| 27 জানুয়ারি 2025
Categories
গদ্য সাহিত্য

হাটের মানুষ বাটের মানুষ – ১১ । যাজ্ঞসেনী কৃষ্ণা 

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট
 
 
 “ব্যাটা ছেলেকে পায়ের তলে রাখতে হয়, বুঝলে না? মা কালী কেমন শিবকে রেখেছে! ওদের একদম বেশি লাই দিতে নাই। দিয়েছ কি তোমার মাথায় উঠে তোমাকেই মাটিতে টিপে মারবে —!”
  সত্যি কথা বলতে কি, এই সংলাপ এমন একজন মহিলার কাছে শুনেছি, তাঁর নিজে নিজেকে ‘মেয়েছেলে’ বা ‘মেয়েমানুষ’ বলতে দ্বিধা নেই, কিন্তু কোনো পুরুষমানুষের মুখে ও শব্দ শুনলে তাঁর বাক্যবাণের চোটে অমন পুরুষমানুষটির শরীর মন অদৃশ্যভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে সেদিনের ঘুম উড়ে যাবে।
        মেয়ে বা মহিলাদের মেয়েছেলে বা মেয়েমানুষ বললে অনেকেরই রাগ হয়, যা খুবই সংগত। বলাটা উচিত তো নয়ই, বরং শিভালরিতে বাধা পাওয়া উচিত। সুতরাং নারীবাদী ও মানবতাবাদী সকলেই রে রে করে অকুস্থলে ছুটে আসবেন স্বাভাবিকভাবেই ।
       অবশ্য শব্দটি কোন স্তরের মানুষ প্রয়োগ করছেন সেটা বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। যদি তথাকথিত নিরক্ষর ও ‘গেঁয়োগোব্দা’ মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়, তবে সময় সময় ক্ষমা ঘেন্না করা যায়। তাঁরা মেয়েদের হ্যাটা করার জন্য শব্দটি সদাসর্বদা ব্যবহার করেন না সেটা যেমন সত্যি, অনেক সময়ই আবার উল্টোটাও হয় এবং বেশি বেশি করেই হয়। মেয়েদের প্রতি চরম তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই তাঁদের লক্ষ্য হয়ে থাকে। শেয়ানা শিক্ষিত পুরুষকুলের অধিকাংশ যেমন এটিকেট মেনে চলেন, আবার সেই অধিকাংশের প্রতিভূ স্বরূপের দ্বারা ইদানীং বিভিন্ন সিনেমা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নানা সিরিজ-টিরিজে মহিলা চরিত্রের উদ্দেশ্যে, কখনওবা আপামর মহিলাকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল স্থানীয় উক্ত ‘মেয়েছেলে’ ও ‘মেয়েমানুষ’ যথেচ্ছ ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। সময় নাকি খুবই বদলে গেছে, তাই গালাগাল দিয়ে কথা বলাই নাকি যথেষ্ট আধুনিকতা! মেয়েমানুষ-এর উল্টোদিকে ‘পুরুষমানুষ’ বলেও একটা শব্দ চালু আছে বটে! তবে তা কস্মিনকালেও গালাগাল বিবেচ্য নয়। এদিকে যে অর্থে ‘মেয়েমানুষ’ শব্দের প্রয়োগ হয় – দুঃখের কথা হলো, বহুক্ষেত্রেই মেয়েরা তা প্রয়োগের ভ্রান্তিতে দড়িদড়া ছেঁড়া নাওয়ের মতো হাওয়ায় তুমুল ভেসে গিয়ে কখনও কখনও সেই অর্থকেই মান্যতা দিয়ে থাকে।
