আমরা যাকে আব্দুল হালিম নামে চিনি, তিনি আসলে বিশ্বাস আহমেদ। কবিতা লিখতেন। একদল মানুষ তাকে পছন্দ করতো, আরেক দল করতো না। একই মানুষের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন মানুষের এই আচরণভিন্নতার কথা ভেবে বিশ্বাস আহমেদ মাঝে মাঝেই অবাক হতেন।
তাঁর মৃত্যুর আগেই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হলো।
বিশ্বাস আহমেদ মরে গিয়ে যেদিন হাসরে উপস্থিত হলেন, পরিচিত এক মৃত ব্যক্তি তাকে গল্পেচ্ছলে বললেন – আপনি একটা সত্য কথা বলুন।
বিশ্বাস বললেন – একটা সত্য হলো এই যে আমি আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতাম। আমার মৃত্যুর আগেই তাঁর মৃত্যু হওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
ব্যক্তিটি বললেন – তুমি মিথ্যা বয়ান দিলে; তোমার জাহান্নাম প্রাপ্য।
বিশ্বাস বললেন – এটা কেমন আইন হলো?
সে লোক ব্যখ্যা করলেন – তোমার স্ত্রীর মৃত্যুর সময় তুমি তার পাশে ছিলে না। তোমাকে তোমার এক সন্তান অনেকবার ফোন করেছিলো তোমাকে খবরটা দেবার জন্য। কিন্তু তুমি ফোন বন্ধ রেখেছিলে। এই কারণেই তোমাকে খবরটা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে স্ত্রীর প্রতি তোমার ভালোবাসার কোনো প্রমাণ তুমি দিতে পারনি। এর অর্থ হলো, আইন অনুযায়ী তোমার বক্তব্য প্রমাণিত নয়। তুমি তো জানো, প্রমাণ ছাড়া কোনো সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এর মানে হলো, তুমি মিথ্যা বলেছো। মিথ্যা বলার শাস্তি তো তুমি জানই।
বিশ্বাস বললেন – আমি যে প্রতিদিন অই সময়টা ফোন বন্ধ রাখি, মৃত্যুদূতের নিকট তা অজানা নয়। তিনি তো সঠিক সময়ে, মানে, আমি যখন স্ত্রীর পাশেই ছিলাম, তখন এই মৃত্যুকাণ্ড ঘটাতে পারতেন। আইন তো এরকমও হতে পারতো যে, মানুষের প্রিয়জনসান্নিধ্যের ক্ষণকে তার মৃত্যুক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
সে লোক বললেন – তুমি সীমা লঙ্ঘন করলা। তুমি তোমার পরিণতি নির্ধারণ করলা।
বিশ্বাস আহমেদ অবাক হলেন! স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ভালোবাসা ও আইনের সীমা সম্পর্কে তিনি আর কোনো কুতর্ক তুলতে আগ্রহী নন।
কথাসাহিত্যিক