| 8 মার্চ 2025
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা: শকুন্তলা চৌধুরী’র কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

কলকাতা  

 

কাঁধে ব্যাগ, হাতে পেন, চোখে স্বপ্নরা

পথ খুঁজে নেয়, আর লিখে যায় নাম।…

কলকাতা, মদালসা, ভুলে গেছো বুঝি –

একদিন এ’ শহরে আমিও ছিলাম?

 

গুণগুণ ধুন তোলা গীটারেতে গান,

উড়েছে শব্দ কত কফির কাপেতে

পারিজাত ফুল ওড়া সেই সন্ধ্যায় –

সুনীল, মৃণাল, রায় আর শাঁওলীতে।

 

পুজোর নবমী তিথি – ভীড় গমগম

পথ দিয়ে হেঁটে ঐ ফুচকার মোড়,

মাইকে বেজেছে “আমি এক যাযাবর…”

নতুন আলোতে মোড়া স্বপ্নের ঘোর।

 

কত পথ ঘোরা হল, তবুও সেই

পুরোনো পথের পাশে ঘুম ভাঙে।

শহীদমিনার আর হাওড়াব্রিজ ছুঁয়ে,

সূর্য আজও দেখি পাটে নামে।

 

পথও থাকেনি থেমে, গেছে এঁকেবেঁকে –

নতুন সঙ্গী নিয়ে জ্বালিয়েছে আলো।

স্বপ্নে, ঘুমের ঘোরে, সব গেছে মিশে –

আজকে তাকিয়ে দেখি ক্যানভাস কালো।

 

দুই গ্রহে চলে গেছে কবে যেন তারা –

একসাথে বসে যারা লিখেছিল নাম।…

কলকাতা, মদালসা, ভুলে গেছো বুঝি –

একদিন এ’ শহরে আমিও ছিলাম?

 

 

 

 

নতুন কবিতা

 

একদিন তুমি তাদের কবিতা লেখো –

যাদের উঠোনে আল্পনা পড়েনা তো,

যাদের দুয়ারে পাল্কি থামে না এসে,

যারা লড়ে, হারে, তবু চলে যায় হেসে।

 

একদিন সেই গাছেদের কথা বলো –

যাদের শিকড় বন্ধ খাঁচার ফাঁকে,

আলোহাওয়া-হীন আবর্তে এঁকেবেঁকে,

ইঁট কাঠ ফুঁড়ে হঠাৎ আকাশ ছুঁলো।

 

একদিন তুমি সজাগ দু’চোখ তুলে,

দেহলী পেরিয়ে, বারেক তাকিয়ে দেখো –

অবাক পৃথিবী দু’হাত রাঙিয়ে লালে,

শ্মশানে দাঁড়িয়ে নেচে যায় অবিরত।

 

একদিন তুমি তোমার কলম হাতে,

সাদা খাতা নিয়ে ঘুমভাঙানিয়া ভোরে,

নেমে এসো পথে সাজানো বাসর ছেড়ে –

নতুন কবিতা লেখো ধুলোকাদা মেখে!

 

 

 

 

 

স্বপ্নের রঙ  

 

রঙীন বেলুন বিকিয়ে ঘরেতে ফেরা।

কোভিড নিয়েছে বাবাকে, মায়ের সারা

দিন কেটে যায় ছ’বাড়ী বাসন মেজে।

দিদিটা কেবল বিকেল হলেই সেজে

বসে থাকে ঐ খোলা গলিটার মুখে –

পচাদা’ আসবে সিনেমায় নিয়ে যেতে।

বই, খাতা, পেন মাখছে আশার ধুলো –

রাত কেটে গেলে, যদি ঘরে আসে আলো!

 

রঙীন আলোর রোশনাই তুলে পথে

আসবে দোসর, রাখবে সে হাত হাতে।…

পণের টাকাটা এখনও হয়নি জমা,

কলেজে পড়ার স্বপ্নও ভাঙা ভাঙা –

পারেনা জমতে ঠিকমতো কিছু আর,

ভেঙে ভেঙে শেষ পয়সা রাখার ভাঁড়।

বাবা চলে গেছে ফুটো নিয়ে এক হার্টে,

দোকান চালিয়ে সাদা-কালো দিন কাটে।

 

ঝলমলে রঙা ফ্ল্যাটবাড়ী হল শেষ –

টাকা হাতে নিয়ে মালিক নিরুদ্দেশ।

মজুরের কাজে দিয়ে দিল ফের ছুটি –

ঘরে চার পেট…দিতে হবে দু’টো রুটি।

হাজার মাইল পার হয়ে গ্রামে ফেরা –

রুক্ষ্ম-শুষ্ক আলপথে জমে খরা।

জমিটা কবেই দেনাদারদের হাতে…

আলো নেই ঘরে নিকষ কাজল রাতে।

 

তসরের গায়ে রঙীন নক্সীকাঁথা

সপ্তাহে দু’টো, হাতে শুধু ছ’শো টাকা

ছুঁইয়ে মালিক পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়ী।

হাজারে বিকোবে নতুন স্টাইল শাড়ী

দেশবিদেশের বাবু-বিবিদের ঘরে।

মাটির এই ঘর শুধু গুমরিয়ে মরে।

রঙীন সুতোর গুটলিরা কোণে জমা –

আজকে কালোয় জীবনের কাঁথা বোনা।

 

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত