প্রাক্তন

Reading Time: 2 minutes
অপ্রিয়
      প্রাক্তন,
কেমন আছিস তুই? এখন আর সিগারেট খেলে আগের মত গলা ব্যথা হয় তোর?
দেড় বছরের অসাক্ষাতে আজ সবকিছুই কেমন ক্লিশে লাগে। দীর্ঘ অদেখার পর যে আমি তোকে দেখামাত্র পাশে ঘেঁষতাম, আজ তোর মুখটা ঝাপসা মনে পড়লেই কেমন দূরে সরে আসতে ইচ্ছে হয়! আসলে, যা কিছু মুহূর্ত ঘনিষ্ঠতার তাও শিথিল হয়ে এলে, স্নানঘরে আর বাষ্পে ভাসা হয় না।
যে প্রেম শুধুমাত্র নির্জন গলির বাঁকে আঁকা হয়,তারা কখনো রূপকথা হতে পারে না। অনুভূতিহীন শরীরী প্রেমগুলোতে মাদকতা ফুরোলে প্রেমও ফুরিয়ে আসে। তাই যখন আমি বৃষ্টি এঁকেছি তোর শরীরে; কান্নাভেজা গালে তোর ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই দু’হাতে গলা জড়িয়ে মাখিয়ে দিয়েছি অভিমানী  শোক, তখনও তোর আমাকে ‘সহজলভ্য’ মনে হয়েছে।
যেদিন তোর মুখে প্রথম শুনেছিলাম চৈত্রের শেষে দর কমে যাওয়া পোশাকের মতই আমাকে অত্যন্ত ‘সুলভ’ মনে হয়েছে তোর, সেদিন আলগা চুলে, শাড়ির আঁচল ফেলে, বালিশে মুখ গুজে ঠোঁট ফোলাইনি বরং অপমানে দু-চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।
পরে উপলব্ধি করেছি, ‘আমার আমি’  না, আদতে তোর সাথে কাটানো আমার সুখ-দুঃখের সব সময়ই তোর অভিধানে সস্তার মুহূর্তের তকমা পেয়েছে।পেতই। তুই তো সস্তা দরে আবেগ কিনে বেচতিস আমায় চড়া দামে। তুই বড্ড সস্তা প্রেমিক। তবু যদি ঘনিষ্ঠতার সাক্ষ্যবিহীন কিছু মুহুর্ত দিতিস আমায়, তাহলে তা দিয়ে এক দিস্তা প্রেমের কবিতা লেখা যেত কিংবা এক ডায়েরি গল্প। মুহূর্ত নেই আমার কাছে, তাই কল্পনাতেই গল্প সাজাই বিচ্ছেদের। একসাথে হাত ধরে হাঁটার জায়গাগুলোর কোনোটা হয় প্রিন্সেপ ঘাট তো কোনোটা সস্তার মঙ্গলা হাট। 
তুই আমাকে আঘাত করে আমার লেখনীতে অমর হতে চেয়েছিলি। আমিও কোনো গল্পে তোকে খলনায়কের চরিত্রে আঁকিনি। তোর ইচ্ছেমতই, নায়ক তুই আমার প্রত্যেক গল্পে। তুই-ই উদ্যোগ নিয়ে ফেলে আসা ভুলচুকে স্বপ্ন সাজাস ভবিষ্যতের। তাও পাঠক তোকে বিদ্রুপ করে। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কমেন্ট বক্সে বিশ্লেষণ করে তোর ঠিক-ভুল সব। পাঠকের আদালতে তুই চরিত্রের বিচার হয় রোজ, অথচ ওরা সবাই গল্পের নায়িকা কে খুব আদর করে স্নেহভরে। একেই বোধ হয় ‘নিয়তি’ বলে।
গল্পের তুই তো আসলে ‘একটা গোটা আমি’, তাই হয়ত গল্পের নায়ক কে কেউ খারাপ কিছু বললে, মনখারাপ হয় আমার। তবু একেই বোধ হয় বুমেরাং বলে। যদিও তুই এই পুরো গল্পটাকে মন্দবাসা বলবি নাকি ভালোবাসা -জানি না। পাঠক এটাকেই ‘হার না মানার গল্প’ বলে!
প্রাক্তনের কথা ভেবে বৃষ্টি বিকেলে আঙুলে আঙুল ঘষে জল আলপনা আঁকতে পারি না আমি। রঙ-তুলিতে আঁক কাটতে গিয়ে কখোনো তোর চোখ,নাক-মুখ এর অবয়ব এলেই পাতাটা ছিঁড়ে ফেলি। কখনো কোনো সুখস্মৃতিতে আবেগে চোখ ভিজলেই, সমস্ত আবেগ পুড়িয়ে ফেলি সিগারেটের টানে। এখন এই এক নতুন অভ্যেস হয়েছে আমার। যা ঘৃণা করতাম তা ভালোবাসি আর যা ভালোবাসতাম তা….!
জানিস, বিদ্বেষ বাড়িয়ে সুখ ক্ষয় করতে চাই না বলেই হয়ত তোর একটা নতুন নাম দিয়েছি আমি। আমার সমস্ত লেখায় সেই নামেই তোকে সৃজনে বাঁধি। তুই এটাকে প্রেম বলবি নাকি অপ্রেম জানি না তবে সবাই এটাকে ‘জিতে যাওয়ার গল্প’ বলে।
তোকে ধন্যবাদ, মনে রাখার মত একটিও মুহূর্ত আমাকে না দেওয়ার জন্য। তোকে ধন্যবাদ, নিজের পিঠ বাঁচাতে আমায় মিথ্যেবাদী বলবার জন্য,
তোকে ধন্যবাদ পাঁচটা বছর প্রেমের শেষে অন্য কারোর কাছে আমায় ‘চরিত্রহীন’ প্রমাণ করবার জন্য এবং তোকে ধন্যবাদ, পুরো ৫ বছর ১মাস ৭ দিন কাটিয়ে ‘ক্ষতিকর’, ‘অযোগ্য’
‘কেউ না’, ‘জীবনে কখনো কারোর কাছে সম্মান পাবি না’-র মত কয়েকগোছা শব্দবাণ ‘উপহার’ দেবার জন্য।
শব্দ প্রয়োগে ভুলচুক হলে যে কোনো মূহুর্তে যে কোনো  বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। কে বলতে পারে, হয়ত এই বিস্ফারণই আর একটা বিপ্লব নিয়ে এল আমার জীবনে!
যে কোনো বিপ্লবই ইতিহাস বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ
ইতি
কেউ না

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>