আজ ০৮ জুলাই কবি ও কথাসাহিত্যিক রিমঝিম আহমেদের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কালবেলা
কালবেলা কেটে গেলে আকাশটা ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেব মেঘ
পাতাদের গায়ে গায়ে বেঁধে দেব উদাসী বাতাস ফুরফুরে
কালবেলা কেটে গেলে আবার নতুন করে জীবন গোছাব
কলাপাতা সুখে মোড়া শীতকাল মেখে দেব রোদ্দুরের গায়ে
ভুলেভরা,অভিমানে যে কটা রাত্তির কেটে গেল; অযাচিত
কমলা বিকেলে তার সবটুকু ফুলগন্ধ আনব কুড়িয়ে
আমাদের পাছে পাছে ছায়া ঘোরে; দূর-প্রান্তরের হাতছানি
মন্থর শৈশব যেন কাছে ডাকে পুনরায় বিছিয়ে বিষাদ
সাপের পেছনে হেঁটে বহুকাল যে নদীর নাম খরস্রোতা
তার পাড়ে রুয়ে আসি নিজ হাতে অসুখের চারা, সবুজাভ
মেঘের পালক খসে বৃষ্টি নেমে এলে কোনদিন মধ্যরাতে
জেনেছি থাকবে জেগে ভুল করে ডাকে যদি প্রতীক্ষার রঙিন চড়ুই
লুপ্তপ্রায় প্রণয়ের হাত থেকে যে আঙুল খসে গেসে রাতে
তুমিও কুড়াও জানি সে আঙুল অপ্রকাশ্যে, আমারই তফাতে
বাসনা
টপকে যাচ্ছি এক-একটা দেয়াল
শেষ দেয়ালটা টপকানো হলেই একটা
বিশুদ্ধ জীবন পাবো—
–একদিন
আগ্নেয়াস্ত্র সব জমে গেছে শীতে
যুদ্ধের ময়দানে ফুটে আছে বিস্তৃত গ্লাডিওলাস
আত্মহত্যা বিষয়ক প্রতিশব্দগুলি প্রতিদিন
ডোরবেল বাজিয়ে চলে যাবে এমন হয় না !
প্রিয় গানের স্বরলিপিগুলি উদরা থেকে তারার
দিকে যেতে যেতে জন্মান্তরের বৃষ্টিতে
মুছে যাবে এমন হয় না !
শেষ দেয়ালটা টপকে গেলেই
পাখিরা ডেকে উঠবে–“বাসনা বাসনা” ব’লে
কোন শিশুর ভালোবেসে দেওয়া গন্ধরাজ বুকে
নিয়ে ঘুমাব একরাত্তির
আসন্ন প্রত্যুষে ছুঁয়ে দেব কোন নিঃসঙ্গ বাসনার
প্রলাপ : ১
এ ঘোর অনিদ্রা।
আমি ক্রমশ পাগল হতে হতে বদ্ধ উন্মাদনার দিকে যাচ্ছি—
আকাশ ভেঙে পড়ছে, পুরনো পাপ ঝেড়ে ফেলছে মেঘ
আমি ক্রমশ সবকিছু উপড়ে নিয়ে ঝড়ের দিকে যাচ্ছি—
ওপারে একা, ঢেউয়ের দোলায় দুলছে ডিঙি
সারস বাঁশবন ছেড়ে যাবার আগে মানচিত্র এঁকে নেয় ডানায়,
চোখে এ কোন ঘোর। অলসতা জেঁকে বসে মনে—
আমি ক্রমশ দীর্ঘজীবী অসুখের দিকে যাচ্ছি।
দ্বি-চারণ-সংবাদ : চার
বটফল খেতে গিয়ে ডানা খুইয়ে আসা পাখির চিৎকার গান হয়ে বাজে—মসজিদের আযান আর মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি ভয়-তাড়িত চিৎকার মনে হয় রোজ। আমি কি কখনও মানুষের প্রকোষ্ঠ থেকে জন্ম নেয়া কোনো মানুষ ছিলাম! এত পাপ এত পঙ্কিলতা ঝুলে আছে আঙুলে আঙুলে!
বিহ্বলতা ছড়িয়ে আছে জীবনের চারপাশে। শুধু সাইক্লোন সেন্টার দাঁড়িয়ে থাকে দূরে বিন্দুর মতো—আবছা আর নিঃসঙ্গ। হাঁটতে হাঁটতে ডানা খুইয়ে আসা পাখির মতো খুইয়ে আসি সাধের মল। হাঁটতে হাঁটতে অচেনা জলার দিকে নেমে যাচ্ছি—তরঙ্গায়িত কালো জল সরসরিয়ে এগিয়ে যায় অবিরল।
কোনো তান্ত্রিক বা হস্তরেখাবিদ বলে নি কোনোদিন, এভাবে হেঁটে হেঁটে—মানচিত্র ভুলে একদিন পায়ের মালিকানা হারাব—আযানকে হুংকার ভেবে ফসল তোলা সুখে উসকে দেব আগুন।
ক্ষরণ সিরিজ : ৭
আমি কখন আমার হয়ে গেছি!
ঘোলাটে রোদে ঝাপসা দেখি
বয়সের পরম্পরা হেঁটে যাচ্ছে পিঁপড়া-ভঙ্গিমায়—
অনুকারাচ্ছন্ন জীবনের পায়ে রশি বেঁধে টেনে নিয়ে
যেতে যেতে জন্ম পেছনে ফিরে দেখে, কাচের
মতো আলো ভেঙে ভেঙে পড়ে আছে পথে।
একুরিয়ামকে সমুদ্র ভেবে একদল গোল্ডফিশ
আজন্ম সাঁতরে যাচ্ছে।
একদা স্নানঘরের আয়নার প্রেমে পড়েছিলাম।
জবাবমতো পিম্পল ফুটে থাকার ইতিহাস প্রেমকে
জাগিয়ে রাখে চিরন্তন। জলের গায়ে ঢেউ তুলে
মাটির ঢেলাটিও বেদনার রেখা এঁকেছিল—
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেওয়া রিমঝিম আহমেদের কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। বিচিত্র রূপক-প্রতীকের ব্যঞ্জনায় বহুমাত্রিক ইশারার মাধ্যমে সময়কে স্পর্শ করতে আগ্রহী এই কবি। ২০২০ এ প্রকাশ পায় প্রথম উপন্যাস ‘বিস্ময়চিহ্নের মতো’।