মন্দিরা এষ’র একগুচ্ছ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

 

সেলুকাস

একটা অনুচ্চারিত বিকেল হেঁটে এলো
ঘোলা জলের দাগ নিয়ে; শহরতলিতে ।
আমরা ততক্ষণে মরা ফড়িঙের পাখনা মারিয়ে
চা-চক্রে চামচের টরে-টক্কা।
আমাদের পায়ের নীচের খয়েরি ঘাসগুলোও দৃশ্যত
বিগত বৃষ্টি শুনল দাগের চিহ্ন দেখে।
ধোঁয়ামন্ত্র পাকে পাকে বিশ্বাসী হতে দিল জারুল পাড়ে;
অথচ আমরা জানতাম- জীবন জঙ্গম ।

(ভোরগুলো অন্যরকম/২০১৫)

 

 

 

অনুবর্তন

এখানে ফিরবে সে
এইখানে; এই বরফকলের শ্রমিক
যে গড়েছিল হিমযুগ এক; অনুর্বর তবু নয়
তোমাদের জানালায় গ্রীষ্ম ফুটিয়েছে মরচে রঙ্গা ঘামাচি
কতো কৃষ্ণচুড়া পুড়ে হল রাত; অন্ধ শহর বোঝেনি
দূরে কোথাও, আরো দূরে বরফ ভাঙছে কেউ-
ভেবে নিলে ভ্যাবসা শরীরের সংক্ষিপ্ত ঘুমে; আর
নুন ছড়ানো বিছানা জারিত হল শূন্যমার্গে

অনেক সোনাঝুরি বিকেল নিখোঁজ; এক শাদা চাদরের তলায়
সেবার একা ও অনেকে
বরফকলের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেছে
লালহীন রক্তপাত তার শরীর জুড়ে; যে ছিল শ্রমিক ও কবি

জেনে রাখ; সে আসবে আবার !

(ভোরগুলো অন্যরকম/২০১৫)

 

 

 

ল্যাম্পপোস্ট

ক্রমাগত ঘূর্ণায়মান এক পাথর থেকে ছিটকে আসছে

ঈর্ষা

আগুন

বর্ষা

বিদ্যুৎ

আমরা তার জন্মঋতু পাঠ করছি।

 

যাত্রাব্যাপী জলের রেহেল;

রেহেলে উন্মুক্ত আধোগ্রাম

পৃষ্ঠা উল্টালে পিদিম জ্বলছে—ক্ষীণ;

আমি কোনো বৈদ্যুতিক বিভ্রাটে

নিভে থাকা ল্যাম্পপোস্ট

 

এক পা তুলে শহর ডুবিয়ে দিচ্ছে আমায়।

(অরণ্য মিথের পৃষ্ঠা/২০১৭ )

 

 

 

বি রক, ডোন্ট রোল

ঘর নেই কোনো, তবু

আমার সঙ্গে থাকে

এগারোটি চাবি।

অপেক্ষা নেই কোনো, তবু

উন্মাদ সমুদ্র ডাকে

মাথার ভেতর।

গন্তব্য নেই কোনো, তবু

প্রতিজ্ঞা করেছি

কোনো নাবিক হবো।

ঝরনা নেই কোনো, তবু

ক্রমশ বাড়ছে বুকে

সবুজ পাথর।

(অরণ্য মিথের পৃষ্ঠা/২০১৭ )

 

 

 

ডেড-সি

একটা প্রচণ্ড চিৎকারে ভেঙে গেল কাচের সমুদ্র

ছলকে পড়ছে এত রিমঝিম—

যেন কোনো বিকেল ডুকরে যাচ্ছে,

যেন কোনো তুমুলরাত ভাসিয়ে দিচ্ছে তোমার শহর…

 

একটা প্রতিধ্বনি গুমরে গেল আনাচে-কানাচে

আর ছায়ারা ভাবছে নৈঃশব্দ্য!

যেন কোনো ট্রেনহীন পতিত জংশন,

যেন কোনো ঠান্ডা চোখ থেকে স্বপ্ন মরে গেল…

 

সমস্ত গাণিতিক বিন্যাস পেরিয়ে

তোমার নগ্ন শরীর ডুবছে-ভাসছে কাচের সমুদ্রে…

(অরণ্য মিথের পৃষ্ঠা/২০১৭ )

 

 

পাখি যুগ

গুহামুখ ছিঁড়ে পড়া শীতল অন্ধকারে, ডানাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুইচোরা গ্রাম থেকে পাখিপুর পোয়ামাইল উড়ে এসে ভোর নামে। অথচ পাখিটি জানতো না ডানার উল্টোপাশে ভোর। পাখিটি স্বভাবে ওলোট সূর্যমুখী; পাখিটি গাইতো শীতবেলা জুড়ে; পাখিটিকে কখনও বসন্ত দেখেনি। এবার অনেক বৃষ্টিরাতে পাহাড় আনলো ‘চুপ’! এমনকি নদীরও বলবার মতো রইল না কিছু! একে একে ডানারা নিরুদ্দেশ সব! পালকের ডগায় যে পথ লিখা ছিল তার শেষভাগে ঝিঁঝিঁদের গ্রাম।

 

এবং ঝিঁঝিঁ গ্রামের ঠিকানায় পাঠানো চিঠিরা ফেরত এসেছে। ফিরতি পথে তারা দেখেছে রক্তাক্ত হাওয়ার কান্না; আর দু’হাত ভরে তুলে এনেছে পরিত্যক্ত ডানা ও ডিম!

 

ঝিঁঝিঁ গ্রামের ঠিকানায় আর কখনও আকাশ পাঠানো হলো না।

(অরণ্য মিথের পৃষ্ঠা/২০১৭ )

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>