রফিক জিবরানের একগুচ্ছ কবিতা
শকুনের সাথে
একটা শকুন ঝুলে আছে জলরঙা পোস্টারে
হিরন্ময় চন্দের সেলুনে—
বৃষ্টির ভেতরে একা আকাশের গায়ে; কিনারে—
বিলুপ্ত পাখির তালিকায়,
অভিশাপে হয়তোবা, মানুষ যদিও জানে
শকুনেরা ফিরে আসে মৃত দেহের টানে—
কখনো আউলাঝাউলা দিনে
নাপিতের নিবিষ্ট ধ্যানে
হেলানো চেয়ারে উষ্কখুষ্ক চুল— বসে আছে শকুন,
কথা হয় তাদের নিরালা নির্জনে,
দুজনার ভাবেঅভাবে।

একদিন
একটা সকাল দোল খেতে খেতে আকাশে হারায়
ঝরে দানা— সোনা সোনা— মন রাঙা আগুন—
দুপুর গড়িয়ে বিকেল তুমি লালটিপ—
গোলাপ শরীর বানভাসি— আমি খুশবু আদর চুম্বন।
বিকেল পেরিয়ে মৃত্যু— জটিলতা—হায়—
কুয়াশা ঝরে চোখের ‘পরে নরম শিশির,
ধূলি ঝড়ে— অন্ধ রাত্রি নিরব ব্যাকুল
তুমি মায়ার নূপুর— তুমি সুরের আগুন,
তুমি শুধুই তৃষ্ণা?

অপার্থিব
প্রকাশিত সূর্যের দিকে চেয়ে থাকি—
আকাশের সব নির্জনতা
তোমার মুখের ‘পরে ঝুঁকে থাকে,
ক্লান্ত পথিকেরা আসে অরুণাভ হৃদয়ের খোঁজে।
মানুষ কোথাও যেতে চায়—
মহাশূন্যের ঢেউ তরঙ্গের সোনাদানারাশি,
নি:শ্বাসের আধোবোল— সব বাতাসে মিলায়,
কেবল তোমার মুখপানে চেয়ে থাকার বাসনা
আমাকে জাগিয়ে রাখে।

মহাকালের চুম্বন
আমি শব্দের ভেতর মুখগুঁজে
বীথিকার আগুন স্পর্শকরতে চেয়েছিলাম,
বীথিকা দূরের বাতাসে মিলিয়ে গেল।
আমি উচ্চারিত ধ্বনির ভেতর সত্য খুঁজতে চেয়েছিলাম,
সত্য দূরে সরে গেল।
এখন আমি শব্দ বা ধ্বনি নয়,
মহাকালের চুম্বন—
স্বাদগন্ধের আরাধনা করি।

উপত্যকার আশ্চর্য কাশফুল
মেয়েটির ছুঁড়ে দেয়া রঙধনু ছুঁয়ে
ছেলেটির চোখে জন্মে উপত্যকার কাশফুল
হেমন্ত থেকে হেমন্তে—
গাঙের জোয়ার থেকে পাহাড়ের ভোরে,
গারোদের পরশ নিয়ে সাঁওতালী আলস্যে
পড়শীর পিঠাধুমে বাঙলার উঠানে।
মেয়েটির নাম বুনোফুল, রামনি পঙ্খি বা ধরে নাও
লাইলি অথবা রাধা—
ছেলেটি সিরিল হাঁশদা— বাঁশির সুরে সে আকাশ ভাসায়!
এখানে রঙধনুর সাথে উপত্যকার আশ্চর্য কাশফুল, পড়শীর উঠানে মহাকালের কিংবদন্তী হয়।

জন্ম ১৯৭৪ সালের ১লা মার্চ, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া রাজবাড়ী সংলগ্ন পুঠিয়া গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এগারোসিন্দুর ও তিন ডানাওয়ালা পাখি (শিশু কিশোরদের জন্য)। স্থী দোলন উন্নাহার, পুত্র সায়ন, কন্যা শ্রুতি-কে নিয়ে বর্তমানে রাজশাহী শহরে বাস করছেন।