| 26 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

জ্যোতি পোদ্দারের কবিতাগুচ্ছ

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

আজ ৩০ সেপ্টেম্বর কবি জ্যোতি পোদ্দারের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


খোয়াব

যতটুকু জমি চাষাবাদ করেছি ফলনের চেয়ে চিটাই
বেশী। তাই আজকাল অনুরাগ শব্দটির পরিবর্তে
বিরাগই উঠান জুড়ে রোদের সাথে
এক্কা দোক্কা।

তোমার কিছুই করার ছিল না।
আমার ছিল ?
হ্যাঁ হ্যাঁ ছিল বটে।

নইলে কেন আমি কাঁদামাটি ছানার মতো
বিশ আঙুলে ছেনেছি তোমার জমিন ?
জিব দিয়ে আঁচড়ে তুলেছি আহলাদের ঢেঁকুর।
উর্বরা মাঠের নিষ্ফল কৃষক আমি
কেবলই চিটাধানে খুঁজি
হাইব্রিড খোয়াব।

 

ছায়াপাখি

গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজা সেরে আমি উঠে এলেও
আমার ছায়া জলের ভাঁজে
জলকেলি করতে করতে
হাঁসেদের সাথে ডুব সাঁতার চিৎ সাঁতার
দিতে দিতে
জল তরঙ্গে সুর তরঙ্গ
সুর তরঙ্গে জল তরঙ্গ
ফুটে উঠছে রোদ ও বৃষ্টির দ্বৈত সঙ্গীত।

আমি বরং পাখি মানববন্ধন কর্মসূচীতে
সুশীল সমাজ হই।
পাখির ভাষা বিষয়ক সেমিনারে
ছায়াপাখি কিংবা পাখির ছায়া
যেই গান গেয়ে উঠুক না কেন-
আমি কিন্তু ঠিক ঠিক তাক করে রাখব
আমার গান…

 

দ্বৈতাদ্বৈত

অন্ধকার বারান্দায় বসে কি যেন ভাবছিলাম।
কি যেন না মূলত ভাবছিলাম ব্যঞ্জন বর্ণদের নিয়ে।
ঠিক তখনি আদর্শলিপি থেকে
বিদ্যাসাগর ছুঁড়ে দিল ব। মানে ব-দ্বীপ।
আর ব-দ্বীপ মুখ থেকে বেরুতেই
কোলে আছড়ে পড়ল
ঢেউয়ের পর ঢেউ।
তখনি লিখলাম নৌকা। পানসী নৌকা।
নাকি সাম্পান-ঠিক মনে নেই।

তাতেই তুলে দিলাম আমার আমিকে।
তীরে বসে বসে দেখছি
আমার আমি সাম্পান অথবা পানসীতে
ভাসতে ভাসতে ডুবছে।
ডুবতে ডুবতে ভাবছে।

অথচ তার কাছে কোন কম্পাস নেই।
আর নেই বলে চিহ্নহীনতার ভেতর
কেবলই ডুবছে।

ডুবুক না।
অনামীর ভেতর নামী ডুবছে।
অরূপের ভেতর রূপ ডুবছে।
আমি বরং কুড়িয়ে তুলি জ্যামিতিক নুড়ি।

 

যুগল রেখা

মেয়েটি এক্কা দোক্কা।
ছেলেটি ক্রিকেট।
যুগল রেখা সমান ও সমান্তরাল।

প্রারম্ভিক কিংবা সমাপনী বিন্দুতে
শুধুই মিলন হবে কতদিনের
নামের সংকীর্তন। হরিলুটের বাতাসা

জটলা ভাঙে জটলা গড়ে
উদ্বাহু তুলে নাচে হরিদাস গোস্বামী।
হরি বলে ধরায় গড়ায়
হরিভক্ত কৃষ্ণদাসী।

 

বিড়াল

ভাবছি একটা বিড়াল পুষবো।
কালো নয় সাদা বিড়াল।
বিনয়ী। ভদ্র। সুশ্রী।
যে আমার ছেলের দুধ চুরি করবে না।
পাতের এটোঁকাঁটা নিয়েই ঠোঁটের কোণে
ঝুলিয়ে রাখবে হাসি হাসি মুখ।
(মানে কোলগেটের হাসি আর কি)

যে আমার এঁকে দেয়া বৃত্তের
এক ব্যাসার্ধ থেকে অন্য
ব্যাসার্ধের দিকে যখন ক্যাটস ওয়াকিং করবে
দর্শকদের তুমুল করতালির বৃষ্টিপাতে
বদলে যাবে আবহাওয়া দপ্তরের
গাণিতিক ভাষ্য।
ভেঙে পড়বে আদ্রর্তার সূচক।

 

লাজবতী সেলুন

পৈতৃক পেশা ছেড়েছে মন্টুশীল। রাস্তার মোড়ের লাজবতী সেলুন ওঠে গেছে অনেকদিন। ছেলেরা শীল লেখে না। নিমাই পণ্ডিতের জাতপাত বিরোধী অনামীর নামে বাংলাদেশ ভেসে গেলেও কর্তা বাবুরা শীলদের নিয়ে একই আসনে রেবতী মোহনের শ্রাদ্ধে লুচি মিষ্টান্ন খেতে আপত্তি তুলেছিল।
বুদ্ধদেব শীল শব্দটি খুবই পছন্দের ছিল।
তার ছেলেরা শীল লেখে না।
রায় লিখে।
অথচ দেখুন কি অবাক কান্ড রেবতী বাবুর এম,এ পাশ করা মেয়েটি কিনা বাড়ীর সামনে ঝুলিয়ে দিল রূপসী বিউটি পার্লারের সাইন বোর্ড!

 

আবারো চশমা

চোখ থেকে চশমা নামিয়ে রাখি। আবার তুলি।
লোকটির ছায়া দুলে ওঠে।
আধময়লা ধুতি;
আধময়লা জামা
দুলে ওঠে।
আমি এগিয়ে যাই।
লোকটি দেখিনা। ছায়া দুলে ওঠে।
মুখহীন ছায়া
দেয়ালের হুকে ঝুলে থাকা একহারা গেঞ্জির মতো
দুলে ওঠে।
রোদের প্রখরতায় কালো আরো কালো।
আবলুস কাঠের মতো আরো কালো
হয়ে দুলে ওঠে ছায়া।

আমি খুঁজি
তন্ন তন্ন করি মানচিত্র।
লোকটি নেই। লোকটির ছায়া আছে।
নেই লোকটি ছায়া হয়ে আছে।
আবারো চশমা খুলি। চশমা তুলি।

 

ঝালর

আমার জানালায় কোন পর্দা নেই।
প্রান্তরও নেই।
গলির মুখে চেচামেচি। লুটোপুটি।
ছেলেদের ক্রিকেট।
মেয়েদের স্টার জলসা।
প্রান্তর নেই তো ছক্কা নেই।
বিজ্ঞাপনে শচীনের ছক্কা।
দেয়ালে লাগলেই চার।
বৈদ্যুতিক খুটিতে আউট।
রোদের ঝালরে ভবে গেছে আমার ঘর।
আমার জানালায় কোন পর্দা নেই।
ঝিলমিল রোদের ঝালর
লুলু ভায়ের চুলে বিলিকাটে।
রূপালী চুল দেখতে দেখতে মনে পড়ে
সোনালী আঁশের কথা।
সোনালী আঁশ নেই তো
আদমজী নেই।
শ্রমিক নেই।
শ্রমিকের মুখে নেই কোন মানচিত্র।
শুধুই একথাল মাংসপিন্ড
ভাষাহীন। মূক

 

 

শিরোনামহীন

এই নাও হাত— প্রসারিত হাত আর হাতের রেখার বিন্যাস
যদি পারো গুচ্ছ গুচ্ছ অনুজ্জ্বল তারাপুঞ্জ থেকে টুকে নিও
কতিপয় ভোর আর তুমি তো জানই ভোর মানে ফুলের ডাগর
চাহনি; পাখির নিশিবাস শয্যার আলতো মোলায়েম ঘুম ঘুম গন্ধ

আমার হাতের রেখা পৃথিবীর সমান বয়স আর শত কথামালা
শত ভৈরবী গুঞ্জন বর্ণে বর্ণে রঞ্জিত অক্ষর কান পাতলেই তুমি
তাদের তোমার করে নিতে পারবে তোমার মায়াবী আঁচল ভরে।

আমার হাত উপুড় করলেই সাদা নীলে কাজ করা আকাশ
আর আকাশের গুচ্ছ গুচছ অনুজ্জ্বল তারাপুঞ্জ; তুমি ইচ্ছে
করলেই তোমার করে নিতে পারো— এই নাও প্রসারিত হাত।

হাত পাতলেই পৃথিবীর ভিটেমাটি শ্মশানের চিতাকাঠ
রেখার বিন্যাস ধরে আশ্রমের খুঁজে হেঁটেছি অনেকদিন
গাঙপাড় ধরে ধরে শ্রমণ যেমন খুঁজে মুখরিত পল্লীগ্রাম

এই নাও প্রসারিত হাতের পৃথিবী আর তারাপুঞ্জের আকাশ

 

পাখি ও আমি

পাখি দেখা ও দেখানোর চেয়ে
ভালো লাগে পাখি শিকার।
পুলকিত হই;
লোভের জলে আলজিব নেচে ওঠে।
টুং টাং টাকরার শব্দে নেচে ওঠে শরীর।
নির্ভার পালকশরীর নিয়ে আকাশে আকাশে
উড়ি ও উড়াই আমার আমোদিত আহলাদ।

আহা! পাখি- মাংসল পাখি
কষানো মাংসের পাখি
গুলির ছড়রা লেগেছে বুঝি!
রক্ত ঝরছে খুব, তাই না?

জানো পাখি আমিও তোমার মতো
এখন যে শরীর দেখছো সেটিও মর্গেজ
কিংবা বলতে পারো ওয়ারলেস শরীর;
নেট কভারেজে বন্দি।
আমার বটে তবু আমার নয়।

তোমার জলরঙে আঁকা আকাশ
আর আমার পৃখিবীর মাটি
একটিও তোমার কিংবা আমার নয়;

একদিন তুমি উড়ছিলে
আমি খুন করলাম তোমাকে
একদিন আমি মাটিতে রেখেছি ঘোড়ার পা
আমি খুন হলাম

খুন আর খুনি মুলত একটা মুদ্রা
অথবা পণ্যজীবির নিছক পণ্য

 

আতা গাছ ও বর্ষাগীতি

আতার পাতায় জমা জলে লেগে আছে
উড়ন্ত পাখির ছায়ার ধারাপাত
আর মেলানো ছাতার মতো আতাগাছ
ধরে রেখেছে এক বর্ষাকাল

বর্ষা এবার তোমায় দিলাম ছুটি
একটু ঘুরে এসো নগরে
নাগরিকের চোখ খা খা বিরান চাতাল
তোমার নরম জলে ধুয়ে দাও কালচে চোখের পাড়

আমার আতাগাছ ধরে রেখেছে এক বর্ষাকাল
আর আতার পাতায় জমা জলের শরীরে
পাখিদের ওড়াওড়ি
আমাকে কোথাও যেতে দেয় না

গাছের নিকটে এলে আতার সবুজ পাতা
আমাকে ভিজিয়ে দেয় ঝির ঝির সবুজ জলে
এক বর্ষার আতাগাছ আমাকে কোথাও যেতে দেয় না।

 

সাগুদানা আলোবিন্দু

পাতার ভেতর পাতা উল্টে পাতার শরীরে লিখি কতিপয় বিবমিষা
পাতাবোন তুমি পাতাভাই তুমি তোমার শরীরে আগুন;
আগুনের গুনগুন আর লালে লাল রক্তজিভ
ঢেলে দিচ্ছে ঢেলে দিচ্ছে বিষভাণ্ড

আমি যে শোলার পুতলা মেলায় মেলায় ঘুরি
ও কারিগর ও কারিগর মরি মরি আমি মরি

ও ডাকিনী ও যোগিনী কালরাত্রি অমাবস্যা
এমন রাতেই তুমি শুষে নিলা প্রাণ?

লাল রক্তজিবে বুনো গন্ধ— গন্ধের ভেতর নরমুন্ড মালা;
উড়ছে উড়ছে বাতাস বাতাসে ভাঁজকরা অন্ধকারে।

মুণ্ডহীন খাঁজকাটা পাতারশরীর
মন্ত্রে নাচে
তন্ত্রে নাচে

নাচে তান্ত্রিকের গোল গোল মাদকচাহনি
ও শিব শ্মশানবাসী ওঠো তুমি ওঠো
শব দেহ নিয়ে কী করিবে তুমি
খোল আলোর পরতে পরতে আলোভাঁজ
সাদা সাদা সাগুদানা আলোবিন্দু
আর নয়া পয়সার ঝলক;

তুমি কাল কালীর যাত্রাবিন্দু।
আমি যে শোলার পুতলা মেলায় মেলায় ঘুরি
আমি যে চিনির ঘোড়া

আমি যে চিনির হাতি
তাপে ভাপে চাপে পাতার ভেতর পাতা উল্টে
পাতার কোমলা শরীরে লিখি যাপনের বিবমিষা

 

নর্তকী

প্রাঙ্গণে রঙ্গন ফুটে লালে লাল— গোল লাল।

ভোরলাগা আলোর ভেতর বাতাসে বাতাসে ফোটা
কী সুন্দর লাল লাল গোলবৃত্ত লাল
বৃত্তের ভেতর বৃত্তনাচে
যেমন নাচে নাচের নর্তকী

সবুজ পাতায় মিহিদানা ভোরের বৈরভী
মৃদঙ্গ বাজিয়ে বাজিয়ে ঘুরে ঘুরে যৌথনৃত্যের আলাপে
আমাকে ডাকছে;

আমি তো বিশেষ্য পদবাচ্য খুনি
কতদিন কী সুন্দর কী সুন্দর ফুল
বলতে বলতে ছিন্নভিন্ন করেছি লালবৃত্তের মুখরতা
রঙ্গনের পেলবতা নিয়ে খেলেছি নিষ্ঠুর খেলা
বাগানের গাছকে ভেবেছি লোক দেখানোর সৌখিনতা
আমার করে ভাবিনি।

ভোরলাগা আলোর ভেতর বাতাসে বাতাসে ফোটা
লাল লাল গোলবৃত্ত লালের সঙ্গত বুঝিনি
যেমন বুঝেছি পণ্যমূল্য
বাজার দরের সৌখিনতা

ছেড়েছি এবার পন্যজীবি স্বভাব
প্রাঙ্গনে রঙ্গন তুমি লালে লাল গোল বৃত্তলাল
আমাকে তোমার করে নাও
আমিও হই বৃত্তের ভেতর বৃত্তনাচের নর্তকী

 

লাস্যময়ী ঝর্ণাতলা

গুটি গুটি ঘামবিন্দু আর ফোটা ফোটা এই রঙ
সেই রঙে সাজিয়েছি ববিন কেইস
তুমি পা চালাও বা না চালাও
সেলাই মেশিন ঠিকঠিক হাস্যমুখী
লাস্যময়ী ঝর্নাতলা আঁকবে।

সেখানেই আমি স্নান সেরে
খাঁচা খেকে একে একে মুক্ত করে দেবো
মাপাখির আর্তনাদ

বাবা পাখির ক্রন্দন
পাখি তুই তোর পালকের পরতে পরতে নিয়ে
যা আমার অবসাদ
আমার বিভ্রম।

আমার ভারি শরীর নিয়ে আমি কোথাও যেতে পারি না।
স্থানু শরীরের গুটি গুটি ঘামবিন্দু আর ফোটা ফোটা
এই রঙ সেই রঙে ভরা ববিন কেইস
আমার পিতামহের—
পূর্ব পূর্ব প্রপিতামহের।

স্মৃতি বিভ্রাটের কুহকে ভুলেছি ইতিকথা
সপ্রাণ পালাগানের কৌম সমাচার।
ভুলেছি শরীরে চাষাবাদের কায়দাকানুন
আর ভুমা ও ভুমিতে সমর্পণ

তুমি পা চালাও বা না চালাও
সেলাই মেশিন আমার কালের যাত্রার রথ
ঝর্ণাতলা আমার আদি শৈশব
স্নান সেরে জলকে দেবো জলের আচমন

মাপাখি তুই
বাবাপাখি তুই
তুই আমি অনাদি কালের প্রাণসখা
তুই আমি অনাদি কালের প্রাণসখা

পালকের পরতে পরতে নিয়ে যা আমার অবসাদ আমার বিভ্রম
পালকের পরতে পরতে নিয়ে যা আমার অবসাদ আমার বিভ্রম

 

পারিবারিক কবিতা ১০

প্রজাপতিটি উড়তে পারল না।
অপরিপক্ক হাতের জলরঙের ভারে—
লেপ্টে আছে প্রসারিত সাদা জমিনে।

বিবর্ণ বিশুষ্ক জলরঙে আঁকা প্রজাপতি
সাদা জমিনে দিশাহীন গোবরে পোকা— কিলবিল কিলবিল করছে
প্রাঙ্গনের এঁকে দেয়া ফ্রেমের ভেতর।

প্রজাপতি— তুমি পাখনা মেলো বটে; কোখাও তোমার যাবার পথ নেই।
সঙ্গীহীন কারাগার জীবন— ফ্রেমের ভেতর কিলবিল কিলবিল।

প্রজাপতির পাখনায় শিশির ছিল রোদ ছিল বুটিবুটি তারা ছিল।
তবু প্রজাপতিটি বাতাসের ভেতর সাঁতার কেটে কেটে উড়তে পারল না।
ছোপ ছোপ জলরঙের ভারে প্রজাপতিটি মুক বধীর ও দিশাহীন।

আমাদের কোন বাগান নেই বাবা।
শুধু বেড রুম আর ড্রয়িং রুম।
রেলিঙ জুড়ে যে অর্কিড বাগান করেছিলাম ফুল ফোটার আগেই
পোকায় কেটেছে পাতার শরীর।

চল বাবা একটা মাঠ খুঁজি।
চল বাবা একটা বাগান খুঁজি।
শহর ছেড়ে বাগানে যাই।
প্রজাপতিদের দেশে যাই।

ওর কাজিনেরা নিশ্চয়ই ওকে চিনবে।
বাগানে গেলেই আমার
প্রজাপতির মন ভালো হয়ে যাবে, বাবা।

 

পারিবারিক কবিতা

সেভেন প্লাস প্রাঙ্গণের বই সংখ্যা দশ।
কী সুন্দর গড়গড়িয়ে
দেশ-মূদ্রা-রাজধানী-আয়তন পড়ে!
আহা! শুনতেই ভালো লাগে।

ছোটদের কম্পিউটার ল্যাবও আছে।
যদিও কী বোর্ড চিনে না— তাতে কী এসে যায়
আউটপুট ইনপুট ডিভাইসের নাম বলতে পারে বেশ।

আরো আছে বার’শ স্কয়ার ফিটের স্কুলবাড়ি
পাটভাঙা ইউনিফর্ম
কোচিং সেন্টার
আর খাতার পর খাতায় সি ডাব্লুউ এইচ ডাব্লুউ
ধরে ধরে গুড এক্সিলেন্টের লাল রঙের স্টার।

যদিও প্রাঙ্গনের কোন মাঠ নেই।
নেই হুড়োহুড়ি লুটোপটি গড়াগড়ি।
আছে তিন ফিট বাই দশ ফিটের ঝুল বারান্দা।
চকে আঁকা ক্রিজে রঙ্গন বোলার প্রাঙ্গণ ব্যাটসম্যান।
রেলিঙ ছুঁলে চার বাইরে গেলে ছয়।

প্রাঙ্গণ স্কুলে জলরঙের মাঠ আঁকে;
ছোপ ছোপ সবুজে সবুজ ঘাসের মাঠ।
ক্যানভাস ছাড়িয়েও
বহুদূর প্রসারিত একটা কালারফুল মাঠ।

চল প্রাঙ্গণ মাঠে যাই।
খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি খুঁজব
আমার চারু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
আর নাক বেয়ে ঠোঁটের কাছে জমা হওয়া রূপালি
রঙের নরম সর্দির শৈশব

এখনো জিবের ডগায় লেগে আছে নাকের পেটা
আহা! কী ভীষণ স্বাদের শৈশব

আমার চারু ইস্কুলের মাঠের কোনে হিসু
দিয়ে কাটাকাটি খেলার শৈশব।

তুই আঁক তোর কালারফুল মাঠ;
তুই বরং সূর্য ওঠার আগেই ঘাসের ডগায়
এঁকে দে রঙিন শিশির
জলভরা পুঁতিদানা।
আমি ঘুরে আসি আমাদের সাদাকালো কাঁদামাখা মাঠ।

 

সুমতি রানি দাস

একহারা গড়নে ধিঙ্গি সুপারি গাছ। কন্ঠীধারী তবে লম্বা গলার হাড়গুলোই চোখ পড়ে।

চিতার কাঠ সাজাতে সাজাতে খলবল খলবল করে যখন হাসছিল তখনই চোখে পড়ল ব্রহ্মপুত্রের চরের মতো বিরান
সুমতির বুকে কালো মতো গোল দুটি পেল্টে থাকা
অব্যবহৃত পরিত্যক্ত স্তন।
যেনো কোন পুরুষ পায়নি কোন অমৃত সুধা

সুপারি গাছ
ও সুপারি গাছ আকাশ ছুয়েছো তুমি
পুড়েছো রোদে জলে চিতা কাঠে
স্নিগ্ধ বর্ষাজলে ভেজাওনি তোমার গড়ন?

সুমতি রানি ধিঙ্গি সুপারি গাছ
অব্যবহৃত পরিত্যক্ত স্তনের সুপারি গাছ শবদাহ জ্বালাতে জ্বালাতে
কোন অজুত বছর ধরে নিজেকে পুড়াতে পুড়াতে এখন কেবলই
কন্ঠীধারী;
কেবলই চিতায় তুলছো মায়ার শরীর।
কেবলই চিতায় তুলছে ছায়ার শরীর।

আর আগুনের হল্কায়
লাল লাল লালহাসি ফুৎকারে উড়াচ্ছো চিতার পোড়াকাঠ
আর আর জাগতিক মায়ার ছায়ার ছাইভষ্ম
এমন ঝড় বৃষ্টি বাদল সন্ধ্যায়।

সুমতি, বর্ষার কদম দেখনি?
দুহাতে রাখলে শুধু নীল নীল— আরো গাঢ় নীলের অপরাজিতা
কেবলই দেখলে চিতার কাঠ ব্রহ্মপুত্রের জলে ডুবতে ডুবতে
জ্বলছে আর জ্বলতে জ্বলতে ভাসছে।

যেন মরন নাই;
মরণ নাই যেমন সুমতি রানি দাসস্য একহারা গড়নের সুপারি গাছের

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত