| 27 এপ্রিল 2024
Categories
প্রবন্ধ সাহিত্য

রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’ ও বুদ্ধদেব বসু

আনুমানিক পঠনকাল: 9 মিনিট

লীনা দিলরুবা

 

এসো, ভুলে যাও তোমার সব ভাবনা, তোমার টাকার ভাবনা,
স্বাস্থ্যের ভাবনা
এর পর কী হবে, এর পর,
ফেলে দাও ভবিষ্যতের ভয়, আর অতীতের জন্য মনস্তাপ।
আজ পৃথিবী মুছে গেছে, তোমার সব অভ্যস্ত নির্ভর
ভাঙলো একে-একে;– রইলো হিম নিঃসঙ্গতা, আর অন্ধকার
নিস্তাপ
রাত্রি;–এসো, প্রস্তুত হও। 
(শীতরাত্রি/বুদ্ধদেব বুস)

‘শীতরাত্রি’তে কবিতায় নিঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্ন বুদ্ধদেব বসু সবকিছু থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে রাত্রির জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এই প্রস্তুতি ছিল লম্বা সময়ের। কালের যাত্রার সঙ্গে নিজের প্রভাবকে মুখ্য করে তুলেছিলেন ক্রমাগত। অধিরোহণ করেছিলেন সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। তাঁর জীবনটা এক অর্থে নিঃসঙ্গই ছিল। আকৈশোরের একাকীত্ব থেকে পরিত্রাণ মিলেছিল বইয়ের কালো অক্ষরে। একরকম জেনে-বুঝে যেন বেছে নিয়েছিলেন সাহিত্যের অনিশ্চিত ভুবন। ‘আমার ছেলেবেলা’য় তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভাগ্যাহত জন্মমুহূর্তের কথা। বুদ্ধদেব বসুর মা গত হয়েছিলেন তাঁর জন্মের পর-পরই। পিতা তখন থেকেই নিরুদ্দেশ। ছোটবেলা থেকেই দাদা-দাদির কাছে মানুষ। দাদীকে ডেকেছেন মা। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নোয়াখালিতে তের বছর কাটিয়ে ঢাকায় এসে ওয়ারিতে আবাস গড়েছিল তাঁর পরিবার। পরম যত্নে বেড়ে উঠেছিলেন যেই দাদুর কাছে; তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে, দাদুর ভাইয়ের কাছে ঠাঁই মিলেছিল তাঁর। ঢাকায় এসে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন একেবারে ক্লাশ নাইনে। এই তো বুদ্ধদেব বসুর অতীত। সুতোর ওপর জীবন। কলকাতায় থিতু হওয়া। বিয়ে। সংসার…।

বিয়ের পর রসা রোডের সেই শ্রী-হীন বাড়ি, যেখানে মধ্যরাতে শববহনকারীদের হরিধ্বনি শোনা যেত, এখান থেকে দুটো বাড়ি হয়ে ১৯৩৭ সালে বুদ্ধদেবের পরিবার উঠে এলেন বিখ্যাত দু-শো দুই-তে। বাড়ি খোঁজার আগে প্রতিভা বসুর বরাতে জানা যায়–

‘যে বাড়ির ঠিকানা কোনো লেন হবে সে বাড়িতে বুদ্ধদেব থাকবেন না। বাড়ির ঠিকানা হওয়া চাই রোড। বিবাহের পূর্বে ছিলেন রমেশ মিত্র রোডে, বিবাহের পর রসা রোড, যোগেশ মিত্র রোড, গিরিশ মুখার্জি রোড। অতএব সেই রোড না হয়ে লেন হবে আর গলি ঘুপচি হবে, সে সব চলবে না।’

লেন না, গলি ঘুপচি না ; শহরের রমণী চ্যাটার্জী রোডের উল্টোদিকের রাস্তায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউর ২০২ নম্বরের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি হয়ে গেল পরের ঠিকানা। এই বাড়িতেই পরিবারটি কাটিয়ে দিয়েছিলেন ঊনত্রিশ বছর। ২০২ নিয়ে ‘আমার যৌবন’-এ বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন–

‘ক্রমশ-প্রকাশিত নানান অসুবিধা ও মালিন্য সত্ত্বেও–ফ্ল্যাটটি যেন গ্রথিত হ’য়ে গেছে আমাদের জীবনের মধ্যে; সেই আমাদের কবিতাভবন, দু-শো দুই, টু-ও-টু, যা ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে আমি জেগে উঠেছিলাম অনেকদিন। আর সেখানেই–অনেক সুখ ও দুঃখে, সংযোগে ও বিয়োগে, সম্প্রসারণে ও সংকোচনে, অনেক বৃক্ষ সৌন্দর্য ও বন্ধুতার মৃত্যু পেরিয়ে, অনেক আলো-অন্ধকারে ঘুরে- ঘুরে, অনেক আরম্ভ ও অবসান অতিক্রম ক’রে– একে-একে আমাদের উনত্রিশ বছর কেটে গেলো– প্রায় একটি জীবৎকাল, কিন্তু আজ মনে হয় একটি মুহূর্তের বেশি নয়’।
‘জীবনের জলছবি’তে প্রতিভা বসুর বর্ণনায় সেই বাড়িটি–
‘মস্ত বাথরুম, বাথটাব আছে, বেসিন আছে, ঝর্না আছে। অবশ্য বাড়িও ভালো। বিরাট বিরাট দুটো পাশাপাশি ঘর, এক একটি ঘরের সাইজ আঠারো আর বাইশ, সামনে তিনদিকে দেওয়াল ও একদিকে চিকওলা চৌকো রীতিমতো ভালো সাইজের ঘর, রান্নাঘরে চিমনিওলা উনুন, ধোঁয়ার ব্যাপার নেই, পাশেই আর একটি ঘরে বাসন মাজার বেসিন সহ স্টোররুম’।
ভাড়া বাড়িটি একটি নামও পেয়েছিল। ‘কবিতাভবন।’ ‘কবিতা’ পত্রিকার নতুন ঠিকানা– কবিতাভবন, রাসবিহারী এভিনিউ, বালিগঞ্জ, কলিকাতা।

দোতলায় ছিল তাঁদের আবাস। তিনতলায় বসবাস করতেন কবি অজিত দত্তের পরিবার । দুই পরিবার এবং তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নিবিড় বন্ধুত্ব। সবার কাছেই বাড়িটি যেন হয়ে উঠেছিল স্বর্গোদ্যান। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন স্বামী-স্ত্রী। বুদ্ধদেবের পছন্দ ছিল চার্লি চ্যাপলিন। চ্যাপলিন বুদ্ধদেবকে জয় করেছিলেন তাঁর বেদনামেশানো কৌতুক দিয়ে। গানের ক্ষেত্রে যেমন রবীন্দ্রনাথ। জাতি ধর্ম বর্ণ বিচার তাঁর ছিল না। এই বিষয়টি তিনি তাঁর সন্তানদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে আর এক ধরনের জাতিভেদ তিনি মানতেন। পড়াশোনা, সাহিত্য-শিল্প ইত্যাদিতে যাঁদের আগ্রহ নেই তাদের তিনি এড়িয়ে চলতেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল অনেকটা ধর্মের মত।
‘কবিতাভবনে’র আড্ডা বুদ্ধদেব বসুর জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। তরুণ থেকে মধ্যবয়সী, কাছের, এমনকি দূরের সাহিত্য অন্ত-প্রাণ মানুষরা এখানে যুক্তি-তর্কে কাটিয়ে দিয়েছিলেন বহু সন্ধ্যা।
‘আমাদের কবিতাভবন’ লেখায় বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন– ‘কবিতাভবনে আড্ডা চলে বিশুদ্ধ শৈলীতে, আয়োজনহীন, স্বতঃস্ফূর্ত; সন্ধে থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা, অতিথিরা আসা-যাওয়া করেন যেমন খুশি, সপ্তাহে প্রতিদিন, বারো মাস, প্রায় একটা সন্ধ্যাও ফাঁকা রাখা যায় না।’
কবি জ্যোতির্ময় দত্ত প্রথম থেকেই ২০২-এর আড্ডার অতিথিদের একজন ছিলেন। পরবর্তীতে বুদ্ধদেব বসুর জ্যেষ্ঠ কন্যা মীনাক্ষীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শ্বশুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত। গল্প করতে করতে কোনো কোনো দিন রাত দুটো বেজে যেত, মীনাক্ষী হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছেন, কিন্তু আড্ডা চলছে। প্রতিভা বসু শোবার ঘর থেকে বলতেন, ‘জ্যোতি এবার বাড়ি যাও’। মীনাক্ষীও গিয়ে তাড়া দিলে একদিন বুদ্ধদেব বসু জ্যোতির্ময় দত্তকে বলেছিলেন, Jyoti, your wife is becoming cantankerous. নিজের আত্মজীবনীতে (আমার নাই বা হল পারে যাওয়া) জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছিলেন, পিতা ভোলানাথ দত্ত তাঁর দেহ গড়ে দিয়েছেন, কিন্তু বুদ্ধদেব বসু ছিল তাঁর আত্মার জনক। তিনি লিখেছেন, তাঁর চৈতন্যময় সত্তার যাবতীয় অর্জন ‘কবিতাভবন’-এর দান। জ্যোতির্ময় দত্তের জীবনের আশ্চর্য সমাপতন, মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে দুই পিতা, ভোলানাথ দত্ত এবং বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু, ১৯৭৪ সালে।
একবারই ‘কবিতাভবনের’ আড্ডায় এসেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কবিতা পাঠের আসর ছিল সেদিন। তিনি হাজির হয়েই জানান দিলেন তাঁর দাঁতে ব্যথা। অনেক সাধ্য-সাধনা করেও তাঁকে দিয়ে কবিতা পড়ানো গেল না। শেষে দাঁতে ব্যথা, আমার বড্ড দাঁতে ব্যথা বলতে বলতে গালে হাত চেপে চিরাচরিত শশক পদক্ষেপে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে সাহিত্যিক মহলের নামকরাদের আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে ‘কবিতাভবনে’ আসার পর প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়। প্রেমেন্দ্র মিত্র ফিল্মে নাম লিখিয়েছেন বলে ২০২ তে সময় দিতে পারছিলেন না, এমনটাই সবাই জানত। প্রকৃত সত্য অবশ্য ভিন্ন। তিনি ততদিনে ভিড়েছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছে। সঞ্জয়ের সঙ্গে বুদ্ধদেবের সম্পর্ক শীতল হয়ে যায় কবিতা সূত্রেই। তাঁর লেখা একটি কবিতা দ্বিতীয় সংখ্যা ‘কবিতা’ পত্রিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব বসু, এ-অভিমানে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্জয় ভট্টাচার্য ‘কবিতা’য় লেখেন নি। ঠিক বারো বছর পর সঞ্জয় ভট্টাচার্য যে কবিতাটি দিয়ে ‘কবিতা’ পত্রিকায় ফিরে আসেন তার নাম ‘বিভাবরী’। বুদ্ধদেব বসু থেকে বিচ্ছিন্ন, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্য যুগলে সম্পাদনা করছেন ‘নিরুক্ত’ পত্রিকা। পত্রিকাটিতে ‘কবিতা’ পত্রিকার নানান লেখা নিয়ে সমালোচনা থাকত। বুদ্ধদেব এসব পাল্টাপাল্টিতে যেতেন না। ‘নিরুক্ত’র সমালোচনায় নিজে মৌন এবং নিরুত্তর থাকতেন।
২০২-তে বসতি গড়ার আগে তারা গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের নাটকের দল। এর নাম ছিল ‘লিটল থিয়েটার’। ছোটবেলায় নোয়াখালিতে বুদ্ধদেবের নাটকের দল, আর প্রতিভার ঢাকার নাটকের দল করার অভিজ্ঞতার কারণে এটা অনুমেয় ছিল, যুগলে একটি দল করবেন। দলটি থেকে তাঁরা প্রথম যে নাটকটি করেছিলেন তার নাম ছিল ‘অনুরাধা’। এর রচয়িতা বুদ্ধদেব বসু, নাটকটি পয়ারে রচিত হয়েছিল। এতে অভিনয় করছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, প্রতিভা বসু, অনিল ভট্টাচার্য। নিজেদের বাড়ির ভেতরের উঠোনে মঞ্চায়িত হয়েছিল ‘অনুরাধা’। নাটক দেখতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রমথ চৌধুরী, ইন্দিরা দেবী প্রমূখ। ‘কবিতাভবনে’ এসে ১৯৪৪ সালে বুদ্ধদেবের ‘কালো হাওয়া’ উপন্যাস নিয়ে ‘মায়ামালঞ্চ’ নাটকের পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হয়েছিল।
কুশীলব জোগাড়ে শ্রম ব্যয় হলেও শেষে নাটকটি ভালোভাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘শ্রীরঙ্গম’ মঞ্চে। খুবই সাড়া পড়ে গিয়েছিল নাটকটিতে। এতে অভিনয় করেছিলেন কবি মণীন্দ্র রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী তপতী মুখোপাধ্যায়।
‘কবিতাভবন’কে নিয়ে কবিকন্যা মীনাক্ষী দত্তের এক লাইনের উক্তিটিই হয়ত যথার্থ– ‘হাসি, আনন্দ, গান, নাটক, আড্ডা, বন্ধুতা দিয়ে ভরা ছিল আমাদের কবিতাভবন।’

লেখালেখি, পত্রিকা-সম্পাদনা, কবিতাভবন প্রকাশনী থেকে গ্রন্থপ্রকাশ, কবিতাভবনের আড্ডা, রিপন কলেজে অধ্যাপনার চাকরি : সময়গুলি যেন চলে যাচ্ছিল দ্রুত পদক্ষেপে। সৃষ্টির প্রায় উত্তুঙ্গ অবস্থা। লিখছিলেন অসাধারণ সব কবিতা। আগের লেখাসহ তখনকার কবিতা নিয়ে ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘কঙ্কাবতী’ কাব্যগ্রন্থ। সেখানে স্থান পেল দুটি অসাধারণ কবিতা–

এসেছি নিজের ঘরে; বৃষ্টিও এসেছে
হাওয়ার চিৎকার যায় শোনা;
যার হাত, কাল তার মুখ দেখি যদি,
আমি চিনিবো না।
বিছানায় শুয়ে আছি, ঘুম হারায়েছে,
না জানি এখন কত রাত;
–কখনো সে-হাত যদি ছুঁই, জানিবো না,
এ-ই সেই হাত।
 (একখানা হাত)

আজ মাঝরাতে ঠাণ্ডা বাতাস ছুটবে যখন,
ঘুম ফেলে দিয়ে তুমি চ’লে এসো এখানে;– কেমন?
মুখোমুখি ব’সে কবিতা পড়বো আমরা দু-জন।
 (কবিতা)

বুদ্ধদেব বসু তখন কবিতার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস লিখছেন। প্রবন্ধ লিখছেন নানা বিষয়ে। মূলত ‘কবিতা’ পত্রিকাতেই ছাপা হচ্ছিল এই প্রবন্ধগুলি। রবীন্দ্রনাথের একটি একটি বই বের হচ্ছে, সেটি নিয়ে লিখছেন। খণ্ডে খণ্ডে রবীন্দ্ররচনাবলী বেরুচ্ছে, বিশ্লেষণ করে সবকটির জন্য আলাদা রচনা ছাপা হচ্ছে ‘কবিতা’র সংখ্যাগুলোতে। বই লিখছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে।

‘কবিতা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যার প্রথম লেখাটি ছিল ‘বীথিকা’ শিরোনামে। ‘রবীন্দ্রনাথ যেন রূপকথার কবি, তাঁর চিরন্তন যৌবন। জ্বলন্ত যৌবনের গান ‘বলাকা’ যে-বয়সের রচনা, বাঙালি ভদ্রলোকের পক্ষে সেটাই বার্ধ্বক্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজেকে কখনোই বৃদ্ধ বলে’ ভাবেননি–সে পর্যন্ত। সঙ্গে-সঙ্গে আমরাও কখনো তাঁকে বৃদ্ধ বলে’ ভাবতে শিখিনি’।

তাঁর ‘কবি রবীন্দ্রনাথ’ বইটিতে রবীন্দ্রবিচার শেষ হয় ‘গীতাঞ্জলী’ পর্ব পর্যন্ত। গীতাঞ্জলী বিষয়ে তাঁর মুগ্ধতার একটা কারণ এর রচনাগত ‘সংযম’। ‘বলাকা’ ‘পূরবী’তে তা কেবল ছিল ‘কালোচ্ছ্বাস’।


‘কবিতা’ পত্রিকায় ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’ নিয়ে বুদ্ধদেব বসু বেশ সমালোচনামূলক কথাবার্তা বলেন। প্রেমের কবিতা বর্জিত, গদ্য কবিতারহিত পাঠ্যবইগন্ধী সেই সংকলনটি বুদ্ধদেবের ভাল লাগে নি। শুধু তিনি নন, পাঠকরাও সেই সংকলনকে সাদরে গ্রহণ করে নি। সংকলনটিকে কবিতা নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথ সবার প্রতি সুবিচার প্রদর্শন করেননি– সে প্রসঙ্গে নিজের যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু নজরুল, যতীন্দ্র সেনগুপ্ত, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সহ অনেকের প্রতিনিধিত্বমূলক কবিতাকে সংকলনে অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মতামত জানান। বিষ্ণু দের মত কবির কবিতাকে বাদ দিয়ে বনফুল, সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়, সুকোমল বসু, হাসিরাশি দেবী, মৈত্রেয়ী দেবী প্রভৃতির কবিতাকে স্থান দেয়া তাঁর কাছে ন্যায্য মনে হয় নি। জীবনানন্দের যে কবিতাটি সংকলনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল (মৃত্যুর আগে) সেটিকে কেটে-ছেঁটে প্রকাশ করা এবং এর অঙ্গহানিতে কবিতাটির কতটা ক্ষতি হয়েছে, এসব নিয়েও সমালোচনা করলেন বুদ্ধদেব বসু। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’ পর্যবেক্ষণ করে আধুনিক কবিতার একটি দর্শনপ্রতিম সংকলন প্রকাশ করার ইচ্ছা তাঁর মনে জেগে ওঠে। এরই পরম্পরায় ১৯৪০ সালে প্রকাশিত ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’। আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল সংকলনটি। সম্পাদকদের দুজনা’র একজনও কবি ছিলেন না। এর জন্য মাসুল দিতে হয়। সমবায় পদ্ধতি অনুসরণ করে বুদ্ধদেবের চাওয়া পাওয়াকে কোনঠাসা করে যা ছাপা হল তাতে বুদ্ধদেবের পুরো সায় ছিল না। জীবনানন্দের আরো উন্নত কবিতাগুলো স্থান দিতে না পারার বেদনা তাঁকে আহত করল। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বইতে দুই সম্পাদক পরষ্পরবিরোধী দুটি আলাদা সম্পাদকীয় লিখলেন। এই বই থেকে শিক্ষা নিলেন, যা করার একা করতে হবে। সমবায়ে নয়।


আরো পড়ুন: ইরাবতী এইদিনে: বুদ্ধদেব বসুর প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ

 

ততদিনে বুদ্ধদেব বসুর নামের পাশে রবীন্দ্রবিরোধী বিশেষণ যুক্ত হয়ে গিয়েছে। ১৯৩৮ সালেই ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘের’ মুখপত্র ‘প্রগতি’ পত্রিকায় আলোচনা সূত্রে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, The age that produced Rabindranath is over. ভাগ্য বিড়ম্বিত। অমৃতবাজার পত্রিকা তাঁর কথাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে লিখল, The age of Rabindranath is over। ‘রবীন্দ্রবিরোধী’ বুদ্ধদেবকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন ‘সময়হারা’ নামে একটি কবিতা।
‘খবর এল সময় আমার গেছে/আমার গড়া পুতুল যারা বেচে’।
‘শনিবারের চিঠি’ও তীব্র বিদ্রুপ বর্ষণ করল। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের ‘পূর্বাশা’ বুদ্ধদেবের লেখাটিকে, ‘সংস্করাচ্ছন্ন একজন পেটি বুর্জোয়া লেখকের বুর্জোয়া জীবনের স্বপ্ন ছাড়া আার কিছু নয়’ বলে মন্তব্য করল।

কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হল, বুদ্ধদেব বসুর যখন কিশোর বয়স, তখন থেকেই তাঁর বালিশের তলায় রবীন্দ্রনাথের বই থাকত। অন্যদিকে, বুদ্ধদেব বসুর লেখার প্রতিও তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমীহ ছিল। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত বুদ্ধদেবের উপন্যাস– ‘বাসরঘর’ পড়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চিঠিতে লিখছিলেন, ‘তোমার গল্প না বলা গল্পটিকে তুমি যে এমন করে দাঁড় করাতে পেরেছ, সেটা তোমার কবিত্বের প্রভাব’। অগ্রজের এমন প্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবে বুদ্ধদেব বসু ভীষণ উৎসাহিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে উত্তরে লিখলেন, ‘আমাদের এখানে অধিকাংশ লেখকের ভাগ্যেই জীবদ্দশায় সত্যিকারের সমাদর জোটে না। এখানে মানুষ প্রশংসিত হয় ভুল কারণে’।
তাঁর নামের সঙ্গে রবীন্দ্রবিরোধী বিশেষণ যুক্ত হবার ঘটনা ঘটলেও তার কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালেন না বুদ্ধদেব বসু। অপেক্ষা করছিলেন বড় কোনো উপলক্ষের।

সিলেটের করিমগঞ্জ তৈরি করল সেটি। করিমগঞ্জে একটি সাহিত্য-সভায় অংশ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। রবীন্দ্রবিরোধী চিহ্ন মুছে ফেলতে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ পড়েন সেখানে। কলকাতায় ফিরে প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেই প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘আধুনিক বাংলা ভাষা রবীন্দ্রনাথই সৃষ্টি করেছেন’। অনেক পরে এ প্রসঙ্গে সেই সময়ের অনুভূতি নিয়ে আত্মজীবনীতে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, ‘তিনি কী জানতেন না, ঘোষণাকারীর (বুদ্ধদেবের) এক দণ্ড রবীন্দ্রনাথ বিনা চলে না’?
বস্তুত, ‘সঙ্গ নিঃসঙ্গতা রবীন্দ্রনাথ’, ‘কবি রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থগুলো আমাদের সচেতন করে, রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে বুদ্ধদেব বসু কতোটা আন্তরিক ছিলেন। একের পর এক লেখায় রবীন্দ্রনাথের রচনার বিশ্লেষণ করেছেন বুদ্ধদেব বসু। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গানে তত্ত্ব আছে, চিত্র আছে অসংখ্য, আছে প্রেম, দেশপ্রেম কি ভক্তির মতো আবেগের জগতে আমাদের পৌঁছিয়ে দেবার নানান রাস্তাই তিনি আবিষ্কার করেছেন, তার মধ্যে যে-পথ সব চেয়ে সরল ও ঋজু তা প্রকৃতি কিংবা ঋতুচক্র। ব্রহ্মসংগীত যেমন সব চাইতে অ-রাবীন্দ্রিক, তেমনি ঋতুর গানগুলো রাবীন্দ্রিক সৌরভে সব চেয়ে ভরপুর, সেখানে প্রতিটি কথার চরম ব্যঞ্জনা নিষ্কাশিত। এই গানগুলো আমাদের সমস্ত জীবন অধিকার ক’রে আছে; প্রতিদিনের জীবনে কতবার যে নতুন ক’রে নানা গানের নানা চরণ মনে পড়ে, নতুন ক’রে তাদের উপলব্ধি করি, তার কি অন্ত আছে?’
‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৪০-৪১ সালে রবীন্দ্র-রচনাবলীর প্রথম খণ্ড নিয়ে বুদ্ধদেব বসুর অকৃপণ দীর্ঘ সমালোচনার কথাও মনে পড়বে। বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন– ‘তিনি আমাদের আদি ও আধুনিকতম কবি, তিনিই প্রথম, তিনিই শ্রেষ্ঠ সম্পদ’।
এভাবে রবীন্দ্র রচনাবলীর একটি-একটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে, ‘কবিতা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তাঁর দীর্ঘ প্রবন্ধ। তৃতীয় খণ্ডের ‘চোখের বালি’র সমালোচনা করলেন তীব্রভাবে। এর শেষটায় বিনোদিনীর তুচ্ছ পরিণাম মিথ্যে এবং ফাঁকি এটি নিয়ে বললেন, যে সাহস নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসটি শুরু করেছিলেন, শেষ মুহূর্তে তা ত্যাগ করেছিলেন, তাই হিন্দু বিধবার বিবাহ করানোর সাহস তার হয়নি। রবীন্দ্রনাথ অনুজের এ সমালোচনা গ্রহণ করেছিলেন। চিঠি লিখে জানিয়েছেন, মাসিকপত্রের সস্তাদামের মনোরঞ্জনী প্রলেপ ব্যবহারের ঝোঁক থেকে অনেক সময় একটা ঝোঁক চলে আসে। তাই এমন বিপত্তি ঘটে : যেটি ‘চোখের বালি’তে বিনোদিনীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল।

এর অব্যবহিত পরেই সপরিবারে বুদ্ধদেব শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গেলেন। থাকার কথা ছিল দুইদিন। থেকে এলেন তেরদিন। রবীন্দ্রনাথ খুবই যত্ন করেছিলেন অতিথিদের। বুদ্ধদেব-প্রতিভার কনিষ্ঠ কন্যাটির তখন দেড় বছর বয়স। নাম ঠিক হয়নি। শান্তিনিকেতনে একদিন এক মধুর আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ জানতে চান, হাসিখুশি বাচ্চাটির নাম কী? বাচ্চার বাবা-মা আবদার করলেন কবিই যেন শিশুর জন্য একটি নাম বেছে দেন। ‘চন্দনা’ বা ‘কাকলি’ যে কোনোটি রাখা যেতে পারে, কবি জানালেন, তবে যেহেতু বাচ্চাটি কলকল করে কথা বলে তাই ‘কাকলি’ যথার্থ। বাচ্চার নাম কাকলি রাখা হল। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর ‘কাকলি’ বদলে হয়ে গেল ‘দময়ন্তী’। বুদ্ধদেবের কাকলি নামটি পছন্দ হচ্ছিল না। প্রসঙ্গত, তাঁদের জ্যেষ্ঠ কন্যা মীনাক্ষীর নামও রবীন্দ্রনাথ রেখেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে কোনোরকম চাপিয়ে দেয়া মনোভাব অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক। যান্ত্রিক আনুগত্যকে পরিহার করে কীভাবে নতুনতর শৈলীতে লেখার নীতিমালা তিনি অনুসরণ করেছিলেন, বুদ্ধদেব বসু বারবার তাঁর স্নিগ্ধ মাধুর্যপূর্ণ ভাষায় সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

১৩৩৮ এর আষাঢ় সংখ্যা ‘কবিতা’য় বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘজীবন আমাদের সৌভাগ্য, পৃথিবীর সৌভাগ্য। কথাটা ফাঁকা স্তুতি নয়। এর তাৎপর্য এই যে তিনি জীবনের প্রতিদিন বেড়েছেন, এখনো বাড়ছেন। পঞ্চাশ বছরে তাঁর জীবন শেষ হলে তিনি এত বড় হতেন না, ষাট সত্তরে হ’লেও না। গত দশ বছরেই কি তিনি কম নতুন উপঢৌকন দিয়েছেন তাঁর দেশকে, এই জগৎকে। যেমন বিচিত্র তেমনি মহামূল্য সে-সব উপহার। এখন তাঁর জীর্ণ, কিন্তু মন অক্লান্ত, বুদ্ধি বিশ্রামবিমুখ। গান্ধিজির কথা যদি সফল হয়, যদি তিনি শতজীবী হন তা’হলে আরো অনেক জিনিস তাঁর কাছ থেকে পাবো তাতে সন্দেহ নেই। তা-ই যেন হয়’।
শতজীবী হলেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আশি বছর বয়সে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটলো। দিনটি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। তাঁর মৃত্যুদিনের কথা ‘তিথিডোর’ উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন বুদ্ধদেব বসু। উপন্যাসের যুগল স্বাতী আর সত্যেন উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে ঘুরতে পরষ্পরের মনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল সেদিন।
তিথিডোরে লেখা হল–
শুকনো মুখ, উশকো চুল, চাপা ঠোঁট আর না-কামানো গাল–এতদিনের মধ্যে কখনো স্বাতী দ্যাখেনি সত্যেন রায়ের এ-রকম চেহারা। আর কথা যখন বললেন, আওয়াজটাও অন্যরকম শোনালোঃ
‘শোনোনি এখনো?’
‘কী?’
সত্যেন চোখ তুললো স্বাতীর মুখে, চোখ নামালো মেঝেতে বললো, ‘রবীন্দ্রনাথ’ আর বলতে পারলো না।
সঙ্গে-সঙ্গে স্বাতীর মাথাও নিচু হ’লো, আর হাত দুটি এক হ’লো বুকের কাছে। খানিক আগে যখন বড়দির চিঠি পড়ছিলো দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে, ভঙ্গিটা সেই-রকমই হ’লো অনেকটা; আর তার ঘাড়ের, কাঁধের, পিঠের গড়নে–যেখানে তখন সুখের সুষমা প্রায় কথা বলছিলো–সেই সব রেখাই দুঃখ আঁকলো সেখানে, স্তব্ধ আনতি, দুঃখের আরো গভীর সুষমা।’

 

 

গ্রন্থপঞ্জি:
বুদ্ধদেব বসু, আত্মজৈবনিক, বাতিঘর, এপ্রিল ২০১৮।
প্রতিভা বসু, জীবনের জলছবি, আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, বৈশাখ-১৪০০।
মীনাক্ষী দত্ত, স্মৃতিতে চিঠিতে বুদ্ধদেব বসু ও তাঁর সারস্বত গোষ্ঠী, প্রতিভাস, এপ্রিল ২০১১।
জ্যোতির্ময় দত্ত, আমার নাই বা হল পারে যাওয়া, অন্বয়, ডিসেম্বর ২০১৭।
স্মরণগ্রন্থ: স্বাগত সংলাপ: বুদ্ধদেব বসুকে নিবেদিত, দে’জ, নভেম্বর, ২০০৮।
সমীর সেনগুপ্ত বুদ্ধদেব বসুর জীবন, প্রথম প্রতিভাস সংস্করণ, জানুয়ারি ২০১৯।
সমীর সেনগুপ্ত অমল আমার সময়?, প্রথম প্রতিভাস সংস্করণ, জানুয়ারি ২০২০।
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত কল্লোলযুগ, ডি এম লাইব্রেরি, আশি^ন ১৩৩৭।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আমার জীবনানন্দ আবিষ্কার এবং অন্যান্য, আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, জানুয়ারি ১৯৯৯।
সুদক্ষিণা ঘোষ, সঙ্গ নিঃসঙ্গতা : বুদ্ধদেব বসু, দে’জ পাবলিশিং, এপ্রিল ২০১৩।
সম্পাদনা: দময়ন্তী বসু সিং, বুদ্ধদেব বসুর অগ্রন্থিত গদ্য ‘কবিতা’ থেকে: দ্বিতীয় খণ্ড রবীন্দ্রনাথ, বিকল্প, আগস্ট ২০১১

কৃতজ্ঞতা: বিডিআর্টস

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত