আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট
জোড়া পা-দুটো মাঝে মাঝেই ঝুমকির চোখের সামনে ভাসে। কিছুদিন আগের ঘটনা। মেয়েকে নিয়ে বসে আছে ঘরে। শুনতে পেল
“মাসিমা, দুধ”।
সবেমাত্র সন্ধে উতরেছে। মেয়েটাকে নিয়ে পড়াতে বসেছে ঝুমকি। স্কুলে ভর্তি করাতে হবে এবার। গতবছরই ভর্তি করে দেবে ভেবেছিল। কিন্তু সংসারের নানা টানাপোড়েনে আর ভর্তি করানো হয়নি। কবে থেকে ভর্তি শুরু হবে খোঁজ নেওয়া দরকার। এইসব যখন ভাবছিল ঝুমকি, ঠিক সেইসময় আচমকা কথাগুলো শুনে চমকে উঠেছিল সে। খোনা গলায় লোকটা কী বলছিল, সেটাই বুঝতে পারেনি প্রথমে।
-হ্যাঁ রে দয়াল, আইজ এত দেরি ক্যান তোর? সাড়ে চারটা-পাঁচটায় দেওয়ার কথা।
-একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম মাসিমা। তাই একটু দেরি হল।
মা আর কিছু না-বলেই দুধের বাটি হাতে বারান্দায় বেরিয়ে গেল। তার মানে দুধ দিতে এসেছে। ঝুমকির মা দু-একটা কথা বলছিল আরও, কিন্তু ভাল করে শোনা যাচ্ছিল না। ঘরে পা দিয়ে একটু জোর গলায় বলল, কাইল থিকা আর এক পো বেশি দিস বাপ। ঘরে নতুন অতিথ আইছে। মায়ের শেষ কথাটায় ব্যাঙ্গের সুর, টের পায় ঝুমকি।
-আচ্ছা মাসিমা।
মা দুধ নিয়ে ঘরে ঢোকার পরে পরেই সাইকেল চলে যাওয়ার শব্দ পেল ঝুমকি। তার মানে লোকটা দুধ দিয়ে চলে গেল।
-একে কোথা থেকে জোগাড় করলে মা?
-দ্যাখ, কথার কী ছিরি! আমি আবার জোগাড় করুম কি? ও তো দয়াল। রাধু ঘোষের ছোট পোলা।
-কে, ঘণ্টাদা?
-হ।
-অনেকদিন বাদে ওর গলা শুনলাম তো। চিনতেই পারিনি। ওর নাম যে দয়াল সেটাও মনে ছিল না। ও কি এখন দুধ বেচে?
-না হলি আর কী করবা’নে ! বাপ তো একটা অকম্মার ঢেঁকি। জমিজিরাত যা ছেল সব ভাসাইয়া দিসে। দুধের ব্যবসাও লাটে তুলছে। পোলার দুধ বেচা ট্যাহায় মদ খায় হারামজাদা! ঝুমকির মা বরাবর এই ভাষাতেই কথা বলে। বাবা বা ঝুমকি বলত না। বরং মাকে বাবা অনেক বলেছে, তুমি দেশের ভাষা ছাড়তে পারলে না মানু! মার সাফ জবাব, দ্যাশ থিকা তাড়া খাইয়া আইসি। কিন্তু দ্যাশ মনের মইধ্যে মরে নাই। জাগনই আসে।
ঝুমকির মনে পড়ে যায় ঘণ্টাদার কথা। ওদের পাড়া থেকে খানিকটা দূরে ঘণ্টাদের বাড়ি। ঘোষপাড়ায়। ঢ্যাঙা লিকলিকে চেহারার ঘণ্টা দু-ক্লাশ উঁচুতে পড়ত। ভাল নাম দয়াল ঘোষ। চোখদুটো কোটরের মধ্যে ঢোকানো। যেন গর্তের মধ্যে কাচের গুলি জ্বলজ্বল করছে। সরু কোমর থেকে প্যান্ট ঝুলে পড়তে চাইছে। কোনওক্রমে বোতাম দিয়ে আঁটা। ক্লাশের সবাই ঘণ্টাকে খেপাত। নীচু ক্লাশে পড়লেও ঝুমকিরাও ছাড়ত না। ওদের ছিল কো-এড স্কুল।
দয়ালের ডাকনাম ঘণ্টা, আর খোনা গলা। দুইয়ে মিলেই সবাই নানা কথা বলে রাগাত তাকে। খুব রেগেও যেত। পরাশর ছিল ঘণ্টাদের ক্লাশের সবথেকে বিচ্ছু ছেলে। একদিন বলল, হ্যাঁ রে ঘণ্টা, তোর নিজের ঘণ্টাটা ঠিক আছে তো?
