| 27 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

ক্ষুধা   

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

                                                                 

ডুকনি বুড়ি এসে মল্লারীর বাচ্চাটাকে কোলে নেয়। মল্লারীর মাথায় তখনও বাঁধা নেয়মের সাদা রুমাল। বিয়ে হবার আগে সে মা হয়েছে এটা বেদে সমাজে নিন্দনীয়। বেদেরা তাই শাস্তি স্বরূপ তার মাথায় রুমাল বাঁধার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাচ্চাটার সাথে তাদেও শত্রুতা নাই। বেদেনীদেও কোলে কোলে ঘুরছে সে। ডুকনি এসে মল্লারীর পাশে বসে। মল্লারীর  মায়ের পানের কৌটোটা টেনে নিতে নিতে  ডুকনি বলে –‘ বাঙ্গালদেও সোমাজ বড় নেমক হারামের সোমাজ। ও জাতে যে বিশ্বাস নাই তা তো নিজের জেবনখানা দিয়ে প্রমান পালি। পালি তো!’মল্লারী র্দীঘশ্বাস ছাড়ে। ডুকনি পানের ওপর একটুকরা সুপারি রেখে তা মুখে পুওে দিয়ে চিবোতে থাকে।মল্লারী ভাবে সে এখানে কুশনির কথা বলতে এসছে। কুশনির মাথার খোপা খুলে দেয়ার পর সে নাকি নলুয়ার কোঠিতে গেছিলো। নলুয়া তখন কোঠিতে ছিলো না। ডুকনি এতে আশ্বস্ত হয় না। কুশনিকে তার বিশ্বাস নেই। রহমালীর সাথে তার মন দেয়া নেয়া আগেই হয়েছে। কুশনি রহমালীকে ছেড়ে অত সহজে নেয়মের ঘওে ঢুকবে তেমন মেয়ে সে নয়। ডুকনি ঢের দেখেছে। ও হলো  জাত গুমো। জাত সাপ। ওর মতিগতিতে বিশ্বাস করেছ কি মরেছ। বিষদাঁত ফেলে দেবার পরেও বিষ থাকবেই। আজ ডুকনির মনটা বেশ ফুরফুরে। পান চিবোতে চিবোতে সে বলে,‘ কম ঘাটের জল তো খেলাম না! কম অভিজ্ঞতাও হয়নি। কদিন ধওে  বাসন্তীর কথা থাইকে থাইকে মনে পড়ছে। ’সেটা আবার কে গা? সুধায় মল্লারী। আমার চায়া বছর তিনেকের বড় ছিল বাসন্তী। সোমাজ আর নেয়মের বাইওে গেলে কি হয় বাসন্তী তা জেবন দিয়ে প্রমান করেছে। তাই পই পই কইওে বলি বাইদ্যাকে কেন জীবন দি প্রমান করতে হবে যে, ও বনে বাঘ আছে? বাইদার কি অভিজ্ঞতা কম আছে? ডোকা ডুকনিরা কি সোমাজ থিকা মইওে গেছে? না নিব্বংশ হইছে? ‘আহ ডুকনি! কানি বিয়াইস নিঠু। আর কথা বাড়াইস না। তোর বাসন্তী কথা ক।’ মল্লারী তাড়া দেয়।সে মেলা বছর আগের কথা।  তখন বিশ্বম্ভরপুর তেলি পাড়ার কাছে খাস জমিতে তাবু টানিছে বেদেরা।। দুর্ভিক্ষের দেমূল তখন হামাগুড়ি দিয়ে গ্রামে ঢুকি ঢুকি করছে। মানুষ হিংস্র হয়ে উঠছে। সামান্য গরুর গোবর নিয়ে খুনোখুনি অবস্থা। যে যতটুকু পারছে খাবার জ্বালানী জমা করতে চাচ্ছে। বেদেরা জমা করা জাতি নয়। দিনের খাবার হলে তাদেও আর ভাবনা থাকেনা কাল কী খাবে। তারা চিরকাল অল্পতে সন্তুষ্ট। তাদেও পূর্বপুরুষদের কাছ থেকেই তারা এটাই শিখে এসেছে যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমা করা পাপ, তা সে গাছের ডালই বলো আর খাবারই বলো। তাই তাদের পূর্বপুরুষেরা প্রয়োজনের বেশি যা থেকে যেতো তা ফেলে দিত গঙ্গায়। ওতে তার পূণ্য হতো। এখন পাপ পুণ্য সব সমান সমান। এরকমই যখন নেয়ম তখন বেদেপাড়ার অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। চারিদিকে অভাব আর অভাব। দিনে দিনে মানুষ কঙ্কালসার হয়ে উঠতে লাগলোা। বুকের খাঁচার হাড় ক’খানা তা চামরায় ঢাকা। গলায় হাড়ের মালা। তেমন দিন এবঙ্গেও মানুষ কোনো দিন আর দেখে নাই। খল্লখেনুসদেও দুয়াওে গরিব ভিখিরির ভিড়। পথে পথে  ন্যড়ি কুকুরের সাথে ভুখানাঙ্গা মানুষ ঘুওে বেড়ায় খাবারের খোঁজে। কুকুরের খাবার কেড়ে খেতে গিয়ে কুকুরের কামড়ে রক্তাক্ত হয়। সন্ধ্যা নামলে শিয়ালেরা  হিংস্র হয়ে ওঠে। জ্যান্ত মানুষ ধরে নিয়ে যায় জঙ্গলে। শিয়ালের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা থাকে না জীবন্মৃত মানুষগুলোর। এমন যখন অবস্থা  তখন বেদেদের মজমায় সাপের খেলা দেখার মানুষ কোথায়? লিমরদরা তাই ঝাপির সাপ জঙ্গলে নিয়ে ফেলে এসেছে। মানুষের পেটে আগুন, মনে তার রঙ থাকবে কেনে। বেদে পাড়ায় দিনে একবার আখা জ্বলে যখন তাদের সুদিন। এখন দু কি তিন দিনের রান্না হয় না। বাচ্চারা ক্ষুধার জ্বালায় বট পাকুরের ফল নিয়ে মারামারি করছে। এর মধ্যে  এক সন্ধ্যয় বাসন্তী এসে ডুকনিকে জানায়-‘ একটা উপায় হয়েছে’।কী? প্রশ্ন করে ডুকনি।বাসন্তী বলে, ‘ তেলীপাড়ার বড় বাবু রোজ খাবার দেবে।’ গেরস্থরা এমনি এমনি কিছু দেয়?এাথা নিচু করে থাকে বাসন্তী। তারপর একটু ঝাঁঝের সাথে বলে, ‘ সর্দার কিছুনি করছে? আই আর কি করতাম তু ক দেখি?’তা বলে জাত ধম্ম খোয়াবি?বাসন্তীর জবাব তৈরী ছিলো। বলল, শইলডাই যদি না থাকে জাত ধম্ম দিয়া কি হইবো কও? বুঝাও আমারে? বাসন্তীর শরীরে আগুন যতটা না খেলা করছিলো তারচে বেশি আগুন তার পেটে খেলা করছে ঠিক গুমো মইয়ালের মতো। ডুকনির কী বলার আছে? কী বলা যায় বাসন্তীকে! সবাই জানে সোমাজে কড়ির চায়া নেয়মের দাম বেশি। কিন্তু এই অভাবের দিনে দুর্ভিক্ষের দেমূল যখন প্রতিটা ঘরে আসন পেতেছে তখন ডুকনি  কোন ছাড়! তবু সে বাসন্তীর কাজে সম্মতি জানায় না। বাসন্তী বলে, ‘ দেখ ডুকনি, বাদ্যারা জেবনের সাথে সম্পক্ক পাতে। আমি জেবনের পিরীতে পড়েছি, মরতে আমি পারুম না। তুই থাক তোর সোমাজ লিয়ে’। বাসন্তী উদ্ভিন্ন যৌবনা। জগতের সৎ পুরুষও একবার তাকে দেখে থমকে দাঁড়াবে। সে উঠে চলে যায়। তার গন্তব্যেও দিকে চেয়ে থাকে ডুকনি। তার পিছনে চলছে দুর্ভিক্ষের দেমূল। তার হাতে পায়ে বড় বড় নখ, দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসেছে হিংস্র দাঁত। মাথার চুলগুলো তার সজারুর কাঁটার মতো খাড়া খাড়া। ডুকনির গা শিউওে উঠলো। সে বাসন্তীকে ডাকলো –‘বাসন্তী’। বাসন্তী শুনলো কিনা কে জানে! সে ফিরলো না।

 

 

বেদে বহরে রাত নেমেছে। আকাশ কালো হয়ে আছে মেঘে। কোন তাবুতে শব্দ নাই। শব্দ করার মানুষ কই। ক মাসে শিশুশূণ্য হয়ে পরেছে বহর টা। সকালেও দুটোকে দাফন করে এসছে সর্দার। মায়েদের কান্না করার শক্তিটুকু নাই।  ফেলানীর মা বিস্ফরিত চোখে কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুখে কোনো শব্দ ছিলো না। ওদিকে রহমের মা যখন কাঁদতে বসল তার চেহারা চেনা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল এই বিভৎস কান্না তার ছেলের জন্য নয়। চোখে পানি নেই। বড়বড় দাঁতগুলি বের করে কেবল হাঁসফাঁস করছে সে। মনে হচ্ছিলো সন্তানের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে তার পেটে ও ক্ষুধাটাই গলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। কেউ সান্তনা দেবার নেই। কেউ তার কান্না শোনার জন্য পাশেও বসলো না।এরকম পরিস্থিতিতে বেশ ভালো আছে বাসন্তী। রাতে ওর তাবুতেই দু একটা কথার শব্দ শোনা যায়। মাঝে মাঝে চাপা হাসির শব্দও। অশ্চর্য হবার কিছু নেই। বেদে পাড়ার কেউ এই ঘটনায় আশ্চর্য হয় না, বিরক্ত হয়। সর্দার  বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছে বাসন্তীর সাথে। বেদেরা সুখে দুখে সব সময় এক সাথে থাকে। বেদেরা একজনের কষ্টকে সবার কষ্ট মনে করে, একজনের ক্ষুধাকে সবার ক্ষুধা মনে করে। আর আজতো এখানে সবার ক্ষুধা, সবার অভাব! বাসন্তী কেমন করে একা সুখ খোজে? বাসন্তী মুখ ঝামটায়। সর্দারকে বলে, ‘ দে ,তু ভাত দে। আমি তোদের সোমাজ দেখুম। তোদের সোম্মানের পৈতা গলায় দি  পথে পথে ঘুরমো।’ এর পর সর্দার কি বলবে? সে কেবল নির্দেশ দেয়,‘যা করার বহরের বাইরে গিয়া করো। এখানে না।’ সর্দার চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে বাসন্তী চেঁচায়। বলে,‘ বহরের বাইরে কেনে যামো। আমার অপরাধ কী? আরে ও সদ্দারের বেটা সদ্দার ক্ষেমতা থাকে তো বাসন্তীরে বহর থিকা বাইর করে দেখা।’ এমন কথা বহরের কেউ কোন কালে বলতে পারেনি সর্দারকে। এখন দিন বড় বেরহম। ক্ষুধা গা আর মনের জোর কেড়ে নিয়েছে। সদ্দার ফিরে তাকালো না পর্যন্ত। এরই মধ্যে তেলিপাড়ার বাবুটা দুচক্কও দিয়ে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের সুযোগে সে খাবার হাতে লালসা নিয়ে ঘোরে। ডুকনি প্রমাদ গোণে। সর্দারের কাছে যায় সে।  এক বাসন্তীতে যে তার যে মন উঠছে না তা জানায়। কম বয়সী মেয়েগুলোকে আগল দিয়ে রাখতে পারবে তো সরদার?’ সর্দার কিছু বলে না। শীর্ণ শরীরখানা এলিয়ে দেয় ছেঁড়া কাঁথায়।মাসখানেক বাদে হঠাৎ এক সকালে বাসন্তী মরা কান্না শুরু করলো।  কেউ বের হলো না তাবু থেকে। ডুকণি একা একা লাঠি ভর করে বাসন্তীর ঘরে গেলো। কী হয়েছে লা?ডুকনিকে দেখে তার কান্না দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। না বাসন্তীর  শরীরে অনাহারের চিহ্ন নাই। পরিপাটি করেই কাপড় পরা। তাহলে কি এমন হলো ভাবে ডুকনি । ডুকনি তাবুর ভিতরে যায়। কি লা কী হইছে তোর?  ডুকনি দেখে সারা শরীরে তার গুটি গুটি বিষফোড়া। নাক মুখ ফুলে গোল হয়ে গেছে। বাসন্তীকে চেনা যায় না। ডুকনি বলে ওলা উঠেছে। ঘরেই থাক বের হইস না কোথাও। রাতের জন্য অপেক্শা করে বাসন্তী। সে আসবে। কিছু একটা বিহিত করবে সে।  রাতে বাবু এলেন। বাসন্তী বড় ঘোমটা করে অন্যদিকে মুখ করে আছে। বাবু বলল,‘ বুঝেছি অভিমান হয়েছে। আজ একটু দেরী হয়েছে। কী করবো বলো, বউটা না ঘুমোলে যে আসতে পারি না।!’ বাসন্তী উত্তর দেয় না । বাবুর দিকে ফেরেও না। সে যেমনি বসে ছিলো তেমনি বসে রইলো। এবার বাবু অরো সরে আসে । বাসন্তীর গা ঘেষে বসে। তাকে যেই দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় অমনি মরণ যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে বাসন্তী। তাকে ছেড়ে দিয়ে সরে  যায় তেলিবাবু। বাসন্তী আলোর দিকে ফেরে । সেই আলোতে বাসন্তীকে দেখে তেলিবাবু চমকে ওঠেন। তার মুখখানা শুকিয়ে যায়। তাঁবুর একপাশে গভীর ঘুমে মগ্ন বাসন্তীর বড় মেয়ে। তার নগ্ন পায়ের দিকে তাকিয়ে তেলিবাবু বলেন কাল তোর জন্যে ওষুধ এন দেবো। তুই ভালো হয়ে যাবি। ভাবিস না। তেলি বাবু দ্রুত তাবু থেকে বের হযে যান। বাসন্তী অপেক্ষা করে। দিন যায়, সন্ধ্যা হয় , রাত তিন প্রহর। তেলিবাবু আসেন না। বাসন্তী ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে একদিন দুদিন তিন দিন যায়। তেলিবাবুর আসার অপেক্ষা যখন বাসন্তী ছেড়ে দিয়েছে তখন তার শরীরে আর এক উপদ্রব শুরু হয়। মাথা ঘোরে  , গা গুলিয়ে বমি আসে।  

 

                                                           

৩                          

  বাসন্তীর  শরীরের ঘা শুকাচ্ছে অন্যদিকে তার তলপেট বড় হচ্ছে। এদিকে দুভিক্ষের প্রকোপ কিছুটা কমে আসছে। সরকার রিলিফ দিচ্ছে। বাসন্তীর সাথে কেউ কথা বলে না , কেউ তার সাথে গাওয়ালে যায় না। সে একা একা গালিগালাজ করে, একা একাই থাকে। ক’দিন পর বাসন্তীর ছেলে হয় আর একাই সে ছেলের নাড় কাটে। জন্মেও পর থেকেই বাচ্চাটা লুলা। মুখদিয়ে সারাক্ষণ লালা ঝরে। ঘাড় নাড়ায় না, হাতপা বাঁকা। ছেলেকে দেখে বাসন্তী গালাগাল শুরু করে দিলো। কান্নাও করলো। বেদে পাড়ায় মেয়ে বাচ্চার কদর। তবে ছেলে বাচ্চাকে বিনা আদরে বড় করে বিষয়টা তেমন নয়। বাসন্তী ভাবে একই তো ছেলে বাচ্চা তার ওপর লোলা। এই বোঝা সে টানবে কেমন করে? সে নিজেই একটা উপায় খুঁজে বের করলো।   তারপর কাউকে কিছু না বলে  কাপড়ের পুটুলিতে জড়িয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে সে  সোজা তেলিপাড়ার দিকে চলল। তেলিপাড়ায় তথন দূর্গা তৈরীর কাজ শেষ । দু একটা ঢাকের শব্দ ভেসে আসছে। চিরন্তন এই শব্দের সাথে কে পরিচিত নয়? এই শব্দে শিউলি ফোটে, এই শব্দে ধান গাছেরা গর্ভবতী হয়, শিষের মাথায় শিশির নিয়ে হাসে। বাসন্তীর সেই শব্দে উজ্জিবীত। সে এসে তেলিবাবুর বাড়ির সামনে থামে।বড়লেকের বড় কারবার। বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই এক চাকর এসে হাজির।কী চাই এখানে?বাবুকে ডাকো দিকি।বাবুকে দিয়ে কি হবে?কাজ আছে।বাইদ্যার সাথে বাবুর কী কাজ ?তোকে এতো জবাব কেনে দেবো লা?ততক্ষণে  চাকর নকরে উঠান ভরে গেছে। কিন্তু কেউ বাবুকে ডাকছে না দেখে বাসন্তী নিজেই চেঁচায়। ‘বাবু এই তেলি বাবু।’বাসন্তীর বাজখাই গলার আওয়াজে তেলিবাবু উঠনে এস হাজির হন। বুকের ভিতর তার ঢেঁকির পাড়। এই আপদটা এখনও বেঁচে আছে? তেলি বাবু কেষ্টোর দিকে তাকিয়ে বলে, হ্যাঁ রে কেষ্টা এটাকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে কে? বের করো শিগ্গিরি।বাসন্তী গলা চড়ায়। কেনে লা আমার তাম্বুতে ঢোকার সময় তুই কি কেষ্টার কাছে বলে কয়ে গেছিলি যে , তোর বাড়িতে ঢুকতে আমার কেষ্টাকে লাগবে? ষোন বাবু তোর সাথে আমার  কথাপ ছিলো একখান, তুই ভাত দিবি, ভাতার হবি।  এটার দায় তো আমি লেবো লা। এটা তোর ল্যালো, তোর বহড়া আমি কেনে পুষবো। নে ধর । তোর ছেইলা তু নে। বলেই বাসন্তী কোলের পোটলাটা তেলিবাবুর হাতে দিতে যায় । তেলি বাবু সরে যায়। চিৎকার করে বলে, কে আছিস এই বাইদ্যানীর খপ্পর থেকে আমাকে বাঁচাও। বাসন্তী উঠোনের মাঝখানে বাচ্চাটাকে রেখে সোজা হাঁটা দেয়। সদর দরজার কাছে আসার আগেই চাকররা তাকে ঘিরে ধরে। বাচ্চা নিয়ে যেতে বলে। বাসন্তী ও জাত সাপের মতো ফুসে ওঠে বলে , ও ল্যালো আমি কিছুতেই নেবো না।  বাসন্তীকে ঘিরে ধরা মানুষগুলো মুহুর্তে হিংস্র হয়ে ওঠে। বলে, তোদের আমরা চিনি। মানুষ ঠকিয়ে ব্যবসা করো। এখন আসছো ভালো মানুষ বাবুকে ফাঁসাতে? দেখাচ্ছি মজা। এরপর তারা উন্মত্ত হয়ে ওঠে। ঝাপিয়ে পরে বাসন্তীর ওপর। সকলে মিলে বাসন্তীকে মারছে। বাসন্তীর চিৎকার তেলিবাবুর উঠোনের বাইরে আসতে পারলো না।  যখন উন্মাদনা কমলো তখন বাসন্তী মরে গেছে। এদিকে উঠোনে চিৎকার করে কাঁদছে লুলা বিকলাঙ্গ শিশুটি।

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত