Categories
ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: একগুচ্ছ কবিতা । সুভান
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
পথিকশালা
যে অন্ধকারে জনপথ গেছে বেঁকে
যেপথেনেমেএসেছেকালচেমাটি
তারশেকলসাজিয়েরাখাকাচেরখাঁচায়
এইপাখিজন্ম ;
কোন ঈশান কোণের দিকে আলো খোঁজে।
এই ক্লান্তির শেষে একা ঝুঁকে থাকা
পথিকশালায়, অক্ষর খুঁটে খাওয়া নীচু ঠোঁট
লিপির ভেতর উপশম লিখে রাখে…
কালো রঙের ঘুণ আর বিষণ্ণ গাছ
বুকে চিরে গেল স’মিলের করাত, হাত কাটে, পা কাটে,
কেটে রাখা মাথার কথাই আজ লিখে রাখা যেত কবিতায়
এই কাঠচেরা সময়ের কাছে ভাঙা জলজঘর,
রাতের পোশাক, ঝিলের, ভেসে আসা খাট, ঢালু জমি…
জনপদহীন, আমাদের কেউ নেই, একা
রাস্তার দিকে ক্ষত হেঁটে চলে যাচ্ছে, যেন কাঁটাতার
ছিঁড়ে যাওয়া ঘুরি আর সম্পর্কের সরু সুতো, উড়ে যায়
একা, আমাদের কেউ নেই… শুধু আছে বিষণ্ণ গাছ…
পয়লা মার্চ
যে বাতাসে আগুন লেগেছে আর ফাল্গুনে লেগেছে মন,
তার অঙ্গে বেহাগ ভাসে, যেন রঙে ভাসে বিরহ ইমন…
পলাশ হব বলে শব্দের কাছে কত মানত করেছি সে জানে,
তোমার কানের কাছে গুঁজে রেখো আমাকেও আনমনে।
আবীর কিশুধু গুঁড়োগুঁড়োহাওয়ায় ছড়িয়ে দেওয়াসোহাগচূর্ণ নয়?
তুমি কি জানো না বলো? কবিতালেখা আঙুলগুলো ভীষণ বোকা হয়…
কোথায় যাচ্ছো বলো? কাছে টেনে নাও? দেখো বসন্ত উন্মাদ।
সাঁঝবালিকা
সন্ধের কথা বলতে বলতে আপনার সঙ্গে
কখন যে রাতের দিকে এগিয়ে এলাম…
ওই দেখুন দক্ষিন দিকের শুনশান মাঠের কোনায়
ঈষৎ চাঁদ ঝুঁকে আছে…
এমন নয় যে
এই চাঁদ এভাবেই প্রথম উঠলো,
এমনও নয় যে আমরাও
প্রথম দেখলাম তাকে,
তবে কি জানেন,
সন্ধের কথা বলতে বলতে
এর আগে কখনো
এতটা চাঁদের কাছাকাছি আসা হয়নি…
অথচ রাত্রি কেমন ফুরিয়ে আসছে দেখুন,
চাঁদ কিন্তু ফুরোচ্ছে না…
ফেরা
তারপর, আচমকা বাতাসের গান বেজে ওঠে…
জল ভাঙে, কাচ-কাচ… রোদের গালিচা।
তুমি আঙুলের নিচে তিস্তা আকঁড়ে ধরো।
রাস্তা যেদিকে শেষ ; হাঁটাপথ ঢেকে যায়
জলের কুচিতে।
হাত বুঝি সরিয়ে নিতে হয়?
আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে গেলে…
চোখের কাজল কথা বলে,
দূরত্বে কি বা এসে যায় আর…
বেপরোয়া মেঘ জানে, পলাতক ভ্রমর জীবন।
ঘর জুড়ে নীল আর পাখিরঙ আটক করেছে ঘুম।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফেরা হয় অনন্ত পথ।
অথবা নিখোঁজটুকু আলোগোছে তুলে রাখি বুকে…
দূরত্ব বলে কাছেই কোথাও থেকে যাই আজ।
তারপর, বিকেলের গান,
আচমকা বাতাসে বাতাসে জেগে ওঠে…
আর কবিতারা পথ ভোলে
তোমার দু-ঠোঁটে…
বসবাস শিলিগুড়ি শহরে হলেও ১৫ বছর পর্যন্ত কেটেছে হাওড়ার বেলুড়ে। প্রথম কবিতা প্রকাশ ২০০৬, উনিশকুড়িতে। পরবর্তীতে বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনের পাশাপাশি দেশ, কৃত্তিবাস, ভাষানগর, নতুন কৃত্তিবাস, আরম্ভ, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, আজকাল, ৩৬৫, উত্তরের সারাদিন, আর্থিক লিপি ও আরও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে লিখে চলেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বাংলা ফোক গান পছন্দের। ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন ছবি আঁকতেও। রাঢ় সাহিত্য উৎসব ২০১৯ এ কাচের সংলাপ কাব্য়গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বংশী ভট্টাচার্য রোদ্দুর সম্মান। এযাবৎ ছয়টি বই প্রকাশিত। সম্পাদনা করেন শিলিগুড়ি জংশন ও কবিতার প্ল্যাটফর্ম।