সুজিত মান্না’র কবিতা
এখন তবে ভেবে দেখার পালা শয়তানদের চেপে ধরবো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সজোরে বুকে লাথি মারার সাহস সঞ্চয় করবো – কিন্তু তার পরেও মারবো না , তাদের একটি করে খাঁচা উপহার দেবো – জীব জন্তুদের সবচেয়ে বড়ো শাস্তি দেওয়া হয় এই পৃথিবীর অভিশাপ তাদের পায়ে বাঁধা হলে বেঈমান সমস্ত মুখোশের নীচে সেতু ভেঙে আছে সমস্ত সমতলের আনন্দে কেঁপে উঠছে তাদের মৃতপ্রায় ছাল তাদের জীবনে নদী কি নামবে না কোনোদিন এত প্রবাহ ধরে রেখেছি , এত জোরালো হচ্ছে স্বর আর কীভাবে সৎ থাকলে একটা উদ্ভিদ আমার সম্পত্তি হবে ঢুকে পড়ছে স্বভাবে কালরাতে হাজার যৌথ প্রস্থচ্ছেদ ঘটিয়েছি আমার নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি ―আমাকেও কি একদিন হিমঘর বেছে নিতে হতে পারে বিজয় এসে বলে গেছে ―জীবনের আশ্চর্য মাত্রা দিয়ে কীভাবে কুয়াশার স্টেশন পেরিয়ে সমতা বজায় করে চলতে হয় আমি তো এভাবে ঘাসপাতা বেছে বেছে ঠোক্কর খেতে চাইনি ঘুমোবার আগেও দেখে নিয়েছি মাড়িয়ে দেওয়া দৌড়ে কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন হলো এভাবে রোজই কতবার শরীরের লোডশেডিং হয় পেছনে ছুটতে গিয়ে মনে হয় আমিও কালিগহ্বরে ঢুকে পড়ছি স্বভাবে এবং বৃষ্টি চুষে ভাঙতে পারিনি পরিসর ভাঙতে না পারলে এভাবেই মোচড়ে দাঁত আটকায় সবাই পরিসর কম , রোজ আটকে পড়ি ধোঁয়া সরানোয় কীভাবে যে বাঁচা যায় প্রতি মুহূর্তে , খুঁজতে খুঁজতেই একচোখের পরিবার থেকে সমস্যা আরো দুচোখের হয়ে ওঠে আমি কি এতোটাও অনিশ্চিত সাজিয়ে দিয়েছি দুয়ারফুলের বাগান ঘিরে দিয়েছি নিয়মরেখার চোখ একসাথে বেড়ে ওঠার ধর্ম কি বজায় থাকবে এবার এইসব ছায়াধ্বনি ১. স্মৃতি তো এক এঁকে রাখা পাহাড়, ঝুলিয়ে রেখেছি দেওয়ালে ঝিনুকের মতো অভিমান তোমার। তাদের গুছিয়ে নিলে নিজেকে মাংসাশী মনে হতে পারে এমনই সব অভিমান ভাঙতে ভাঙতে হেঁটে পৌঁছবো এক মুখ থুবড়ে থাকা একটি সাঁকোর পায়ের সামনে তোমার প্রশ্ন হবেঃ সাঁকোর কি তবে শেষ-শুরু আছে? ধুলো ওড়াতে ওড়াতে তোমার প্রশ্নটিকে ভেঙে ফেলবো ভুল খুঁজতে গিয়ে দেখবো, আমরা একই চাঁদের অংশমাত্র নিজেদের ক্ষত শুকিয়ে নিচ্ছি অন্যের তাপে… ২. নির্জনতার ভেতর ঘন হয়ে নামছে একটি মস্তিস্ক প্রসূত অন্যায় অন্যায় দেখতে ঠিক সন্ত্রাসবাদের মত তাকে ইন্ধন দাও, মুখের ওপর এঁকে দেবে ছাই – এমনই অন্যায় রঙের সন্ধেবেলায় তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো যদি ঘৃণা করতে পারো মুখের ওপর ঢেলে দিও এক নৌকো জল আমি এই ষোলো আনা জলের ভেতর ডুবতে ডুবতে গভীর কোন চোখের আকার খুঁজতে গিয়ে দেখবো এই পৃথিবীতে ভার ছাড়া কিছুই রাখতে পারিনি। ৩. সাবানের বুদবুদের ভেতর চোখ ঢুকিয়ে রেখেছি একটি আয়তক্ষেত্র এঁকে রেখে গেছে কেউ আমি সেই আয়তক্ষেত্র ধরে পৃথিবীর কুঁড়িতে পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি নতজানু হয়ে থাকা ঈর্ষার ওপর দিয়ে এই চতুর্ভুজটিকে অতিক্রম করতে হবে আমায় যেখানে পৌঁছতে পারলে মনে হবে তোমার ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছেদের সামনে খাটিয়ে দিয়েছি তাঁবু তাঁবু তো এক সামান্য চোখের বুদবুদ, সমুদ্ররঙের সামনে যেন আলো ধরেছি ৪. এসো তবে মাটিতে পা রেখে বসি, দেশের বিক্রি হতে চলা ঘোড়াগুলির পায়ের শব্দ শুনি তাদের সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঢুকে যাই নিজেদের সূচীপত্রে রাগ তো এক শত্রুপক্ষের দেওয়াল, এসে দাঁড়িয়েছে পিঠের সামনে আমি তার নির্দেশনামা পড়ি, পড়ে ফেলি তার দূর দূর ঈষৎ ভোর শুধু পড়তে পারি না তার অস্ত্রফুলের সমীকরণগুচ্ছ এসো তবে দেশ নিয়ে দু-একটা অসুখ রচনা করি তবে সবিনয়ে বলি এসব অসুখ আমি নিজের মাথার দামে সূচীপত্রে লুকিয়ে রাখবো। ৫. ঘুমের ভেতর গুলিয়ে যাচ্ছে রাত উঠোনের ওপর মাথা থেকে নামিয়ে রেখেছি পায়রাগুচ্ছ ঘুমের ভেতর স্বপ্নেরা ঠিক সাদা পায়রার মতই আচরণ করে তাদের ধোঁয়া ধোঁয়া বরফকুচির মত দেহের উপর হাত রাখি যেন মনে হয় পা অবধি কোনো মাটির অস্তিত্ব নেই উড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কোনো সূত্রের ভেতর উপশম খুঁজতে খুঁজতে পৃথিবীর আর্তি ক্ষীণ করে নিচ্ছি ক্রমশ… ৬. তোমাকে দেখার জন্য কোনো বিলাপ নয় তোমাকে দেখার জন্য কোথাও আগুন জ্বালিয়ে রাখা নয় তোমাকে দেখার জন্য একটি গোধূলিকে ভেঙে বিশ্লেষণ করতে করতে হেঁটে যাবো তোমাকে দেখার জন্য চাঁদের যে হাঁ-মুখ গিলে নিয়েছি তার নাম রাখবোঃ ফুলজন্ম তোমাকে দেখার জন্য ইট ভেঙে তার থেকে খুঁজে নেবো মাটি শরীরের গন্ধ যদি মাটি সংরক্ষণ করে রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে পৃথিবীর সব শিল্পীকে আমি তুড়ি মেরে আসতে পারি
