রিয়া ও আমার কয়েকটা দিন
ভূমিকা
অনেকদিন পর আজ লিখতে বসলাম। প্রথম লাইন, দ্বিতীয় লাইনে বাক্যটা সম্পূর্ণ হবার আগেই রিয়া ঢুকে পড়ল।
– লিখতে বসেছ?
– হ্যাঁ
– খুব কি বিরক্ত করলাম?
-না, ঠিক আছে। তুমি বসো। আমার অসুবিধে হবে না। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে অসুবিধে হচ্ছিল বইকি। আসলে লিখতে বসলেই রিয়া ঢুকে পড়ে আমার গল্পে। গল্পটা তখন আমার মত চলতে না পেরে রিয়ার মতন চলতে থাকে।
চলতে চলতে রিয়া বকবক শুরু করে। কথার পর কথা বসে যায় আমার লেখার পাতায়। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। আমার শব্দগুলো হারিয়ে যায়। বাক্য সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু রিয়া, রিয়ার শব্দগুলো ওর মতই লাইন বাই লাইন বেশ গুছিয়ে লিখতে শুরু করে! এখান থেকে আমার গল্প হারিয়ে যায় আর রিয়ার গল্প শুরু হয়।
রিয়ার গল্প
রিয়ার গল্পে সব সময়ই সমুদ্র থাকে। সেই সমুদ্রে বারবার বেড়াতে যাবার কথা হয়। আর রিয়া প্রত্যেকবার আমাকে ঠিক সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। তারপর সেই সমুদ্রে চান। বালিয়াড়ি বেয়ে সারা বিকেল আমাদের হেঁটে চলা। ভাজা মাছের স্বাদ। সাথে একটু মদ। পেটে মদ পড়লেই রিয়া বেসামাল হয়ে ওঠে। ওকে সামলাতে গিয়ে শেষমেশ আমাকেও অনেকটা মদ গিলতে হয়। তারপর বেসামাল আমি আর রিয়া, রিয়া আর আমি সারারাত গল্পে গল্পে ভোর হয়ে যাই।
আমার গল্প
সাধারণত গল্পের বিষয় নিয়ে আমি খুব বেশি একটা চিন্তিত নই। কারণ আমার গল্পের চরিত্রে সেই আমি আর রিয়া। তাই রিয়া যেভাবে চলে, আমার গল্প ও আমি ওভাবেই চলতে থাকি।
সেদিনের গল্পটা ছিল আমাদের সকালের ঝগড়া নিয়ে। দশ বছর হল আমি আর রিয়া একসাথে। তো সকাল সকাল ঝগড়াটা লেগে যেতে আমার বিশেষ কোন অসুবিধে হল না। আমাদের সকালের রান্না হয়ে গিয়েছিল। আমি স্নান সেরে মেয়েকে স্কুলের রেডি করে নিজেও অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। ততক্ষণে গম্ভীর মুখেই রিয়া খাবার টেবিলে ভাত বেড়ে দিয়েছিল আমাদের দুজনার। বাবা মেয়ে খুব শান্ত ভাবে খাওয়া সেরে নিলাম। ঝগড়াটা এক তরফাই ঘটেছিল। ভুলটা রিয়ার। আমার শুধু একটু রাগারাগি। তারপর আমাদের যা হয় আরকি। একই কথা আমি বারবার বলতে লাগলাম আর রিয়া মধ্যে মধ্যে খোঁচা দিচ্ছিল। আমার রাগটা বাড়ল। গলার জোরটা বাড়ল। আমাদের হুটোপুটিও বাড়ল।
বছর দুই আগে হলে রিয়া চুপ করে শুনত। একা আমিই বকে যেতাম। আর এখন রিয়াও হাল ধরতে শিখে নিয়েছে। সুতরাং দুজনারই গলায় গলায় ভাব ছলকে পড়ে দু-কামরার ফ্ল্যাটে। স্বাভাবিক ভাবেই এরপর গল্পের শুরু। আমাদের পাশাপাশি উদাহরণ স্বরূপ রাঙাদা রাঙাবৌদি এলো। এনাদের এখন বছর কুড়ি পার। রাঙাদা আক্ষেপ করে। আমার ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টায় বলে ওঠে, আমি যা করেছি তুমি তা একে বারেই করবা না। রিয়া খুব ভালো মেয়ে। সব সময় তুমি ওকে বকবা না। ও একটু স্লো, এই যা… ও সব পারে। পিলার দিয়ে কি সুন্দর ঝিঙেটার ছাল ছুলছে দেখো!
ডাইনিং রুমে আমরা টেবিলের পাশে বসে। আর রিয়া তখন রান্নাঘরের কাছে মেঝেয় বসে সবজি কাটছে সকালের। সে দিন রবিবার। অনেকটা সময় ধরে আমি আর রাঙাদা চা নিয়ে বসে আছি। তো এভাবেই রাঙাদা আমাদের ঝগড়ার মাঝে ঢুকে পড়ে সকাল সকাল। যে ভাবে ঠিক বছর পনের আগে আমি ঢুকে পড়েছিলাম রাঙাদা আর রাঙাবৌদির ঝগড়ার মাঝে।
গল্প লেখার গল্প
গত ছয়মাস ধরে গোটা চারেক গল্প লিখেছি। প্রত্যেক গল্পেই রিয়া তার স্ব-মহিমায় রিরাজমান! তো পত্রিকার সম্পাদিকা গল্পে গল্পে হেসে ওঠেন, আপনি রিয়াকে কিছুতেই ছাড়বেন না দেখছি। আচ্ছা সে মেয়েটি কে? শুধুই চরিত্র না কোন রক্তমাংসের আপন কেউ! আমি উত্তর দিই না। একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে সম্পাদিকাকে সেই ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলে রেখে উঠে পড়ি।
আজকের লেখাটা শেষ হলে এটা পাঁচ নম্বর গল্প হবে। ভেবেছিলাম রিয়াকে আর আনব না। কিংবা রিয়া নিজে থেকে এলে আমি ঠিক বাদ দিয়ে দেব। এবারের এই নতুন গল্পে রিয়াকে আমি কিছুতেই কোন চরিত্রে ঢুকে পড়তে দেব না।
গল্পটা যে ভাবে লেখা হয়েছিল, তারপর…
‘রিয়া ও আমার কয়েকটা দিন’ এই শিরোনামেই গল্পটা লেখা হয়েছিল। মাত্র দু-পাতার গল্প।
কোন একদিন খুব মন দিয়ে গল্পটা শোনার পর রাজীবদা বললেন, এবার তোমার গল্পের একটা সুন্দর ফ্লো আসছে… এখন লিখে যাও। দেখো আরও অনেক গল্প তুমি লিখে ফেলতে পারবে। রিয়াও গল্পটা শুনল মন দিয়ে। শেষ হতে না হতেই একবারে ঝাপিয়ে পড়ল আমার ওপর, তোমার সাথে এবার ঝগড়া করাটা খুব সহজ হবে আমার পক্ষে, তাই না…।
জন্মঃ ১৯৮২ , বাঁকুড়া , পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
পেশাঃসিভিল ইঞ্জিনিয়ার
প্রকাশিত বইঃ
নষ্ট ছবি– ২০০৬ ( প্রকাশক- এখন বাংলা কবিতার কাগজ )
আনজান আদর– ২০১০ ( প্রকাশক- এখন বাংলা কবিতার কাগজ )
বোতামের কারুকাজ – ২০১৬ ( প্রকাশক- এখন বাংলা কবিতার কাগজ )
জামা– ২০১৬ ( প্রকাশক- এখন বাংলা কবিতার কাগজ )
আমি এবং আমি ( গল্প সংকলন )-২০১৮ (প্রকাশক – বৈভাষিক )
লেখালেখি শুরু ২০০২ সাল থেকে ।