Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,kadambari devi r Suicide note

ইরাবতীর চিঠি সাহিত্য: কাদম্বরী দেবীর শেষ চিঠি

Reading Time: 3 minutes

জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের ছেলে জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী। বিয়ে যখন হলো তখন তাঁর বয়স নয় বছর পূর্ণ হয়েছে। ঠাকুর পরিবারের চাকর শ্যাম গাঙ্গুলীর কালো রোগা মেয়ে হল কাদম্বরী। চাকরের মেয়ে বলে অন্দর মহলে ঠাঁই ছিল না তার। বিয়ের পরেও জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ব্যস্ত থাকতেন গানের মজলিসে বা নাটকের নায়িকাদের সাথে প্রেম আলাপে।

এদিকে আদরের উপবাসে রাত কাটাত কাদম্বরী। সন্তানহীনতার দায়ে বাঁঁজা বলতো সবাই। চাকরের মেয়ে বলে তার স্বামীর অযোগ্য মনে করতো সবাই। শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য কাদম্বরীর সাথে বিয়ে দিয়েছে জ্যোতিরিন্দ্র নাথের। তাঁরা ব্রাহ্ম ছিল বলে হিন্দু ঘরের শিক্ষিত যোগ্য কন্যা তাঁদের ঘরে বিয়ে করতো না। তাই অগত্যা চাকরের মেয়েই ছিল একমাত্র সম্বল। স্বামী থেকেও না থাকার মতো ছিল তার। প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে চাইতো কাদম্বরী। কিন্তু রবি ঠাকুরের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগতো তার। মৃত্যুর আগে কদম্বরী একটা সুদীর্ঘ চিঠি লিখে যায়। সেই চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু রবি ঠাকুর সেটা উদ্ধার করেন। পুরো চিঠিটা ভালোভাবে পড়াও যায় না। অবশেষে সম্প্রতি সেই ঝলসানো চিঠি পাঠ করা সম্ভব হল।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, KADAMBARI DEVI AND RABINDRANATH TAGORE

চিঠিতে কাদম্বরী দেবী লিখেছিল-

প্রাণের রবি, এই সবে শুরু হয়েছে আমার জীবনের শেষ দিন। পূবের আকাশ লাল হচ্ছে। আজ কাল তোমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। সেটাই তো স্বাভাবিক মাত্র চার মাস হল তোমার বিয়ে হয়েছে। আগে তো সূর্য ওঠার আগেই তুমি উঠতে। আমার ঘুম ভাঙতো তোমার গানে। আমরা একসঙ্গে বাগান করেছিলাম। তুমি তার নাম দিলে নন্দন কানন। তারপর সেই বাগানে ভোরের প্রথম আলোয় আমাকে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলে, নামটা তোমার পছন্দ হয়েছে বৌঠান? আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিচ্ছে, ভয়ে দুরদুর করছে বুক। তুমি অভয় দিয়ে বলেছিলে, “এটা নন্দন কানন মর্তের দৃষ্টি এখানে পড়ে না।” আমি অভিভূত হয়েছিলাম তোমার বাক্য বানে। তোমার সাথে কথায় আমি পারবো না। তবে তোমার আমার সম্পর্ক সে তো শুধুই আমাদের তাকে প্রকাশ করো না তুমি। আমার ভয় হয়। এই বাড়িতে তুমি ছাড়া আমার কোনো বন্ধু নেই। এ বাড়িতে কেউ আমার মন বোঝে না শুধু তুমি বোঝো। আমার সমস্ত মনটা শুধু তোমাকেই দিয়েছি রবি। তুমি যে আমার ছেলে বেলার খেলার সাথী। রবি তোমাকে চিরদিনের মত ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে, আমি আমার মনের কথাটি জানিয়ে যাই। কোনো মিথ্যে নেই এই কথার মধ্যে কারণ আমি মিথ্যে বলতে শিখিনি। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি রবি। তোমার মত অন্য কোনো পুরুষ যে আমি দেখিনি। রুপে গুনে গানে প্লাবনে তুমি যে অনন্য। তুমিই আমার একমাত্র ভালবাসার পুরুষ। আমার সমস্ত অপমানের প্রতিষেধক ছিল তোমার কথা, গান আর আদরে। একমাত্র তুমিই বুঝেছিলে আমার দহন। সেই দহনে জ্বালিয়ে নিয়েছিলে নিজেকেও। এই তো সেদিন বৃষ্টির মাঝে মালতি লতার আড়ালে হঠাৎ তুমি টেনে নিয়েছিলে তোমার বুকে। সে টানে অন্তরের উজান ছিল রবি। আমি বাঁধা দিতে পারিনি। হয়তো দিতে চাইওনি। জানতাম এটা অন্যায়। তবুও অন্যায়ের গলায় পরিয়েছিলাম আমার হৃদয়ের বরমাল‍্য। এ অন্যায় আমার কাছে ছিল পুষ্পের মত পবিত্র। বহুদিনের আদরের উপবাস সেদিন ভেঙ্গে গিয়েছিল তোমার হৃদয় প্রবাহে। ফুরিয়ে যায়নি তোমার অধর অমৃতির স্বাদ। কিন্তু এখন জীবন ফুরিয়ে যেতে বসেছে। আজ আমি শুধু অমঙ্গল নয় তোমাকে ভালোবেসে অসতীও। এখন বিয়ে হয়েছে তোমার তাই দূর থেকেই দেখি, কাছে ডাকার, কাছ থেকে দেখার অধিকার নেই আমার। অনেক বদলে গেছো তুমি। আর তার সঙ্গে বদলে গেছে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও। আগে প্রতি দুপুরে ছুটে আসতে নতুন কবিতা নিয়ে। আমার হৃদয়ে ছন্দ তুলিয়ে বলতে এ কবিতা শুধু তোমার আর আমার। কাদম্বরী দেবী আরো লিখেছিল, আজ বুঝেছি মিথ্যে বলতে তুমি। কেন বলতে? কেন আমার অনুরাগ নিয়ে এত খেলা খেলতে! আজও তোমার অপেক্ষায় থাকি রবি। তোমার পায়ের শব্দ হৃদয়ে অনুভব করি। এই বুঝি তুমি এলে ছুটে আসি দরজায় প্রতিবার। কিন্তু তুমি যে আর আমার নও সে কথা বার বার ভুলে যাই। আমার শেষ আশ্রয়টুকুও আজ নিরাশ্রয়। তোমার ভালোবাসা পেয়ে জীবন স্বার্থক। তাই তা হারিয়ে আর বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। নন্দন কাননের সেই সকাল, কবিতা পাঠের সেই নিঝুম দুপুর, ছাদের সেই স্নিগ্ধ সন্ধ্যা সবই রেখে গেলাম তোমার আর নতুন বৌঠানের তরে। এগুলো এখন বিষের মত লাগে। রবিহীন এজীবন এক নিছিদ্র অন্ধকার। আজ এই অসতীর বিদায়। 

কাদম্বরী দেবী লিখেছিল যে, এই চিঠিখানি পড়ে জ্বালিয়ে দিও আমার চিতার সঙ্গে। আমার সাধের নন্দন কানন আজ আদরের অভাবে শুকিয়ে গেছে। রবির জীবনে আর কাদম্বরী থাকবে না।

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>