জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একশো বছরে অবশেষে ক্ষমা চাইল ব্রিটেন। তারা জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাওয়ার একটা প্রক্রিয়া আছে, সেই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড হাউস অফ কমন্সে এই ‘অতীত ইতিহাসের লজ্জাজনক ঘটনা’র জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে কিছু অর্থনৈতিক দিক জড়িয়ে থাকে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল, রবিবার বৈশাখীর অনুষ্ঠানের জন্য অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে জমায়েত হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী সত্য পাল ও সইফুদ্দিন কিচলুর দ্বীপান্তরের প্রতিবাদে একটি সভাও হচ্ছিল। কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ার সেনাবাহিনীর শিখ, রাজপুত, গোর্খা ও বালোচ রেজিমেন্টের সেনাদের নিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ ঘিরে ফেলেন। সবকটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর কাউকে সতর্ক না করে, পালানোর সুযোগ না দিয়ে শিশু, নারী নির্বিশেষে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
মর্মান্তিক ও নৃশংস সেই ঘটনায় নারী ও শিশু-সহ অন্তত হাজার খানেক মানুষ শহিদ হন। আহত হন আরও হাজার দেড়েক। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ হয় দেশে ও বিদেশেও।
একশো বছর কেটে গেলেও এই ঘটনার জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি ব্রিটেন। মঙ্গলবার ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ক্ষমা চাওয়ার কাজ এগোচ্ছে বললেও তিনি জালিয়ানওয়ালা গণহত্যা নিয়ে এক বিতর্কে উল্টো সুরে কথা বলেন। ওয়েস্টমিনিস্টার হলে হাউস অফ কমন্সে ওই বিতর্কে তিনি বলেন, “ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী অতীত নিয়ে আমার মতামত একটু রক্ষণশীল ও গোঁড়া। অতীতে ঘটে গেছে এমন কোনও ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করার বিষয়ে আমি একটু হলেও অনিচ্ছুক।” তবে এই ঘটনার জন্য ব্রিটেনের যে ‘সুগভীর অনুশোচনা’ রয়েছে সে কথা বলতে ভোলেননি মন্ত্রী। জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার শতবর্ষের অনুষ্ঠান নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। ওই ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ এমপি ও মন্ত্রীদের মধ্যে নানা আলোচনা ও বিতর্কও হচ্ছে।
ফিল্ড বলেন, “আমাদের সঙ্গে ভারতের এখনকার সম্পর্কটা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। তবে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিতে অতীতও মিলেমিশে আছে।” সম্প্রতি জালিয়ানওয়ালাবাগ নিয়ে যে সব বিতর্ক হচ্ছে, তার ফলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বার্তা নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন যে, ব্রিটেনের ‘গভীর অনুশোচনা’ ব্যক্ত করার বাইরেও কিছু করার আছে।
বিশ্ব জুড়ে ক্ষমা চাওয়ার রাজনীতি বা কূটনীতির প্রচলন হয়েছে বেশ কিছু বছর ধরেই। দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কে এখন অনেকটা পরিসরই দখল করে নিয়েছে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। ফলে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে যদি কালাচারাল রিলেশনটা মজবুত করা যায়, তা হলে তার সরাসরি একটা প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য সম্পর্কেও।
যেমন হিরোশিমায় বিস্ফোরণের জন্য আমেরিকা ক্ষমা নিয়েছে। যদিও প্রতিটি দেশে রক্ষণশীলরা রয়েছে। তারা মনে করে এটা তাদের পার্ট অব লিগ্যাসি। এর জন্য ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু প্র্যাগম্যাটিক ডিপ্লোমেসি বলে এটাই দস্তুর।
কর্নেল ডায়ারের এই কীর্তির পরে প্রথম দিকে ব্রিটেনের হাউস অফ লর্ডসে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কিন্তু ডায়ারকে হাউস অফ কমন্সের কড়া সমালোচনা ও তীব্র নিন্দার মুখে পড়তে হয়। অবশেষে ১৯২০ সালে তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়।
সূত্রঃ ওয়াল