আজ ২১ আগষ্ট কবি ও সম্পাদক জুবিন ঘোষের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কল্পতরু
সেদিন যারা মিছিলে যায়নি
আমি মিছিলে পা বাড়াইনি, ওখানে বড় ছিল আলো
মিছিলে বাড়াইনি পা, ওদের স্নিকার জমকালো
আমিও হেঁটে গেছি সে-পথে, কাঁধে রেখেছি হাত
প্রতিবাদ ও প্রত্যয়ের; মিছিল এগিয়ে চলে পিছিয়ে পড়ার ভয়ে।
মিছিলে হাঁটে কারা? — রাষ্ট্র ও ওরা !
উচ্ছৃষ্ট কিছুই নেই, ছেড়ে ক্ষমতার চটি-জোড়া
খালি পায়ে হেঁটে গেছি এপ্রান্ত অপ্রান্ত
তবু মিছিলে হাঁটিনি ব’লে ‘বিরোধী’ নামান্তর !
কাদের বিরোধী আমি? মিছিল দেখেনি সেসব—
পায়ুদ্বারে ঢুকে যাচ্ছে পুলিশের কফ, পুলিশের যোনি
তবু মিছিলে হাঁটেনি দার্শনিক, নাহ্ এক পা-ও না
ভুখা পেট হাঁটব কীভাবে? মাথার ওপরে শনি, দেবতার ভ্রম ;
হাঁটব কতক্ষণ? মিছিল এগিয়ে চলে যেদিকে সিংহাসন।
যারা মিছিলে পা বাড়ায়নি ব’লে অবরুদ্ধ গ্রাম, বন্ধ স্যালো
আমি মিছিলে মেলাইনি পা, তাই রাষ্ট্র চমকালো !
একদিন মাঠে নামবোই
একদিন মাঠে নামবোই গোল দেব পাঁচে-পাঁচশো
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালেই গোল দেব পাচে-পাঁচশো
তাকিয়ে দেখছি অবাক তোর চলতে ফিরতে বসতে
দুই-দুটো বল আহা যেন আটকে গোল পোস্টে
হাত নিশপিস হ্যান্ডবল লাগছে নিজেকে গাম্বাট
সবাই মাঠেতে খেলছে বুক পকেট ভর্তি লালকার্ড
আজকে সামনে মাঠটা চল্ একাই কাফি জিততে
হাওয়া আছে কিনা বলটায়, বলেছিলে ডেকে টিপতে
নিদারুণ সে ব্যথায় দুলছে অরূপ দোলনায়
রেফারি বাজিয়ে বাঁশি বোঝালো এটা গোল নয়
যত দলবদলের চুক্তি ঘুরে বাতিল করে সেইসব
ফিরে আসবো মাঠের কাদাতে ফিরে আসবে মাঠের শৈশব
জামা খুলে আজ ওড়াবোই ভরা মাইকের ধারাভাষ্যে
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালে গোল দেব পাঁচে-পাঁচশো
একদিন মাঠে নামবোই গোলা ফুটবল হবে ময়দা
স্টিপ খুলে তুই দাঁড়ালেই সহমরণে যাবে ময়দান
সে যুযুধান মাঠে নামলে আমি ও ফিদেল কাস্ত্রো
অভ্যুত্থান হবে নৈতিক বিদ্রোহী হবে রাষ্ট্র
রাক্ষসগণ
চলে যাব, হয়তো ভীষণভাবেই চলে যাব।
যদি কাউকে না পারি, ওষ্ঠে তোমায় রেখে যাব।
তখন আমার রাক্ষসগণ হাত দেখে চমকে যেও না।
আকাল ও আকাট মূর্খ অবস্থা, জিন্সের ছেঁড়া প্যান্ট
আমার উদ্ধত কালো হাত, নখের থাবা দেখে ঘৃণা করো না ;
কাঁকড়া তুলে নিতে সুগন্ধী বালির পাহাড় তুলে বসো।
আড়ষ্ঠতায় দৌপদীরং শাড়ি, লুকোনো অরণ্য
জবরজং ইমিটেশন সাজিয়ে বসলেও
হঠাৎ আমি সেই রাক্ষসগণ স্বভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলে
ভেড়ার দুর্বলতায় থমকে যেও না। খাবার দিও।
এই কুৎসিত পশুত্বেও একদল ক্ষুধার্থ মানুষ লুকিয়ে রয়েছে
মুথা ঘাসের আড়ালে ; অসম্ভব ভীত বাইসনের মতো
বেপরোয়া ভয় নিয়ে রাতে ঘরে ঢুকলেও জেনো, ভাতারখাকি
প্রতি রাতে দুটো অপুষ্ট হাত অপেক্ষা করে রয়েছে সংগ্রামীর।
‘চলে যাব’–ভাবলেই মনে হয়, কেউ আসুক তারপর যাব।
কাউকে আসতে দিতে হয় মাধবীলতার পেছনে।
আমার বাড়ির গেটে কোনও সিনড্যারেলা চটি ফেলে যায় না—
রাত কাটলে,
জানালা দিয়ে দেখি—নিতম্ব নতজানু হয়ে জানায়, সকাল হয়েছে !
ছায়া
ছায়ারা আমার অন্ধকারের বন্ধু হতে পারেনি
আলো চাই, আবছা অথবা খুব আলো
নইলে ছায়ারাও আসে না
#
লিখতে গেলে দেখি ছায়াটাও আমার সঙ্গে কবিতাপড়ছে
যে কোনও আলোর পেছনে গেলে ছায়ার ওপর আমারঅভিমান হয়
ছায়ার সঙ্গে তুমি যুদ্ধ করবে কিনা বলে দাওনি
ছায়া ডেকে এনে হাত দিয়ে
দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা ডাইনোসর
সেও কি যুদ্ধ করবে ?
অথচ ডাইনোসরটি যেকোনও সময় খরগোস বা,
সাপ হতে পারে, ছোবল হতে পারে
অবচেতনে আলোর পাশ গেলে
ছায়াটা কতবার আমি হয়ে যায়
আবার ছায়াটা চাইলেই কবি হতে পারে না
আশেপাশের আলো তাকে ঘিরে রাখে