টিফিন টাইমে দোতলার করিডোরে তখন ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। পরাশরের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। লাল হয়ে গেল ঘণ্টার মুখচোখ। মেয়েদের সামনে, বিশেষ করে নীচু ক্লাশের মেয়েদের সামনে এসব বলাতে রাগে আর লজ্জায় মাখামাখি হয়ে প্রথমে মুখ নীচু করে রইল কিছুক্ষণ। তারপর কী হল কে জানে! তেড়ে গেল পরাশরের দিকে। প্যান্টটা টেনে ধরে বলল, ‘দেঁখবি দ্যাঁখ আঁমার ঘঁণ্টা’। প্রথমে সবাই একচোট হাসল। তারপর পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল অচিরেই। চুপ মেরে গেল সকলে। এরপর বেশ কয়েকদিন ওকে কেউ খেপাতে সাহস পায়নি। আবার একদিন পরাশরই শুরু করল রাগানো।
তখন ঝুমকিদের স্কুলটা ছিল মাধ্যমিক পর্যন্ত। মাধ্যমিক পাশ করার পর সবাই আবার নতুন নতুন স্কুলে ভর্তি হল। কিন্তু দয়াল ঘোষ পড়া ছেড়ে দিল, মানে ছেড়ে দিতে হল। মা-মরা দয়ালকে ওর বাবা আর পড়ালই না। সৎমাও কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ছোট থাকতেই মা মারা গেছে তার। তারপর মাস কয়েক যেতে-না-যেতেই দয়ালের বাবা আবার বিয়ে করেছিল। ওর একটা বোনও হয়েছিল। এসব নানা লোকজনের থেকে শোনা। দয়াল কখনও বাড়ির কথা বলত না। জিজ্ঞাসা করলে চোখ পাকিয়ে বলত, ‘তোদের এত দরকার কি? যা না আমাদের বাড়ি। এত জানার শখ যখন নিজেরাই দেখে আয়।’ খোনা গলায় এসব শুনে সব্বাই খুব হাসত।
স্কুলের রজতজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে এক দিদি গাইল ‘ও দয়াল বিচার করো।’ পরদিন থেকে সেই গানটাই সুযোগ পেলে গাইত অনেকে। ঝুমকিও গাইত। দয়াল বেজায় রেগে যেত। সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। পারতপক্ষে কথা বলতও না। তখন কেউ কেউ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নানা কথা বলত। ঝুমকির চোখের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল সেইসব দিনের স্মৃতি। এখনও কি একইরকম রোগা আছে? মাকে জিজ্ঞাসা করতে ভরসা পায় না। এবাড়িতে আসার পর থেকেই মা কেমন যেন রেগে আছে। বিকেল-বিকেল মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রায় একবস্ত্রে এবাড়ি এসেছে ঝুমকি। মা তখন সদ্য নার্সিংহোম থেকে ফিরেছে। স্বাস্থ্যসেবা নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করে। মা অবশ্য আগেই জানত ঝুমকি আসবে। সত্যি কথা বলতে কী, মা বলেছিল আর কিছুদিন ভাবগতিক দেখে তারপর আসতে। ঝুমকি রাজি হয়নি। আর ওবাড়ি থাকা যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই চলে এসেছে মায়ের কাছে।
মা একাই থাকে। ঝুমকির যখন সাত-আট বছর বয়স, তখনই ওর বাবা হারিয়ে গেল চিরতরে। কেউ বলে অন্য জায়গায় সংসার পেতেছে। কেউ বলে সাধু হয়ে চলে গেছে দূরে। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে জানা যায়নি। বহু চেষ্টা করেও বাবাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। ঝুমকির বাবা বাজারে আনাজপাতি বিক্রি করত। মার পক্ষে আর সেসব সম্ভব হল না। তখন মা একে-তাকে ধরে স্বাস্থ্যসেবা নার্সিংহোমে আয়ার কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল। সবদিন কাজ থাকে না। মা বলে, কাজ থাকলেও নাকি দেয় না। সত্যি কি মিথ্যে জানে না ঝুমকি। খুব কষ্ট করেই চলত ওদের সংসার। এইভাবেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিল ঝুমকি। তারপরই বিয়ে হয়ে গেল তার। এখন অবশ্য মায়ের একার জীবন বেশ চলে যায়। কিন্তু বাড়তি দুটো মানুষের অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপল বলেই কি মা এত রাগ-রাগ করে থাকে?
ঝুমকির বর কাঁকিনাড়া জুটমিলে কাজ করত। ক্যাজুয়াল লেবার ছিল। ওভারটাইম পেত না বিশেষ। বাড়ি ফিরে এসে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে যেত প্রতিদিন। ক্লাবঘরে কয়েকজন মিলে তাস খেলার নেশা। ঝুমকি অনেক রাগারাগি করেও তাস খেলা ছাড়াতে পারেনি।
-তাসই তো খেলি। জুয়া তো খেলি না! এত রাগ দেখানোর কী আছে শুনি?
-ঘরে যে আমি আছি একা একা সে খেয়াল থাকে না?
-ক্যান, মা নাই ঘরে? পাশের ঘরে বিল্টার বউ নাই? ওর সঙ্গেও তো গল্পসল্প করতে পারো।
শাশুড়ি নিজের মতো থাকে। জড়সড় হয়ে কোনওমতে বেঁচে থাকাই যেন তার কাজ। একমাস বড় ছেলের ঘরে, একমাস ছোট ছেলের ঘরে থাকে। শাশুড়ি যেন ভাগের মা। স্বামীর চাকরি ছোট ছেলে পাওয়ায় তার আশা ছিল সে খাওয়াবে। কিন্তু দাদাকে ভাগাভাগি করে মায়ের থাকা-খাওয়ার কথা সরাসরি বলেছিল বিল্টা। ঝুমকির বর দুলাল বলেছিল মা আমার কাছেই থাকুক না। আমি দু-মুঠো ভাত মাকে ঠিক খাওয়াতে পারব। কিন্তু রুমু চোখ পাকিয়ে গলা চড়িয়ে বলল, ‘বেশ বলেছেন দাদা। নিজে খাওয়ান আর লোকের কাছে বলে বেড়ান ছোট ছেলে খেতে দেয় না। ওটি হচ্ছে না বলে দিলাম।’
বিল্টা ঝুমকির দেওর। ওরা দুই ভাই। একটাই বোন। তার বিয়ে হয়ে গেছে দূরে। ছ’মাসে ন’মাসে আসে। বিল্টা কাজ করে বারুইপুরে। সরকারি চাকরি। দুবার ট্রেন পাল্টাতে হয় বলে ফিরতে দেরিই হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। সেই সময়টায় ওর বউ রুমুর সঙ্গে দিব্বি গল্পগুজব করা যায়। আগে কয়েকবার গেছেও। পাশেই ঘর ওদের। কিন্তু এখন আর যেতে মন চায় না। রুমুর স্বামী সরকারি চাকরি করে। ভাসুরের থেকে প্রায় ডবল মাইনে পায়। তাই এত অহংকার তার। ট্যাক ট্যাক করে কথা বলে আর পয়সার গরম দেখায়। অথচ ঝুমকি বলতে পারেনি যে এই চাকরিটা আমার বরও করতে পারত। কিন্তু বললেই যদি স্বামীর পড়াশোনার খোঁটা দেয় ! যা মুখ রুমুর, কোনও কথা বলতেই বাঁধে না ওর! এইসব কারণেই ঝুমকি যায় না আর। সেকথা বললে আবার মাথা গরম করবে দুলাল। একবার বলে শিক্ষা হয়ে গেছে ঝুমকির।
-আমি যদি লেখাপড়াটা ঠিকমতো করতাম তাহলে কি এই চাকরিটা ও পায়? বাবা মারা যাওয়ায় বড় ছেলে হিসাবে আমারই প্রাপ্য ছিল চাকরিটা। ও করলে বাবার মতো উঁচু পোস্টে চাকরি পাবে বলে সবাই চাইল ও পাক। আমিও কিছু বলিনি। নিজেরই তো ভাই। তা একটাকাও কি ঠেকায় দাদারে? নাকি পুজোআচ্চায় জামাকাপড় দেয়? মাকে খাওয়ানোর বেলায় যে ভাগাভাগি করে, সে কি মানুষ নাকি, হুঁহ্। সব শালা নিমকহারাম। আমি তখন ব্যাগড়া দিলে ভাল হত। গজগজ করে দুলাল। তারপর আর কোনওদিন এ প্রসঙ্গ তোলেনি ঝুমকি। প্রায় চার বছর হল লোকটা নেই। মেয়ের সামনে মুড়ির বাটি দিয়ে রাখে ঝুমকি। ‘আজ থাক। কাল পড়াব।’ বলেই বিছানায় শরীর ছড়িয়ে দেয় সে। আর ভাবতে থাকে তার জীবনের কথা। কাজ করতে করতেই বুকে ব্যথা উঠল দুলালের। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মানুষটা। সবাই ধরাধরি করে নিয়ে গেল নৈহাটির সরকারি হাসপাতালে। প্রায় দেড় দিন জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফেরার পর ঝুমকিকে দেখে শুধু একটু হাসল। কথা বলতে পারল না কিছু। একটু বাদেই চলে গেল লোকটা। একেবারেই চলে গেল।
কী দুঃসহ দিন গেছে! ভাবলেই মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঝুমকির। তেরোদিনে শ্রাদ্ধকাজ করা হবে। তার মধ্যেই একদিন দুলালের কারখানার বন্ধু শিবুদার সঙ্গে গেল ইউনিয়ন অফিসে। সেক্রেটারির সঙ্গে কথা হল। বলল, দেখি কী করা যায়। ফেরার সময় শিবুদা বারবার করে বলে দিয়েছে, এই দেখি মানে কিন্তু কথার কথা বোন। লেগে থাকতে হবে। না-কাঁদলে বাচ্চাকেও মা দুধ দেয় না গো। আমি তোমাকে বোন ডাকলাম। দাদার কথাটা একটু মান্য কোরো। কাজ জুটে গেলে তুমিও বাঁচবে, শিশুটাও বাঁচবে।
বহু ঘোরাঘুরির পর ঐ কারখানাতেই অফিসে ফাইল দেওয়া-নেওয়ার কাজ পাওয়া গেল। মাইনে সামান্যই। তবু ঐ দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছিল ঝুমকি। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট বদলে গেল। নতুন ওয়ার্কস ম্যানেজার এল। ইউনিয়নও বদলে গেল ইতিমধ্যেই। সেই সঙ্গে ঝুমকির জীবনও বদলে গেল। নতুন ম্যানেজমেন্ট ঝুমকিকে একেবারে ঝেড়ে ফেলল। ইউনিয়ন কিছুই করল না। অনেক ঘোরাঘুরি করে যখন বোঝা গেল আর চাকরি পাওয়ার মতো অবস্থা নেই, তখন রুমু শুরু করল ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট। বিল্টা সরাসরিই বলে দিল, ‘নিজের পথ দেখো বউদি। মাকে আমিই খাওয়াব। কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু বোঝোই তো, এই বাজারে আরও দুটো পেট চালানো সম্ভব? তুমি বরং এক কাজ করো। বাড়ি ভাগাভাগি করে নাও। তোমার অংশ তুমি বিক্রি করে সেই টাকায় কিছু-একটা করে চালাতে পারবে।’ এবারও রুমু বেঁকে বসল।
-এ আবার কী কুবুদ্ধি দিচ্ছ তুমি? বাড়ি ভাগাভাগি করো ঠিক আছে। কিন্তু ওর অংশ ও যদি অন্য কাউকে বেচে আর সে যদি টেটিয়া লোক হয়, তখন তো আমরাই বিপদে পড়ব। অত হাঙ্গামা নিতে পারব না। তার চেয়ে ওর জায়গায় ও থাকুক না। কে বারণ করেছে? দরকারে আমরাই কিনে নেবো ওর পোরশান। সেই কিনে নেওয়ার ভরসাতেই মাটি কামড়ে পড়েছিল ঝুমকি। কিন্তু ‘এখন টাকা নেই হাতে। পরে কিনব। আপাতত তুমি কোনও কাজ না-পেলে মার কাছে গিয়ে থাকো। মা তো ভালই রোজগার করে।’ বলে দিল বিল্টা।
মা যে খুব-একটা ভাল রোজগার করে না সেকথা ঝুমকি জানে। বিল্টারাও ভালই জানে। তবু তাড়ানোর জন্য বলেছে, বোঝে ঝুমকি। এরপর কথায় কথায় পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করা, মেয়েটাকে মারধর করা, কিছুই বাদ রাখেনি ওরা। ঝুমকি কোনওদিনই কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে পারে না। গা-হাত-পা কাঁপে। মাথা ঝিমঝিম করে। তাই আর পারা যাচ্ছিল না। নিজের ঘরে তালা মেরে চলে এল মায়ের কাছে। অবশ্য ওরা সেই তালা ভেঙেও দিতে পারে, তা জানে ঝুমকি। ভোলাভালা শাশুড়িকে দিয়ে দলিল নিজের নামে লিখিয়ে নিতেও কতক্ষণ ওদের কাছে! কাউন্সিলরের সঙ্গে বেশ মাখোমাখো সম্পর্ক বিল্টার। সব বুঝেও সম্পূর্ণ অনিশ্চিতের পথে পা রাখতে হল বাধ্য হয়েই।
পরদিন ঘণ্টা এল দুধ দিতে সকাল গড়িয়ে যাওয়ার একটু পরে। এইসময়ই নাকি প্রতিদিন এখন থেকে দুধ দেবে। মা ওর বাড়ি গিয়ে বলে এসেছে। এখন সবসময় বাড়িতে মেয়ে আছে। দরজা বন্ধ থাকার ব্যাপার নেই আর। তাই ঘণ্টা তার সময়মতো দুধ দিয়ে যেতে পারে। মা সকালে চলে যায় কাজে। ফেরে বিকেলে। আটটা থেকে চারটে ডিউটি। কখনও আবার নাইট ডিউটিও থাকে। তবে তা খুবই কম।
-চিনতে পারছিস?
-কেন চিনব না ঘণ্টাদা? তোকে কি ভোলা যায়?
-হ্যাঁ হ্যাঁ, ভুলবি কেনো? আমার খোনা গলা তো না-ভোলারই কথা !
ঝুমকি ঘণ্টাদার দিকে তাকায়। ওর মুখে কি অভিমানের ছায়া? একথা বলল কেন? এটা ঠিক যে পরাশরের পরে সবচেয়ে বেশি যে ওর পিছনে লাগত, সে হল ঝুমকি। পাড়ার কাছাকাছি থাকে বলে তুই করে বলে। আর সেজন্যই যেন ওর পিছনে লাগার অধিকার বেশিই ছিল। কিন্তু এত আগের কথাও কি মনে পুষে রেখেছে ঘণ্টাদা? মুখের দিকে তাকিয়ে তেমন কোনও ইঙ্গিত পায় না ঝুমকি।
-তুই কিন্তু আর আগের মতো লিকলিকে নেই রে। গায়ে গত্তি এসেছে বেশ। বিষয়টা ঘুরিয়ে দিতে চায় ঝুমকি।
-সব কি আর আগের মতো থাকে? দিন বদলায় না? মানুষও বদলায় ঝুমকি।
-বিয়ে করেছিস?
-না না। কে দেবে আমাকে মেয়ে?
-কেন রে, আয় তো ভালই করিস। দেবে না কেন?
-শুধু টাকা দিয়ে সব হয় ঝুমকি? ভাল করে কথা বলতে পারে না যে তাকে কোন মেয়ে পছন্দ করবে বল?
ঘণ্টাদা যখন কথা বলত, তখন ওর কথা শুনে পেটের মধ্যে থেকে গুরগুর করে হাসি উঠে আসত।কিন্তু এইসময় আর সেরকম হল না। বরং কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল ঝুমকির। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে বয়সও নানা অভিঘাত বইয়ে দেয় শরীর ও মনে। তাই বোধহয় একদিন যা ছিল হাসির ব্যাপার, তা আর হাসি এনে দিল না এখন।
ঝুমকি চেয়ে দেখে ঘণ্টাদাকে। টানা টানা চোখ। মুখের গড়নও খারাপ না। শুধু ওপরের ঠোঁট একটু কাটা মতো। চুল কি এইরকম ঝাঁকরাই ছিল? খানিকটা ছিল বোধহয়। ঠিক মনে করতে পারে না ঝুমকি। আসলে তখন ওকে রাগানোই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। এছাড়া আর ওর অন্য কোনওদিকে তেমন করে তাকানোর ফুরসত ছিল না। দুধ দিয়ে চলে যাওয়ার পর এসবই ভাবছিল ঝুমকি। এভাবেই প্রতিদিন দুধ দিতে আসত আর দু-একটা কথা হত। আগের মতো আর ঘণ্টাদাকে রাগানোর প্রশ্ন নেই ঝুমকির। ঘণ্টাও ঝুমকিকে এড়িয়ে যেত না আর।
একদিন ঝুমকি বলে বসল, প্রতিদিন এইভাবে দুধ দিয়েই চলে যাস। একটুও গল্প হয় না।
-কী করি বল, অন্য বাড়িগুলিতে দুধ দিতে হবে না?
-এক কাজ কর না ঘণ্টাদা, অন্য বাড়ি দুধ দিয়ে সবশেষে আমাদের বাড়িতে আয়। তাও দু-চারটে কথা বলা যাবে সময় করে।
ঘণ্টা রাজি হয়েছিল। সেইমতো সবশেষে দুধ দিতে আসত। দুজনে তখন নানা কথা হত। অল্প সময়ই থাকত ঘণ্টা। বাড়ি ফিরে গোরুগুলিকে স্নান করানো, বিচালি কাটা, খেতে দেওয়া, গোবর জড়ো করে একজায়গায় রাখা… অনেক কাজ জমে থাকত তার। বেশিক্ষণ বসার উপায় ছিল না। সৎমা অসুস্থ শরীরে রান্না করতে পারে শুধু, বাবা কিছুই করে না। তবু অল্প সময়ের মধ্যেই যেটুকু কথা হত দুজনের, সেই কথার ফাঁকে জানা হয়ে গেল ঝুমকির স্বামীর মারা যাওয়ার কথা, বিল্টা আর রুমুর আচরণ, ঘণ্টাদার সৎমায়ের ক্যানসার ধরা পড়ার কথা, সৎবোনের প্রেমের বিয়ের কথা, তার ভাল বরের কথা। পারস্পরিক সংলাপে দুজনের কাছেই একে অপরের যন্ত্রণার কথামালা পৌঁছে গেল।
ঘণ্টাদার সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভাল লাগত ঝুমকির। কোনওদিন আসতে দেরি হলে অপেক্ষার মেঘ জমত মনে। ঘণ্টাদারও কি ভাল লাগত ওর সাথে কথা বলতে? ভাবত ঝুমকি। জিজ্ঞাসা করতে মন চাইত না। কী ভাববে কে জানে! নিজের মনেই তাই জমিয়ে রাখত প্রশ্নটা। ঘণ্টা গোপালি নামে এক মেয়েকে ভালবাসত। কিন্তু সাহস করে কোনওদিন বলতে পারেনি সেকথা। যেদিন গোপালির বিয়ে হয়ে গেল, সেইদিন ঘণ্টার মনে হয়েছিল বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত পারেনি। সৎমা হলেও মা তো, প্রতিদিন রান্না করে দেয়, জামাকাপড় কেচে দেয়। ক্যানসার ধরা পড়ার পর অনেকটাই ঘণ্টার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। তাই সৎমায়ের কথা ভেবে আর বিষ খেতে পারেনি সে।
-জানিস, মা না-থাকলে ঠিক বিষ খেয়ে মরে যেতাম। বাপটার উপর আমার কোনও মায়া নেই। ঘেন্না করে খুব। বিষণ্ণ চোখে দৃষ্টি ঝুলিয়ে রেখে ঝুমকিকে বলেছিল ঘণ্টা।
ঘণ্টাদার কথাগুলো ঝুমকির মনে আলোড়ন তুলেছিল। আবার ভালও লেগেছিল। সৎমা হলেও তার প্রতি টান থাকার ব্যাপারটা বেশ মনে ধরেছিল ঝুমকির। তার মানে নামে দয়াল নয়, শরীরমনেও দয়ামায়া আছে লোকটার। ঝুমকি কথা ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ‘মেয়ে দেখব নাকি রে? বিয়ে করে সংসার করবি।’
-নাহ্। এই তো ভাল আছি। কাজ করি। খাইদাই, ঘুমাই। মাঝে মাঝে তাস পেটাই ক্লাবে। আর সিনেমা দেখি। প্রথম দিন প্রথম শো। হা হা করে হাসে ঘণ্টা।
তারপরই প্যাডেলে চাপ। আর হুড়হুড় করে সাইকেল এগিয়ে যায়। ঘণ্টাদা ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। এবার বাড়ির জমে-থাকা কাজে ঝাঁপ দেবে। ভাবতে ভাবতে যতক্ষণ দেখা যায় সেদিকেই তাকিয়ে থাকত ঝুমকি।
মাঝে মাঝে ঝুমকি আর ঘণ্টার ছোঁয়াছুঁয়িও চলত। হাত ছোঁয়া বা কখনও ঝুমকির গালে হাত বুলিয়ে দেওয়া। ঝুমকিও ঘণ্টাদার হাঁটু ছুঁয়ে দিত কখনও। একবার, মাত্রই একবার ঘণ্টাদার হাত ঝুমকির বুক ছুঁয়ে দিয়েছিল। যেন আচমকা লেগে গেছে। ঝুমকি জানে লেগে যায়নি, লাগিয়েছে। মেয়েরা এইসব ছোঁয়ার মানে জানে। দাওয়ায় বসে যখন কথা বলত দুজনে, মেয়ে আপনমনে খেলনাবাটি খেলত, তখন ঘণ্টাদার চোখ খেয়াল করে দেখেছে ঝুমকি। তার বুকে দৃষ্টি আটকে যেত। চকচক করত তার চোখজোড়া। ঝুমকির সারা শরীর শিরশির করে উঠত।
ঝুমকির বরও তাস খেলত প্রতিদিন। কারখানা থেকে ছুটির শেষে বাড়ি ফিরে খানিকক্ষণ বাদেই চলে যেত তাস খেলতে। আর ছুটির দিনে তো কথাই নেই। দুপুরের খাওয়া হলেই তাসের আড্ডায় চলে যেত। একবার কারখানার ছুটির দিনে তাস খেলার দলের কে একজন মারা গিয়েছিল বলে সেদিন খেলা হয়নি। আগের দিনই মারা গেছে। সন্ধ্যায় কারখানা থেকে ফিরে শ্মশানে গিয়েছিল সবাই। মাঝরাতে ফিরল। পরদিন এই কারণেই তাস খেলা বন্ধ। সেই দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর মাথায় ভূত চাপল লোকটার। আসলে নিজেই ভূত হয়ে উঠেছিল! ভূত হয়ে তার ঘাড়ে চেপে বসেছিল। ঘোরের মধ্যে ছিল যেন। তখনও মেয়েটা জন্মায়নি। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল নিজেই। তারপর.… কিন্তু সেই দু-চার মিনিট… এর বেশি কিছুতেই এগোতে পারত না লোকটা। ঝুমকিও এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
কিন্তু সেদিন এত গরম লাগছিল যে স্নানই করে নিল কলপাড়ে গিয়ে। খুব আরাম লেগেছিল। আজও কি সে স্নান করে নেবে? তাহলে শরীরটা একটু কি জুড়োবে! মাত্রই ঘণ্টাখানেক আগে স্নান করেছে। আবার এখনই কলপাড়ে গেলে কে কী ভাববে কে জানে! আজকাল অনেকের চোখ এদিকে থাকে, খেয়াল করেছে ঝুমকি। তাই আর স্নান করা হয়ে ওঠে না। শরীরের দাউদাউ ভাবটা থেকেই যায়।
সেই ঘণ্টাদাও একেবারেই চলেই গেল। সেদিনের কথা ভাবলে এখনও ঝুমকির বুক ভার হয়ে আসে। মনে হয় সুখ তার কপালে লেখা নেই। কিছুতেই সুখের মুখ দেখাবে না ভগবান!
সন্ধ্যা হয়েছে সবেমাত্র। শাঁখের শব্দ শোনা যাচ্ছে এবাড়ি ওবাড়ি থেকে। তার মধ্যেই বাইরে কারা যেন বলাবলি করছে ঘণ্টাদা নাকি গলায় দড়ি দিয়ে মরে গেছে। ধক করে উঠল বুকটা। সত্যি নাকি? বাইরে বেরিয়ে এল ঝুমকি। কিছু আগেই খবরটা জানাজানি হয়েছে। ঝুমকি ঘরে ঘুমাচ্ছিল মেয়েকে নিয়ে। একটু আগেই মা ডেকে তুলেছে। ‘সইন্ধ্যাটার সুমায় অলক্ষ্মীর মতো ঘুমাস ক্যান। উঠ উঠ।’
ঝুমকি বাইরে গিয়ে দেখে অনেকেই আলোচনা করছে ঘণ্টার মৃত্যু নিয়ে। কেউ বলে বিস্তর ধারদেনা করেছিল। কেউ বলে কোনও মেয়েকে ভালোবাসত। সেজন্যই নাকি এভাবে বেঘোরে মরল। তবে সেটা বিশ্বাস হয় না ঝুমকির। অন্য কাউকে যদি ভালই বাসত,তবে তার দিকে অমন করে তাকাত কেন? কেন এত ছোঁয়াছুঁয়ি করত? কেন তার সঙ্গে এমন করে গল্প করত? আর ঘণ্টাদা তাকে কি জানাত না একবারও। হতেই পারে না। ঝুমকি একবার ভাবল গিয়ে দেখে আসবে। কিন্তু যেতে পারল না। কে যেন পা টেনে ধরছিল তার। মেয়েকে বুকে আঁকড়ে বসে থাকল বাড়িতেই। তবে তার মা গিয়েছিল দেখতে। ফিরে এসে বলেছিল, ‘দেইখ্যা মনেই লয় না মরছে ঘণ্টা। পুলিশ আইস্যা অরে নামাইসে। দেইখ্যা মনে লয় ঘুমাইতাসে। আর বাপটা ন্যাকা কান্না কান্দে। দ্যাখলেই গা জ্বলি যায়।’
মা আরও কীসব বলছিল। ঝুমকির কানে সেসব কিছুই ঢুকছিল না। শুধু ঘণ্টাদার নানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। একবারও মায়ের কথা ভাবলি না ঘণ্টাদা? হোক না সৎমা। তুই না বলেছিলি… অন্তত আমার কথাও একবারও ভাবলি না! শোক ঝুমকিকে পাথর করে দিয়েছিল। কোনও কথা বলতে পারছিল না। কান্না এসে আটকেছিল গলার কাছে। কিছুতেই বাইরে বের হল না!
পোস্টমর্টেম করে বডি এল পরদিন দুপুরের কিছু পরে। পাড়ার সব্বাই গেল। ঝুমকি যেতে পারল না কিছুতেই। কী দরকার মরা মুখ দেখার? যে মুখটা ওর মনের মধ্যে আছে সেটাই থাক না! কিন্তু ওর জানা ছিল না মৃতদেহ ওদের বাড়ির পথ ধরেই নিয়ে যাবে।
সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহ কাচের গাড়িতে চলে যাচ্ছে ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে। দাওয়ায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ঝুমকি। সারা শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা। ফুল দিয়ে সাজানো। মুখটা ভাল দেখা যাচ্ছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে ঝুমকির। শববাহী গাড়িটা যখন পেরিয়ে গেল ওদের বাড়ি, তখন দেখতে পেল ঘণ্টাদার পা দুটো।
ঝুমকির মনে পড়ে গিয়েছিল, বহুদিন আগে একবার কাকে যেন ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছিল। সারা রাজ্যে এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় অবস্থা। রেডিও টিভি খবরের কাগজে নানা আলোচনা। পরদিন সকালে খবরের কাগজে ছবি দেখেছিল ঝুমকি। ধর্ষণ করে খুন। সেই লোকটার শুধু জোড়া পায়ের ছবি ছাপা হয়েছিল খবরের কাগজের প্রথম পাতায়। সেদিন ছিল পনেরোই আগস্ট। সকাল সকাল সব জায়গায় পতাকা উড়ছে। আর খবরের কাগজের পায়ের ছবি দুলে উঠছে মানুষের আলোচনায়।
সবাই বলাবলি করছিল রেপ করে তারপর খুন করেছে নাকি লোকটা। ঝুমকির মনে পড়ছে লোকটার নাম ছিল ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি। কেউ কেউ বলছে, না না, সব বাজে কথা। আসল খুনিকে আড়াল করার জন্যই নাকি সাজানো কেসে এই লোকটাকে ফাঁসানো হয়েছে। সত্যি কি মিথ্যা জানে না ঝুমকি। জানতেও চায় না আর। ঘণ্টাদাও তো তাইই। এই যে চোখ দিয়ে দেখত আর লোভীর মতো তাকাত, সেটা কি ধর্ষণ নয়? আহা! যদি সত্যিই একবার অন্তত জোর করত কোনও আবডালে। প্রথমে একটু বাধা দিত। তারপর সব ছেড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে থাকত। নিজের লোকটা কেমন যেন তাড়াহুড়ো করত। তারপর কাজ সেরেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ত। ঘণ্টাদার তাকানো দেখলে কেমন যেন হত শরীরে ঝুমকির। তারপর যখন চলে যেত সাইকেল চালিয়ে, ঠিক তখনই কেমন একটা অবসাদ আসত শরীরজুড়ে। তবু আনচান আনচান করত শরীর।
যখন পা জোড়া দুলতে দুলতে চোখের আড়াল হল, তখনই হু হু কান্না ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝুমকির চোখ থেকে, সারা শরীর থেকে। শব্দ করে কান্না। যেন আপনজনের চলে যাওয়ার জন্য বাঁধ-না-মানা সেই কান্না। মৃতদেহ দেখতে ভিড় করে থাকা কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল ঝুমকিকে। দয়াল ঘোষের জন্য কান্না? সেকি!
-না না। আইজ ১৬ই আশ্বিন না? আমি জানি এইরকম একটা ঘটব। এই তারিখেই তো জামাইটা মরল। ঝুমকির মা বলে উঠল। সে কি কখনও শুনতে পেয়েছিল মেয়ের সর্বনাশের ডাক? নাকি সত্যিই জামাইয়ের মৃত্যুর দিন মনে পড়ায় সেকথাই বলতে চাইল?
-কচি বয়স। শোক হওয়ারই কথা। আর মরা-টরা দেখলে আরও মনে পড়ে। কে যেন বলল এসব।
ঝুমকি তাকিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করছিল, এরা কারা। গলা চেনা চেনা। কিন্তু কাউকেই মনে করতে পারছে না। ঝাপসা চোখে বুঝতেও পারছে না চেহারা। কেউ একজন এগিয়ে এসে মাথায় হাত রাখল। কে? কিছুই বুঝতে পারছিল না ঝুমকি।
চোখের সামনে শুধু দুটো পা দুলে দুলে মিলিয়ে যাচ্ছে। তারপর থেকে চোখ বুজলেই ঝুমকি দেখতে পায় জোড়া পা দুলে উঠছে। অনেক অনেক বড় হয়ে সেই পা জোড়া গোটা পৃথিবীকে যেন ঢেকে দিতে চাইছে।
কবি , গল্পকার , ঔপন্যাসিক । আত্মহননের কথামালা , শামুকের গমন পদ্ধতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ । পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মান । ছোট-বড় নানা পত্রিকাতেই তিনি নিয়মিত লেখেন ।