   আমার হাট-বৃত্তান্তে যে শিবকে কালী পায়ের তলে রেখেছেন সেই ‘শিব’ ভদ্রলোকের নাম রমণীমোহন। কিন্তু এত সাধের নামটা সম্ভবত ‘হাটে’ মারা যেতে বসেছে! এই ভদ্রলোক সেহারার হাটে এসে এক রমণীর মন হরণ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তারপর আর নামমাহাত্ম্য কিছুমাত্র বাকি রইল বলে মনে হয় না। কারণ সেই রমণীমোহনকে আপাদমস্তক লাভ করার পর উদ্দিষ্ট রমণীর কাছে তাঁর আদর ও সোহাগ অনেকটাই মজে গিয়ে ‘মোহন’বর্জিত হয়ে গেল। আপনারাও আগে শুনুন, তারপর ঠিক করবেন আমি যা বলছি, তা ঠিক না, ভুল।
   সে যাই হোক, শুরুতে যা বলছিলাম -। এ গল্প রমণীমোহনকে নিয়ে তত নয়, বরং তাঁকে ডিঙিয়ে তাঁর রমণীই গল্পটির কেন্দ্রে। ধরা যাক, তার নাম সুখী। আসল নামটা না লেখার কারণ আছে। বর্তমানে তার বয়স এসে পঞ্চাশের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল বলে। তার গাত্রবর্ণ রাধার পাশে কষ্টিপাথরের কেষ্টঠাকুরের মতো। আর এইখানে বলে রাখি, রাধা ও কৃষ্ণের গাত্রবর্ণ আমাদের কাহিনীর দুই নারী-পুরুষে পুরো বিপরীত। রমণীমোহনের দেহের গড়নটিও রাধারাণীর কাছ থেকে ধার করা বুঝি! সুখীর মাথায় কিছু কিছু সাদা চুল উঁকিঝুঁকি দেয়। তাই মাথার চুল যত্ন করে কলপ করে তেল দিয়ে আঁচড়ে বাঁধা। তেল চুকচুকে চুলের বেণীটি ঝোলানো। মুখমন্ডলও তৈলচর্চিত, মুখের গড়ন অতি সাধারণ। পরণে টকটকে রঙিন শাড়ি ব্লাউজ, হাত পায়ের আঙুলে নখরঞ্জনী। কিন্তু কপালে তার কালো রঙের টিপ।
   আমি জিগ্যেস করি, সুখীদি, কালো টিপ পরো কেন? যেদিনই দেখি কালো টিপ -!
        “আ মরণ আমার! আমি যে বেধবা মানুষ! লাল নীল টিপ পরলে লোকে নানা কথা বলে। নাহলে আমার কি সবসময় কালো টিপ পরতে ইচ্ছা করে?”
       একেবারে ন্যাহ্য কথা ধরে নিলে তার শাড়ি ব্লাউজ এবং – এবং তার জীবনে রমণীমোহনের ভূমিকার কথা অনায়াসে তোলা যায়। আমিও নিশ্চয় চরম আকাট, তাই প্রশ্নটা করেও ফেলি। তাতে সে রুদ্রমূর্তি হয়ে বলে ওঠে, “বেধবা বলে কি আমি মানুষ লই? আমার শখ আহ্লাদ কি সেই আঁটকুড়োর ব্যাটার সঙ্গে চিতায় তুলে দিয়েছি? যে যা পারে করুক গে, বলুক গে, আমার ড্যাস – !”
     ড্যাসে ইচ্ছামতো শব্দ বসিয়ে নিন পাঠকবৃন্দ!
     আমি বলি, “সেই জন্যই তো বলছি, সুখীদি! তুমি কী রঙের টিপ পরবে তা লোক ঠিক করে দেবার কে? তুমি ইচ্ছে মতো পরো তো!”
“ঠিক বলেছ! আমি তাই পরব কাল থেকে। যেটা আমার ইচ্ছা”। বেশ বেপরোয়াভাবে বলেছিল, যা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গি। ক’দিনের পরিচয়ে খুব সহজে আমার কথা শুনে টিপের রঙ বদলে দিল। লাল, নীল, সবুজ টিপ ওর কপালে সুখের সঙ্গে লেপটে রইল তারপর থেকে।
  আমাদের সুখীদির স্থায়ী একটা সবজির দোকান আছে বাজারে রাস্তার পাশে। প্রতিদিন খুব সকালে সে রঙিন শাড়ির আঁচল উড়িয়ে সুখী সুখী মুখে এসে পলিথিনের বাঁধন থেকে আগের দিনের বাসী শাক সবজিগুলোকে মুক্ত করে গুছিয়ে রাখে। ফড়েদের কাছ থেকে টাটকা আনাজ নেয়, সেগুলো সাজায়। কাজগুলো শেষ হলে পর তার রমণীমোহন এসে পড়েন। তিনি নাকি ঘুম থেকে সামান্য দেরি করে ওঠেন!
    দোকান চালু হয়ে গেলে সুখীদির মুখে সন্তোষ, রমণীমোহন এসে চুপচাপ দাঁড়ান। ব্লাউজের ভেতর থেকে ছোট্ট পার্স বের করে তাঁকে টাকা দিয়ে সুখীদি বলে, “এই ঢ্যামনা, যা চা নিয়ে আয়!”
      প্রথম যেদিন আমি এই জোড়াকে দেখেছিলাম, আর নির্দ্বিধায় গালাগাল খেয়েও দাঁত বের করে হেসে টাকা নিয়ে রমণীমোহনকে দেখেছিলাম চা আনতে যেতে – সত্যি বলছি, আমি কিছুক্ষণের জন্য স্থানু হয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, কোনো কারণে হয়তো এই লোকটার সঙ্গে মহিলার রাগারাগি হয়েছে, তাই গালাগাল দিলেন! লোকটা হার স্বীকার করেছেন, তাই গালাগাল হজম করলেন। কিন্তু পরে পরে দেখেছি, রোম বহুদূর! এই ঘটনা প্রতিদিনের! এবং এই সম্বোধনও!
      হাটবারে তাদের বেশি ব্যস্ততা সত্ত্বেও সুখীদিকে এক হাটবারে তারই ভেতর ফাঁক ও রমণীমোহনের অনুপস্থিতিতে ফাঁকায় পেয়ে জিগ্যেস করলাম, “উনি কে? তোমার স্বামী?”
       হাত চুলকোতে চুলকোতে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে উত্তর দিল, “স্বামী হতে যাবে কোন দুঃখে? ওকে আমি রেখেছি।”
“ও আচ্ছা! তোমার ভাইটাই কেউ! ওনার বোধহয় কেউ নেই?”
“মরণ! ও ঢ্যামনার সব আছে। আমার ভাইই বা হতে যাবে কোন দুঃখে? ও আমার নাং – লাগর গো লাগর!”
  মাথায় আমার বজ্রাঘাত হলেও এত অবাক হতাম না। পরম বিস্ময় লুকিয়ে এবং বজ্রাঘাত সামলে একটু পরে বললাম, “এই দোকান তাহলে কার?” আমার ধরণা হলো, দোকান রমণীমোহনের, সুখীদি তাঁকে বেচাকেনায় সাহায্য করে।
       কিন্তু সুখীদি খদ্দের সামলে বলল, “আমার দোকান! সেই জন্যেই তো ও কুটে (কুঁড়ে) মিনসে পড়ে আছে আমার কাছে। আমার ঘরে থাকে, খায় – ! সপ্তায় একদিন ফেমিলির কাছে যায়, সেদিন ওর হাতে কিচু ট্যাকা দিই, দোকান থেকে ব্যাগ ভরে আনাজপাতি দিই”।
  আমার কানে ঝাড়া এক মিনিট তালা লেগে থাকে, পুরো বাজারটা মুহূর্তে নিঃশব্দ হয়ে যায়। আমি ঠিক শুনলাম তো! সুখীদি কারও রক্ষিতা নয়, বরং ও নিজেই এক ‘রক্ষিত’এর ‘রক্ষক’! হ্যাঁ, ‘রক্ষিত’ এই শব্দটি আমি সচেতনভাবে ব্যবহার করলাম ‘রক্ষিতা’র বিপরীত শব্দ হিসাবে আর খুব খুশিও হলাম। খুশি হলাম – এক নারীর ‘রক্ষিত’ রাখার বিষটির কারণে না, বরং সমাজের তথাকথিত নীচুতলার তথাকথিত এক ‘মেয়েমানুষ’এর জোর দেখে। আজকাল পয়সাওয়ালা ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বহু বয়স্কা মহিলা অল্পবয়সী পুরুষকে এসকর্ট রাখেন – এ কোনো নতুন কথা নয়। তবে আমি ভাবছিলাম, আমাদের সুখীর অদৃশ্য জোরটা কোথায় আর কোন পর্যায়ে যে তার থেকে বয়সে বছর দশের মতো ছোট, তার পাশে মোটের উপর এক রূপবান ও নিরীহ মতো ‘পুরুষমানুষ’ টানা এক যুগ তার রক্ষিত হয়ে রয়ে গেছেন! তাঁকে সে ক্রীতদাসতুল্য জ্ঞান করে এন্তার ফাই ফরমাশ খাটায়, নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়! কেবল ও যখন অন্যত্র যায়, তখন রমণীমোহন দোকান সামলানোর যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। নয়তো টাকা পয়সার জিম্মা সুখীদির এবং সুখীদির। এরপরও ভদ্রলোক চলে যাননি কেন – সে প্রশ্নও আমার মনে আসে। মনে হয়, সুখীদির কথাই ঠিক। ভদ্রলোক কুঁড়ে, সংসার প্রতিপালন করার ক্ষমতা নেই। তাই সুখীদির আয়ে, সামান্য পরিশ্রমে নিজের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হয়েছেন। কিন্তু শুধু সেইজন্য এইভাবে পড়ে থাকতে পারে কেউ?
   পরিচয়ের কিছুদিন পর সুখীদিকে একবার জিগ্যেস করলাম, “তোমার ছেলেমেয়েরা কেউ আপত্তি করে না রমণীমোহনের ব্যাপারে?”
       হেসে উত্তর দিয়েছিল, “আমার ছেলেমেয়েরা খুব বাধ্য! এমনিতে ও মিনসেকে কিছু বলে না, কিন্তু আমি যদি বলি, ‘যা তো, মুখপোড়াকে ‘ঘুঁতিয়ে’ দিয়ে আয়’, তখনই আমার তিন মেয়ে আর এক ছেলে – দল বেঁধে রমণীমোহনকে তাড়া করবে। তখন যদি ওর মুখের আবস্তা দ্যাখো তুমি – ” বলে হো হো হাসে সে। হাসিটা হাটের পাঁচমিশেলী শব্দের ভেতর ছড়িয়ে পড়ল রঙমশালের ফুলকির মতো।
   আমি হতাশ হয়ে ভাবলাম মহিলার মাথায় কি ছিট আছে? নাকি আমার মাথায় ছিট হলো – কী শুনতে কী শুনছি! আমার মুখে ঘটি পড়ে যাওয়া অবস্থা দেখে বোধহয় সুখীদির দয়া হলো। বলল, “আমার তিনটে পাঁঠী ছাগল, একটা পাঁঠা! ওদের কিন্তু আমি ছাগল বলতে পসন্দ করি না, ওদের নাম – ফুলি, হেমা মালিনী, লালী আর উদো। নাম ধরে ডাকলে ম্যাহ্যাহ্যা করে সাড়া দিয়ে ছুটে আসে, ধূর থেকে আমাকে দেখলে মানুষের বাচ্চা যেমন অনেকক্ষণ অদর্শনের পর মাকে দেখে ছুটে আসে আমার ফুলিরাও তাই”। শুনে আমি বাকরহিত হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
   একদিন হাসতে হাসতে বললাম, “সুখীদি, তুমি রমণীমোহনকে অমন দূচ্ছাই করো কেন?”
“কে বললে? কার ঘাড়ে কটা মাথা যে বলবে আমি আমার লাগরকে দূচ্ছি করি?” তারপর চোখ টিপে ইশারা করে রমণীমোহনের দোকান অভিমুখে আগমন বার্তা জানিয়ে ফিসফিস করে বলে, “মেয়েছেলেদের উচিত ব্যাটা ছেলেকে পায়ের তলে রাখা, বুঝলে না? মা কালী কেমন শিবকে রেখেছে! ওদের একদম বেশি লাই দিতে নাই। দিয়েছ কি তোমার মাথায় উঠে তোমাকেই মাটিতে টিপে মারবে। দুব্বলতা দেখাবে ক্যানে?”
         আচ্ছা, ব্যক্তিত্বের এই জোর সব মেয়ে অর্জন করতে পারে না কেন? নিজের প্রতি পুরুষের টানকে টিকিয়ে রাখার সুখীদির এই ‘গোপন কৌশল’ও যদি মেয়েরা অর্জন করতে পারত!
       রমণীমোহন এসে পোষা মুনিয়ার মতো (নাকি সুখীদির সেই পোষ্যদের মতো!) সবজির পাশ কাটিয়ে গিয়ে সুখীর পাশে অদৃশ্য খাঁচার দাঁড়ে বসলেন। তখন এই ছোট দোকানে সুখী যেন বাবু, আর রমণীমোহন কর্মচারী। খদ্দেরের চাহিদা মতো শাক সবজি দাঁড়িপাল্লায় মাপা, প্যাকেট করার কাজ তাঁর, সুখীর কাজ টাকার হিসাব দেখা।
   আমি রমণীমোহনের গলার স্বরটাও ভালো মতো শুনিনি কোনোদিন। যখন সুখীদির বাঘা গলার প্রশ্নে উত্তর দিতে হয়েছে ওনাকে, তখন তাঁর কন্ঠের স্বর এত মৃদু ও ধীর যে কানে প্রায় আসেই না, হাট ও বাজারের চিৎকৃত শব্দরাশির ভেতর একেবারে না ফোটার মতো।
  কিন্তু রমণীমোহনের কি মেরুদন্ড বলে কিছু নেই? এত গালাগাল, দুচ্ছি সহ্য করে পড়ে আছেন কেন? এর উত্তর জানা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। সরাসরি তা জিগ্যেস করাও যায় না।
   রমণীমোহনের উপস্থিতিতে সুখীদিকে চোখের ইশারা করে বললাম, “সুখীদি, তুমি রমণীমোহনকে একটুও ভালোবাসো না, না গো? সবসময় খারাপ কথা বলে বকাঝকা করো, এটা কিন্তু ঠিক নয়!”
       রমণীমোহন দেখি আমার কথা শুনে বেশ বিব্রত। সুখীদির দিকে একবার তাকালেন, কিন্তু সে কিছু উত্তর না দিয়ে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। তাই দেখেই হয়তো রমণীমোহন ব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলেন, “ওটাই ওর ভালোবাসার ধরন। বরং যেদিন ভালো ভালো কথা বলে সেদিন আমার ভয় করে, বুঝতে পারি কপালে চড়-থাপ্পড় নাচছে। কিন্তু ও পাগলী আমায় খুব ভালোবাসে!” পরিচয়ের পর এই কয়েক মাসের ভেতর প্রথমবার রমণীমোহনের মুখে হাসি দেখলাম।
   সুখীদিকে এই কথার পর এত তৃপ্ত লাগল কী বলব! এদের দুজনের কে যে কাকে আদরে সোহাগে অধিক জড়িয়েছে আমি বুঝতে পারি না। জীবনের কোন অভিঘাতে একে অপরের সঙ্গে মিলেছে কে বলবে? একজোড়া সাধারণ হাটুরে মানুষের ভেতর এও এক জীবন দর্শন। ধন্য ‘রক্ষক, ধন্য ‘রক্ষিত’!
error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত