আজ ৭ জুন কবি,সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিম মন্ডলের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
নথভাঙা মেয়েটি
১
নথভাঙা মেয়েটি ঝুম ঝুম করে হেঁটে যায়
সিঁথিতে তার চওড়া কপাল
জবার মতো, তাকে দেখেছি বহুবার
একই দর্শক আমি তালির ভয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে
শুনেছি খুচরোর অহংকার
২
খুচরো ভর্তি পকেট আমার
জবার জন্য কিনি প্যাকেটভর্তি লাল
ভাতারের ভাতে হাসপাতাল ফোটে
ফুটে ওঠে বালির কপাল… নথভাঙা মেয়েটির
নেই কোনো সিঁথি, আমরা আসলেই ভয়ঙ্কর দালাল
৩
দালালের দ্বেষ নেই, দেশ আছে
নথভাঙা মেয়েটির আছে জীবন্ত কঙ্কাল
তাকে দেখেছি? না, তাকে একেবারেই দেখিনি
ছায়ার মধ্যে নাকছাবিগুলো নড়তে নড়তে যেভাবে নক্ষত্র হয়
সেখানে ঋতুর ভিতর ঋতুগুলো— গার্হস্থ্য সকাল
কবিপুত্র
ঘুমের ঘোরে বাবা ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে
আমি পাশের ঘরে থাকি
একবারের জন্যও পারি না তাঁর সামনে দাঁড়াতে
আমি কবিপুত্র
তারপর সারারাত যদি স্বপ্নে আমায় দেখে?
ছবি
শীত আসলে মনে পড়ে—
একটা বুড়ি-সকাল খেঁজুর রসের ভিতর
হাবুডুবু খাচ্ছে
আর শহর তার ফুরিয়ে যাওয়া যৌনতা নিয়ে
নিজেদের তলপেটে আঁকছে
কাঁটাআলা মাছের ছবি চুপিচুপি
কুসুমের অন্ধকার
১
ডিম ফুটে ওঠার আগেই
কুসুম ফুটিল
গাছে গাছে পাখিদের আনন্দ, ব্যাধের হাহাকার
২
কুসুম জানে না
তার ফুটে ওঠার গল্পে
তির তির রক্ত আর ছলাৎ ছলাৎ কান্না
ওই ‘দারুচিনি দ্বীপ’কেও ভিজিয়ে দিতে পারেনি
৩
কুসুম গলাধঃকরণ অতি কঠিন কাজ
তবুও জলের জানাজায়
পাখির খোঁজ কে রাখে?
বিষাদপ্রিয় জোছনারা
১
ইদানিং আর বাজারে যাচ্ছি না
এখন বাড়িতেই বসে হাট
হাটে সস্তায় বিক্রি হয় বিষাদ, ঘৃণা, তাচ্ছিল্য
২
আমি যে পথেই যাই— ডিম নিয়ে ফিরি
হলুদ কুসুম, সিদ্ধ খাই আর সাদাটুকু তুলে রাখি
সাদাটুকু বড়োবেশি রহস্যজনক মনে হয়
৩
বিষাদপ্রিয় জোছনাদের সঙ্গে দেখা হয় না, কথা হয়
কথাদেরও আকাশ আছে জানাজানি হলে চাঁদ খসে পড়তে পারে
এই ভয়, আমার ভিতর ঢাক বাজাচ্ছে, আমি একা রাত গাইছি
৪
একটা চাঁদকে কুটে টুকরো টুকরো করা হল। বড়ো পিসটি যথাক্রমে তোমার পাতে পড়ল। তুমি কি আনন্দিত হবে অপার জোৎস্নার লোভে? না কষ্ট পাবে চাঁদের নির্মম দশাতে?
পদার্থবিদ্যার ক্লাসে
পদার্থবিদ্যার ক্লাসে এমন কোনো ম্যাডাম থাকে না যাঁর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা যায়।
অপেক্ষার আরেক নাম ‘ম্যাগনেটিজম’। অবহেলায় পড়ে কতবার চুম্বকত্ব হারিয়েছি। বিরাট একটা ঘর্ষণ বল বুকে নিয়ে তাকিয়ে থেকেছি ঘড়িকাঁটার দিকে। বুঝেছি— আমার কোনো দর্পণ নেই। যে আয়নায় মুখ দেখি, তা আসলে অভেদ্য কোনো কালো পর্দা।
এরপরও পদার্থবিদ্যার দিকে ঝুঁকে যাই। ঝুঁকতে ঝুঁকতে নিজের অভিকর্ষজ প্রেম ছড়িয়ে দিই, অনভিজ্ঞতার কম্পাসে। কম্পাসে কাঁপুনি দিয়ে পথ আসে। পথে ম্যাডামের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হয়ে যায়।
