, আবার করতে গেলে বেশ ধৈর্য লাগবে।

প্রশ্ন : আপনি কী সিনেমাপ্রেমী? ইংলিশ, হিন্দি এবং মারাঠিতে তিনটে সিনেমার নাম করতে পারবেন?
শচীন: তিনটে ভাষার সিনেমাই আমি দেখি। সাধারণত আমি প্রচুর সিনেমা দেখি এবং তার মধ্যে থেকে তিনেট সিনেমা বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। কারণ, বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু ভাল সিনেমা দেখেছি।

প্রশ্ন : আপনি এখনও কলাম লেখা শুরু করেননি। ফলে ভবিষ্যতে কী মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার কোনও ইচ্ছা রয়েছে?
শচীন: ২০১১ বিশ্বকাপ চলার সময় একটা ম্যাগাজিনে আমি বেশ কিছু কলাম লিখেছিলাম। কলাম লেখাটা নির্ভর করে সঠিক সুযোগ এবং সময়ের ওপর।

প্রশ্ন : আপনার প্রিয় মারাঠি, হিন্দি এবং ইংরেজি গান কী?
শচীন: আবারও বলছি, আমি বছরের পর বছর ধরে প্রচুর গান শুনেছি এবং তাই নিয়ে আমার বেশ কিছু স্মৃতিও রয়েছে। সময়ে-সময়ে এটা বদলে যেতে থাকে। আমি প্রচুর গান শুনি এবং ৭০- এর দশকের গান আমার বিশেষ প্রিয়। ভাল গানবাজনা পেলে আমি সব সময় সঙ্গে রাখি। গানের ধরন নিয়ে আমার বিশেষ কোনও বাছবিচার নেই। সব ধরনের গানি আমার প্রিয়।

প্রশ্ন : সবচেয়ে ভালো পুরুষ এবং নারী কণ্ঠ?
শচীন: পুরুষদের মধ্যে কিশোর কুমার এবং মোহাম্মদ রাফি এবং নারীদের মধ্যে লতা মুঙ্গেশকর ও আশা ভোসলে।

প্রশ্ন : সেরা হলিউড এবং বলিউড অভিনেতা?
শচীন: অমিতাভ বচ্চন ও রবার্ট ডি নিরো।

প্রশ্ন : ভারত এবং বিদেশের পছন্দের জায়গা?
শচীন: ভারতের মধ্যে অবশ্যই মুম্বাই এবং বিদেশের মধ্যে লন্ডন।

sachin

প্রশ্ন : খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরও আপনি বিভিন্ন নামি দামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হয়েও এতটা ভালোবাসা পাচ্ছেন, এটা আপনার কাছে কীরকম লাগে?

শচীন: এত নামি দামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা সত্যিই একটা বিশেষ অনুভূতি। আমার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্য। আমার মনে হয়, একটা ব্র্যান্ডের সত্যিকারের কিছু মূল্য আছে এবং সেই মূল্যটাই যে কোনো ক্রেতার কাছে একমাত্র প্রাপ্য।

প্রশ্ন : ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ২৫ বছর ধরে আপনি ভারতকে অনেক কিছু দিয়েছেন; কিন্তু তার পরেও আপনার মনে হয়, অনেক কিছু দেওয়া হয়নি। তাই সব সয়মই চেষ্টা করেন এই সামজকে কিছু না কিছু দিয়ে যেতে। তাহলে আমরা কী বলতে পারি যে, অবসরপ্রাপ্ত শচীন ক্রিকেটার শচীনের থেকেও ভাল কিছু করতে পারেন?

শচীন: আমার জীবনের প্রথম ইনিংসে যা করতে চেয়েছিলাম, তার জন্য সময় পাইনি। এখন আমি অবসর নিয়েছি। তাই আমাকে যারা সারা জীবন ধরে ভালবাসা দিয়েছেন, তাদের আমি কিছু ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে চাই। গ্রাম দত্তক না, তারই মধ্যে একটা জিনিস, যার মাধ্যমে আমি বুঝতে পারলাম যে আমরা যে জিনিসগুলোকে খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করি, গ্রামে সেটুকুরও জোগান নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী যখন সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা চালু করলেন, তখন আমি ভাবলাম, এদের জন্য কিছু করাই যায়।

আমরা যারা শহরে থাকি, তারা টাকার বিনিময়ে আলো এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। তাই একজন গ্রামবাসী ছাড়া আলোর মর্ম কতটা, সেটা আমরা বুঝতে পারব না। যে সব গ্রামে আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই, সেখানে সৌরোবিদ মারফত আলো পৌঁছে দিয়েও যদি খুশি করতে পারি, তবে এর থেকে বড় আর কিছু হতে পারে না। ছোট ছোট ধাপগুলোই ধীরে ধীরে বড় পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। তাই যেগুলো আমার ইচ্ছে ছিল, এখন সেগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমি স্রেফ আশা করি, যেন এটা চালিয়ে যেতে পারি এবং আর যত বছর পারব এটা যেন করে যেতে পারি।

প্রশ্ন : টেন্ডুলকার এবং আপনালয় এবং অন্যান্য আশ্রমগুলি কি আপনার মতে খুশি ছড়াতে পারছে?
শচীন: দেশের নিম্নস্তরের মানুষদের কী করে ভাল করা যায়, তার জন্য আমি সব সময় ভেবে এসেছি। এবং তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করে চলেছি। যখন কোনও শিশু বা কোনও যুবতী সূর্যাস্তের পরে ঘরে আলো দেখে হাসে, তা দেখার থেকে আর বড় সুখ কোথাও নেই। মুম্বইয়ের বস্তি এবং অন্যান্য নিচুতলার লোকজনকে নিয়েই আপনলায় মূলত কাজ করে। চেষ্টা করে, যেসব গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি নেই, সেখানে যেন একটু আলো পৌঁছে দেওয়া যায়। খুব ছোট ছোট প্রচেষ্টা হলেও, ওটা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। তাই আমি সময়ে সময়ে যতটা পারি ওদের সাহায্য করি।

* আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত শচীনের এই সাক্ষাৎকারটি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত