Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,puja 2021 Islam to the Taliban

উৎসব সংখ্যা প্রবন্ধ: ইসলাম থেকে তালেবান । শুভশ্রী সাহা

Reading Time: 12 minutes
তালেবান শব্দটির মধ্যেই  জড়িয়ে আছে নিষ্টুরতা নৃশংসতা আর সন্ত্রাসবাদ। গ্রুপ অফ টেরারিস্ট। যারা সর্ব ইসলামিকরণ ছাড়া আর কিছু  বোঝে না অথচ প্রকৃত ইসলামের বাখ্যার বিপরীত স্রোতেই এদের বসবাস। আপাত অর্থে তালেব/তালিব শব্দের অর্থ ছাত্র। এবং তালিবান বা, তালেবান শব্দের অর্থ ছাত্রদল। এখন প্রশ্ন ওঠে কে এই তালিবান কেমন করে তারা একটি রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক শুধু নয় সারা বিশ্বে রেন অফ টেরর চালিয়ে যাচ্ছে মাত্র কয়েকটি রাষ্ট্রকে পাশে পেয়েই! বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিধর দেশ এলিয়ে যাচ্ছে এই পাহাড়ি রাষ্ট্র  আফগানিস্তানকে কব্জা করতে গিয়ে। কুড়ি বছর ধরে আফগানিস্তান নিরন্তর শক্তিক্ষয়ে বিপর্যস্ত হয়েও একচুল সরেনি তাদের জায়গা থেকে। যদিও আফগানিস্তানের ইতিহাস পরাক্রম জেদ লড়াকু মনোভাবকে সামনে রেখেই এগিয়ে গেছে বরাবর। আর তাদের সেই ইতিহাসে ভারত বেশ অনেকটা  সময় জড়িয়ে আছে তাদের সাথে।
 
গল্পের কাবুলিওয়ালা আর বাস্তবের আফগান পুরুষের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। এদের মধ্যে  ভালোবাসা শব্দটি কতটি জানা না গেলেও প্রতিশোধ পরায়নতার ব্যাপারটি সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন সব  আফগান ই কী একরকম? আফগান এবং তালিবান এই দুইএর মধ্যএ মিল কী অমিলও বা কী।
আসলে সব তালিবানই হলো আফগানি কিন্তু সব আফগান ই তালিবান নয়। তালেবান খোঁজ পেতে গেলে বেশ খানিকটা পেছনে যেতে হবে। বেশির ভাগ তালেবরাই ছিল পূর্ব ও দক্ষিণ আফগানিস্তানের  পশতুন প্রদেশের। কিছুটা ছিল তাজিক প্রদেশের। এদের মতাদর্শ হল জিহাদবাদ, ইসলামি মৌলবাদের পোষন এবং সংরক্ষণ এবং পশতুন জাতিয়তাবাদ। এ-ই পশতুনরা শুধুমাত্র আফগানিস্তানেই নেই এরা পাকিস্থান এবং আফগানিস্তানের সীমান্তেও দিব্যি ছড়িয়ে রয়েছে। পাকিস্থানে যারা ছিল তাদের উদেশ্য ছিল এদিক ওদিক মিলিয়েই পশতুনদের একটা নিজস্ব আইডেন্টিটি পাবার। এদিক ওদিক মিলিয়েই বিস্তীর্ণ পাশতুন অঞ্চল। পাকিস্থান আলাদা পাখতুনিস্থান করতে দেয়নি যেমন আফগান সরকারও চায়নি অবশ্যই। কাজেই এরা বিক্ষুব্ধ স্বত্ত্বানিয়েই থেকে গেল দুদিকেই। এটা বলা হয়ে থাকে পাকিস্থানের মাদ্রাসাতেই এরা প্রথম সংগঠিত হয়। এবং এই পশতুন লড়াকু, উগ্র  জাতিয়তাবাদ  সার জল পায়।  এ-ই মাদ্রাসা গুলি জমিয়ত  উলিমায়ে ইসলাম বলে কৃতক পরিচালিত মাদ্রাসা বলে অভিহিত করা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে আফগানদের সাথে যুদ্ধের শেষ হলে   হাজারে হাজারে তরুন আফগান এইসব মাদ্রাসায় ফিরে গেছিল। কিন্তু কারা পড়াত বা কী পড়াত এ-ই সব তরুন আফগানদের! এরা শুধু কোরানের তরবারি স্তোত্র পড়াতে লাগল যার বিষয় ছিল আক্রমনাত্মক বিষয়বস্তুতে  ভরা।  ইমামরা কায়দা করে এ-ই বিষয়গুলিকে আরো ধারযুক্ত করে উপরে সন্দেহ আর বিদ্বেষের গুঁড়ো এমনভাবে মেশাতো যে এদের ধারণাই হল বেঁচে থাকার উদেশ্য অ- মুসলিমদের নিকেশ করা।  জিহাদ মৌলবাদ এবং ইসলাম এদের কাছে মিলেমিশে ধর্মোন্মাদ হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে গেল। ঠিক একই ই সময়ে আরব দেশের এক নেতা যার আদত জায়গা সুদান সেখান থেকে আরবের বিভিন্ন জায়গায়  জিহাদের জন্য ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করেদিয়েছিল। তার উদেশ্য ছিল পশ্চিমি দুনিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা এবং লড়ার জন্য জেহাদি সৈন্য  তৈরি করা। এ-ই শেখ বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তুলে জেহাদি ট্রেনিং ক্যাম্পে টাকা তুলে পাঠাতে শুরু করল আফগানিস্তানে। এ-র উদেশ্য ছিল এখানে তার শক্ত ঘাঁটি তৈরি করা। তখনও তালেবানরা রাজনৈতিক ব্যানারে আসেনি তাদের উদেশ্য শুধুমাত্র নিজেদের লস্কর বা গ্রামে সুষ্ঠু ভাবে বসতি স্থাপন করা। ১৯৮৯ সালের ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারি সোভিয়েত জেনারেল দলবল নিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে উজবেকিস্তানে চলে গেছিলেন। সেইসময় সোভিয়েত রাশিয়াও ভাঙছিল গৃহযুদ্ধের জেরে। তাদের পক্ষে আফগানিস্তান করায়ত্ত্ব করে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না আর। কিন্তু কাবুলে রুশ পৃষ্টপোষকতায় তৈরী নাজিবুল্লাহ সরকার টিকে থেকে গেল কারণ আফগান সেনাবাহিনী দেশের বেশিরভাগ অংশেই তাদের  আধিপত্য রেখে দিয়েছিল। কিন্তু উপজাতি সর্দারদের সাহায্যে দেশ চালালে সেখানে বৃহত্তর উন্নতি কী ভাবে সম্ভব!  শুরু হল নিজেদের মধ্যেই মারামারি কাটাকাটি। আফগানরা নিজেরাই তখন বিপর্যস্ত নিজেদের দেশে।  খুন জখম রাহাজানি সবই অবাধ। অবশেষে নাজিবুল্লাহ সরকারের পতন ঘটল তার জায়গায় এলো অধ্যাপক বুখারুদ্দিন রব্বানি। কিন্তু রব্বানি যেহেতু তাজিক গোষ্ঠীর নেতা তাই তাকে  আবার পাশতুনরা মেনে নিল না। পাশতুনদের জাতীয়তাবাদ আবার আলাদা ছিল এবং পাকিস্থানের মাদ্রাসায় তাদের মগজধোলাই হবার পর প্রত্যেকেই ক্ষমতা দখলের জন্য সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
ভেতরে ভেতরে এইসব তরুন আফগানদের মধ্যে ধর্মোন্মাদ জায়গা করে নিল প্রকৃত কোরাণ ইসলামের জায়গা থেকে সরে গিয়ে।আমরা বলি বা ভাবি বটে, ইসলামের দিকে আঙুল ও তোলা হয় কিন্তু কোনো পুরাতন ধর্ম কাটাকাটির ইতিহাস শেখায় না এ-ই অংশগুলি মানুষের স্বার্থেই তৈরি। এদের কোনো ধর্মও  হয় না, থাকে না। সময় এবং পরিস্থিতির সাথে সাথে এদের  ধর্মের চরিত্র বদল ঘটে যায়। পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকরা এদের নব্য জিহাদী নাম দিয়েছিল। তালেবান যে ভাবে শিকড় গেঁড়ে বসছিল ওদিকে সুদানের সেই শেখের নেতৃত্বেও একদল জিহাদী তৈরি হচ্ছিল যাদের উদেশ্য ছিল  পাশ্চাত্য দেশ অর্থাৎ অমুসলমান দেশের উপর আঘাত হানা। এদের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে বড় বড় দাদাদের উপর চরম আঘাত হানা।
রাজনীতি আর প্রতিশোধ বড় বালাই তার মাঝে পড়ে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ যে মরছে সে খোঁজে কারুর দরকার নেই। সোভিয়েত  সৈন্যের লঞ্চার মেশিনগান  গ্রেনেডের আক্রমণে আফগানিস্থানের গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে গেছিল তাতে কত পরিবারের ধূলিসাৎ হয়েছিল তার ইয়ত্ত্বা নেই তার উপরে ছিল নাজিবুল্লাহ সরকারের পুলিশের অত্যাচার।  তালেবান সেই সময়ে  জন্ম হয়ে গেলেও শৈশবে আছে। এ-ই সময়ে লস্কর বা উপজাতীয় সর্দাররাই এগিয়ে ছিল কাটাকাটি মারামারির খাতায়। এ-ই সময়েই দক্ষিণ আফগানিস্তানে একটি এমন ঘটনা ঘটল প্রচারের লাইমলাইটে চলে এলো তালেবান এবং তাদের শিক্ষক নেতা মোল্লা ওমর।  কান্দাহারের কাছে একটি আফগান সৈন্য ঘাটিতে  কয়েকজন  সৈন্য কাছাকাছি গ্রামের দুটি নিরীহ মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ-ই ঘটনা গ্রামে ছড়াতে সৈন্যদলের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর কিছু করার ক্ষমতা হলো না। কিন্তু ও-ই গ্রামে একটি মাদ্রাসায় পঞ্চাশ জন ছাত্র গ্রামের প্রধান মোল্লার কাছে  কোরান শিক্ষা নিতো। এ-ই প্রধান মোল্লা তার ছাত্রদের নিয়ে  মাত্র কয়েকটা রাইফেল সম্বল করেই প্রবল লড়ে সেনাঘাঁটি  দখল করে নিয়ে প্রধান সামরিক নেতাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়। এ-ই ঘটনা গ্রামবাসীদের মনে তো বটেই দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেই আগুনে ঘি পড়ল। প্রথমে রাশিয়ান দের এবং পরে আফগান জাতীয় সৈন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত  সাধারণ মানুষ আগে থেকেই বিক্ষুব্ধ ছিল এখন  প্রবল উত্তেজিত হয়েপড়ে। চতুর্দিক থেকেই তালেবানদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন আসতে থাকে। এ তালেবান তখন বেশ খানিকটা  অন্যরকম ছিল। কালো পোশাক পড়ত,নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতো অসহায়কে নায্য  বিচার দিত এবং অত্যাচারী শাসকদের প্রবল শাস্তি দিত।আস্তে আস্তে ভরসা করতে শুরু করল মানুষ শুধু নয় তাদের উদ্ধার কর্তা হিসেবে দেখতে লাগল। মহম্মদ ওমর হলেন মসিহা। তাকে সবাই মোল্লা ওমর বলে সম্মান জানাতো। 
তালেব শব্দের অর্থ ছাত্র। তালেবান মানে ছাত্রদল। এ-ই ছাত্রদল ক্রমে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলে বহু আফগান তরুণ এদের নকল করে কালো পোশাক পরা শুরু করে দিল। শয়ে শয়ে আফগান তরুণ এসে তালেবান দলে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বলাই বাহুল্য, পঞ্চাশটি তালেবান থেকে একবছরের মধ্যেই প্রায় চোদ্দ হাজার তালেবান সৈন্য  জোগাড় হয়ে গেল। তারা সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে এইভাবেই কান্দাহার দখল করে নিলে ১৯৯৫ তে এবং আব্বু রব্বানির সরকার পড়ে গেল। পড়ল তো পড়ল তালেবান ঘর গুছানোর সুযোগ পেয়ে গেল।
পাকিস্থান প্রথম থেকেই ঘোলা জলে মাছ ধরবার সুযোগ খুঁজে আসছিল এবার জোর কদমে ক্ষেতে নেমে পড়ল। এদের কট্টরপন্থীরা সমস্ত আরব জুড়েই ইসলামী সংগঠন  গুলির সাথে যোগাযোগ রাখত, প্রয়োজনের জন্য। সুযোগ বুঝে তালিবান বাহিনীকে এরা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক নিরাপত্তাদেবার  আশ্বাস জানাতেই তালিবানরা কান্দাহার দখল করেনিল,তার সাথে প্রচুর পরিমান অস্ত্রশস্ত্র। রাইফেল পিস্তল গ্রেনেড মিসাইল  গাড়ি ট্যাঙ্ক, এমনকি মিগ ফাইটার বিমানও।দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে তালিবান দল এগোতে শুরু করলেই আরব সুদান এবং পাকিস্তান এ-ই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে দিল। এ-ই সব যাবত ঘটনার  দিকে লক্ষ্য রাখছিল সুদানের সেই শেখ।
তালিবানদের জয়যাত্রা তো অব্যাহত থাকল, কিন্তু তালিবানরা কতখানি বিশ্বস্ত থাকল তাদের আদর্শের প্রতি! ক্ষমতায় এসে তারা নিজেদের  রাতারাতি ভোল পাল্টে দিল। তালিবানদের মধ্যে এক অন্ধকার মধ্য যুগীয় দিক বেরিয়ে এলো।শাসনের নামে এরা এদের দখল করা জায়গাগুলিতে মধ্যযুগের শাসনব্যবস্থা চালু করল। প্রথমেই মেয়েদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। বোরখা, হিজাব ইত্যাদি পরা বাধ্যতা মূলক করে  দিয়ে মেয়েদের চটি জুতো, লিপ্সটিক ইত্যাদি পড়া বন্ধ যেমন তেমনি স্কুল কলেছে যাওয়া একা একা চলাফেরা  সম্পূর্ণ বন্ধ করা হল। নাচ গান মিউজিক বাদ্য যন্ত্র সব বন্ধ কোনো আনন্দ ফুর্তি চলবে না তালিবান দের কাছে। পাঁঁচবার  নমাজ পড়া শরিয়া আইন চালুকরা হল শুধু নয় যারা মানবে না বা মানছে কিনাদেখার জন্য তালিবান অনুগামীর দল মহল্লা মহল্লাতে ঘুরে বেড়াতে লাগল। যে তরুণ জঙ্গীদের আফগানিস্থানের লোকজন মসিহা ভেবে অনুসরণ করা শুরু করেছিল তারা একবছরের মধ্যেই ত্রাস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। ত্রাস বলে ত্রাস, যে যতই সমর্থন করুক না কেন ১৯৯৪ থেকে ২০২১ শে এসেও তাদের চরিত্র বদলাতে পারেনি কেউই। আমেরিকা কুড়ি বছর সেনাদল চাপিয়ে রেখেও  তালিবানি নিষ্ঠুরতা কমাতে পারেনি বরং প্রতিশোধ স্পৃহা অনেক বেশি বেড়েছে আগের থেকে। আফগান মহিলারা আগের থেকে বেশি সংখ্যক শিক্ষিত হয়েছে বলে সারা দুনিয়া জুড়ে তালিবানের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে সাহায্য চাইছে তাদের ব্লগ, টুইটার ইন্সট্রাগ্রাম জুড়ে শুধু তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। পাকিস্থানি শাসক সহ  সেনাদলকেও এ-ই সব মহিলারা আঙুল তুলছে। আফগান মহিলাদের  স্পষ্ট ধারণা তালিবানি সন্ত্রাসের পেছনে পাকিস্তানি মদত রয়েছে। আজকের তারিখেই এরা (১৩.৯,২০২১) কান্দাহারে চ্যারিটি ওয়ার্কার ডঃ ফতেমা রাহাত এবং তার পরিবারকে বাড়িতে ঢুকে মারধোর করে খুনের হুমকি দিয়ে এসেছে।  উত্তর এবং দক্ষিন সহ সব আফগানিস্থানের  চিত্র একই।
যাইহোক ফিরে যাওয়া যাক আবার ১৯৯৫ সালের কান্দাহারে। মানুষ এই সময় তালিবানদের চাপিয়ে দেওয়া মধ্যযুগীয় অন্ধকার মেনে নিয়েছিল কেন, জানেন তার কারণ সোভিয়েত সেনাদল ফিরে যাবার পর উপজাতি সর্দাররা যে হারে মারামারি কাটাকাটি শুরু করেছিল তালেবানরা এসে সেটা অন্তত বন্ধ করেছিল। খুন রাহাজানি ডাকাতি ধর্ষণের পরিবর্তে এলো মধ্যযুগীয় ডার্ক এজ। মোল্লা ওমর তালেবান দল খুললেও সে পড়ে রইল কান্দাহারে সে শাসনকার্য বুঝতো না কিন্তু তার নামে তালিবের সংখ্যা বাড়তে লাগল হু হু করে। মোল্লা ওমর তাদের কতখানি গুরু সেটা মোল্লা না জানলেও তালেবানরা প্রচার করে বেড়াতে লাগল। এই সময়েই সুদানের সেই শেখের দল আলকায়দা শাখা প্রশাখা কলবরে বাড়তে লাগল শুধু নয় শেখের নির্দেশে আফগানিস্থণে আলকায়দার প্রচুর  ট্রেনিং ক্যাম্প খুলে ফেলল। এখানে আরব দেশের নানা প্রান্তে  থেকে যত গুপ্ত সংস্থা আছে সবাই যোগদান দিল। এদের উদেশ্য কমন। অ মুসলমান লোকেদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা। তালেবানরা ছিল উগ্র, মধ্যযুগের অন্ধকার যুগের প্রতিনিধি,  নিজের দেশ নিয়েই ব্যস্ত ছিল এতকাল, সন্ত্রাসবাদী ছিল না কিন্তু আলকায়দা মাথায় হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তারাও দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে নজর ছড়ালো তাদের। এদের উদেশ্য কী  সাম্রাজ্যবাদ বা মনোপলি বিজনেস বা বিশ্ব রাজনীতিতে একনম্বর দাদা হওয়ার উদেশ্য?  একেবারেই না। এদের সেই বোধ ও নেই। এদের মনে অ মুসলিম মানেই তারা শত্রু,  তাদের ধরে কাটো এবং শরিয়া আইন, মৌলবাদ, ঘোর মধ্যযুগীয় সংস্কার দেশের মধ্যে জাতির মধ্যে গেঁড়ে দাও। এই সব তরুণ অন্ধ বিশ্বাসী যোদ্ধাদের একমাত্র উদেশ্য ছিল মধ্যযুগীয় ইসলামিক শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
কিন্তু মৌলবাদ মানে আসলে কী, সেটাও তো জেনে নিতে হয়!  মূল থেকেই তো মৌল কথাটি এসেছে  নিশ্চয়। তাহলে মূলের দিকে যাওয়াই মৌলবাদের উদেশ্য। কিন্তু সেই মৌলবাদ কী নিরীহ জনসাধারণের উপর অত্যাচার বা প্রতিক্রিয়া শীলতাকে সমর্থন করে না সারা দুনিয়া জুড়ে ইসলামের নামে রেন অফ টেররকে উস্কানি দেয়? মৌলবাদ সমস্ত ধর্মেই আছে কিন্তু। মৌলিক শিক্ষা বা নীতিকে মেনে চলাই মৌলবাদ।আতঙ্কবাদ বা সন্ত্রাসবাদ নয়।এবং জিহাদ শব্দটিও অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। জিহাদ একটি ব্যাক্তির ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নিজস্ব সত্তার আভ্যন্তরীণ সংগ্রাম অর্থাৎ কতটা নিজের ভেতরে  পবিত্র  হওয়া যায়। সেখানে অন্য ধর্মকে আঘাতের কোনো জায়গা নেই। তালিবান সহ এই সমস্ত সন্ত্রাসবাদীরা আসলে নব্য জিহাদী। এরা বস্তুত কোরাণের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামকে কলুষিত করছে।
যাইহোক তালিবানের উত্থানে ৯৬সালে আফগান গৃহযুদ্ধে তালিবান বাহিনীকে তাজিক নেতা মাসুদ শাহ এবং উজবেক নেতা দোস্তামের যৌথ বাহিনীকে পরাস্থ করে পাকিস্তান সরকার  এবং আই এস আই গুপ্ত চর সংস্থা প্রচুর সাহায্য করেছিল। আর একটি দেশ যে সাহায্য করেছিল তা হল সৌদি আরব। যুদ্ধ চালিয়ে যাবার প্রয়োজনীয় অর্থ সব এই দুই দেশ পাঠাতো। এবং পাকিস্তানের বরাবর আফগানিস্তানকে সাহায্য করার পেছনে প্রত্যক্ষ উদেশ্য ছিল। পাকিস্থান আফগানিস্তানের পশতুন জাতিকে সাহায্য করলেও পাকিস্তানের ভেতরে কখোনোই আলাদা পাশতুনদের জায়গা দিতে রাজী নয়। সৌদি আরবের আল কায়দার চীফ কম্যান্ডার তালিবান সংগঠনকে যুদ্ধে সাহায্য  অর্থ এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মোল্লা ওমরের সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছিল। মোল্লা ওমর ছিল ওদের দ্য গ্রেট সেভিয়ার। শুধুমাত্র ৯৬ সালে পাকিস্থান এবং সৌদি আরব তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। 
৯৮ সালের ২০ শে আগস্ট  নাইরোবি কেনিয়া এবং দার উস সালামের আমেরিকান দূতাবাসে বিস্ফোরক  বোঝাই  ট্রাক উড়িয়ে দেয় ইজিপশিয়ান  ইসলামিক জেহাদ যারা কিনা ছিল আলকায়দা সংস্থার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। প্রচুর মানুষের মৃত্যু এবং হতাহত হয়। ফজর আব্দুল্লা এবং আবদাল্লা আহমেদ এই নাশকতার দায় মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করে। আলকায়দার সরাসরি আমেরিকাকে থ্রেটনিং দেওয়ার শুরু। কিন্তু আমেরিকা কী ছেড়ে দেওয়ার লোক? এফ বি আই ঝাঁপিয়ে পড়ল আগে জায়গায় জায়গায়। আমেরিকার দূতাবাসের চেহারা গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে গেছিল। ঠিক ২০ শে আগস্ট, ১৯৯৮ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট  বিল ক্লিন্টন আদেশ দিলেন  অপারেশন ‘ইনফিনিটি রিচ’ বলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে  সুদান এবং আফগানিস্তানে সাঁড়াশি আক্রমন ক্রুজ এবং মিসাইল দিয়ে।  শয়ে শয়ে ক্রুজ আর মিসাইল ছুটল আফগানিস্তানের গিরি কন্দরে।  আলকায়দা কদিনের জন্য গা ঢাকা দিলেও  গুলি বর্ষনে আফগানিস্তানের নিরীহ প্রচুর মানুষ হতাহত হয়েছিল। মোল্লা ওমর ওসামা বিন লাদেনের ঋন শোধ করতে গিয়ে তালিবান নেতা থেকে ওয়ান্টেড টেররিস্ট হয়ে গেল দুনিয়ার চোখে।  নিরীহ প্রচুর আফগান মানুষ মারা যেতে তাদের চোখে আমেরিকা তখন চরম ভিলেন। আফগান যুবকরা একদল  যেমন তালিবান সরকারের হয়ে লস্করে কাজ নিল, অন্যদল সরাসরি আফগানিস্তানে আলকায়দার ট্রেনিং এ যোগ দিল। 
এর পরের গল্প আলকায়দার জঙ্গি জঙ্গি  খেলার  সারা বিশ্বে ত্রাস সঞ্চার করার জন্য এদিক ওদিক হুমকী আর ছোটখাটো পটকা ফাটানো। আসল পিকচার বা দমদার ধামাকা বাকি ছিল তখনো। আফগানিস্তানের গিরি কন্দরে লুকিয়ে থাকা বা আফগানিস্তানের ভূখন্ডের জন্য এখানে সচরাচর খুঁজে বার করা একেবারেই সহজ নয়।  তালিবানের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে দিব্যি আলকায়দার শাখা প্রশাখা যেমন বাড়তে লাগল তেমনি বহিবিশ্বে তালিবান মার্কড হয়ে রইল সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতা হয়ে। তালিবান আর আলকায়দার প্রাথমিক ব্যাপারটা  ইসলামিকরন বা অ ইসলামিক রাষ্ট্র গুলিকে শত্রু ভাবে ভাবাটা এক হলেও, আলকায়দার  অঙ্ক ছিল আলাদা সারা বিশ্বে ইসলামিকরন শুধু নয় সারা বিশ্বের  অ ইসলামিক দেশগুলিতে ত্রাস সৃষ্টি করা ইসলামের নামে, যেন ইসলাম এক এবং অদ্বিতীয়!  যেটি ইসলামের প্রকৃতি  সমর্থন করে না। কিন্তু তালেবানের দৌড় এত কিছু নয় তার কারণ আলকায়দার মত সঙ্গতি অর্থ বা লোকবল তাদের তো নেই ই, এতো সুক্ষ টেকনোলজি ব্যবহার করে কিছু করা প্রায় অসম্ভব তাদের পক্ষে। তাদের যোগানদার পাকিস্তান এবং সুদান, ইয়েমেন সংযুক্ত আমীর শাহির কিছু অংশ। আফগানিস্তানকে মধ্যযুগে রেখে রাজ করাই তাদের উদেশ্য ছিল। এবং সেই থেকে একচুল পরিবর্তন ও হয়নি মানসিকতার। ২০২১ বসেও একই কথা বলে যাচ্ছে তালিবান সরকার,  নারীদের পোষাক, পড়াশোনা, এমনকি উঁচু হিলের  জুতো পরাও নিষিদ্ধ, পারলে পরে খালি পায়ে রাখে আর কি!  
কিন্তু অসৎসংসর্গে নরক বাস তো হবেই। তাই এ-র মধ্যেই ঘটে গেছিল  গেল পর পর দুটি ঘটনা। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের পঞ্চশিরের বিখ্যাত উজবেকি নেতা শাহ মাসুদকে হত্যা করে  ওসামা বিন লাদেনের পাঠানো সুইসাইড স্কোয়াডের বিখ্যাত দুই মূর জঙ্গী। এরা নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে ঢুকে উড়িয়ে দেয় নিজেদের সহ শাহ মাসুদকে। আসলে শাহ মাসুদকে হত্যা করে তালিবানদের পথ নিষ্কন্টক করতে সাহায্য  করেছিল ওসামা, তার কারণ ওসামা বুঝেছিল লুকিয়ে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালানোর জন্য তালেবান  এবং আফগানিস্তানের মাটি ছাড়া কোনো ভাবেই  সম্ভব হবে না। মোল্লা ওমরকে সন্তুষ্ট করার জন্যই  শাহ মাসুদকে সরতে হল। 
ঠিক তার দুদিন পরই,  ১১ ই সেপ্টেম্বর ২০০১ এ উড়ে গেল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং পেন্টাগনের একাংশ। কয়েকদিন পরেই এই আত্মঘাতী জঙ্গিদের আতাপাতা সংগ্রহ করল আমেরিকান সরকার। চরম পত্র গেল মোল্লা ওমরকের কাছে ওসামা বিন লাদেন এবং  আল-জাওরাহিরিকে ইউ এস এর হাতে তুলে দিতে হবে। নয়ত পরিণাম ভুগতে হবে। কিন্তু মুসলিম হয়ে অপর  মুসলমানকে অ মুসলিমের হাতে তুলে দেবে তাও এমন উপকারী বন্ধুকে! কখোনোই নয়। ব্যস  এক সপ্তাহ বাদেই কাবুল আক্রান্ত হল। এর পরের গল্প আমরা জানি।  মার্কিন সেনার সাথে উজবেকি দল মিলেছিল তালিবান এবং ওসামা দুইকেই লক্ষ্য করে কারণ তাদের প্রবল রাগ ছিল এদের উপর। এবং বলা হল তালিবানকে হারিয়ে  শুধু  সরকার গঠনই নয় অবশ্য করে বন্দী তালিবানদের তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই তারা সঙ্গে থাকবে। মার্কিন সেনাদল  আধুনিক অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত হলেও আফগানিস্তানের পাহাড় কন্দর নিয়ে ততটা ওয়াকিবহাল নয়। তাই এদের কথা মত চলতে গিয়ে  বাদকশান থেকে লড়াই শুরু হলো। ইনফ্রা রে ব্যবহার করে রাতের বেলাও তালিবান বাহিনীকে বিপর্যস্ত রাখতো আমারিকান সৈন্য দল। আর ধর্মের নামে কবরে যাওয়ার জন্য এই সব তরুন সেনারা আল্লাহ আকবরের নামে ঝাঁপিয়ে পড়ত তরোয়ালের সামনে। কিন্তু এই সব নিঃশব্দে লক্ষ রাখছিল যে দেশ তার নাম পাকিস্তান। তালিবানের সঙ্গে সে সময়ে পাকিস্তান গুপ্তচর সংস্থা আই এস আই এর ভালোই যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তান প্রধান পারভেজ মোশারফ যেই দেখল আল কায়দা এবং তালিবান কোনঠাসা মারমুখী আমেরিকার কাছে, ইউ এন ওর সবাই এবং বাকিরা একদল হয়েছে এই সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে, একদম তালিবানকে সাহায্য করা বন্ধ করল শুধু নয়, মুচলেকা দিয়ে যুদ্ধবন্দী প্রায় আড়াই হাজার সৈন্যকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো পাকিস্থানে। তালিবান সরকারের পতন হলো সেই সময়েই। সমস্যা মেটাতে আমেরিকান সরকার হামিদ কারজাইকে মন্ত্রী করে আফগানিস্তানে। শুরু হয় আলকায়দা খেদানোর কাজ।  তালিবান কি মিটে গেল হাজারে হাজারে মরে? উত্তর- না, মেটে নি তবে আমেরিকার সংহার মূর্তি সাথে বিশ্বের অনান্য দেশ এমনকি তাদের মদত দাতা পাকিস্থানের ভেজা মুড়ি অবস্থা দেখে  ঝোপে ঝাড়ে চুপিয়ে গেল বটে তবে থেকে থেকে মাথা উঁচু করে উৎপাত করত নিজের দেশে। কেউ কেউ বিভিন্ন ইসলামিক সন্ত্রাসী দলেও যোগদান করে ফেলেছিল ভেতরে ভেতরে৷  ওসামাকে পাকিস্থানের আটাটাবাদ  শহরে হত্যা করার পর আফগানিস্তান এবং পাকিস্থান উভয় দেশকেই  আমেরিকা চেতাবনি দিয়ে ঠান্ডা করেছিল এ-ই বলেই অর্থনীতিতে এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে  একঘরে করে রাখবে বরাবর। পারভেজ মুশাররফ সাত তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে ফেলবার জন্য ভারতের সাথেও বৈঠকেও এক পায়ে খাড়া তখন। আফগানিস্তানে চাপ বজায় রাখার জন্য নর্দান আলায়েন্স আর ইউ এসের মিলিত সৈন্যদল রইল। এ-ই সময়ে অবশ্য ভারতের সাথেও আফগানিস্তানের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বেশ কিছু মিলিত বাণিজ্যও গড়ে ওঠে। এ-ই স্থিতাবস্থা চলার পরও যৌথ সৈন্য বাহিনী তালেবান বাহিনীকে পরাস্থ করে উঠতে পারেনি মোটেই বরং ভেতরে ভেতরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল  ক্ষমতায় ফিরে আসার। বেশ কিছু দেশ তাদের সাহায্য করেছে এদের মধ্যে পাকিস্তান, ইরাক তো আছেই এখন চীন নামটিও দিব্যি উঁকিঝুঁকি মারছে এদের পাশাপাশি।  আফগানিস্তানের তালিবানকে মদত দেবার জন্য সুদান থেকে  চেচেন যেখানে দুনিয়ার সন্ত্রাস বাদী দল আছে একটিও, তারা সবাই প্রস্তুত। প্যালেস্টাইন  আফগানদের  আভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার কথা বললেও   আমেরিকা তাদের কঠোর  শত্রু।  কিন্তু মদত না করলে দশ দিনের মধ্যে দু লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার বর্গ মেইল দখল করা যায়? যায় না। ট্রাম্পের মাথায় ভূত চাপল তালিবানদের সাথে কথা বাড়াবার তাও এত বছর বাদে। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে যদি তারা সুবোধ বালক হয়ে থাকে। কিন্তু ফিরে আসার ই যদি ছিল তাহলে ২০০১ এর পর থেকে ওখানে থাকার কী দরকার ছিল আমেরিকার? এ প্রশ্ন সবার! কারণ আমেরিকার ব্যর্থতা। তালেবানকে নিকেশ করার কাজটি একেবারেই হয় নি যেমন গনতান্ত্রিক সরকারটিকেও এদের বিরুদ্ধে মজবুত  করা হয় নি তেমন করে।  এছাড়া এদের অদম্য সহ্যশক্তি জীবনীশক্তি অফুরন্ত।  লিওন পানেট্টা, প্রাক্তন  আমেরিকান সি এই এ অপারেশন হেড, ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তার সংঘর্ষের কথা লিখেছেন  ‘ওয়ার্দি ফাইটস’ বলে তার লেখা বইটিতে। তার মতে, এরা রক্তবীজের মতো, আল্লাহ আকবর বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর উপর, বাঁচলো কি মরলো একবারেই ভাবে না। এদের শাস্তি বেশ কিছু ক্ষেত্রেই মধ্যযুগীয়। ছেকল বেঁধে রাখা, আইন নেই আদালত নেই গুলি করা, বিভিন্ন পাহাড়ী কন্দরে  অপরাধীদের আটকে রেখে নির্বিচারে হত্যা,এসব নৃশংসতা ওদের ধর্ম। হয়ত সে জন্যেই এরা অপ্রতিরোধ্য  বাহিনী। এদের পরাস্থ করতে গিয়ে রুশ, আমেরিকাও ভেবলে গেছে অথচ এদের তুলনায় আফগানিস্তান কত টুকু! 
যাইহোক ট্রাম্পের রেখে  যাওয়া  শর্তের চটিতেই পা গলালেন পরবর্তী ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহার করার অঙ্গীকার করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল তান্ডব লীলা যা বেশকিছুদিন আগেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। আমেরিকার উপায় ছিল ও না অবশ্য। তার কারণ এত বড় সেনাদলের খরচ জোগাতে  প্রচুর প্রচুর টাকা লাগত। আমেরিকার দেশের মধ্যেই সরকারের বিপরীতে যারা ছিল তারা এই খরচার চরম বিপক্ষে ছিল। তাদের বক্তব্য অন্যের দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য আমরা কেন টাকা খরচা করব? হিসেব মত ঠিকই বলেছে কারণ এই তো সত্য। পরের ঘটনা আমরা সবাই জানি। দেশ ছেড়ে হু হু করে প্রাণের তাগিদে দিশেহারার মতো ছোটাছুটি এবং তাকত এবং মদত  না থাকলে দশ দিনের মধ্যে দু লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার বর্গমাইল কখোনো কেউ বাজেয়াপ্ত  করতে পারে?  অসম্ভব! বিশ্বের সব দেশ দেখছে, ইউ এন ওর সংস্থাও হুমকি দিচ্ছে একঘরে হবার তবু তালেবান গোষ্ঠী ডোন্ট কেয়ার! ইন্সট্রাগ্রাম ব্লগে  প্রতিদিন ছবি আসছে নির্যাতনের, এবং প্রতিবাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদ উপচে পড়ছে। আফগান জনগণের নিজেদের ই এই খেলা বুঝতে সময় লাগেনি। প্রকাশ্যেই তারা বলছে পাকিস্তান প্রধান মদতদাতা, একে ব্যান করে দেওয়া হোক। পাকিস্থানের কর্মকান্ড  দেখা যাক এবার। এরা আর এক তালেবানি দোসর। আলকায়দার পর পাকিস্থানের আই এস আই আর এক আলকায়দা জুটেছে। এরা সরকারি পোষাক পরে উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদী কাজগুলিকে শুধু সমর্থন করে না, নাশকতার জন্য নিরাপদ জায়গা এবং অর্থ অস্ত্র সব জুগিয়ে সাহায্য করে যায়, নীরবে। পাকিস্থানের প্রামাণ্য অপরাধ কিন্তু কিছু কম নয়। জুলাই, ২০০৫, লন্ডন আক্রমণ  ছাপান্ন জন মৃত, সাতশো ছিয়াশি জন আক্রান্ত, তিনজন সুইসাইড স্কোয়াডের বোমারুই  পাকিস্তানি। আবু ফরাজ আল লিব্বি, মে, ২০০৫, পাকিস্তানের মর্দানে  সংঘর্ষ  মারা যায়। ২০০৮ এ আবু লতিফ আল লিবি বলে যে আলকায়দার নেতাটিকে হত্যা করা হয়েছিল ড্রোন স্ট্রাইকে সেও পাকিস্তানেই। সৈয়দ আল মাসরি আলকায়দার নেতা মারা যায় উত্তর ওয়াজিরিস্থানে বোমার আক্রমনে মে, ২০১০ এ। ২০০৮ এ ভারতে মুম্বাইতে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ, ধৃত আজমল কাসভ, সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত।
এত কিছুর পর রাষ্ট্র সংঘে ভারত সহ বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানকে সন্ত্রাস বাদি দেশ বলে অভিযুক্ত শুধু করেনি, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবী তুলেছে। সরকার বেশিরভাগ সময় নীরব থেকেছে, কখোনো কখনো হাওয়া বুঝে শক্ত অবস্থান ও লোক দেখানো শিক্ষা দিতে চেয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের,ব্যস ওই পর্যন্ত। এখন চিনের ছত্রছায়ায় থাকা পাকিস্থান আরো একজন মনের মত সঙ্গী পেয়েগেল তালেবান সরকারকে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু শহর সহ ইয়েমেনে মিষ্টি বিলোনো হয়েছে তালেবানের জয়ে।   আফগানিস্থানকে আপাতত তালেবানের তরোয়ালের নিচেই থাকতে হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের থেকে সাহায্য বন্ধ আগেই হয়েছে।শুধু ইউনিসেফ  ছোটদের জন্য রাষ্ট্র সংঘ থেকে খাবার,প্রয়োজনীয় ওষুধ সাহায্য পাঠাচ্ছে শিশুদের জন্য। সাধ্যমত ইউনেস্কোও করছে। কাবুলে আতাতুর্ক হসপিটালে এই মুহূর্তে প্রচুর বাচ্ছা জ্বর এবং মিজিলস নিয়ে ভর্তি হয়ে আছে। ইউনেস্কো ইতিমধ্যেই আফগান শিশুরা যথেষ্ট  পুষ্টিহীনতার অভাবে ভুগছে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে কিন্তু সরকারের তাতে হেলদোল নেই কোনো। সরকার শুধু শাসন চেনে তাও সে শাসন শুধুই কাটাকাটির। এই মুহূর্তে তালিবান সরকারের যে ক্যাবিনেট সভা তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে ইউ এন দ্বারা ঘোষিত মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট একজন মন্ত্রী! ভাবা যায়? 
 সরকার তৈরি করতে গেলে যে গঠনগত  উদারশীলতার প্র‍য়োজন তালেবানরা  কোনওদিনও সেই মনোভাব নিয়ে রাজ্য যেমন চালাতে পারবে না, নিজেদের  বদলাতেও পারবে না, তেমনি আবার জোর করে দীর্ঘদিন আফগানদের প্রতিক্রিয়াশীল পতাকার নিচে রাখতেও পারবে না। এখন অপেক্ষার প্রহর গোনা  ছাড়া আফগানদের  কাছে আর কোনো দ্বিতীয় দরজা  খোলা নেই।  বিশ্বের কাছে সমস্যা একটাই,  তালেবানদের এই প্রত্যাবর্তন, অবাধ উত্থান, মাত্র পঁচাশি হাজার তালিবান ভার্সাস  সাড়ে তিনলাখ আফগান সৈন্যর সংঘর্ষে তালিবানদের জয়,  মধ্য এশিয়া,  দক্ষিন এশিয়ার সন্ত্রাসবাদিদের অক্সিজেন জুগিয়েছে, আলকায়দা, ইসলামিক স্টেট এবং তালিবান এদের উদেশ্য প্রায় এক। বিশেষজ্ঞদের মতে মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে আবার জিহাদী মতবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার পূর্ণ সুযোগ আছে। বিশ্বের কাছে এটি অচিরেই বৃহত্তর সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সূত্র, বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া, রিসার্চ ওয়ার্ক  ইন্সট্রাগ্রাম ব্লগ টুইটার, বিবিসি আলজাজিরা  নিউজ  ইউনিসেফ আফগানিস্তান , ইত্যাদি ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>