আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
ঋণ
দু’দশক আগেও শরৎ ছিল
সূর্যাস্তের নদীর তীরে পুব আকাশে ছায়া ঘনিয়ে আসত
দীঘির কাছে মা আমাকে ডাকতে যেত
আমি কাশফুল ছিঁড়ে বাড়িতে নিয়ে আসতাম—
ফেরার পথে গোধূলিকে পায়ের নীচে রেখে দেখেছি
কিভাবে সমস্ত ছায়া নিবিড় হয়ে রাত হয়…
দীঘি ভরাট হয়েছে বেশ কয়েক বছর
এখন শিং এর মতো চাঁদ উঠলে মনে হয়
সরু আলপথ বেয়ে দিগন্ত ছুঁয়ে আসি
মা কে আর যেতে হয়না দীঘির পাড়ে
পলাশ আঁকা আসনে বসে মা লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়েন
ভরদুপুরে আর ডাকিনা বন্ধুদের
কিন্তু রাতদুপুরে আজও কখনো কখনো ডাকতে হয়—-
আমাদের মধ্যে কেউ দিগন্ত ছুঁতে যাবার কথা বলে
হেমন্তের গম রঙে মিশে গেলে
কিছু ঋণ শোধ করবার থেকে যায়…
রাতদুপুরে কখনও কখনও
কান্না দিয়ে ঋণ শুধে গেলে
বাক্যহারা হয়ে সূর্যাস্তের নদীর তীরে
চুপ করে বসে থাকতে হয়
কিছু ঋণ শোধ করবার থেকে যায়
বেদুইন শ্রাবণ
টাইমলাইন জুড়ে শব্দছবির মেলিফ্লুয়াস রেখাপাত …
বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে আমাদের কথা—
একটি ছাতার কথা, দুপুরের কথা…
সেইসব দুপুর মাঝিহীন নৌকার মত। নম্র,ভদ্র মেঘেদের মত।
মেঘ বলতে ঠিক কি বোঝো তুমি ?
আমি তোমার ডাকনাম ধরে ডাকতে পারছিনা। আর কাদামাটি খুবলে খুবলে আছে আগামীর শস্যজমিতে।
জানালা খোলা রাখছি। অথচ পথ ভুলেছে মিহি বাতাস।
তোর্ষায় নিয়মিত পাড় ভাঙন। অথচ স্নানঘর গানহীন ;নীরব।
কুছ ইস তরহা তুমিময় আমি
কুছ ইস তরহা শ্রাবণ-বিলাস
আর্দ্র শরীরে দুপুর নামে
পর্দার গায়ে মেঘলা ছোঁয়াচ …
ট্রাফিক এবং ট্রাইব্যুনাল
মুসুর ডালে লবণ বেশি হলে
কিংবা যদি মাছের ঝোলে ঝাল বেশি হয়
মা যদি বলেন,এই রান্নাটা ফেলে দিচ্ছি…
নতুন করে রাঁধব—
আমার বাবা কি সেই অপচয়ের জন্য
মা কে ক্ষমা করে দেবেন ?… ভাবিনি
তবে দেওয়ালে থুতু ফেলার আগে দশবার ভাবি
এখন প্রতিটি ভাবনাই রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালের
রং পরিবর্তনের মতো…
কিছুক্ষণ আগেই যার সাথে সিগারেট ভাগ করে নিলাম
তার দিকেই তো ছুটে গেছে গাড়ির কালো ধোঁয়া,
হাওয়ায় ওড়া সব ছেঁড়া প্যাকেট
ইত্যাদি
এখন শীতকাল।
বাড়ির এক অবহেলিত কোণে শীর্ণ শিমগাছ
আমি জল দিই। সে ফল দেয়।
এমনই সম্পর্ক আমাদের…
আমি, মা – বাবা, শিমগাছ দাঁড়িয়ে আছি জেব্রাক্রসিং এ
পরনে এক রঙা টুপি
কিন্তু ট্রাফিকের নিজস্ব কোন রঙ নেই…
তাই,
রাজধানী -ঢঙে রাস্তায় জ্যাম হলে মন্দ লাগেনা
একটানা শব্দ… একরোখা অস্থিরতা… একটাই রেখা
হে পাঠক, আপনি নিশ্চই দূরবীন হাতে চিলেকোঠার ঘরে…
জন্ম কোচবিহারে। পেশা শিক্ষকতা।ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। শখ ছবি আঁকা ; গান শোনা ; ফটোগ্রাফি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পেজমার্ক (২০১৭)। সহ সম্পাদক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন ‘মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা ‘ এবং ‘ মোহনা সাহিত্য পত্রিকা’ র সাথে।