| 26 এপ্রিল 2024
Categories
ভাসাবো দোঁহারে

ভাসাবো দোঁহারে: অশরীরী । মোজাম্মেল হক নিয়োগী

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

জহির যখন অফিসে যাওয়ার জন্য নিচতলা পর্যন্ত এসেছে তখন লিজাও সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে যাচ্ছে। দুজনের মুখোমুখি দেখা। একবার দৃষ্টি বিনিময়ও হয়। পরির মতো সুন্দরী লিজাকে দেখে জহির চমকে ওঠে। কিছুক্ষণ সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে জহির প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে এমন একটা ভাব করে যে, কেউ দেখলে মনে হবে বাসায় কিছু একটা ফেলে এসেছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, জহিরদের তেতলা বাড়িটির লিজা কোন ফ্ল্যাটে ঢুকে অনুসরণ করার জন্যই জহির এমন অভিনয় করে এবং শেষ পর্যন্ত উপরে উঠে আসে।
কিন্তু কাকতালীয় ঘটনা ঘটে যাবে জহির ভাবতেও পারেনি। জহিরদের বাসায় যাওয়ার জন্য লিজা কলবেল টিপে যখন অপেক্ষা করতে থাকে ঠিক তখনই জহিরও লিজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। লিজা জহিরকে একবার দেখে লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে একটু হাসি ছড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা বলার ইচ্ছে সত্ত্বেও অপরিচিত বলে জহির কিছু বলতে পারেনি। পাছে মেয়েটা অসভ্য ভাবে আর শুরুতেই তাল কেটে যাক এ-রকম সে চায়নি বলে কথা না ভদ্র মানুষের মতো দাঁড়িয়ে থেকে লিজার আপাদমস্তক অবলোকন করে। মনে মনে বলে, এতো সুন্দর মানুষ হয়!

একহারা লিজার শারীরিক গড়ন, মুখশ্রী, চাঁদের মতো গায়ের রং, কোমর অব্দি ঘন কালো কেশরাশি, উচ্চতা, হরিণীর মতো চোখ দেখে জহির মূলত বিহ্বল হয়ে পড়ে এবং এ-কারণেই তাকে অনুসরণ করে নিচ থেকে আবার ওপরে উঠে আসে। ডোরবেলের শব্দ শুনে জহিরের ভাবি দীপা দরজা খুলে মুখ হাঁ করে বলে, আরে লিজা যে। আয় আয়। দীপা লিজাকে জড়িয়ে ধরে বাসার ভেতরে টেনে নেয় এবং লিজার পেছনেই জহিরকে দেখে বলে, তুমি না চলে গেলে, আবার ফিরলে যে?
জহির খুব সুন্দর করে বানোয়াট কথা বলে, ভুলে একটা জরুরি কাগজ ফেলে গেছি সেটা নিতে এসেছি। সে নিজের রুমে ঢুকে কাগজপত্র উলটপালট করে আবার নিচে নেমে যায়। মনে মনে বলে, অপূর্ব মেয়েটা। ভাবির সঙ্গে তাহলে তার জানা-পরিচয় আছে। তাহলে হয়তো একটা কিছু আশা করা যায়।
সেদিন থেকে লিজা ওর মনে বাসা বাঁধে।

লিজা দীপার কলেজ জীবনের সহপাঠী। ওদের জমিয়ে থাকা পুরনো কথাবার্তা বলে, দুজনে একসঙ্গে চা-নাশতা তৈরি করে খায় এবং তারপর লিজা ঘণ্টা দেড়েক থেকে নিজের বাসায় ফিরে।

বছর চার হলো লিজা বিয়ে করেছে। কোলে এসেছে এক ফুটফুটে সুন্দর চাঁদের মতো ছেলে, নাম মৃদুল। মৃদুল বয়সের তুলনায় একটু বেশি পেকেছে বইকি? অনুসন্ধিৎসু মৃদুল একবার যা দেখে তাই করতে চায়—পারুক আর না-ই-বা পারুক। এখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। বাসা তো বাসাই, পাড়া মহল্লার অলিগলিতে ক্রিকেটের মচ্ছব চলছে। গলির ভেতরে ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। বাসায় বাসায় টিভিতে খেলা দেখে। মৃদুলের বাবা তো ক্রিকেটের পোকা, নাওয়া-খাওয়া, অফিস মিস হতে পারে কিন্তু খেলা নয়। মৃদুলও পিছিয়ে নেই, বাপের সঙ্গে হইহুল্লোর আর লাফালাফিতে যুক্ত হয়। বিশ্বকাপ খেলার প্রভাবেই মৃদুলের বল চাই, ব্যাটও চাই। বাবা এনেও দেয়। একটি টেনিস বল স্কচট্যাপ দিয়ে প্যাঁচিয়ে বেশ শক্ত করে নেয়। ব্যাটটি প্লাস্টিকের তৈরি। বাসায় বাবা থাকলে বাবার সঙ্গে আর বাবা না থাকলে একা একাই খেলে, ‘কিকেট’ খেলে। মৃদুল ক্রিকেট বলতে পারে না। ড্রয়িং রুমই ওর খেলার মাঠ।
ক্রিকেট খেলা এমনই প্রভাব ফেলেছে যে, টেনিস বলটি ছাড়াও মৃদুলের মুঠোর মধ্যে যা রাখা যায় এমন যেকোনো বস্তুই ওর বল। আর ওর হাতের সাথে মানানসই লম্বা মতো কিছু যেমন- বেত, লাঠি, ঝাড়– ইত্যাদি ব্যাট। একাই বল ছোড়ে। একাই একাই ব্যাট করে। আবার মাঝে মাঝে একা একাই চিৎকার করে, ছক্কা। বাসার ভেতরে দারুণ অনুশীলন!

কয়েক দিন ধরে খুব গরম পড়েছে। দুপুরে লু হাওয়া বয়। উত্তপ্ত রোদের জেল্লা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। দুপুরের আগেই সূর্যের তীর্যক রশ্মির তেজে বাতাস তেতে ওঠে। শরীরের চামড়ায় সূর্যের তাপ মনে হয় খামছে ধরে। বিকেলে ছাদে ছাদে লোকজন গরম থেকে বাঁচার জন্য ভিড় করে। শরীর জুড়ানোর জন্য লিজা আর মৃদুলও বিকেলে ছাদে উঠে আসে। লিজাদের বাড়িটি চার তলা। ছাদের বাউন্ডারি দেওয়ালটি আড়াই ফুট উঁচু। মায়ের সঙ্গে মৃদুল এসে নাচানাচি করলেও ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। মৃদুল এই ছাদে এসে আপন মনে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করে খেলতে থাকে। কখনো বাগানের ফুল ছিঁড়ে ছুড়ে মারে। কখনো নিজের ক্রিকেট বল নিয়ে খেলে। ওর যা মনে চায় তাই করে।
ছাদে এলে লিজার কিছুটা মুশকিলে পড়তে হয়। আশপাশের ছাদের মানুষদের ট্যারা দৃষ্টি লিজার মুখের ওপর আছড়ে পড়ে। লিজা খুব সহজেই বুঝতে পারে। মনে মনে বলে, সুন্দরী হওয়ার বিড়ম্বনা!
জহিরদের তেতলা বাসাটি লিজাদের বাসার পূর্ব পাশে সংলগ্ন। জহিরের মাথায় একটা বিশাল টাক আছে দেখার মত। দেশ বরণ্য হওয়ার মত দাবি রাখে তার টাকটা।
আজ শুক্রবার। দুপুরের পর জহিরকে ছাদের ওপর পায়চারি করতে দেখা যায়। সে চুর্তদিকে ঘুরে ঘুরে কি যেন খোঁজে। চোখে তার অনাবিল আনন্দের ও রোমাঞ্চের নিবিড় আলিঙ্গন। কোন রুপালি নদীর ওপর যেন সে ভেসে বেড়ায় ভাবনার মান্দাসে। বিকেলে লিজা ছাদে এলে কিছুক্ষণ পর পর লিজাকে ট্যারা চোখে দেখে জহির। নিজে নিজেই পুলকিত হয়।

জহির প্রায়ই এখন দুপুরের পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসে আর ছাদে ঘুরে বেড়ায়। লিজাকে দেখে মনে মনে প্রেমের সৌধ নির্মাণ করে। জহির মাঝে মাঝে ভাবে ভাবির মাধ্যমেই লিজাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। যোগ্যতা তো কম নয়। এম এ পাস করে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করে। প্রস্তাব প্রত্যাখান করার কোনো কারণ নেই। মাথায় টাক থাকলেও শরীর-স্বাস্থ্য সুপুরুষের মতো। কিন্তু তার আগে লিজার সঙ্গে একটু ভাব হওয়া দরকার। তাই ছাদে এসে লিজাকে দেখে। লিজাও মাঝে মাঝে জহিরের দিকে তাকায়। বান্ধবীর দেবর হিসেবে তার সঙ্গে দু-একটা কথাও হয়। তা হতেই পারে।
কিছু দিন এমনভাবে চলে।

গরম এখনো কমেনি। হয়তো বৃষ্টি হলে গরম কমবে, অনেকের ধারণা। লিজা মৃদুলকে নিয়ে ছাদে আসে। বিকেলে রোদের তেজ কিছুটা কমে এসেছে। আশপাশের বাসার ছাদে লোকে ভরে গেছে। দু-একজন হাতপাখাও নিয়ে এসেছে। এই তপ্ত দিনে মাঝে মাঝেই লোড লেডিং হয়। এ-কারণে অনেকের কাছে এখন হাতপাখা দেখা যায়।

এলোপাথারি হাঁটাহাঁটি আর এলোমেলো ভাবনার মধ্যে জহিরের মাথায় একটা গোলাপ ফুল এসে পড়ে। জহির হতবাক। এখন তার মনের বন্দরে নতুন ভাবনার জাহাজ এসে কাছে ভিড়ে। ছাদের এক কোনায় জহির একা বসে ভাবতে থাকে। ঘটনা কী? তাহলে কি ওই মেয়েটিই গোলাপ দিয়েছে! আশপাশের ছাদের ওপর মানুষগুলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকে জহির। না, অন্য কেউ এমন কাজ করতে পারে না। ওই মেয়েটিই ফুল দিয়ে ঢিল দিয়েছে। জহিরের অন্তরাত্মায় এবার নতুন শিহরন জাগে। লিজা ছাড়া আর কেউ তাকে ফুল ছুঁড়তে পারে না। কারণ অন্য বাসা থেকে কারো ঢিল এখান পর্যন্ত আসতে পারবে না। তবে কি লিজা তাকে ভালবেসে ফেলেছে? কিংবা ভালবাসতে চায়? হতেই পারে।

অন্তহীন ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে জহির। পরদিন অফিসে যায়নি। লিজাদের বাসার মুখোমুখি জানালাটা খুলে সারা দিন বসে থাকে। একবার যদি লিজার চোখে চোখ পড়ে তাহলে মনের কথাটা চোখের ভাষায়ই বলতে চায়। কিন্তু বিধি বাম। দুপুরের পর লিজা গাড়ি হাঁকিয়ে কোত্থেকে যেন বাসায় ফিরে। জহির ভাবে বাসায় ছিল না বলেই হয়তো চোখের ভাষায় কথা হয়নি। লিজা যদি ভালো না বাসবেই তাহলে ফুল ছুড়বে কেন? এটিই তার গোপন অভিব্যক্তি। জহির নিজের ঘাড়ের উপর হাত রেখে আলতো পরশে মালিশ করে। এটি মূলত জহিরের মুদ্রাদোষ। কোনো চিন্তায় পড়লেই ঘাড়ে হাত বুলিয়ে আলতো মালিশ করতে থাকে।

বিকেলে লিজা মৃদুলকে নিয়ে ছাদে আসে। জহিরও যায় ছাদে। জহিরের সময় কাটে না আজ। ধীরে পদক্ষেপে এদিক-ওদিক পায়চারি করে। মাঝে মাঝে লিজার দিকে তাকায়। একবার চোখে চোখ রাখার খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু না-হয় এমন সুযোগ আসে না। আনমনে এদিক-ওদিক পায়চারি করতে থাকে। জহিরের ভাবান্তরের মধ্যে হঠাৎ মাথা বরাবর একটা লাল টকটকে গোলাপ এসে পড়ে। জহির গোলাপটি পেয়ে নিজের মধ্যে হারিয়ে যায়। আশ্চর্য মেয়ে লিজা। আর কোন ভাষার প্রয়োজন নেই। আর কোন কিছু বলার প্রয়োজন নেই। এখন জহির নিজেকে উজার করে দিলেই পারে। জহির অপেক্ষা করে সে মহেন্দ্র ক্ষণটির জন্য। জহির এখন ফুলের উত্তর দিতে চায়। কিন্তু ওখান থেকে এই ফুলের উত্তর দিতে পারে না। উপর থেকে নিচে ঢিল ছোঁড়া যতটা সহজ নিচ থেকে উপরে ছোড়া ততটা সহজ নয়। আহা উপর তলার মানুষ!


ভাসাবো দোঁহারে সম্পূর্ণ সংখ্যাটি পড়ুন


রাতের শেষ ভাগে জহিরের চোখে ঘুম নেই। শুধু লিজা। লিজার মুখ, তার চোখ, তাঁর ঠোঁট, পিঠজুড়ে বিছিয়ে থাকা ঘন কালো কুন্তলরাশি—সব মিলিয়ে একজন অপূর্ব নারী মূর্তিকে নিয়ে ভাবনার যেন শেষ নেই। মাঝে মধ্যে রাতেও জহির ছাদে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। লিজাদের জানালাটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। কোন ছায়াও যদি দেখা যায়…। কোন ছায়ার মধ্যে কিছু একটা পড়লেই ঘাড় বাঁকিয়ে ট্যারা চোখে দেখে লিজা কিনা? ফ্যানের বাতাসে পর্দাটা কেঁপে ওঠে। পর্দাটা একটু বেশি ফাঁক হয়ে যাওয়ার জন্য সে কত যে প্রার্থনা করে তার শেষ নেই। এভাবে বেশ কিছু দিন কেটে যায় কিন্তু লিজাকে দেখতে না পেয়ে আরো বেশি অস্থির হয়ে ওঠে।

এক বিকেলে জহির নিউমার্কেটে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো প্রয়োজন ছাড়াই ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গিয়েছিল। হঠাৎ লিজার সঙ্গে দক্ষিণের গেটে দেখা। তখন গেটের পাশ থেকে তেঁতুলের আচার কিনছে লিজা। জহিরকে দেখে সে স্মিত হেসে আচার কেনার দিকে মনোযোগ দেয়। জহিরের দিকে চোখ পড়তেই পারে যেহেতু তাকে পাশের বাসায় দেখেছে এবং প্রথম যেদিন সিঁড়িতে দেখা হয়েছে, সে বান্ধবীর দেবর সে-কথাও জেনেছে, তাই প্রতিবেশী হিসেবে চেনা মানুষটির দিকে তাকাতেই পারে, স্মিত হাসতেও পারে। জহির একটু কথা বলার জন্য পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেও লিজা কথা বলেনি। তাতে কী? লিজার সামান্য হাসিতেই জহির গলে জল, মনে মনে আপ্লুত। কথা বলার সুযোগ না পেয়ে সে অন্যদিকে চলে যায়। কিন্তু মনের ভেতরে রঙিন প্রজাপতি উড়তে থাকে।

পরদিন সকাল বেলায় লিজা দীপার বাসায় যায় কোনো কারণ ছাড়াই। জহির তখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল। এমন সময় লিজাকে দেখে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল। দুজন মুখোমুখি হয় সিঁড়িতে। মৃদু হেসে লিজা জিজ্ঞেস করে, কেমন আছেন?
জহির হকচকিয়ে যায় এবং সে এতটাই এলোমেলো হয়ে যায় যে কী বলবে না বলবে ভেবে না পেয়ে কোনো কথাই বলতে পারে না। জহিরের এমন নার্ভাসনেস দেখে লিজা মনে মনে হাসতে হাসতে খুন। লিজা ভাবছে ঘটনা কী? লোকটা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করে তাহলে এমন নার্ভাস হয়ে গেল কেন? নাকি সে আমার প্রেমে পড়ে উতলা হয়ে গেছে? জহিরের কথাটি লিজার মনে মনেই পুষতে থাকে, দীপাকে প্রকাশ করেনি।
কিছুক্ষণ পর জহির অফিসে না গিয়ে বাসায় ফিরে আসে। মনে মনে বলে যার জন্য অশান্ত হযে উঠেছি সে আজকে বাসায়। চাকরি গোল্লায় যাক। কালকে গিয়ে সিক লিভ নেব। নিশ্চয়ই তার মনের কথাটি আমাকে জানাতে এসেছে। ড্রয়িংরুমে দরজাটি খোলা রেখে বসে থাকে জহির। মাঝে মাঝে পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে। যদি একবার দেখা যায়! জহির লিজার কথা শুনতে পায়। কথা তো নয় যেন কবিতার মধুময় আশ্চর্য সুর ধ্বনি। হাসি শুনতে পায়। হাসি তো নয় যেন বেগবতী সুরেলা নদী।
দুপুরে লিজা চলে যায়। জহির মনে মনে আহত হয়। একটি কথাও কি বলতে পারেনি। জহির ভাবে ভাবির জন্যই হয়তো কিছু বলতে পারেনি। বজ্জাত মেয়ে দীপা। দেবরের বউ তার চেয়ে সুন্দরী হোক সে কি আর চাইবে? মন খারাপ করে থ মেরে বসে থাকে।

ইদানীং অফিসের কাজেও এলেমেলো হয়ে যায়। প্রায়ই অফিস ফাঁকি দিয়ে বাসায় চলে আসে। ড্রয়িং রুমে জানালা খুলে বসে থাকে। লিজার ছাদে আসার সময় হলেই জহির জানালার পাশ থেকে উঠে পড়ে। তারপর ছাদে এসে দাঁড়ায়। পায়চারি করে। ট্যারা চোখে লিজাকে দেখে। মাঝে মাঝে লিজার চোখে চোখ পড়ে। লিজা হাসে। জহির আপ্লুত হয়।

কয়েক দিন গরম কম থাকলেও ক’দিন ধরে আবার গরম বেড়ে যায়। ছাদে ছাদে লোকজন গরমে হাঁসফাঁস করে। লিজা ছাদে পায়চারি করে। মাঝে মাঝে ছাদের রেলিংয়ে বসে। কেমন যেন অস্থিরতা! মৃদুলও তার মায়ের পায়ে পায়ে এসে ছাদে লাফাতে শুরু করে। লিজার সেদিকে লক্ষ নেই। লিজাকে ছাদে দেখে জহির মনে হয় ইজেলের কাছে দাঁড়িয়ে ছবি আঁকে। নিবিষ্ট মনে দাঁড়িয়ে থেকে লিজাকে ট্যারা চোখে মাঝে মাঝে দেখে।
কিছুক্ষণ পর জহির অনুভব করে তার পরিচ্ছন্ন মাথায় কি যেন একটা ভারি দুরুম করে পড়ে। হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ছাদে বসে পড়ে জহির। আঘাতটা একটু শক্তই মনে হচ্ছে। আর তখন মৃদুল ভাঙা ভাঙা শব্দে চিৎকার করে বলছে, কিকেট বল, কিকেট বল। লিজা জানতে চায়, ওটা কোথায় বাবা? মৃদুল হাত দিয়ে জহিরের দিকে দেখায়। লিজা দেখে জহির হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে উবু হয়ে বসে আছে।
লিজা তাড়াতাড়ি মুখ ফিরায়। বিকলের সূর্যের শেষ রশ্মি লিজার রাঙা ঠোঁটে পিছলে হুমড়ি খেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে এবং এক টুকরো হাসিও তার সাথে মিশে।
সত্যি লিজাকে আরো বেশি সুন্দরী দেখায়।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত