আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিটঈশ্বরী দাঁড়িয়ে আছে খদ্দের আশায়
কোথায় গোপন ট্যাটু, কেউ কেউ জানে,
ঈশ্বরী দাঁড়িয়ে আছে খদ্দের আশায়,
ক্যামেরা দেখেনি তাকে, বেদনার উল্কি কাটা নারী।
ছূঁচের ডগায় রক্ত ফোঁটা ফোঁটা বিরতিবিহীন,
সে আসে আমার কাছে, আমার সঙ্গেই শোয় রোজ,
সে কিছু বললে অমনি সাত সাত চ্যানেলের ভোজ…
তৃতীয় ট্যাটুর দিকে হেঁটে যাচ্ছি জংগলের শেষে,
ভালবাসা ছাড়া কোন উদযাপন হয় না এখানে।
আমার সামনেও কোন পথ খোলা নেই আর আজ।
আমাদের কোন বাল্যলীলা ছিল না
আমাদের কোন বাল্যলীলা ছিল না।
গিরি গোবর্ধন ভাঙছিল সিমেন্ট কোম্পানি,
আমাদের পথে ঘাটে বকাসুর ছিল,
জল আনতে গেলেই কলসিতে টিপ করে ঢিল ছুঁড়ত
আমাদের ভেজা বসন, আহা নোলা সকসক করে উঠত ভেজা বসন দেখে,
অনেকসময় আমাদের কোন বসনই থাকত না,
সেই নিয়ে কত কবি বস্ত্রহরণ পালা লিখে ফেললেন,
এক গলা জলে দাঁড়িয়ে গোপিনীদের কাতর ডাক
‘অ কেষ্ট, আমরা তোর মায়ের বয়সী রে,
চুলো, মুতের কাঁথা, শাশুড়ির বাতের মালিশ তেল…’
না, এসব কথা লেখেননি কোন কবি,
লেখেননি জলে অতক্ষণ ডুবে থেকে
আমাদের নিমোনিয়া হয়েছিল কিনা,
কারণ আমাদের কোন বাল্যলীলা ছিল না,
তাই আমরা এবার নিজেরাই অসুর ও লীলা,
আমরা নিজেরাই সাপের মাথায় উঠে নাচছি
তাতা থৈ, তাতা থৈ, তাতা থৈ!
নিউ ক্যালকাটা মেডিকেল, কম্পিউটার খারাপ,
এক প্যাকেট ডানা মেলা হুইস্পার চেয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি,
বেজার মুখেও দু-এক হাতা হাসি ঢেলে দিচ্ছে কেউ,
জ্বলন্ত কয়লার মতো সেই হাসি…
এইসবের মধ্যেই স্মৃতির কুঠুরি থেকে
এক প্যাকেট স্বস্তি বেরিয়ে আসে,
পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে তাকে সযত্নে ঢাকছে কিশোর,
কালো কালো লালগড়, ল্যান্ডমাইন, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা!
একমাত্র প্রজাপতিটাই আঁকতে পারতাম আমি,
দুটো ত্রিভুজের চুম্বনের মাঝখান দিয়ে শুঁড় টেনে তোলা,
তারপর ইচ্ছেমতো লাল, হলুদ, নীল ফুটফুট…
হঠাৎ কম্পিউটার ঠিক হয়ে যায়,
ঝাক্কাস বিল, কাগজ জড়াবার পর আবার কালো পলিপ্যাক,
আমাকে আর বেশিদিন এখানে দাঁড়াতে হবে না!
নিরাময়ের অজস্র বেগুনি ব্রোশিওর
একটা কলাপাতা হাতির শুঁড়ের মতো আমার দিকে এগিয়ে এসেছে,
সারা রাত ধরে পড়া বৃষ্টির বিন্দু ফুটে আছে ওর শরীরে,
এই অরণ্যে একটা কুবো পাখি দিশেহারা হয়ে কী যেন খুঁজে বেড়ায়,
হঠাৎ হঠাৎ গ্যারাজের ছাতে উঠে সে অবিরাম ডেকে চলে –কুব কুব কুব্…
তার ডাক ডালিমগাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বেড়ালগুলোকে অস্থির করে তোলে,
তারা তখন এই পাড়ার প্রতিটা বাড়ির
আর মুখে করে নিয়ে আসে একটা লাল ব্রা,
আর নিরাময়ের অজস্র বেগুনি ব্রোশিওর,
সেসব নিয়ে এই মেঘলা দিনে অরণ্য স্তব্ধ হয়ে আছে,
একা কুবো ডেকে যাচ্ছে কুব কুব কুব…
(এসো বিষাদ, এসো। তোমার সঙ্গে শুই।
তোমার খোঁপায় তারা ফুল লাগাই,
এসো, তোমাকে নিয়ে আজ জোছনার রাত্রি কাটাই।)
রাত্রি, বড় গোপন কথার মতো ঢুকে আসে ঘরে,
আধখানা ছাদ, বাকিটা চিলেকোঠা
তার আটখানা কাচের জানলা, সেই কাচের ওপর
রাসমঞ্চের হাজার ঝাড়বাতির আলো এসে পড়ে,
আর সেই সারি সারি দাঁড়ানো অষ্ট সখীর মতো ফুলঝুরি গাছ,
যখন আগুন দেওয়া হয়, তখন আগুনের ডালপালা মেলে আমাকে ডাক পাঠায়।
আগুনের ডালপালা আমাকে ডাক পাঠায় সকাল সাঁঝে,
বিশেষত অন্তর- রজস্রাবের মতো গোপন রাতে,
আগুনের ডালপালা নিয়ে হাজার হাজার ফুলঝুরি গাছ
আর আমি ভিজতে থাকি আ-চরাচর…

এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ কবি ও কথাকার। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, কল্পবিজ্ঞান, মৈথিলী অনুবাদকর্মে তিনি প্রতিমুহুর্তে পাঠকের সামনে খুলে দিচ্ছেন অনাস্বাদিত জগৎ। জন্ম কলকাতায়। শৈশবে নাটক দিয়ে লেখালেখির শুরু, প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘সামগন্ধ রক্তের ভিতরে’, দেশ, ১৯৯২। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘আবার অমল’ রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯৯৫।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক তৃষ্ণা পূর্ণসময়ের সাহিত্যকর্মের টানে ছেড়েছেন লোভনীয় অর্থকরী বহু পেশা। সরকারি মুদ্রণ সংস্থায় প্রশাসনিক পদ, উপদেষ্টা বৃত্তি,বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য অকাদেমিতে আঞ্চলিক ভাষায় অভিধান প্রকল্পের দায়িত্বভার- প্রভৃতি বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাঁর লেখনীকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।
প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- পূর্ণেন্দু ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার ২০১২, সম্বিত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩, কবি অমিতেশ মাইতি স্মৃতি সাহিত্য সম্মান ২০১৩, ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) ২০১৩, ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫, সোমেন চন্দ স্মারক সম্মান (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি) ২০১৮, সাহিত্য কৃতি সম্মান (কারিগর) ২০১৯ ও অন্যান্য আরো পুরস্কার।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
বেড়াল না নীলঘন্টা?, একুশ শতক, ২০০২
উলটে মেলো, একুশ শতক, ২০১৩
অজাতক সমগ্র থেকে, কলিকাতা লেটারপ্রেস, ২০১৭
গোপন ট্যাটু, কৃতি, ২০১৮
লাইব্রেরি শার্ট খোলো, কৃতি, ২০১৯
অনুবাদ কবিতা
অজিত আজাদের কবিতা, নবারম্ভ প্রকাশন, ২০১৮
মূল মৈথিলী থেকে অনুবাদ- তৃষ্ণা বসাক
গল্প
ছায়াযাপন, একুশ শতক, ২০০৯
দশটি গল্প, পরশপাথর, ২০১১
নির্বাচিত ২৫টি গল্প, একুশ শতক, ২০১৪
ইয়াকুবমামার ভারতবর্ষ, প্রশাখা প্রকাশনী, ২০১৮
গল্প ৪৯, কৃতি, ২০১৯
উপন্যাস
বাড়িঘর, একুশ শতক, ২০১১
অনুপ্রবেশ, এবং মুশায়েরা,২০১৭
এখানে টাওয়ার নেই, একুশ শতক, ২০১৭
স্বপ্নের শিকারা, এবং মুশায়েরা, ২০১৯
অগ্নিবলয়, আকাশ, ২০২০
প্রবন্ধ
প্রযুক্তি ও নারী- বিবর্তনের প্রতি-ইতিহাস, গাংচিল, ২০১০
মেয়েদের একাল, সেকাল ও চিরকাল, সোপান, ২০২০
প্রযুক্তি
ছাপাখানার অ-আ-ক-খ, শিশু কিশোর আকাদেমি, ২০১০
সহলেখক- সৌমেন বসাক
সম্পাদনা
ভারতীয় ভাষার গল্প, এবং মুশায়েরা,২০১৭
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প, এবং মুশায়েরা, ২০১৭
Related