রণদেব দাশগুপ্তের কবিতাগুচ্ছ

Reading Time: 2 minutes

২১ মে কবি রণদেব দাশগুপ্তের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


সান্ধ্য সনেট – ২

 

যা কিছু খোঁজার ছিল সে কি অনাহূত
এখানে এসেছে আজ ? এই ঋতুগানে
মিশিয়ে প্রভূত ছায়া সেজে গূঢ় চোখে
আমাকে দেখেছে , তাও জানায়নি কিছু ?
প্রবাসী আমিও এই জনাকীর্ণ বনে ;
ঘুরেফিরে দেখে আসি মেলা ও ম্যাজিক
কেমন আলেয়া আনে উঠোনে, মাটিতে
কেমন ধোঁয়ার সাথে মোমবাতি কাঁদে ।

এসব আসলে শুধু মায়া মায়া আলো _
যার কোনো ঘর নেই , মনের ভিতর
উড়ে যায় পাখিদল , যায় মৃদু ধ্বনি
ঘুঙুরে যেমন বাজে ব্যথা ও প্রণতি ।
যা কিছু খোঁজার সে তো হারিয়েছে কবে _
এখানে আসেনা কেউ, এই মৃত সাঁঝে ।

 

.

উৎসব

 

দূর থেকে ভেসে আসছে কীর্তনের সুর। বিরহ মাথুর মিশে যাচ্ছে মরমিয়া মাটিতে , শিকড়ে। আজ খুব ভোরে নাতিদূর মসজিদের প্রভাতী আজানে ভেঙেছিল ঘুম। তখনো নিঝুম এই পাড়া , লোকালয় আধো অন্ধকার। কেন যে আমার মনে হল মানুষের ঋণ – মানুষ কখনো এসে শোধ করে যাবে। যা কিছু হারাবে , যত কিছু ভুলে যাবে পথের দুধারে – বারে বারে সেইসব না-বলা কাহিনি , আমাদেরই লিখে যেতে হবে। অলৌকিক উৎসবে যোগ দিতে গেলে – এইসব নদীগন্ধ , এইসব আঁচলের হলুদের দাগ , এইসব প্রসন্ন ক্যারল , এইসব প্রণম্য দোতারা ও বাঁশি সবকিছু নিয়ে যেতে হবে আমাদের। যে সব সাধের স্মৃতি রয়ে গেছে জমানো কৌটোয় , যেসব না-গাওয়া গান রয়ে গেছে ঘুঙুরের বয়ঃসন্ধি জুড়ে , যেসব করমচা দিন লজ্জা লজ্জা ভুরুতে উধাও – তাদেরও তো আমন্ত্রণে ডেকে নিতে হবে। ছিটকে ওঠা রক্ত আর শিউরে ওঠা চোখ , এসব নরক শেষকথা লিখবে না ঝিনুকের সাদাটে পৃষ্ঠায়। আমাদের অসহজ দায় আবার সাজিয়ে দেবে কৃষ্ণচূড়া আকাশের দিন। বিপুল রঙিন মেঘ ভেসে আসবে ভেলার মতন। অচেতন বাতাসেও নতুন বীজের ঘ্রাণ কিশোরীকে টেনে নেবে বিকালের ঘাটে। রামধনু মাঠে – এই সব ফুল তুমি নিও। অলৌকিক উৎসবে একদিন ঠিক যাব প্রিয়।

 

 

.

চলাফেরা

ভালোবাসতে বাসতে ক্লান্ত হয়ে
ঘৃণা করা অভ্যাস করতে চেয়েছিলাম

তার মধ্যেও ফুটে উঠছে
অসমাপ্ত সমস্ত বাগান

মায়াবী অভিশাপ
নীরক্ত দেবতার হাসি
স্বরবর্ণের দীর্ঘ ইতিহাস

এসব ঘৃণার কথা নয়

এসব ভালবাসার কথা নয়

প্রেমিকের ঈর্ষানীল চোখ
প্রেমিকার বাঘিনী হিংস্রতা
এ সমস্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
অজস্র কৌতুকে আমি
পৌঁছে গেছি নিভন্ত সড়কে

এখন
ঘৃণা আর ভালবাসার মাঝামাঝি
নিরপেক্ষতার অভ্যাস করছি আমি ।

 

.

উচ্চারণমালা

এখন আমি লিখছি না আর
আমায় লিখছে অন্য লোক
এখন আমি পুড়ছি শুধু _
শরীর ঘিরে হাজার জোঁক
চুষছে আমায় দুষছে আমায়
নষ্ট কলম ভ্রষ্ট দিন
একলা দ্বীপে ঘর বেঁধেছি
চোখ রেখেছি অশ্রুহীন
প্রিয়ংবদা নদীর খোঁজে
পেরিয়ে এলাম তোমার ঘর
আঁজলা ভরে জল তুলেছি
ছোবল দিল বিষের জ্বর

এখন আমি লিখছি না আর
আমায় লিখছে অন্য লোক
খরায় জ্বলছে দাহ্য কলম _
সকল শব্দ ধ্বংস হোক ।।

 

 

.

#

অস্ত্র ভাবছে আমি হুংকার
মিছিল ভাবছে ভয় দেখাচ্ছি
ধর্ম ভাবছে বুঝে নেব সব
রাজনীতি ভাবে ‘কেমন নাচছি’

আসলে সবই তো দেখানো ফুলকি
ফুলবনে মধু সবাই খুঁজছে
নরক অথবা জাহান্নামের
নাম জপ করে সবাই ধুঁকছে

চিতার আগুন কবরের মাটি
কথা তো বলে না, যদি বলে ওঠে :
ভন্ডরা শুধু কখনো মানে না _
খিদে পায় বলে আজো বীজ ফোটে ।

 

 

.

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>