আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিটকীভাবে হলে তুমি কালিজিরা দিন?
আমি তোমার জন্য রান্না করব,
তুমি যেমনই আছ,আমি তোমাকে আর
মনে হয় বলি, অনেক ক্লান্ত আমি অন্ধের শহরে বিক্রি করা
আয়না ভেঙে চুরচুর দেখি, ওদের চোখের মণি জেগে গেছে।
বেগানা রাত্রি এসে ঢেকে দেয় স্তন, ধেয়ে ওঠে নীলগিরি,
এ এক অদ্ভুত শীত ভাবতে ভাবতে ঘুম মরে যায় রোজ।
পাহাড় পাহাড় ডাকি শব্দহীন প্রতিবিম্ব কান বুজে দেয়।
ঘুম কিনবেন ঘুম?ফেরিওয়ালার হাতে ঝাঁপাতেই বেসমাল
হয়ে দেখি,সব উড়ে গেছে, বিহবল চোখ তার পুর্ণিমায় স্থির,
ভিড় করে আমরাও উড়তে থাকি অদ্ভুত এক ইশ্বরীর দিকে
দেখি,যেখানে প্রাণ নেই সেখানে প্রকৃতি আরও সুন্দর
মন আমাকে ছেড়ে বলে, পরজনমে এরচেয়ে বেশি সুন্দর নেই।
পরকাল লোভীদের দেখিনি তো,এ জনমে কোন ছাড় দিতে,?,
সব জগতেই আমরা বিড়ালের সামনে প্রতিদিন ইঁদুর।
ঢোলকলমি ফণা তোলে আর প্রাণ হোঁচট খায় প্রেম ছুঁতে গিয়ে
মন বসে থাকে শৈশবে, তরুণে, দেহ বৃদ্ধ হতে থাকে রোজ,
মনে হয়,জড়তার চাইতে মৃত্যুর অধিকার অনেক সবুজ।
আমি যখন বৃদ্ধ অন্তিম শয্যায়,এবং
ধুসর প্রদীপ আমার কাছবর্তী,
দীর্ঘশ্বাসের ছায়া তোমার মোমবাতি ঘিরে আবর্তিত।
এবং তুমি পাঠ করছো নিজের অক্ষর এবং
স্মরণ করো,অজস্র সুন্দর মুহূর্ত
সেই বাছুর আর ভেড়ার পাল, এবং পাহাড় এবং
আর রোদ দুপুর আর শহর,তোমার প্রভাত,
যা আমার সাথে পেরিয়েছিলে ছায়ায়,,
পছন্দ ছিল তোমার, যা ছিল কারুকার্যে আকীর্ন,,
এখানে আমি তুমি মানে এক শব্দে একাকার
যেহেতু অন্তিমে সূর্য হাসছে, চাঁদ ফুটছে,আর আকাশ
যেখানে যে আকাশ দেখি,ভাষাহীন দিন!
আমি আজীবন তোমার কষ্টগুলো ভালোবেসে গেছি।
তারার চাটাই নামিয়ে এনে কেউ যেন ঢেকে
দেয় আমাকে অসহ্য আগরবাতির গন্ধ,
খোলা আসমান, আর আসমান আমার জীবন,,
মনে পড়ে কত রূপ ছিল আমার আর অদ্ভুত মন,
কোন একটা ভালো বই পড়তে পড়তে
তোমার আনন্দ, আমি আজীবন আমি প্রকাশ্য করে গেছি।
তখন দিন যখন করে সন্ধ্যা তোমার বরণ,,
অন্তিমে কেউ যেন প্রেমের কথা শুনিয়ে শিস দেয়
মুহূর্ত মুহূর্ত জেগে থাকা আমি !
শব্দের নামে শব্দহীনতা খুঁজছি!
অনেক রুপোলী বাজার,সেই বাজারের
আজ পাখা প্রদীপের জ্বেলে দেয়া রোজ,
ওড়ে এলো আজ একশো বনের পাখি!
আজ জলে পাখি! আজ পাখিরোদ বারোমাস!
সূর্য নাচছে! রাত্রি গাইছে!,
আজ তিমিরে পাখিদের কারুকাজ!
মুদ্রাতে রোজ প্রদীপ জ্বালিয়ে,
মুছে ফেলি আমি টাকাদের নাচ!
মানুষের ফোঁসে রঙতুলি মেখে
রোজ বসে ঠায় ঘন্টা স্কুলের
আজ বৃষ্টিগাছে রৌদ্র ফুটুক!
আজ রাত্রি!আজ সাপেদের সাপরামি,!
নাচতে থাকছি সব খুলে গিয়ে!
আজ ফুল ঘুমুচ্ছে! জেগে থাকছে!
আজ,অসহ্য রাত! তারাদের নেমে আসা!
আজ,পাখিপাখাদের রাত্রির উচ্ছ্বাস!
জীবের বন কী খালি হয়ে যাবে?
নতুন না হলে এগোতে চায়না স্বাস!
আজ যাচ্ছিনা! পা বাড়াচ্ছি!
নিভিয়ে ফেলা ! গুহার বাতাস,
আজ বরফের লেপ টেনে এনে আমি,
আজ,জোনাকির সাথে বরফের বসবাস!
আজ, সুমুখে দাঁড়াক সমস্ত চলে যাওয়া!
একটা জানালা এগোয় ধীরে ধীরে,
অদ্ভুত চোখ মেলে চেয়ে উছ্বাসে
অন্য জানালার মুখোমুখি খোলা কপাট
শুরু হতে থাকে রাত্রির কথাবার্তা।
একটা বৃক্ষ আরেকটি গাছের সাথে,
মুখোমুখি হয় প্রচুর বৃষ্টিপাতায়,
জানালার চোখ চেয়ে থাকে চুপচাপ।
তাই বাকরুদ্ধ আমি নিরন্ত কাঁপি,
ঘুমিয়ে যেতেই চেয়ার এগোয়,পাতা এগোয়,
শার্ট এগোয়, মাটি এগোয়, আঁচল এগোয়
পথ এগোয়,মানুষ ছাড়া সব এগোতে থাকে
জন্ম: মার্চ ৫, ১৯৬৪, লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। উড়ুক্কু উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এই উপন্যাসের জন্য লাভ করেন ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী।বাবার চাকরির কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। নাসরীনের লেখা গল্পের নাম ছিল ছাপানো গল্পটা।
Related