আজ ২৩ জানুয়ারী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর শুভ জন্মতিথি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। নামটির পাশে দুটি ভাবনা আছে। একটি জন্মভূমি অর্থাৎ সবার উপরে আমার দেশ অপরটি অনুপ্রেরণা। দেশবাসীর কাছে তিনি চিরকালের এক মহানায়ক। এক আনফরগটেন হিরো। ভারতের ও বিশ্বের মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসের এক বিতর্কিত ও বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র।
ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুভাষের শিক্ষাজীবন
সুভাষচন্দ্র বোস অবশ্য পরবর্তীকালে তাঁর লেখায় এটা উল্লেখ করেছিলেন যে, স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও লেখা বই তাঁকে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীতে পরিণত করেছিলো। স্বামীজির লেখা বই পড়েই তিনি তাঁর জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পান।
সেই সংঘাতে, যেহেতু সুভাষচন্দ্র ভারতীয় ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন তাই তাঁকে এক বছরের জন্য কলেজ থেকে বহিস্কার করে দেওয়া হয় এবং পরীক্ষা দেওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয় না।
তারপর ১৯১৮ সালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে, দর্শনে সাম্মানিক সহ বি.এ পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি।
কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে সুভাষচন্দ্র বসু, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ফিজউইলিয়াম কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন। সেখানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান, কিন্তু বিপ্লব সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার জন্য সেই নিয়োগও প্রত্যাখ্যান করেন।
চাকরি প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি আবার ইংল্যান্ড ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং এখানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। সেই দলে ঢোকার তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো, ভারতকে যেভাবেই হোক ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন করে তোলা।
১৩ই এপ্রিল ১৯১৯, যখন অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড ও দমনমূলক রাওলাট আইন সমস্ত ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। এইরুপ বিশৃঙ্খলার পর, নেতাজী ‘স্বরাজ’ নামক একটি খবরের কাগজের হয়ে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
এরপর চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৪ সালে যখন কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র হন, সেইসময় সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর অধীনে কাজ করতেন। চিত্তরঞ্জন দাশই ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু, কারণ তাঁর কাছ থেকেই সুভাষচন্দ্রের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়।
নেতাজির প্রেম
অসহযোগ আন্দোলনের কারণে জেলে যাওয়ার পর থেকেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর শরীর বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য সুভাষ বসুকে শেষমেশ অস্ট্রিয়ায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অবস্থানকালে এক ইউরোপীয় প্রকাশকের কাছ থেকে বই লেখার অনুরোধ পান সুভাষ বোস। ‘দা ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ নামে ওই বই লেখার জন্যই তখন সহকারী হিসেবে ২৩ বছর বয়সী এমিলি শেঙ্কলকে নিয়োগ দেন তিনি। ১৯৩৪ সালের জুন মাস; সুভাষ চন্দ্রের বয়স তখন ৩৭ বছর। স্বাধীনতাকামী এ নেতা তখন হয়তো ধারণাও করতে পারেননি ওই অস্ট্রীয় তরুণী তার জীবনে নতুন ঝড় তুলে দেবেন।
১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫; এই প্রায় একযুগ সময়কালে দুজনে বছর তিনেকেরও কম সময় একসঙ্গে কাটাতে পেরেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৪২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম নেয় তাদের একমাত্র সন্তান অনিতা। মেয়েকে দেখার জন্য ওই বছর ডিসেম্বরে ভিয়েনায় পৌঁছান সুভাষ চন্দ্র। তারপরে বড়ভাই শরৎ চন্দ্রকে বাংলায় লেখা একটি চিঠিতে সুভাষ চন্দ্র স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন।