অথচ…
বেণী পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই যাদের আগুন নেমে আসে
হাঁটু পর্যন্ত জলে ডোবার আগেই গলা অবধি গ্রাস করে জলের মতো কোন জীবন অথবা মৃত্যু… ঈশ্বর, তুমি শুনতে পাচ্ছ?
“বহু যুগের ওপার হতে” ভেসে আসে আজও থেঁতলে যাওয়া তিন থেকে তিরাশির কোমরের নীচ থেকে ভেসে যাওয়া রক্তনদী অথবা একটা সাগরভরা হাহাকার!
এই যে এত লড়াই
এই যে এত আলোর নতুন জন্মদিন
এই দুশোর উদযাপন, আমি তো দেখছি ঈশ্বর, তোমার চোখে জল!
তোমার চোখের জলের যাপন সেদিনের সে-রাত্রির থেকেও ভয়ঙ্কর!
অথচ, বেণী পর্যন্ত নামার আগেই যাদের অসময় আসে; যাদের হাঁটু ভেজার আগেই গলা পর্যন্ত ডুবে যায়, তাদের জন্যই তো ছিল তোমার লড়াই। তোমার ঘাম-রক্ত। তোমার সর্বস্ব। একটা ‘অথচ’ এত-এত দিবারাত্রির স্বাভাবিক-স্বেচ্ছা মৃত্যু-অপমৃত্যুর পরেও সেই ‘অথচ’-কে পার করতে পারল না! আমার ঈশ্বর, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার চোখের চারপাশে কী ভীষণ গরান গাছের জটিল শিকড়ে ছেয়ে গেছে! আমি তোমাকে ছুঁতে পারছি না! আমি তাকাতে পারছি না অসমের দরং জেলার গভীর রাতের দিকে! তাকাতে পারছি না সেদিনের সেই তিন বোনের দিকে! তিন জনের একজন প্রতিবন্ধী।অন্যজন গর্ভে আগলে রাখা দু-মাসের ‘যত্ন’। একজন স্বাভাবিক। হে ঈশ্বর, আমার গল্প ছিঁড়ে যায়। চিড়ে যায়। তৈরি হল আরও একটা রক্তনদীর নগ্ন ইতিহাস! আপনি কখনও জাতের ছাপ্পায় বিশ্বাস করেননি। অথচ, ওদের একমাত্র ভাই ভিন্নধর্মী একটি মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখছে বলে পুলিশের একের পর এক লাথিতে ভেঙে গেল ‘যত্ন’। অথচ, ঈশ্বর, তুমি তো আজও ঘুমের ভিতর বলে যাও স্বপ্ন দেখার কথা বারবার!
আজও নারীর জন্য বরাদ্দ শব্দ
“যৌন দাসী”
এক গভীর মহামারী টুকরো ভূমি জুড়ে। অথচ তার নাম দেশ। তার নাম রাষ্ট্র। তোমার-আমার-আমাদের প্রিয়তম দেশ। দেশ রাগে জেগে ওঠে মেতে ওঠে সকাল-রাত্রি। অথচ মায়ের মাথা ক্রমশ মাটি ছুঁই-ছুঁই…
চৌরাশিয়ার বাঁশি আর জাগাতে পারে না ‘বন্দেমাতরম’!
রাস্তা যখন মৃত্যুফাঁদ; অথচ শেষ কথা রাস্তাই বলবে…
দ্রুতলয়ে বেজে যায় রাগ দেশ
অথচ মা মাথা ওঠান না…
এমন একটা জন্মদিন সত্যিই তোমাকে দিতে চাইনি
আমার প্রিয়তম ঈশ্বর!
অথচ, দ্যাখো কীভাবে সত্যি হয়ে উঠল সেদিনের সে-কথাটি-
” ভালোবেসেই ভালোবাসাহীন হয়ে যায় পৃথিবী…”

কবি,গায়ক ও সম্পাদক