| 27 এপ্রিল 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা’২০২১

ইরাবতী উৎসব সংখ্যা: মিসবাহ জামিলের কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
মিসবাহ জামিল
 
আমার কামনা হলো- তোমার দুঃখেরা
ঘাম হয়ে লোম দিয়ে বের হয়ে যাক
গর্ত থেকে যেরকম বের হয় সাপ
ফণা উঁচু করে। আলো বাতাস দেখতে
তোমার দুঃখেরা আলো বাতাস দেখুক
 
আমার কামনা হলো- তোমার হৃদয়
উজাড় বনের মতো সাফ হয় যেন
দুঃখেরা উচ্ছেদ হয় শেকড়সমেত
সেখানে নতুন করে রোয়া যায় যাতে
অনবদ্য বীজ ভেবে ‘মিসবাহ জামিল’
 
 
 
 
 
 
 
 
 
বেদনা গাছ
 
অসংখ্য বেদনা গাছ বুকের গহীনে
লাগিয়ে দিয়েছ তুমি সারি বেঁধে বেঁধে
যেভাবে সুপারি গাছ লাগাতেন দাদি
পুকুরের পাড়ে কিংবা বাড়ির চৌদিকে
 
গাছগুলো হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে দিনদিন…
আমার দাদির মতো ফলের আশায়
আমি ঐ গাছগুলোর দিকে চেয়ে দেখি
ফল নেই শুয়ে বিষ কাঁটা ঝুলে আছে
 
 
 
 
 
 
 
কমিউনিজম
 
রাত-বরফ গলে গলে মাটিতে মিশার পর যখন ভোর চলে আসে, আমাদের বাড়িতে শুরু হয় কমিউনিস্টদের আনাগোনা। বারান্দায় আব্বা বসেন, কমিউনিস্টরা দেন তাঁকে ভোরের অর্গাজমমিশ্রিত লাল সালাম। আব্বা তাঁদেরকে চেয়ারে বসিয়ে পান করতে দেন আম্মার হাতে বানানো বিপ্লব, চা। আম্মার হাত বিপ্লবী খুব। কিছু রাঁধলেই বিপ্লবের মতো সুস্বাদু হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন শুরু হয় বিপ্লবের পাঠ।
 
আব্বা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যেমন কিচিরমিচিরে সোচ্চার হয় অনাহারী পাখির ছানা। সভাসমাবেশে আব্বা ভাষণ দেন। সরকার আব্বার ভাষণকে ঝড় হিশেবে দেখে। ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জিগ্যেস করেন, কমরেড আজির আপনি কী চান? মন্ত্রীত্ব? আব্বা বলেন, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার কল্লা চাই!
 
 
 
 
 
ছাতা
 
ছাতা কেমন? বর্ণনা চাইলে, আমি বাবা-মার ছবি এঁকে দেবো। দুঃখ যখন রোদের মতো তাপ দিতে চায়, তারা ছাতা হয়ে যান। দুঃখ যখন বৃষ্টির মতো ভেজাতে চায়, তারা ছাতা হয়ে যান। তাদের কাজই যেন সন্তানের জন্য নিজেকে মেলে ধরা।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
রাশেদা
 
গোসলের সময় পুকুরের পানিতে সাবানের ফেনা মিলিয়ে যেতে দেখে বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। এভাবেই দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে বন্ধুরা। অন্তত তুমি পাশে থেকো রাশেদা।
 
ইদ
 
হাট থেকে ফিরে আম্মার হাতে কয়েকটি চকলেট এনে দিলাম। আমি কি শিশু? -বলে আম্মা হাসলেন। মেঘের কোলে রোদ হাসার মতো। আমার আনন্দ হলো। আনন্দ মানে ইদ। আম্মা অস্থায়ী জিলহজ-শাওয়াল। যখন তখন আমার ইদ হয়ে যায়।
 
শানকি
 
আম্মাকে শানকি জ্ঞান করি। মাতৃত্ব শানকির মতোই বুক উজাড় করে রাখে। রুনা-আমি ভাইবোন, ভাত-তরকারি। বার বার আম্মার কাছে ফিরে আসতে হয়। ভাত-তরকারি ও শানকির মধ্যকার সম্পর্ককে ভালোবাসা বলে। অথচ অস্থানে ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে মানুষ হেরান।
 
 
 
আমার জ্বর হলে
 
আমার জ্বর হলে
আম্মারও জ্বর হয়, দুশ্চিন্তা
চোখের জলে পানিধারা দেন
 
আমার জ্বর হলে আম্মা টহলদার
সারারাত একটার পর একটা জলপট্টি বদলান
চোরাকারবারির মতো জ্বর আলগোছে পালায়
 
 
কান
 
জনগণ দুঃখ-দুর্দশায় কাঁদছেন। যেন তারা কান্না-রেডিয়ো। শাসক শুনছেন না, ভুলে গেছেন তার যে দুইটা কান আছে। ভাইসব, আমাদের জোরেশোরে আওয়াজ করতে হবে। শাসককে অবগত করতে হবে তার কান সম্পর্কে। আসুন আমরা ঢোলের মতো বেজে ওঠি। কেননা, আওয়াজ হলেই মানুষ বুঝতে পারে কান যে আছে।
 
 
 
 
 
 
চলো বহুদূর
 
তার বক্তৃতা শ্রেণি বিভাজন ভাঙার হাতুড়ি
দেশ ও জনতাকে নিয়েই ভাবনা
যেন দেশ-জনতা একটি গ্রহ
উপগ্রহ হিশেবে তার আবর্তন
বলছি, আমার বান্ধবী ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মনিশা পালের কথা
ভাপ ওঠা ভাতের মতো যার যৌবন
কাঁধে হাত রেখে যে আমাকে বলে, দোস্ত আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে চলো বহুদূর
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত