| 23 অক্টোবর 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা প্রবন্ধ: জ্যোতিষী হইতে সাবধান (সচেতন) হোন । রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

কথামুখ:

আপনি এখন পড়তে চলেছেন জ্যোতিষীর মুখোশধারী কবি চার্লস বার্নস্টাইন রচিত “Twelve-Year Universal Horoscope”[1] এর কাউন্টার-হরোস্কোপ। তবে কিনা আমার বারো পয়েন্টের বিরোধিতা আপনি তখনই বুঝতে পারবেন যদি বন্ধনীর সমস্ত লেখাগুলো না পড়েন, না দেখেন, না শোনেন; অর্থাৎ অশ্বথামা হত (ইতি গজ)।  

সতর্কীকরণ:

সাবধান পাঠক! প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি চার্লস বার্নস্টাইন জ্যোতিষীর ছদ্মবেশে বারো বছরের সর্বজনীন হরোস্কোপ ​​উপস্থাপনা করছেন। বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারীর কঠিন সময়ে, আপনি যখন সরকারের ওপর বিজ্ঞানের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন, তখন সহজেই যে কোনও জ্যোতিষীর দ্বারা প্রতারিত হবার সম্ভাবনা ষোলোয়ানা! কাজে কাজেই কবি তথা জ্যোতিষীর হরস্কোপিক অঞ্চলে প্রবেশ করার আগে সাবধান(সচেতন) হোন।  

প্রথম পয়েন্ট:

জ্যোতিষী আপনাকে তাঁর বারো বছর জোড়া ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিটি বছরেই “prefer alcohol” এর পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রথমে চলুন এই জ্যোতিষীর প্রতিরূপ বার্নস্টাইনের “Be Drunken” কবিতাটি পড়ে ফেলা যাক—

সর্বদা মাতাল থাকুন। এটাই সব : একমাত্র পথ। তাই সময়ের সেই

ভয়ঙ্কর গুরুভার যা আপনাকে মাটিতে পিষে ফেলতে চায়

তাতে ভারাক্রান্ত হবেন না। রাতদিন মাতাল হতে হবে।

কিন্তু কিসে? মদে বা কবিতায় অথবা পুণ্যে যেমন আপনার অভিরুচি।

যেমনি হোক মাতাল হতেই হবে।[2]

ইহাই পরামর্শের হেতু। এটি ২০১৩ সালে বার্নস্টাইন তাঁর পুনর্গণনায়[3] অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তারপর কোভিডিক সময়ে পুরো গণৎকার হয়ে তাঁর হরোস্কোপেও মাতাল হতে বলবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী!Horoscope শব্দটির উৎস গ্রিক শব্দ hōroskoposhōra(সময়)+skopos(পর্যবেক্ষক)। কবি মাত্রই সময়ের পর্যবেক্ষক, অনুভব করেন সময়ের গুরুভার, খোঁজ করেন পরিবর্তনশীল সমাজ সময় ও মূল্যবোধকে পরীক্ষা করার বিভিন্ন সম্ভাবনা। তারই একটি বোধহয় ‘মাতাল হওয়া’!  

যেহেতু আমার সতর্কীকরণ অতিক্রম করে আপনি এখানে পর্যন্ত পৌঁছেছেন তখন আপনার চ্যালেঞ্জিং মনোভাব আমি অনুভব করতে পারছি— সমালোচনামূলক অনুসন্ধান ছাড়া কোনো ভবিষ্যদ্বাণী আপনি গ্রহণ করবেন না। আসুন তাহলে শুরু করা যাক।

ধরুন আপনি মদে মাতাল, তাহলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা মন্দগতি হবে। ফলশ্রতি নিজের প্রতি দুর্বল বিবেচনা। তখন অবশ্যই আপনি প্রচলিত প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নৈতিকতা দিয়ে যেকোনো নান্দনিক কাজের যোগ্যতাবিচার শুরু করবেন। নৈতিকতার ব্যুৎপত্তি বলে, একটি ক্রিয়া সঠিক সত্য বা নৈতিক তখনই যদি তার কোনো পূর্ব ইতিহাস থাকে। অর্থাৎ নৈতিকতা উদ্ভাবন প্রতিরোধ করে, ফলস্বরূপ পুনর্গঠনের প্রতিরোধ। নৈতিকতায় মাতাল বিবেচনাবোধ আপনাকে উদ্ভাবনের দিকে যেতে বাধা দেবে। ফলত আপনি প্রচলিত রীতিতেই আটকে থাকবেন এবং সময়ের ভয়ঙ্কর গুরুভার উড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হবেন।

ধরুন আপনি পুণ্যে মাতাল, তাহলে তা বিপরীতভাবে কার্যকর হবে। মহামারীর এই অস্বস্তিকর অবস্থায় আপনি ‘পুণ্য’ শব্দটি নিয়ে এতটাই আচ্ছন্ন যে পুণ্যের সূত্রধারী যেকোনো কবিতায় আপনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সুতরাং আপনি অবশ্যই বার্নস্টাইনের পুনর্গণনার “The Honor of Virtue” কবিতাটি পড়ে ফেলবেন—

আমি যা বলতে চেয়েছি তাই বলি

এবং আমি যা দেখেছি তাই বলেছি

কিন্তু আমি যা ভাবি তা

দেখাও হয়নি বলাও হয়নি বলে মনে হয়। (৩৪)

কবি যা দেখেন তাই বলেন, কিন্তু তিনি যা ভাবেন তা বলেন না। আপনি জানেন যে ভাবনা একটি প্রতিক্রিয়া বিশেষ, আমাদের নিজস্ব স্মৃতিজাত প্রতিস্পন্দন। আবার স্মৃতিজাত মানেই পুরোনো। তাই তো আমাদের বারীন ঘোষাল বলে গেছেন, “Kill your own memory; only then you will feel an active new quality propagating in your inner self.”[4] কিন্তু স্মৃতি পুরোনো হলে কি হবে, old is gold হল প্রচলিত প্রতিষ্ঠানের মন্ত্রগুপ্তি। তাই বার্নস্টাইন আপনাকে সেই সোনা থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে অপ্রকাশিতের দিকে প্ররোচিত(উৎসাহিত) করছেন। যা অপ্রকাশিত তা এখনও আপনার অজানা আচেনা। বার্নস্টাইন আপনাকে এই অজানার অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য প্রভাবিত(অনুপ্রাণিত) করার চেষ্টা করছেন। সাবধান, এই অন্ধকার মেটাফিজিক্যালও নয়, আবার আধ্যাত্মিকও নয়, এ হল ভাষার অন্ধকার, “Celebration—of awkwardness, flailing, disbalance, arrhyththmia, dysraphism”[5]

আপনি দেখতেই পাচ্ছেন কবির সমস্ত শব্দগুলোই চিকিৎসা শাস্ত্রের সেইসব পরিভাষা যারা কোনো না কোনো ত্রুটির সঙ্গে সম্পর্কিত। কবি নিজেই স্বীকার করছেন ““Dysraphism” is a word used by specialists in congenital disease to mean a dysfunctional fusion of embryonic parts—a birth defect”. বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি বার্নস্টাইনের The Sophist কাব্যগ্রন্থের “dysraphism” কবিতার পাদটীকাটি পড়তে পারেন। তবে এগোবার আগে আমার কূটকচাল পড়ে নিন প্লিজ,

কূটকচাল:

সাবধান, কবিতাটি পড়তে গিয়ে বার্নস্টাইনের পোয়েটিক গ্র্যাভিটি আপনার উপর ইনফ্লুয়েঞ্জার কার্যকারণ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ তাঁর প্রতিরূপ জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন─“As Saturn and Pluto come into alignment, prepare for irrepressible nostalgia”. মধ্যযুগের ল্যাটিন শব্দের নস্টালজিয়ায় আপনার হাতে আসবে influentia ─ যা হল influence ও influenza দুটো শব্দেরই উৎস; সে যুগে বিশ্বাস করা হোত ইনফ্লুয়েঞ্জাজাত মহামারী আকাশের তারাদের অস্বাভাবিক কনজাংশনের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। একটু ভাবুন।

ধরুন আপনি কবিতায় মাতাল হলেন, তাহলেই গেলেন আর কি! কারণ এই কবি তথা জ্যোতিষী ফিজিক্স দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। কিন্তু তা সাধারণ ফিজিক্স নয়, মেটাফিজিক্সও নয়, ’প্যাটাফিজিক্স। বাস্তবতার অদ্ভুত অনুসন্ধানে ব্যবহার করেন অ্যালফ্রেড জ্যারির ’প্যাটাফিজিক্স, যা হল অস্বচ্ছ সমস্যার অবাঙ্মনসগোচর সমাধানের বিজ্ঞান(PP,১৭১); এবং এই ’প্যাটাফিজিক্স এর ওপর ভিত্তি করেই তাঁর “Pataquerical Imagination”[6], যা পাঠকের চেতনার গতিময় ডার্ক এনার্জিকে সক্রিয় করে। আবার এই ’প্যাটাফিজিক্সই তাঁর Bent Studies এর ভিত্তিস্বরূপ।

এই মুহূর্তে আপনাকে যেটা বলতে চাই তা হল ডার্ক এনার্জি এখনও বিজ্ঞানে অধরা  এবং pataquerical শব্দটি তিনটি ‘q’ এর সঙ্গে সম্পর্কিত: queered, quixotic, querulous — সবগুলোই আপনার সোজাসাপটা অর্থাৎ bent নয় এমন চিন্তাধারার বিরোধী। এটাই তো স্বাভাবিক যে তিনি নিজের queer(নতুন, অদ্ভুত, উদ্ভট, বন্য) কাব্যতত্ত্বের দর হাঁকানোর জন্য আপনাকে প্রলোভিত(অনুপ্রাণিত) করবেন। তাঁর এই কাব্যতত্ত্ব নিষ্ক্রিয় গলাদ্ধকরণের পরিবর্তে পাঠককে ‘interenact’ করার আহ্বান জানায়, যখন ভোক্তা পাঠক নিজেই পুনরুৎপাদন করবেন, জন্ম হবে সম্ভাবনার। কারণ তিনি মনে করেন, কল্পনার বন্যতা শুধুমাত্র স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি নয়, বাস্তবতারও গ্যারান্টি।

কূটকচাল:

interenact পাঠকের জীবনকে দুর্বিষহ(আনন্দদায়ক) করার জন্য বার্নস্টাইন আবিষ্কৃত নিওলজিক্যাল শব্দ, কেবলমাত্র interact নয়, inter-enact, অর্থাৎ কার্যকরী করার আহ্বান। একটু ভাবুন।

তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আপনার হাতে নেট ফলাফল যা এল─ অজানা ও অচিন, অদ্ভুত অনুসন্ধান, কল্পনা, অস্বচ্ছ সমস্যা এবং অবাঙ্মনসগোচর সমাধান। এই সবগুলোরই বাজারমূল্য যে  নেতিবাচক, তাতে আমি বা আপনি দ্বিমত নই! জীবনের সমস্ত কিছুই আমরা বাজারমূল্যেই মূল্যায়ন করি। বার্নস্টাইন আপনাকে পটানোর (অনুপ্রাণিত করার) চেষ্টা করছেন এই বলে যে, সমস্ত নেতিবাচকেরই ইতিবাচক হয়ে ওঠার এক অদ্ভুত পন্থা আছে, বিশেষত যাদের পক্ষে এই কৌশলগত বিরুদ্ধতাগুলো বৃহত্তর স্বাধীনতার পরিসর তৈরি করতে সক্ষম(PP,৩১৬)।

প্রত্যেকেরই স্বাধীনতার নিজস্ব সংজ্ঞা থাকে। আপনার কাছে স্বাধীনতা মানে কী? এটাই একমাত্র জিনিস, যা আপনাকে জ্যোতিষীর হরোস্কোপিক অঞ্চল থেকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণের ক্রিয়াকে সক্রিয় করে তুলবে।

এবার একটু ভাবুন এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!  

 

দ্বিতীয় পয়েন্ট:

কবি তথা জ্যোতিষী পরামর্শ দিচ্ছেন— “avoid planar surfaces”, অর্থাৎ দ্বিমাত্রিক নয়, বহুমাত্রিকতায় বসবাস। কারণ জ্যোতিষী সাজলেও তিনি একজন Poedesic কবি, যিনি সর্বদা সময় ও পরিসরকে মান্য করেন। যেমন Geodesic এ দুটো বিন্দুর সংযোগরেখা স্পেস-টাইমে গ্র্যাভিটির টানে বাঁক নেয়, তেমনি Poedesic কবির ভাবনার মাধ্যাকর্ষীয় টানে আপনার সরল (সমতল) চিন্তাভাবনা বাঁক নেবে— ইহাই পরামর্শটির উদ্দেশ্য। আবার বার্নস্টাইনের কাব্যতত্ত্বের আদর্শ হল Curve Continuously এবং তাঁর “The Human Abstract” কবিতাটি প্রেমের বাঁধনে দূরত্ব মুছে ফেলে With String[7] দিয়ে—

দুটো বিন্দুর ভেতর      

স্বল্পতম দূরত্ব হল

ভালোবাসা

কূটকচাল:      

Poedesic শব্দটি Poe-desic মানে পো-দেশীয় হিসেবেও পড়তে পারেন, কারণ এডগার অ্যালান পো এর “The Poetic Principle”[8] বার্নস্টাইনের প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কাব্যতত্ত্বের ভিত্তিস্বরূপ।    

এখন আপনি যদি বার্নস্টাইনের Poedesic চিন্তাধারায় আপনার প্রেমের পুনর্গণনা করেন, তাহলে আপনার সমতলে রাখা সরল প্রেম বক্ররেখায় প্রতীয়মান হবে। যত তাড়াতাড়ি আপনার ভালবাসা বক্রতা পাবে তত তাড়াতাড়ি আপনি flaunting শুরু করবেন। তাঁর উদ্দেশ্য flounder মাছের মতোই ফ্ল্যাট, যার চোখের মেটামরফোসিস যেমন ক্যামোফ্লেজ তৈরি করে, তেমনি কবির দৃষ্টিভঙ্গির মেটামরফোসিস, কারণ তাঁর ভাষাগত পরিবর্তনে কাফকা হল অন্যতম গুরু। এটাকে শ্লেষ বা ‘slippages of language’ হিসেবে নেবেন না প্লিজ, কারণ তিনি এমনভাবে রূপান্তরিত করতে পারেন যাতে তা হয়ে ওঠে “more vulgar or visceral or intrusive aspects of slipping”. এই মেটামরফোসিসেই আছে তাঁর কবিতার রিদ্‌ম—

I’m compulsively drawn to tripping; slippage is also bewitching, as one particular dissolves into another, as with word transformations and metamorphosis and substitution, the slips and slides within language…It’s the rhythm of my poetry. (PP,২৭০).

অর্থাৎ তিনি অভিজ্ঞতার সংঘাতকে কবিতার রিদ্‌মে রূপান্তরিত করতে পারেন। যা কিছু শোনা যায় তাই-ই রিদ্‌ম। প্রচলিত ছন্দোময় কবিতা দাবি করে প্রতিসাম্য ও সমরূপতা। কিন্তু কবির সিনকোপ্যাশন তাঁর কবিতাকে করে তোলে অফ-ব্যালেন্স, তির্যক বা মাইক্রোটোনাল, যেখানে বাজতে থাকে অন্য এক রিদ্‌ম।

কিন্তু আমার কথা হল সিনকোপ্যাশনের প্রতি তাঁর প্যাশন আপনাকেও অফবিট অফ-ব্যালেন্স করে তুলতে পারে। তারপরও আপনি এই জ্যোতিষীর দেওয়া হরোস্কোপ মানতে চান? ​​    

একটু ভাবুন, এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!

 

তৃতীয় পয়েন্ট:

জ্যোতিষী তাঁর হরোস্কোপে পরামর্শ দিচ্ছেন “reach out to long-estranged family members to say life is better without you. Don’t back away from regrets.”

ধরুন আপনার স্ত্রী যিনি দীর্ঘদিন সেপারেশনে আছেন, এখনও বিবাহবিচ্ছেদ মামলা তোলেন নি, তাঁকে বললেন ‘তোমাকে ছাড়াই ভালো আছি’; তবে তিনি অবশ্যই এবার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করবেন। এরকম বিভ্রান্তিকর(কৌতুকময়) পথে নিজেকে চালিত করবেন না প্লিজ।

কূটকচাল:

মনোবিজ্ঞানী বলছেন, বিবাহবিচ্ছেদ এর চেয়ে শারীরিক(মানসিক নয়)সেপারেশন ভালো, তাতে বোঝাবুঝির রাস্তা খোলা থাকে। একটু ভাবুন।

আপনি জানেন প্ল্যাটো ‘মুখ’ শব্দটিকে অপমান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, কারণ এটি মিথ্যা বলে এবং তাই তিনি কবিদের ‘muthologists’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[9] সুতরাং ভাষা সম্পর্কে সাবধান (সচেতন) হোন। আক্ষরিক মূল্যায়ন থেকে বিরত থাকুন। কারণ এই কবির মুখ সর্বদা ব্যঙ্গাত্মক মুখোশের আড়ালে থাকে; ঠাট্টা, রসিকতা, উপহাস, কৌতুক, ব্যঙ্গ, বক্রোক্তি বার্নস্টাইনের কাব্যিক হাতিয়ার।

জ্যোতিষী আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন তা দেখার জন্য “Look over your back before making sudden move”, কারণ আপনি চাইলেও প্রচলিতকে মুছে ফেলতে পারেন না, কিন্তু তাদের প্রশ্ন করতে পারেন, ওল্টাতে পাল্টাতে পারেন, এটাই হল  বার্নস্টাইনের aversion রীতি। (পূর্বসূরীর কাব্যরীতির গঠনশৈলী মুছে ফেলা নয় বরং পুনর্গঠনের আহ্বান, বর্তমানের সঙ্গে আগামীর গ্রন্থনের কারুকলাই তাঁর কাব্যশৈলীর রহস্যরূপ।)

কূটকচাল:      

Avert শব্দটির উৎস ল্যাটিন শব্দ avertereab(‘from’)+vertere(‘to turn’) ─ অর্থাৎ আপনার চিন্তাধারাকে ঘুরিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য, যা আপনার কাছে মোটেও আকর্ষণীয় নয় বলেই আমার মনে হয়।

একটু ভাবুন এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!

 

চতুর্থ পয়েন্ট:

জ্যোতিষী বলছেন, “Pegasus wars with Orion, but zones of calm when Pyxis is rising. Smells intensify in arboreal regions. Old lovers come to mind, posing immediate threat…” পক্ষীরাজ ঘোড়া শক্তির প্রতীক, কান্টের যুক্তিবাদ পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের প্রতীক। আর Orion হল সেই দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারিস্ট যাঁরা কল্পনাপ্রসূত ধীশক্তির বিশেষ সম্ভাবনার প্রয়োগে প্রকৃত বাস্তবের জন্য প্রয়োজনীয় বিকল্পনির্মাণ করেন। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের কাব্যিক কর্তৃত্ব তাঁদের প্রতিরোধে যুদ্ধ করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। “War Stories” কবিতায় বার্নস্টাইন তাই লিখছেন, যুদ্ধ হল নান্দনিক প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে সংঘাতের সমাধান, যুদ্ধ হল ক্ষমতাবানদের সহিংসতা প্রতিরোধ করার জন্য ক্ষমতাহীনদের বৈধ অধিকার।[10]

সুতরাং Pegasus এর প্রচলিত নীতি Orion এর উদ্ভাবনী নীতির সঙ্গে সর্বদাই যুদ্ধ করবে। এখানেই Pyxis প্রসঙ্গ, সেই ছোট্ট ও ক্ষীণ নক্ষত্রমণ্ডল, নাবিকের যাত্রাপথের কম্পাস, যা প্যাটাক্যুয়রিক্যাল আনমিতলজির (bent studies এর বাংলায়ন, বাংলা বাঁচাও কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষ্য) প্রতীক, যাকে কবি ব্যবহার করেন প্রভাবশালী কবিতা সংস্কৃতির খাঁচার বাইরে থাকা আনমিত, নির্বাক, প্রান্তিক, বোলশূন্যদের জন্য। এ হল সমাজের দমিত ও দমনকারী পরিবেশের ভেতর নান্দনিক অবস্থান গ্রহণের এক বিকল্প রূপ, যেখানে কাজ করে বার্নস্টাইনের নিওলজিক্যাল উদ্ভাবন “com(op)position” — “opposing” এবং “composing” এর ভেতর দোদ্যুল্যমানতা, যা সহাবস্থানের দিকে নিয়ে যায়।  

কূটকচাল:      

দোদুল্যমান মানে দুটো বিন্দুর (বিন্দু নয় ক্রিয়া) ভেতর দোল খাওয়া, মানে এগোনো পিছোনো দুইই চলতে থাকে, যা আপনাকে কোনো গন্তব্যে পৌঁছোতে দেয় না (পৌঁছোনো মানে থেমে যাওয়া, যেখানে কোনও কবিতা নেই; পৌঁছোনো মানে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিজেকে গেঁথে দেওয়া, যেখানে কোন কবিতা নেই)। আপনি কি আপনার গন্তব্যে পৌঁছতে চান না? একটু ভাবুন।

এই সহাবস্থানের কারণেই জ্যোতিষীর পরামর্শ, “Seek bougainvillea”. রবীন্দ্রনাথ এই ফুলটির নাম দিয়েছিলেন বাগানবিলাস — নিজস্ব পছন্দের গাছপালা ও ফুলে তৈরি বাগানে পারস্পরিক সহাবস্থানের আনন্দই বাগানবিলাস(এটা আমার কৌতুকালয়ে ফুলটির নামের মানে) — যার অনুরণন বার্নস্টাইনের পুনর্গণনায়, “I am gardener, but flower too;/ In the world’s dungeon I am not alone.”(২৮)

জ্যোতিষীর ইহুদি নাক (প্রতিক্রিয়াশীলতা) খুবই তীক্ষ্ণ (সংবেদনশীল)। তিনি অন্যদের যন্ত্রণার গন্ধ পান (অনুভব করেন)— “Smells intensify in arboreal regions”. এ হল আনমিতলজির arboreal ল্যান্ডস্কেপের যন্ত্রণাদগ্ধ গন্ধ। কিন্তু কোথায় এই যন্ত্রণার উৎস? আধিপত্যবাদী কাব্যসংস্কৃতির ভাষার প্রভাবশালী রাজনীতি এর উৎস। এই রাজনীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রতিরোধের যন্ত্রণা। তাই তো কবি লেখেন, যদিও শয়তান গন্ধ গোপন করার কৌশল শিখে নিয়েছে, তবু যন্ত্রণাদগ্ধ মাংস দুর্গন্ধময়। এটাই সামাজিক সত্যের গন্ধ(PP,১৮)।

ঈশ্বরের দ্বারা চিহ্নিত হয় শয়তান আর ভালোর দ্বারা বোলশূন্য হয় মন্দ। আপনি কি এখনও বার্নস্টাইনের আনমিতলজিতে যোগদান করতে রাজি? জ্যোতিষী সাবধানবাণী উচ্চারণ করছেন— “old lovers come to mind, posing immediate threat.”

কূটকচাল:

এ প্রেমিক কিন্তু আপনার better half  নয়, whole যুক্তিবাদ। একটু ভাবুন।

অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী Pegasus কাব্যিক অনুপ্রেরণার প্রতীক। কিন্তু বার্নস্টাইন বলেন নিজস্ব চিন্তাভাবনার অস্বীকারকে গোপন করার হাতিয়ার হিসেবে অনুপ্রেরণাকে ব্যবহার করা হয়—

আমি অনুপ্রেরণার চেয়ে স্বজ্ঞাকে বেশি গুরুত্ব দিই। কবিতার কার্যকরী অনুশীলন বর্ণনা করার জন্য স্বজ্ঞা একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ…. এটি ষষ্ঠেন্দ্রিয়, অনুমান ও  দ্রুত মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে বিবেচনাক্ষেত্রের প্রস্তাব দেয়।[11]

কূটকচাল:

স্বজ্ঞা বা অতীন্দ্রিয় মানেই তো ইন্দ্রিয়-বহির্ভূত ব্যাপারস্যাপার! জন্মাবধি পঞ্চেন্দ্রিয় শুনিয়াছি বটে, ‘ষষ্ঠেন্দ্রিয়’ কেডা? ‘অনুমান’ মানে তো আন্দাজে কাম সারা! ‘দ্রুত মূল্যায়ন’-এ ভুল হবার সম্ভাবনা ষোলোয়ানা! একটু ভাবুন।

আপনি জানেন স্বজ্ঞা একটি mystic শব্দ, যাকে প্রাচ্যের অতীন্দ্রিয়বাদে দেখেছি (আধুনিক বিজ্ঞান Intuitive প্রক্রিয়া স্বীকার করে)। দেকার্তের সময় থেকে অভ্যস্ত আপনার দীর্ঘকালীন পশ্চিমি যুক্তিবাদ ছেড়ে এই অতীন্দ্রিয় অঙ্গনে প্রবেশ করতে আপনি কি প্রস্তুত? আপনি কি মনে করেন না mysticism একধরণের প্রতারণা মাত্র? একটু দাঁড়ান, জ্যোতিষী আবার কবির মুখোশে স্বজ্ঞার পক্ষে কী যুক্তি সাজিয়েছেন সেটা দেখে নিই—

যুক্তির প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা, বিচারবুদ্ধি অতিক্রান্ত এমন এক ক্ষেত্র যা কখনই অযৌক্তিক নয়। যুক্তি স্বজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করে…এখানে অবশ্যই অচেতনতা জড়িত, কিন্তু অচেতনতা মনেরই একটি অংশ এবং যুক্তিরও অংশ (PP,২৬৪)

অক্সফোর্ড[12] বলছে, বিশেষ্য হিসাবে beyond (অতিক্রান্ত) মানে অজানা, বিশেষ করে মৃত্যু পরবর্তী অজানা জীবনের কথা বলা হয়। মৃত্যুর পরের অজানা জীবনের জন্য এখন জানা জীবন ছেড়ে যাবার কোনো মানে হয়! তার ওপর আপনি এখন কোভিডাক্রান্ত মহামারীর মৃত্যুর ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে আছেন। আপনি কি এই মুহূর্তে কবির এই যুক্তি শুনতে প্রস্তুত?

একটু ভাবুন এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!

 

পঞ্চম পয়েন্ট:

জ্যোতিষীর হরোস্কোপ বলছে “Turbulence in the nebula”. কিন্তু প্রথমেই প্রশ্ন জাগে কেন এই আলোড়ন? কোথায় এই নীহারিকা? এ কি প্রাতিষ্ঠানিক কাব্যসংকৃতির(Official Verse Culture-OVC) কাব্যিক নীহারিকা? জ্যোতিষীর ছদ্মবেশধারী কবি নিজেই যখন “OVC” কথাটি কয়েনেজ করেছেন, তখন ধরে নেওয়া যায় তিনি নিশ্চয়ই সে কথাই বলছেন। সেই নীহারিকায় প্যাটাক্যুয়রিক্যালিজমের ভূতকৃত আলোড়ন। ‘others’ এর অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য তাঁর Artifice of Absorption এর তলোয়ার দিয়ে তিনি OVC-র সান্দ্র্যতা হ্রাস করতে চাইছেন। আলোড়ন হওয়াই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই ‘others’ কারা?— প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবিগণ, দুর্ভেদ্যতার জন্য OVC যাঁদের অননুমোদিত বলে দেগে দিয়ে বহিষ্কার করে।

আপনি জানেন Artifice শব্দটির উৎস ল্যাটিন artificium —যার অর্থ চতুর বা ধূর্ত কৌশল, ধোঁকা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কবির দাবি তাঁর Artifice প্রচলিতের গলাদ্ধঃকরণ বন্ধ করে পাঠকের জন্য সম্প্রসারিত অর্থের সম্ভাবনা তৈরি করে।। তাঁর Artifice of Absorption এর তরোয়ালটি নেবুলা স্পেকট্রামের শোষণ রেখায় স্থাপিত এবং Absorption এর বিপরীতে Impermeability ও Antiabsorption এর নীতি দিয়ে তৈরি। এখানেই বার্নস্টাইনের প্যাটাক্যুয়রিক্স, যা ভিন্নধর্মী নিমগ্নতার (absorption) কথা বলে, যাকে বলা যায় অতিমগ্নতা, দোল খায় নিমগ্নতা ও দুর্ভেদ্যতার মাঝখানে, নিবিষ্ট চিত্তের উল্টোপিঠে তৈরি করে এক অদ্ভুত চিত্তবিক্ষেপ।

এখন আপনার বেছে নেওয়ার পালা। হ্যাঁ, আমিও আপনার মতোই একজন চিন্তাভাবনাহীন সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষ, কোনো দুর্ভেদ্য নির্মাণকৌশলের জন্য প্রতিষ্ঠানের ছাদ হারাতে রাজি নই। আমরা কবির চিন্তাধারায় নিমগ্ন হতে চাই। কবির ভাবনায় সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন হয়ে রোমান্টিক উচ্ছ্বাস নিয়ে সুখেই আছি। বার্নস্টাইন আপনাকে ভোলাবার জন্য (আপনার চোখ খুলে দেবার জন্য) বলতেই পারেন যে রোমান্টিক কবির এই সম্মোহনী বা আত্মমগ্ন সম্ভাষণ আপনার জন্য নয়, কোনো পাঠকের জন্য নয়, বরং তা কোনো প্রিয়মানুষের জন্য, বা ঈশ্বরের জন্য, অথবা স্বয়ং কবির নিজের জন্য। এ হল একধরণের paranoia, যার পরিবর্তে বার্নস্টাইন পরামর্শ দেন স্কিজোফ্রেনিয়া ─ যেখানে ঘন ঘন চিত্তবিক্ষেপ ও বাধা, স্থির উদ্দেশ্যের পরিবর্তে ছড়িয়ে পড়া মনোযোগ ও একঘেয়েমি।

কূটকচাল:

“poetry has no purpose, but that is not its purpose.”[13] একটু ভাবুন।

সাবধান (সতর্ক) থাকুন এবং নিজের সুখের চাবিকাঠি নিজের কাছেই রাখুন। উদ্দেশ্যহীনতায় খেই হারাবেন না প্লিজ। কবিতায় দেওয়া রেফারেন্স পেয়ে আমরা সুখেই আছি। সেখানে ভাষাকবিতার রেফারেন্স লোপাট কিংবা ভাষাকবিতার প্রসারিত ক্ষেত্রের তির্যক রেফারেন্স কোনটাতেই আমাদের কোনো স্পৃহা নেই। আপনি কি এখনও বার্নস্টাইনের এই artifice মেনে নিতে প্রস্তুত?

একটু ভাবুন এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!

 

ষষ্ঠ পয়েন্ট:

জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করছেন, “Dark Matter in retrovariance….Moods conform with waning and waxing moon…” প্রথমত আমরা আলোপ্রেমিক, তাহলে আলোবিরহী ডার্ক ম্যাটারে প্রয়োজন কী? দ্বিতীয়ত, আপনি জানেন যে ডার্ক ম্যাটার কালো বা অন্ধকার পদার্থ নয়, ডার্ক এই অর্থে যে আমরা একে ‘দেখতে’ পাই না। যাকে দেখতেই পাই না, তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কী?

জ্যোতিষীর “retrovariance” ─ সাম্প্রতিক অতীতের প্রচলিত শৈলীগুলিকে পুনর্নবীকরণ করার কথা বলে; হারানো গ্ল্যামারকে ভিন্নতা দিয়ে নির্ণীত নিশ্চয়তা থেকে অনির্ণেয়তার দিকে উত্তরণের কথা বলে। অর্থাৎ পর্যবেক্ষক-নিরপেক্ষতা থেকে পর্যবেক্ষক-নির্ভর বাস্তবতার দিকে চলন, যেখানে পাঠকের কল্পনাকে কবি তাঁর কবিতার কাল্পনিক বা ইউটোপিয়ান পরিসরে সক্রিয় করবেন যাতে পাঠক একরৈখিকতার পরিবর্তে বহুমাত্রিক বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেন।  

কূটকচাল:

ইউটোপিয়া থেকে দূরে থাকুন। Utopia শব্দটির ধারণামূলক আক্ষরিক অর্থ ou(“no”)এবং topos(“place”)। সুতরাং আপনি “no place”-এ আটকে যাবেন (থমাস মোরের ইউটোপিয়ায় উড়তে থাকবেন)। একটু ভাবুন।

কবি তাঁর Pataquerical Imagination দিয়ে প্যাটাক্যুয়রয়েড ইউটোপিয়ার গান ধরেছেন, যেখানে স্বাভাবিকতার মানদণ্ড উপেক্ষা করা হয় অস্বাভাবিককে বরণ করার জন্য। আপনার স্বাভাবিকতা ছেড়ে আপনি কি এই প্রস্তাবিত অস্বাভাবিকতায় প্রবেশ করতে প্রস্তুত?

আপনি জানেন যে waning of moon আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নতুন কিছু পদ্ধতির সন্ধান করার পরামর্শ দেয়। আর waxing of moon যে লক্ষ্য আপনি আশা করেছিলেন সেই লক্ষ্যের দিকে আপনার অগ্রগতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু জ্যোতিষী কবির মুখোশে লিখছেন:

Hope gives way

to tire tracks. On the

way without stipulating

the destination

the better

to get there (somewhere, other)    (Dark City)[14] 

মনে রাখবেন এ হল বার্নস্টাইনের Dark City, মানে যে শহরে আলো নেই। আমাদের মস্তিষ্কে কবিতা তৈরির প্লান্টে “less-than-idealized reality”-র অতিরিক্ত লোডের জন্য সর্বদাই লোডশেডিং। ফলত আপনি কোথাও একটা পৌঁছানোর লক্ষ্য করেছিলেন, কিন্তু বাস্তবে পৌঁছে গেলেন অন্য কোথাও। তাহলে আপনার লক্ষ্যের কী হবে?

কূটকচাল:

less-than-idealized reality ─ বার্নস্টাইনের কয়েনেজ, বাস্তবতা সম্পর্কে আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য (আপনি যে actual reality-তে  বাস করার ভান করছেন তাকে ছেড়ে factual reality দিকে চালিত করার জন্য)। এ আসলে ideal বাস্তব নয়, তার চেয়ে কিছু কম (কাছাকাছি) বাস্তব। actual ও factual বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য কি? একটু ভাবুন।

বার্নস্টাইন তাঁর পুনর্গণনায় বলছেন, “Tumble, sunder, fake, fall” এগুলো কেবল তাঁর বিষয় নয়, এগুলোই তিনি অনুশীলন করেন নিজেকে ত্রুটিপূর্ণ করে তোলার জন্য—

Poets are fakers

Whose faking is so real

They even fake the pain

They truly feel[15]       

তাঁর এই fake practice এর কথা তিনি নিশ্চিত করেছেন তাঁর “Autopsychographia” কবিতায় যা কবিদের ফোবিয়া হিসেবে একটি অটো জেনারেটেড সাইকোগ্রাফ দিতে পারে।

একটু ভাবুন এই জ্যোতিষী হইতে সাবধান হইবেন নাকি সচেতন হইবেন!

 

———–

[পরবর্তী পর্যায়ে সমাপ্তি]

[ইংরেজিতে প্রথম প্রকাশ Sibila পত্রিকায়, https://sibila.com.br/english/beaware-of-the-ast/13918]

[1] চার্লস বার্নস্টাইনের “Twelve-Year Universal Horoscope” কবিতাটি ২০২০ সালে লেখা, তাঁর কাব্যগ্রন্থ Topsy-Turvy-র অন্তঃভুক্ত, প্রকাশনা ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০২১, পৃ:১৪৩

[2] স্বয়ং চার্লস বোদলেয়ার ১৮৬৯ সালে Le Spleen de Paris নামে তাঁর কবিতা সংকলনে “Be Drunk” কবিতাটি প্রকাশ করেছিলেন। ১৪৪ বছর পর ২০১৩ সালে আবার এক চার্লস যিনি বার্নস্টাইন নামে খ্যাত তিনি সেই কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করলেন “Be Drunken” নামে, তস্য অনুবাদের বঙ্গানুবাদ আমি নামক অধমকৃত।

[3] Recalculating চার্লস বার্নস্টাইনের কাব্যগ্রন্থ, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০১৩ পৃ:১৮১   

[4] বারীন ঘোষালের Guineapig: A Documentary Film, প্রকাশনা কৌরব, জামশেদপুর, ২০০৩, পৃ:৫৪

[5]Pitch of Poetry ─ চার্লস বার্নস্টাইনের গদ্যসংকলন, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০১৬, পৃ:১৯৪ (PP) 

[6] বার্নস্টাইনের প্রবন্ধ “The Pataquerical Imagination: Midrashic Antinomianism and the Promise of Bent Studies”. তাঁর কাব্যতত্ত্বের গ্রন্থ Pitch of Poetry-র অন্তর্গত।

[7] চার্লস বার্নস্টাইনের কাব্যগ্রন্থ With String, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০০১, পৃ:৩৫

[8] এডগার অ্যালান পো-এর প্রবন্ধ ‘The Poetic Principle’, ১৮৫০, উৎস: https://www.eapoe.org

[9] চার্লস ওলসনের The Special View of History, সম্পাদনা Ann Charters. প্রকাশনা Oyez, বার্কলে, ১৯৭০

[10] চার্লস বার্নস্টাইনের কাব্যগ্রন্থ Girly Man, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০০৬, পৃ:১৪৯

[11] চার্লস বার্নস্টাইনের গ্রন্থ My Way: Speeches and Poems, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ১৯৯৯, পৃ:৬৯, ৭০,

[12] Oxford Lexico – https://www.lexico.com/definition/beyond

[13] চার্লস বার্নস্টাইনের কাব্যগ্রন্থ Near/Miss, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, ২০১৮, পৃ:৭৫

[14] Dark City, চার্লস বার্নস্টাইনের কাব্যগ্রন্থ, Sun & Moon প্রেস, লস এঞ্জেলেস, ১৯৯৪, পৃ:১৭

[15] পর্তুগিজ কবি Fernando Pessoa এর কবিতা, বার্নস্টাইন যার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন এবং তাঁর Recalculating কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত, পৃ:৩. http://sibila.com.br/mapa-da-lingua/autopsychographia-by-fernando-pessoa/3503.

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত