| 26 ফেব্রুয়ারি 2025
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা: মঈনুস সুলতান’র কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

হাতিগুলো নীরবে পাড়ি দিচ্ছে নদী

ডয়-ইনতানন পর্বত থেকে গড়িয়ে নামা উপত্যকায়

হেঁটে যেতে যেতে খেয়াল করি—

পেখমে স্বর্ণালী-সবুজ নক্ষত্র ঝলসিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে ময়ূর,

ভোরবিহান থেকে চলছি পদব্রজে সারা দিনমান

ভাবি—যেতে হবে আজ আর কতদূর;

 

যার তালাশে পথচলা নিরন্তর—

সে কি কিংবদন্তীর সুদৃশ্য স্বরূপ— নাকি বাস্তবে সত্য,

বনানী বিছরিয়ে জড়ো করি অবহেলায় পেঁকে ওঠা ফলপাকুড়

জ্বালি অগ্নিকুন্ড— ভেষজ হয়ে ওঠে নিরাময়ের পথ্য,

পা বাড়াই ফের—

প্রগৈতিহাসিক জন্তুর প্রস্তরীভূত ডিমের মতো

কালচে ধূসর পাথরগুলো চলাচলে হয়ে ওঠে প্রতিবন্ধক,

দূর দিগন্তে মাঁচার উপর চারচালার আবছা আকৃতি

ডেকে আনে স্বপ্নের সুরভীত চন্দন—

খুঁজে পাই যেন জনপদের অনুঘটক;

 

 

গোধূলির সুধা নিরঞ্জনী আলোয়

হাতিগুলো নীরবে পাড়ি দিচ্ছে নদী—

পরিশ্রান্ত দেহে ভাবি—

এ নিরজনে একটি পান্থশালা থাকতো যদি,

আর নিশিরাতে যদি-বা আকাশে দেখা যেত শনির বলয়,

ক্ষুদা.. কাম ও অধীর যাত্রা যে অর্থহীন অকিঞ্চিতকর

এ নিয়ে থাকতো না কোন সংশয়।

 

 

 

কসমিক অনুরাগে

 ঠিক ভোর নয়—

 না—এখনো ফুটেনি আলো—হয়নি সূর্যোদয়

এ রকম আধোন্ধকারে নামোনি কখনো পথে আগে,

আজ পৃথিবীর খুব কাছে এসেছে স্বর্গীয় জোতিষ্ক নাসিমোরা—

একদিন না হয় প্রাকপ্রভাতে রঞ্জিত হলে কসমিক অনুরাগে,

এসো—পা বাড়াও

শিশির ভেজা ঘাস না হয় কিঞ্চিত মাড়াও

আকাশপ্রদীপের এ বিরল প্রজাতি হরেক বর্ণে হয়েছে বর্ণচোরা,

পিছিয়ে পড়ছো কেন বার বার—

ভেসে গেলে মেঘমালা—নিশ্চিত জেনো—ফুটবে নক্ষত্র বেশুমার;

 

দেখতে পাচ্ছো কী নাসিমোরা—সাবুজিক পুচ্ছ ছড়ানো ধুমকেতু

ফের বলি— মনযোগ দাও,

না—পারবো না হতে এ বেলা গোকূলের কেষ্ট

বাইনোকুলার হাতে নাও,

আমিও কী ছাই বুঝতে পারি নীলাভ গ্রহে এলাম কী হেতু

এই যে এসেছি কাছে পরষ্পর—নয় কী তা যথেষ্ঠ?

 

ভোরের অরুণিম আভায় ঝলসে ওঠছে স্বর্গীয় নীল অপরাজিতা

বর্ণাঢ্য এ পুষ্পের অভ্যন্তরেও আছে শোকের সংকীর্ণ মিনার,

দ্যাখো—আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে উথলে ওঠছে লাভার দাহ্য চিতা

দেখতে পাচ্ছো—সূর্যপাখি সুঁচালো ঠোঁটে খুলছে প্রসূনের গুপ্ত দুয়ার;

 

এক সারি পপির পাপড়ি নিসৃত শোণিতে তৈরী হয়েছে পুষ্পিত প্রাচীর

অপাত সুঠাম দেহে প্রচ্ছন্ন বীজাণুর মতো গা ঢাকা দিয়েছে ধুমকেতু,

দ্বিধার দ্বৈরথে দগ্ধ হতে হতে অতঃপর এসেছো যেহেতু—

এবার অনুভব করো— আগুনপাহাড় নিসিক্ত ভোরের সিগ্ধ সমীর।

 

 

 

কেবলই জড়িয়ে যাই তন্তুজালে

যেতে চাইনি আর অবেলায় যাই-বা কীভাবে

কেবলই জড়িয়ে যাই তন্তুজালে

জড়িয়ে পড়ি অমূল লতানো ঊর্ণনাভে,

বেসামাল বাতাস এসে লাগে গয়না নৌকার পালে;

খুঁজে পাই না কাঙ্কিত ইস্টিশন,

তবে কী জগৎসংসার থেকে উঠে গেছে চিঠিচাপাটির ডাকঘর

এক সময় করোতোয়ার এ উপত্যকায় ছিলো তো বৃষ্টিবন—

যাদের ভেবেছি আপন তারাও কীভাবে যেন হয়ে গেলো পর!

 

হালফিল পাই না খুঁজে সঠিক গন্তব্য

তাই যাই না কোথাও আর,

কররেখা থেকে বোধ করি মুছে গেছে ভবিতব্য

রাতনিশীথে শুনি ঝিঁঝির দিব্য ঝংকার;

মাঝেমধ্যে আকাশে খুঁজি ইঙ্গিতবাহী ধুমকেতু

সবুজাভ আভা ছড়িয়ে পরিযায়ী জোতিষ্ক যদি-বা আসে ফিরে,

জড়ো করেছি উপাদান প্রচুর—

চাইলে গড়াও যেতে পারে পারাপারের সেতু,

অলকানন্দার সিগ্ধ কুয়াশা এসে জড়ায় আমাকে

পুষ্পিত সমীরে।

 

 

দারাশিকোর রাজ্যহারা বিষাদ

র্সূয যখন কুম্ভরাশিতে—

সচরাচর শনিবার সন্ধ্যাবেলা,

আমার চেতনায় ছড়িয়ে পড়ে চন্দ্রকান্তমণির রূপালি দ্যুতি

ডার্করুমে মাউন্ট ফুজির ছায়া হয়ে ফুটে কার যেন প্রতিশ্রুতি,

আমার শরীর সহসা বৃক্ষে বিষ্ফোরিত হয়ে ফোটায় অজস্র ফুল

কাঠবিড়ালীরা মচ্ছব করে খুঁটে ডালপালায় বাদামবীজের তন্দুল।

 

 

কোন কোন শানিবার গোধূলিতে —

বেদুঈন তোরেগদের সঙ্গে ছোটাই অশ্ব বল্গাহারা,

দেখি—তিমবাকতুর বালুকাচিত্রে সিক্ত হচ্ছে পান্ডুলিপি

ঝরঝরিয়ে ঝরছে শ্রাবণের বারিধারা।

 

কখনো কুপতি হন গ্রহ— অপয়া.. ভোরবেলা

গ্রহশান্তির আচার পুষ্পে ছড়ায় না সুরভী,

তীব্র হয়ে বাজে কারো অহেতুক অবহেলা—

সারা দিনমান খুঁড়াখুঁড়িতে হয় না কিছু আবাদ;

গোধূলিতে দেখি— মিনিওতোর চিত্রপটে

আঁকছি দারাশিকোর রাজ্যহারা বিষাদ।

 

 

 

মেকংনদীর বালুচরে

বিগত দিনের স্মৃতিতর্পণের মতো আলাভোলা হাওয়ায়

হেঁটে যাই মেকং নদীর পাড়ে,

বদলায়নি তো তেমন কিছু—নতনীর হাত ধরে অন্ধ বৃদ্ধা

বিক্রি করছে বেলফুলের গোড়ে মালা—

ঊর্মির ঊর্ণাজাল জড়িয়ে ফিরে এসেছ শুশুকরাজি আষাঢ়ে,

গোধূলির ম্লান রেণুকায় ভাসে— জলে রশ্মি বিচ্ছুরিত থালা।

 

কজওয়ের কাঠের সেতু বেয়ে নেমে আসি দ্বীপাণুতে

কামরাঙার তরুণ বৃক্ষগুলো হয়নি তো তেমন প্রবীন,

জলপ্রিয় বলাকার কাকলিতে ‍ঋদ্ধ বালুচর ভাসে স্রোতে

কাদাখোঁচার পদচিহ্ণে জমে জল—ঝলসে রেণুকা সূর্যরঙীন;

 

দৌড়ের নাওখানা ভেসে যায়—ভাটিতে

মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে ঘাটলায় এসে বসে

পুষ্পের উপাচার হাতে লাওলুম গোত্রের জোড়া তরুণী,

কাঁকড়ারা আঁকে রেখাচিত্র তরঙ্গভাসা পলিমাটিতে—

মুন্ডিতমস্তক ভিক্ষুরা জপে মন্ত্র—জলের কিনারে জ্বালে ধুনি।

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত