Categories
উৎসব সংখ্যা: একগুচ্ছ কবিতা । জুবায়ের দুখু
আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট
বেদনাচক্র
ভুল করে বেলা শেষে সূর্যের অতলান্তিকার গভীর নিঙড়ে দেখি, বেদনার প্রদক্ষিণ ।
বেদনা–, সূর্য জমিতে ফুটে উঠলে
পৃথিবী ঝলসে ওঠে রোদের তীব্রতায়।
আর, বিকেলগুলো–একটাকা কয়েনের মতো
লাল রঙে রঙ্গিত হয়,
নদী বাঁকে
তেপান্তরে।
ফুল-পুত্র
নদীর ওপারে যে সবুজ গ্রাম,
বেদেনীদের ঘর–
বাঁধা আছে ওখানে আমার প্রাণ।
বহুদিন আগে একটা ফুলগাছে
এসেছিল আমার ভ্রূণ..!
সুনসান মধ্য রাত। ঝিঁঝিঁ পোকার গান।
তারপর ভোর এলে–গাছডালে পাখিরা আসতো,
গাছতলে মানুষ বসতো, ফুলের গন্ধ নিতো।
পাখির খুবলে খাওয়া শরীর নিয়ে
আমার জননী ফুলগাছ
একদিন আমাকে মানুষ হতে বললো।
অথচ মানুষ হবার আগেই
মানুষ আমাকে পাষাণের মতো ছিঁড়ে ফেললো।
বহুরূপী
ঘুমের ভেতর খোয়াব দেখি একটা সুবিশাল বন,
বনে এক ফুলগাছে–চড়ুই পাখি, দোয়েল পাখি,
বসে বসে, ডালে ডালে, গান গায় কিচিরমিচির।
এখন এমন মধ্য বনে–
শালগাছ, বটগাছগুলো অন্ধকারে
পাহাড় ধসে পড়ার ভয়ে জেগে থাকে সারারাত।
রাতের বিছানায় কেবল নিদ্রা নেয় মানুষ ;
এবং স্বপ্ন দেখে–পাখি হওয়ার স্বপ্ন,
ফুল হওয়ার স্বপ্ন, গাছ ও নদী হওয়ার স্বপ্ন।
কিন্তু ঘুম ভেঙে গেলে মানুষ–
ফুল, পাখি, গাছ ও নদীজীবন ধ্বংস করে।
সখ্যতা
বিদঘুটে গলি পাড় হলে
জলবাহী নদী
নদীর ওপারে মাঠ,
মাঠে শেষে–গ্রাম মানুষ বৃক্ষলতা ।
এভাবে পাড় হতে হতে
দূরে দিগন্ত দেখা যায় প্রতিবার,
ওখানে ইচ্ছে করে যেতে
নীল দিগন্তে কালো মেঘের আলিঙ্গনে।
যিশুর কাছে অনুরোধ
আমার বুকে
গড়ে উঠেছে
দীর্ঘ জেরুজালেমের পথ।
পথে একটা রাখাল ছেলে
চড়িয়ে বেড়াচ্ছে–
দুম্বা অথবা বকরির দল।
যিশুর পর
তোমাকে এমন করে কেউ
ডাকেনি মরিয়ম।
আমাকে ভাবো তোমার পুত্র,
আর আমরা যিশুর ভ্রাতা
রক্ষা করো, রক্ষা করো।
হে যিশু তোমার কওম ইজরায়েল থেকে
আমাদের রক্ষা করো।
ময়ূরীরথ-১
গভীর নিশীথে–টিমটিম আলো জ্বলে দূরে কোথাও মায়ের লুণ্ঠনে। তখনও ভোর হয়নি, রাতের আবছায়া পড়ে আছে বাতাবিলেবু উঠোন জুড়ে। হায়! পাখিদের ভোর–হায়! ফুলেদের ভোর। কপাট খোলা, দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে তাড়া নেই কারো। এখানে বাড়ি নেই কারো। কার কোলে ফিরে যাবো বহুদিন পর পিঙ্গল পাখি। আমি কার কোলে ফিরে যাবো ঝিঙে ফুলের পথ। ঝাউগাছ, চিচিঙ্গা, কলমিলতা?
কৃষ্ণচূড়ার বনে হারিয়ে গ্যাছে আমাদের ইশকুল পালানো যেসকল দিনগুলো। খুঁজতে হবে। পাখির জীবন নিয়ে একবার বের হতে দাও আমায়। উড়ে উড়ে খুঁজে বের করবো আমাদের তীর্থস্থান। আমাকে বের হতে দাও ময়ূরীরথ। আমাকে বের হতে দাও…
ময়ূরীরথ-২
বিষণ্ণ প্রহর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দীর্ঘতরো। বোধের দেয়াল জুড়ে ক্লান্ত পাখির সুর। পাখিরা এলো মুক্তির বার্তা নিয়ে। মুক্তির পথ বড়ই দূর্গম। যেতে হবে সেগুনবাগিচার বনে। বনে গেলে হারিয়ে যাই পাখির কিচিরমিচির গানে। হারিয়ে কতদূর যাওয়া যায় স্রোত? সমুদ্রে তিমির রাত। নদী বড় জোর সমুদ্রের পুরনো বন্ধু, অথবা সন্তান সমতুল্য। সন্তান মানুষের আদি নামকরণ। আদি থেকে আমরা ময়ূরীরথ চড়ে এসেছি বর্তমানে। বর্তমান একটা অতীত ফুল। কিংবা ধরো ভবিষ্যৎ একটা বর্তমান ফুল।
ময়ূরীরথ-৩
শালিখ পাখির ডানায় উড়ে এলো ভোর
সবুজ ছায়ার পথ মাঠ প্রান্তর
পথের পরে পথ আঁকাবাঁকা সরু
দু’দিকেই ছাওয়া তার বৃক্ষলতা তরু।
দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে নিখিল জগৎ
জগতের ওপর পিঠ , মহৎ মহৎ
আর্টের খাতায় আঁকা জীবনের মানে
জীবন থামবে কোথা ময়ূরীরথ জানে।
ময়ূরীরথ-৪
মাসকালই মাঠে ফড়িঙের দিন। ফড়িঙ কোথায় কোথায় উড়ে যায়। যাওয়ার আনন্দ রঙের মতো। রঙের লাবণ্য রামধনু। পাহাড়ের গাঁয়ে দেখা যায় যে বাড়ি গুলো। সেই বাড়ির ভেতর লোকানো আছে একটা পাখির খাঁচা। পাখিরা কতদূর থেকে উড়ে আসে, জানা নেই। মাধবীলতার বনে শরতের চাঁদ। সূর্যের আলো নিয়ে মেতেছে ফাঁদ। আলোর অরণ্যে চাঁদের বুড়ি। ময়ূরীরথে সাওয়ার হয়ে বয়স করছে চুরি।
কৃষকের লেলিন
তোমাকে পাখির মতো দেখতে হলে
ভুলে যেতাম পৃথিবীর সব পাখির নাম কৌশলে
ভুবনডাঙা নদীর ওপারে তারপর
শ্যামলী প্রান্তে কুনমতে তোমাকে নিয়ে বাঁধতাম ঘর
ফুলের লেহাজ দেখে হতে পাট পাট
তোমার বুকে তখন ভরা ধানহীন চৌচির চৈত্র মাঠ
জলে অভাবে কলতলা শুকনো মলিন
তোমাকে ভালোবাসি আমি কৃষকের লেলিন
পথের বাউণ্ডুলের মতো নই আমি নই
বিকেলবেলা শুধু বিলের ধারে একা বসে রই
ওসব সবই ছেড়ে দেব অবুঝ বালক
আমাকে দেখে হাসবে হয়তো পাড়ার কিছু লোক
এভাবেই ছেড়ে যেতে, পাবো কোনদিন
তোমাকে ভালোবাসি আমি কৃষকের লেলিন।
দর্জি
সুতোয় বাঁধা আঙুল। আঙুলে সুতি কাপড়ের গন্ধ। একটা সকাল সেলাই করে চলছে দর্জি। দুপুরের দাওয়ায় আগুন নিয়ে সূর্য। হিজল ফুল এঁকে দিয়ে গ্যাছে শীতঋতু। শীতঋতু হিমালয়ের বান্ধবী। চায়ের টঙে বসে তোমাকে দেখি রোজ। তোমরা সেলাই করো পৃথিবী, শুধু করোনা আমার চোখ।