কয়েকজন সফল তরুণ নারী উদ্যোক্তা

Reading Time: 4 minutes

বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে পুরুষদের  তুলনায় এ সংখ্যা এখনো নগণ্য। উন্নত বিশ্বে চাকরিসহ ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নারীর অবদান আশাব্যঞ্জক হলেও তুলনামূলকভাবে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার যথেষ্ট কম।

জুলাই ২০১৭ এর এশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার নারী উদ্যোক্তা হার বিশ্বের সবচেয়ে কম, এদেশে ১০টি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নারী। বিভিন্ন কারণে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নারীরা উন্নত দেশের নারীদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন।

তবে আশার ব্যাপার হলো, গত বছর এশিয়া মহাদেশের কয়েকজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছেন। আজকের নিবন্ধে আমরা এমন কয়েকজন সফল নারী উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানব। তবে এ নিবন্ধে যে শুধুমাত্র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের  সফল নারী উদ্যোক্তার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে তা কিন্তু নয়, এশিয়া মহাদেশের পাশাপাশি ইউরোপ মহাদেশেরও দুজন সফল নারী উদ্যোক্তার ব্যাপারেও জানব, যা নিঃসন্দেহে সারাবিশ্বের উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে সাহায্য করবে।

হুই লিং ট্যান, গ্রাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা

হুই লিং ট্যান গ্রাবের সহ প্রতিষ্ঠাতা। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম রাইড শেয়ারিং কোম্পানি। গ্র্যাবের প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুরে। গত ছয় বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশের মোট ২৮টি শহরে রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। এ বছরের শুরুতে এ প্রতিষ্ঠানটি রাইড শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি খাবার ও পণ্য সরবরাহ, ই- পেমেন্ট ও  ক্ষুদ্রঋণের মতো বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ কোম্পানিটি বর্তমানে আরো ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে।

গ্র্যাবের একজন সফল সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করার আগে ট্যান ‘ম্যাককিনসে’ (McKinsey) আমেরিকার বিখ্যাত ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট ফার্মে একজন পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়াও তিনি প্রাইসিং ইন্টলিজেন্স এন্ড মনিটাইজেশনে (Pricing Intelligence and Monetization) সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে সেলসফোর্সেও কাজ করেছিলেন। হুই লিং ট্যান হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

মেলেন পারকিন্স, ক্যানভার সহ প্রতিষ্ঠাতা

অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক মেলেন পারকিন্স তার গ্রাফিক ডিজাইন স্টার্ট আপ ‘ক্যানভা’ শুরু করার পূর্বে তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ১০০ জন বিনিয়োগকারীর কাছে গিয়েছিলেন। পারকিন্সের দৃঢ়তা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে অবশেষে তার স্টার্টআপের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্যানভা এমন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে যে কেউ সহজেই বিজনেস কার্ড, পোস্টার, ক্যালেন্ডার এবং ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারে।

বর্তমানে ক্যানভা  অস্ট্রেলিয়ান স্টার্টআপ খাতের মধ্যে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানির বাজার মূল্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বর্তমানে ২০০ জনেরও বেশি কর্মচারী কানাওয়া, সিডনি ও ম্যানিলার সদর দপ্তর এবং সানফ্রান্সিসকো অফিসে কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ ওয়েবসাইটের মতে, ২০১৬ এর আর্থিক বছরে ক্যানভাসের আয় দ্বিগুণ বেড়েছে ৬.৮ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৩.৫ মিলিয়ন ডলার।

জিন লিউ, দিদি চুক্সিংয়ের সভাপতি

জিন লিউ চীনের বৃহত্তম গাড়ি ও ট্যাক্সি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান দিদি চুক্সিংয়ের সভাপতি। দিদি চুক্সিংয়ের পূর্বের নাম ছিল ‘দিদি ড্যাচে’। বর্তমানে চীনের ৪০০টির ও বেশি শহরে এই কোম্পানিটি সেবা প্রদান করে থাকে। দিদি চুক্সিংয়ে যোগ দেওয়ার পর, তিনি দিদি চুক্সিং এবং এর প্রধান প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান কুয়িদি দাশের মধ্যে মার্জার (Merjer) অর্থ্যাৎ দুটি কোম্পানিকে একত্রিত করে ‘দিদি কুয়িদি’ নামে নতুন রাইড শেয়ারিং একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরবর্তীতে আবার নাম পরিবর্তন করে ‘দিদি চুক্সিং’ নামে পরিচিত লাভ করে।দিদি চুক্সিংয়ের কোম্পানির বর্তমান মূল্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত বছর এ প্রতিষ্ঠানটি ১.৪ বিলিয়ন রাইডিং সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছিল যা উবারের তুলনায় অনেক বেশি। দিদি চুক্সিংয়ের একজন সফল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার আগে, জিন ১২ বছর ধরে গোল্ডম্যান স্যাক্স (Goldman Sachs) নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করেছিলেন, এ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হয়েছিলেন জিন। জিন লিউ তার প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীদের উন্নতির জন্য সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। জিন পিকিং ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন করেছেন  এবং পরবর্তীতে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

আদিনা খামখাটছি, আদিনা’স জুয়েলস এর প্রতিষ্ঠাতা

আদিনা খামখাটছি ২২ বছর বয়সী এক সফল নারী উদ্যোক্তা ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী। একদিন কেনাকাটা করতে গিয়ে একটি জুয়েলারি খুব পছন্দ হলো। কিন্তু জুয়েলারির দাম তার বাজেটের বাইরে ছিলো। আবার একটু কম দামি জুয়েলারিগুলোর মান তেমন ভালো ছিলো না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের হাতেই জুয়েলারি বানাবেন। এই ছোট একটি সিদ্ধান্ত যে তার জীবন পাল্টে দিবে, তা তিনি ঘুরাক্ষণেও ভাবতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা আদিনা তখন কলেজের শিক্ষার্থী। ব্যবসায় শুরুর চার বছর পর, বর্তমানে আদিনার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান “আদিনা’স জুয়েলস” কয়েক লক্ষ টাকার একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ইন্সটাগ্রামে হাজার হাজার গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

আদিনা খামখাটছি, আদিনা’স জুয়েলস এর প্রতিষ্ঠাতা, Image Source: forbes.com


আরিয়ানা গ্রান্ডে, বেলা, এমিলি রাতাজকোস্কি এবং গিগি হাদিদের মতো অনেক নামি দামি সেলিব্রেটিরা এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ফটোশুটে এসব সেলিব্রেটিদের “আদিনা’স জুয়েলস” এর জুয়েলারি পরে উপস্থিত হতে দেখা যায়। বর্তমানে ইন্সটাগ্রামে ‘আদিনা’স জুয়েলস’ এর ফলোয়ার ১,৪০,০০০ উপরে, এবং দিন দিন এ সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>