আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট
( কবিবন্ধু নাহিদ আহসান কে)
১
বর্ষা আর বৃষ্টি দুই বোন দুই সহোদরা।
চেনাজানার মামলা মোকদ্দমা অনেকদিনের হলেও
দুু’জন কে একই ছাদনা তলায় এনে
যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম
বলবার মতো সাহস আমরা হয়নি।
যদিও দুই সহোদরার প্রতি পক্ষপাত সমান ও সমান্তরাল।
আষাঢস্য দিবসে বর্ষা আর বৃষ্টির নৈষ্টিক প্রেম আমাকে
যে–রাস্তা ধরে এগিয়ে নিয়ে যায় অভিসারে
তার কোন বর্তমান রূপ নাই
সকলই শিহরিত আদিম মাদকতা—অনেকটা খাঁজকাটা
মুলায়েম মখমলের মতো ঘুম ও জাগরনের মধ্যবর্তী
ঝুুল ঝুল ঝলন যাত্রা।
দুলি আমি আর দুই সহোদরা।
সবুজ ঘাসের কচি ডগার ছোঁয়ায় দোলে আমাদের রাসলীলা।
দুই সহোদরা অবিবাহিত উপরন্তু ষোড়শী– বয়সের ঘরে খিল দিয়ে
ঘনঘোর ব্ল্যাক আউট রাতে আমার ঘরে কড়া নেড়ে বলে
আমাকে নাও কবি
আমাকে নাও কবি
আমাকে কোলে তুলে নাও কবি
বর্ষা আর বৃষ্টি ষোড়শী সহোদরা কবির প্রতি
অলৌকিক পক্ষপাত–
ইহাই বঙ্গের রীতি বঙ্গের অমীমাংসিত মামলা।
২
বৃষ্টির দিনে বের হই না। মানে বাইরে থাকলেও
ঘরে ফিরে শবাসনে ঝমঝম বৃষ্টির কান্না শুনি।
আমার নয়া ঘরের চাল বেধেছি জোড়া ময়ুর মার্কা ঢেউ টিন দিয়ে।
ময়ুরের নৃত্য আর বৃষ্টির সুরেলা কান্নার তাল লয় মাত্রা এতো
এতো সমন্বিত যে তখন বুঝি প্রত্যকের অনন্যতা কীভাবে গড়ে
তোলে ঐক্যের চাতাল চারণ ভুমি
আমি যখন চাতালে একটু একটু করে ঢুকে পড়ি তখনই
মনে পড়ে রিমঝিম কালারফুল জলে অঞ্জু ঘোষ নেচে নেচে ঢলে
পড়ছে ওয়াসিমের চল্লিশ ইঞ্চি লোমশ বুকের মাঝে।
আমি তো পাশেই ছিলাম।
নায়িকা তুমি দেখতে পাও নি?
অঞ্জু ষোষ দেখতে পাও নি?
অঞ্জু তুমি দেখতে পাওনি?
পরিচালক সাহেব কী এমন ক্ষতি হতো এমন ভরা বর্ষায় যদি
ভিজে ভিজে মাখনের মতো নরম হাত দু’টি আমার
গলা জড়িয়ে ধরার শর্ট লিখতেন?
জবার মতো ঝুলে থাকা তোমার লাল ঠোঁট দু’টি একবার নিজের
মতো করে পাবো বলেই তো জোড়া ময়ুর মার্কা ঢেউটিনের ঘর
তৈয়ার করিয়াছি অঞ্জু ঘোষ!
এই রিমঝিম রাতে তুমি চলে যেও না অঞ্জু
তোমার ওয়াসিম তোমারই থাক
আমার থাক শুধু ঢেউটিনে ঝমঝম বৃষ্টি ঝমঝম অলৌকিক বৃষ্টি
: ৩
আতার পাতায় জমা জলে লেগে আছে
উড়ন্ত পাখির ছায়ার ধারাপাত
আর মেলানো ছাতার মতো আতাগাছ
ধরে রেখেছে এক বর্ষাকাল
বর্ষা এবার তোমায় দিলাম ছুটি
একটু ঘুরে এসো নগরে—
নাগরিকের চোখ খা খা বিরান চাতাল
তোমার নরম জলে ধুয়ে দাও কালচে চোখের পাড়
আমার আতাগাছ ধরে রেখেছে এক বর্ষাকাল
আর আতার পাতায় জমা জলের শরীরে
পাখিদের ওড়াওড়ি
আমাকে কোথাও যেতে দেয় না
গাছের নিকটে এলে আতার সবুজ পাতা
আমাকে ভিজিয়ে দেয়
ঝির ছির সবুজ জলে
এক বর্ষার আতাগাছ আমাকে কোথাও যেতে দেয় না।
৪
এবার বর্ষা হলো খুব।
রেইন কোট কিনেছি।পরি না।
মানে পরা হয় না।মানে পরতে চাই না।
তবু পেস্ট কালারের ভেতর সাদা কাজ করা
একটি রেইন কোট আছে — সেটা ভাবতেই ভালো লাগে।
বর্ষা এলেই হাতের রেখার খুব কাছে জেগে উঠে আমার শৈশব।
রঙহীন ব্ল্যাক হোয়াইট শৈশব।
রেইনকোট মোড়কে নিজেকে দেখেছি
রাস্তার পাশে সেলুনের লম্বা কাঁচে।
ভীনদেশি পর্যটকের ত্রস্তগতি দেখে
ইলেক্ট্রিক পোলের আড়ালে সরে গেছে আমার ভীত শৈশব
আমার উত্তর জনপদের রঙহীন শৈশব
এবার বর্ষায় হাতের খুব কাছে এসেছিল আমার শৈশব
ধরতে পারিনি– হাত ফস্কে হাতের আঙুল গড়িয়ে
সরসর করে নেমে গেছে আমার শৈশব
৫
বর্ষাকে বলেছি একগোছা কাগজের কদম ফুল বানিয়েছি
জলরঙে কাজ করা।
তোমার সময় হলে ভিজিয়ে যেও
রেলিঙে ঝুলিয়ে রাখব।
একটা ডালও রেখেছি।
দেখি কৃষ্ণ বাঁশি নিয়ে আসে কিনা?
আমার বাঁশির ছিদ্রে হাওয়া ইন্সস্টল করেছি।
কৃষ্ণের সাথে সঙ্গত করতে করতে দেখব
নৃত্যের ভেতর নর্তকীশ্রেষ্ঠা
নর্তকীশ্রষ্ঠার ভেতর নৃত্য।
নর্তকী ও নৃত্য আলাদা করে করে দেখব কুল ও ঢেউ
কে বেশি পারঙ্গম?
কে কাকে ভাঙাভাঙির খেলায় মাতাল করে আমার পৃথিবী
বর্ষা, ভিজিয়ে দিয়ে যেও কদম ফুলের গোছা।
খালি পায়ে এবার মল পড়বো না।
কংক্রিটের সড়কে আমার পা হবে রক্তে রক্তে সয়লাব
নাগরিক তুমি হোলি খেলা দেখেছো দেখনি
লাল লাল বলক ওঠা রক্তের মরনদশা।
বিনোদনে বিস্ফারিত নাগরিকের রক্তচোখ।
আসলকে ভাবে নকলের কেরদ্যানি।
রক্তপায়ে রক্ত নিয়ে রক্তজিবে নৃত্য নৃত্য খেলব
ও কৃষ্ণ বংশিবাদক কালের সুর তোলো
ও কৃষ্ণ বংশিবাদক কালের সুর তোলো
ও কৃষ্ণ বংশিবাদক কালের সুর তোলো
রাধা আমি এবার বৃষ্টিদিনে ভিজাবো
আমার জলরঙে কাজ করা কাগজের কদম ফুল।
৬
আধেক ছায়ার শরীর নাড়ার আগুনে পুড়ে গেছে
আধেক আলোার শরীর সতেজ সপ্রাণ ইতিকথা
জলপাই পাতা সেই স্মৃতি সেই ঝড় বৃষ্টি বাদলের
কান্নাপাঠ ছবিপাঠ টুকে রেখেছে শিরায় শিরায়।
ইস্কুল মাস্টার ব্ল্যাকবোর্ডে বসিয়েছে গণিতের বাজার।
শিরায় শিরায় রক্তবিন্দু সাদাবিন্দু পোড়াবিন্দু কাঁদে
আর কাঁদে।ইস্কুল মাস্টার চকে লিখে মুখে লিখে
চরাচর জুড়ে পড়ে থাকা সেই স্মৃতি সেই ইতিকথা
অভাজনের স্মৃতিপাঠ কথাপাঠ অমৃত সমান
যেই শুনে ভক্তিযোগে সেই সেই হয় রূপবান