| 9 অক্টোবর 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

মাহফুজা অনন্যা’র একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

পাতাখেকো

 

হত্যা ও রক্তপাতের উপর প্রতিষ্ঠিত এ পৃথিবী

এ পৃথিবী উগ্র, ক্ষুধার্ত চিরকালের…

 

প্রকৃতিও সৌম্যশান্ত নয় কোনোদিন

পতঙ্গের নরম শরীর খায় পতঙ্গভূক প্রাণী

মথ মাকড়সার শিকার,

ঔষধিলতায় চলে শিকারকান্ড

বৃক্ষের সর্বনাশে উলুধ্বনি দেয় পরগাছা…

 

পৃথিবীর সব পথে নিজস্ব অভ্যাসে জ্বলে দু’রকম আলো

একটি তার গাঢ় সবুজ অন্যটি ঘুটঘুটে কালো।

 

মানুষ খেয়ে বাঁচে কিছু নিরীহ প্রাণী

প্রকৃতির কীট যারা, তারা কচি-সবুজ পাতাখেকো।

 

প্রকৃতির স্বভাবে একজন শিকার অন্যজন শিকারী

নিষ্ঠুরতার পরিহাসে হাসে প্রকৃতির নীল নকশাধারী…

 

 

 

সুযোগ্য প্রেমিক

 

প্রায়ই আমার শরীরের কাপড়গুলো প্রশ্ন করে তার ব্যাপারে

কীভাবে সে আমার শরীর থেকে কয়েকটুকরো দেহ ছড়িয়েছে?

 

বলে, তার মধ্যে তো কোন প্রেম নেই, মায়া নেই

আছে অচেনা শরীরের টান

আমাদের সন্তানেরাও যেন কেউ কারো নয়

ওরা শুধু আছে;

কেউ কারো অংশ নয়…

 

আমিও জানি ‘একাকীত্ব ও অন্ধকার’ আমার সুযোগ্য প্রেমিক

আমার আত্মায় কেবলি তাদের বাস

 

বয়সী চাঁদের মতো তারা অসহায় কিংবা স্তনের তলদেশে মুখরাখা অবুঝ শিশুর মতো

 

 আমাকে জড়িয়ে রাখে মায়ায়…

 

 

পৌনঃপুনিক

 

আশ্বিনের তরল সকালে এ শহর ছেয়ে গেলো আলকাতরার মতো অন্ধকার

 

আকাশে জ্বলা রাশভারী সূর্য

দু’হাত ঠেলতে পারেনা সে অন্ধকার

 

সুরমাটানা চোখে সেজে থাকে সন্ধ্যার ক্যাসিনো

গর্বের ভ্রান্তিতে বেসুরো বাজে দিনের সঙ্গীত

 

রাতভর বেজে চলে কানামাছির গান

নর্তকীর উরু ভারী হয়ে আসে ক্রমশ,

নেমে আসে ভোর…

 

শহরের হৃৎপিণ্ডে জমেছে বদরক্ত

আগন্তুক সময় শীঘ্র এসো,

 

এ শহরের ওপেন হার্ট সার্জারি প্রয়োজন…

 

 

 

তোমার নাম ভিজেছে আমার ঘামে

 

নদীগুলো দড়ির মতো শুকিয়ে যাচ্ছে

হিমালয়ে পাথর প্রস্রবণ

কোকিল সকাল কা কা

 

মহাকালের ঘর্ষণে ধূমায়িত জীবন

ঘুমহীন মাছের চোখ,

কচ্ছপের কানে দৌড়ের মন্ত্র ফুঁকে কেউ কেউ দৌড়ে যায় মায়াদ্বীপে!

 

আমাকেও ডেকে নাও যদি ইচ্ছে হয়

কিন্তু আমার প্রেমিকদের কী হবে,

যারা প্রতিদিন ফুল দেয়, মালা দেয়, প্রেম দেয়

 

প্রথম সঙ্গম ভোলে না কুমারী

আষাঢ় ভোলে না বৃষ্টির কেচ্ছা

যার নাম ভিজেছে আমার ঘামে

তাকে কী করে ভুলি?

 

ফণা তুলে প্রস্তুত ক্ষমতা-সাপ

কামড় বসালেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করবে

থেমে যাবে ইন্দ্রিয়ের ছলাকলা, সমস্ত হজম করা এ জৈবিক দেহও মাটির রূপ নেবে

 

মৃত্যুর উলম্ব সত্যে শ্বাসকষ্টে ভোগে পৃথিবীর হাতিরাও,

পোকামাকড় ও পাখিরা তসবিহ গোনে

অনন্য তুমি অনম্য নও হে,

পৃথিবীর শ্বাসকষ্টে তোমার কি দম বন্ধ হয়ে আসে না?

 

 

ভুল

 

মানুষকে ঠকানোর অপরিসীম তৃষ্ণায় মগ্ন ভাঁড়েরা

সম্ভ্রান্ত চরিত্রগুলোয় এঁকে দিচ্ছে কলঙ্কময় মুকুট

এভাবে অবনমিত হতে হতে ইতিহাসের মূল নাটক খুব সাধারণ ও হাস্যকর হয়ে ওঠে!

 

তা দেখার জন্য এই পৃথিবীর কিছু অলীক চরিত্র দৃশ্য অংকন করে ভাইরাল করে

যেখানে দেখানো হয় পৃথিবীতে পরজীবী ও উপজীবী প্রাণীর শ্রেষ্ঠত্ব

 

সময়ের ভাঁজে অদৃশ্য জন্ডিসে আক্রান্ত হয় মানুষের বিবেক

যা নেশাগ্রস্ত মাতালের অন্তিম বক্তব্যর মতো পুরোটাই ভুল…

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত