ইস্ট সান্ড্রিংহ্যামে শুরুর দিকে পিচে বল রাখতে পারত না ছেলেটা। শুধু ব্যাট করত। একদিন আব্দুল কাদিরকে দেখল। হাতের তালুর দিকে তাকাল। আঙুলের দিকে তাকাল। ঘোরাল। শুরুর দিকে অল্প। তারপর আরেকটু। তারপর আরও একটু। তারপর গ্যাটিংকে পেল। প্রথম বল। বল ঘুরল। রিচি বেনো বললেন – ‘গ্যাটিং হ্যাজ অ্যাবসোলিউটলি নো আইডিয়া হোয়াট হ্যাজ হ্যাপেন্ড টু হিম – অ্যান্ড হি স্টিল ডাজ নট নো …’
বাই দ্য ওয়ে, আমরা বড় হলাম। একটা সময় রাগ হল আমাদের। পরীক্ষায় ফালতু অঙ্ক এল। যৌথতায় শরিকি বিবাদ। জানলাম যৌথ বলে কিছু হয় না, ওসব ইলিউশন। সবাই, সবাই বীভৎস একা। প্রিয় মেয়েটা চলে যেত অন্য বন্ধুর সঙ্গে। কুইজে নাম দিয়ে থার্ড হতাম। পড়ে গেলে টিটেনাস নিতাম, উঠে দাঁড়ালে মাথার ওপরে মশা। ঘরে লোডশেডিং, রাস্তায় পাগলা কুকুর। ভাড়া বাড়িতে গাদাগুচ্ছের মাকড়সা, কথা শোনা আর কেরোসিনের গন্ধ। প্রিয় সঙ্গী, গদ্যের বই, বন্ধু, ট্রান্সফার – হয় কেউ এল না, নাহয় কেউ চলে গেল। আমরা সত্যজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেখলাম। রিটেক, রিটেক। আমাদের ক্যাসেট জড়িয়ে গেল। আমাদের ইচ্ছে হল, ‘আপনারা কি ইয়ার্কি পেয়েছেন’ বলে ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকগুলোর চশমা ভেঙে দিতে। চাইলাম চেয়ারগুলোকে উল্টে দিয়ে গোটা ঘরটায় কয়েকশ’ লাথি কষিয়ে বেরিয়ে আসতে। আমরা পারলাম না। বসের খিস্তিতে মাথা নিচু করলাম, অফিসের লবি দেখে ঘরে এসে রিটলিয়েশনের শ্যাডো প্র্যাকটিস করলাম। চুপ করে থাকতে থাকতে আমাদের চল্লিশ হল। আমাদের সেই নস্টালজিক ক্রোধ, গোটা জীবনজুড়ে লালন করা অবিশ্বাস্য ক্রোধগুলো দুহাজার পাঁচের এজবাস্টনে অ্যান্ড্রু স্ট্রসকে বল করতে নামল। অফস্টাম্পে পড়া বলটা বাঁহাতি স্ট্রস ছেড়ে দিলেন। লেগস্ট্যাম্পের উইকেট ভাঙল। আমরা সেই ক্রোধগুলোর একটা জবরদস্ত নাম পেয়ে গেলাম। শেন ওয়ার্ন …
আমাদের আঠারো। আমাদের গলার স্বর, স্বরবদল। আমাদের খিদে। কী কথা তাহার সাথে, তার সাথে? আমাদের বাথরুম, আমাদের প্রথম লজ্জাবোধ, আমাদের নিষিদ্ধ সাদা, আমাদের টুইঙ্কল, রবিনা, টিপটিপ বরষা। আমাদের প্রিয় পত্রিকা লুকোনো ফেমিনা-ম্যাক্সিম, প্রিয় মুখ মনিকা বেলুচ্চি, প্রিয় ডাকনাম ম্যালেনা। আমরা ছায়ার শরীরকে নিয়ে একটা মফস্বলের ঘরে অনন্তকে ডেকে আনতাম। সেইসমস্ত ঘর তখন ফ্রম হিয়ার টু ইটার্নিটি, সামার উইথ মনিকার নাট্যরূপ পেত। পাড়ার, স্কুলের অল্পপরিচিতারা হ্যারিয়েট অ্যান্ডারসনের পিঠ, ডেবোরাহ কেরের ঠোঁটের মতো দেবীপক্ষের রূপ নিতেন। আমাদের সেই তীব্রতম প্যাশন, আজন্ম যৌনতাবোধ একদিন বলে বসল, ‘ইউ কান্ট অ্যাফর্ড টু লিভ আ লাইফ উইথ রিগ্রেটস’। সেই প্যাশনের পাঁচ অক্ষর – শেন ওয়ার্ন …
আমাদের সেইসব ইচ্ছে, সেইসব ক্রোধ, সেইসব প্যাশন একবার আব্দুল কাদিরের দিকে তাকিয়ে, একবার হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে, একবার আঙুলের দিকে তাকিয়ে, দুবার বলটা আকাশে স্পিন করিয়ে মাইক গ্যাটিংকে বল করতে নামল। এবং কমেন্ট্রি বক্স থেকে রিচি বেনো বললেন, ‘গ্যাটিং হ্যাজ অ্যাবসোলিউটলি নো আইডিয়া হোয়াট হ্যাজ হ্যাপেন্ড টু হিম – অ্যান্ড হি স্টিল ডাজ নট নো …’