| 25 অক্টোবর 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

কুহক মাহমুদ এর কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

কবি কুহক মাহমুদ গতকাল না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ইরাবতী পরিবার শোকাহত। কবির কবিতায় আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি কবিকে।


 

ঘামগন্ধে স্নাত পিঁপড়া

পরিচয়হীন নষ্ট স্রোতে জন্ম নিলো অপুষ্টির গর্ভাশয়ে চিৎকার

সাবধান না হওয়া সর্বনাশের পেটের ভেতর জন্মানো দু:খের ভ্রূণ

ভুলেছি তার নাম বা ধরে নিতে পারি ‘রেজরে না থাকা সেফটি’

সঘর-অঘর প্রভেদ না খোঁজা কালো কাপড়ে বাঁধা চোখ যা দেখেনি

দেখেনি সরকার, জানেনি ক্ষমতা, শোনেনি রায়

পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা হলো, ঘোলা নদী কান্নার শ্লোগান

ফুটপাথ ধরে হেঁটে গেলেই যা লালিত অযত্নের স্বপ্নবাজ

কাঁপিয়ে দেয় ভূতল- ঝাঁকুনি দেয় ‘খোদার আরশ আসন ভেদিয়া’

তখন কেঁপে ওঠা ঈশ্বর বিড়ালের হুংকারে বলে- ওদের ধরো

প্রজন্মের প্রমাণিত নাম অংকনের সিল-গালা মারো

তাই কি হয় বলো!

লজ্জাগুলো কিষানের কাস্তে আর কুমারের হাপরের তলায় হাসে-

এসব এখন রাষ্ট্রের গুদামে জমানো ধানের দুধ

দুর্ভিক্ষের উল্লাস সেলাই করা জঠরে অন্নের পরিতোষে ভাত

বসন্তের মরা পাতা গন্ধবুকে বৈশাখী ঝড় তুমি মৌসুমি ভগবান

‘যুক্ত করো হে’ শান্ত ফাঁসির দাবী, বটের ঝুড়ি নুলো জগন্নাথ!

বেঁচে থাকবো আমি তোমার দেহে সমান্তরাল বিচরণ কাচপোঁকা

দুইবেয়ারা ঘুণের পাল্কিতে কাচপোঁকার গায়ে ভীষণ প্রেমজ্বর- জরা

 

 

নবজীবনের কান্না
সহসা কার্নিশে থমকে দাঁড়ালো
বিকেলের এক ফালি রোদ—
দৃশ্যটাকে বিষাদের আলপনা ভেবে নিলাম
কারণ আজ তোমার মন খারাপ!
জানালায় মলিন মুখে দাঁড়াতেই তা বুঝে নিয়েছি
মুহূর্তমাত্র পরেই সরল রেখাবেꜛর অধিক সত্যি
সন্ধ্যা নামবে, টিয়াগুলো উলুধ্বনি দিবে;
মানুষটি আজও এলো না—
নৈর্ব্যক্তিক বিকেলে তবু বেঁচেই থাকে বাঁচা
ধূপ সন্ধ্যার সিঁড়িতে একটি অপেক্ষা।
যে আবীর ছড়িয়ে গেলো গোধূলি
উনুনে চড়ানো বিকেলের লালিমায়
যে আগুনে পুড়েছিলো বাবার চিতা-ভস্ম
সে পোড়া চন্দনের গন্ধে, ভিড় থেকে উপকণ্ঠে
ডেকেছিলে কি না; তা আর মনে নেই
মনে আছে—
কর্তাল হাতে বেড়িয়েছে প্রজাপতি
ভ্রূণ যে আজ ছয় বছরের আত্মজা, আর তুমি?
‘ভিখারির হাসির মতো বৃষ্টি
বুক পাঁজরে লিখিত বিষাদ পুরাণ
দু’জনেই ভাতের মধ্য দিয়ে কেঁদে ওঠো
খেয়ে নিয়ে তাজা হিংসার ভিক্ষান্ন!’
এ ধুলোর বয়ানে পরিযায়ী চখাচখি জানে
কোথায় বিনাশ, অযাচিত ভ্রান্তিবিলাস; অথবা সুখ!
প্রতীক্ষার প্রবল মায়ায় ইন্দ্রজিতের শব্দবালক
উচাটন-আনমনা ঠিক এখন যেমন
কিংবা তারপর—
অচ্যুত আর্তনাদে বাঁচবে মৃত চাহনির গ্লানি।

 

 

জোছনা

নিজেকে যখন একলা লাগে

গহন গভীরতায় রাত সঙ্গী হয়

মৌনতা ভাঙ্গাতে চায় মনের ঘুম

বলতে থাকে মনকে মন-

দৃশ্যের দর্পণে নিজেকে লুকিয়ে রাখিস না

জাগিয়ে রাখ্, মগ্নতার তন্দ্রানীল চেতনা।

আমি কল্পনার কৈলাসে চড়ে

বাতাসের ঈগলে ভেসে যেতে চাইলে-

দূর থেকে দূরে হারিয়ে যাবার টর্নেডো

মনে করিয়ে দেয়-

সংসারে আমিও বাতিঘর ছিলাম

নির্বাসিত অস্তিত্বে এখন দাসানুদাস

জুয়োর টেবিলে হারিয়ে ফেলেছি

কবিতা লিখবার খাতা।

প্রতিশ্রুতির হাতুড়ি জানে

দ্রৌপদী শাড়ী রোদে ভিজে, বৃষ্টিতে শুকায়

চৈত্র খরা তাড়িয়ে দেয়-

আষাঢ় জল জ্বালা জুড়ায়। তবু-

জমে আছে আগামীর ঋণ

একা হলেও-

শোধিতে হবে আত্মজের ঋণ।

আকাশ পানে তাকিয়ে দেখি

স্তব্ধতার ভাষা খুলে মায়াবী চাঁদ-

আমি উপোষী মরি নাঅমাবস্যায় লুকাই-

দেখো তুমিরুপোর কাঠিতে মূর্ছিত লক্ষ নক্ষত্র

জেনেই রেখো-

জীবনের চলাচল নয় সুখ প্লাবনের পানসি

সমাধি আঁকড়ে ধরে হলেও

বাঁচো-বাঁচাও রক্তের টানাটানি

পূর্ণিমা দোল খায়- পাতার দোলনায়

ভাঙ্গা কাঁচের হাসিতে ঘুষঘুষে জ্বর

জণ্ডিসের হলুদ অবস্তু ঝিকিমিকিয়ে গলে নামুক-

ভ্যাবলার বিহ্বল শূন্যগর্ভে আশ্বিনের কিশোর

যৌবনের প্রস্থানে রঙের তামস প্রৌঢ়

হাহাকারের বোবা কান্নায়

অশান্ত উত্তাল কল্লোল আবেগ

বেঁচে থাকতেই হবে-

তবে বেঁচে থাকুক, ঠোঁটের লুব্ধকে স্তব্ধতা।

শশাঙ্কের দিকে পিঠ দিলাম বলে

কেউ বলে উঠলো-

আয় শুদ্ধতায়, জ্যোৎস্না স্নানেই পূর্ণতার বিভা।

 

 

কলা পাতার পন্ডিত

স্বগৃহে কথা মালার কল্পিত ঘরে
আজো তোমায় ভাবি
গল্পের মতো।

যখন গোধূলির লালিমা লুটায় ব্যাল-কনিতে
কার্নিশ চুইয়ে নামে স্মৃতি
বোগেনভেলিয়া ছুঁয়ে যায় অধর
ধোঁয়া ওঠা কফি কাপ
ঠাণ্ডা হয়,
আমি বিভোর হই
খরগোশ হয়ে দৌড়ে বেড়াই আবহানী মাঠে
শার্দূল শকুনের ভয় থাকে না
তখন
সোনালী ডানার চিল, হিংসে করে তোমায়
দ্বাররক্ষী যে আমার বন্ধু!!

সন্ধ্যার আঁধার নামে
একটা দু’টো করে সাঁঝ বাতি জ্বলে
জ্বলে ঐ পশ্চিমাকাশের ধ্রুব তারা
ইশারায় বলে
‘ঘরে যাও রাতকে বরণ করো’
ঠিক যেমন তুমি বলতে
মোলায়েম মাখন স্বরের কাঠিন্যে
খুশবু রেস্টুরেন্টে!!

আমি মনে মনে বলতাম
ঈশ কি আমার কলা পাতার পণ্ডিত
আবার শাসন করে,
প্রচণ্ড ভালো লাগায়
তখন আমার কান্নার ঝাঁপি খুলে যেত
টলমল করা জল তোমায় দেখাবোনা বলে
পালিয়ে আসতাম,
পিছন থেকে তোমার চিৎকার
‍”ভালো থাকিস”
সেই শব্দের প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাবার আগেই
আবিষ্কার করতাম নিজেকে ব্যাল-কনিতে।।
সেই মুখ চোরা আমি
আজো তোমায় বলতে পারিনি
ফিরিয়ে দিতে কথা
“তুইও ভালো থাকিস”
লুকিয়ে রাখি নিজেকে
যেমন প্রতিটা মানুষ লুকিয়ে রাখে
মনের ঘর
নিজের একটা কথা বলা ঘর।।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত