| 27 জানুয়ারি 2025
Categories
কবিতা সাহিত্য

প্রেম কিংবা অপ্রেমের কবিতা । শেলী জামান খান

আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট

                            

ভালোবাসার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম।

 

এমন কঠিনএমন নির্দয়,

এমন স্বার্থপর তুমিতো কখনও ছিলে না

কেমন করে পারলেবল?  কেমন করে

 

নির্বিকারনিস্প্রাণ গলায় যখন গুডবাই বললে, তখন তোমার কণ্ঠস্বর একবারও কাঁপতে শুনি নি। 

মৃত মাছের মত বোধহীনঠান্ডা, তোমার চোখদুটো দেখে মনে হচ্ছিল,

ঐ-চোখদুটোতে বহুকাল আলো পড়েনি।

 

ভাবলেশহীনঅভিব্যক্তিহীন লম্বাটে ঐমুখ

চেয়ারে বসা শরীরের কাঠামোতেঅনঢ় কঠিন মাংশপেশী,

যেন বলে দিচ্ছিল, এখানে জীবনের কোন আলোরণ নেই। ভালোবাসার কোন উত্তাপ নেই।

 

চেয়ে দেখলাম, তোমার শুকনোপাংশুটে ঠোঁট।

কে বলবেঐঠোঁট একদিন কতটা রক্তিম ছিল,

একদিন কতটা উষ্ণতা ছিল  পেলব ত্বকে।

কেমন জোড়াল চুমু খেতে  পুরুষ্ঠ অধরে।

 

একদিনমাইলের পর মাইল আমরা হেঁটেছি সমানতালে,

সেই বলিষ্ঠ পদযুগলে আজ রাজ্যের আরষ্ঠতা,

হয়তো আরষ্ট সময়ের মততোমার মনেও শ্যাওলার আস্তরণ জমেছে আজ।

 

তাইতোস্বার্থপরের মত কেবল নিজেকে বাঁচাতে চাইলে,

বলে দিতে পারলেআমি তোমায় ভালোবাসি না

আর কখনও যোগাযোগ কোর না আমায়

 

ব্রেকআপটা এভাবে না করলেও পারতে

অন্যভাবেও বিদায় বলা যায়।

সম্পর্ক না রাখলেও সংযোগ রাখা যায়।

 

সংযোগ রাখার কোন রাস্তাই তুমি রাখলে না। 

ভালমন্দেঅসুখেবিসুখে আমাদের আর দেখা হবে না

এমনকি মৃত্যুতেও হবে না শেষদেখা 

 

একটি মাত্র ‘সরি’ মিথ্যে করে দিল গত কুড়িটি বছর,

একটা মাত্র ‘গুডবাই’  দুটো পথ আলাদা করে দিল,

তোমার নিরবতা জানিয়ে দিলএরপর আর কোন কথা থাকতে নেই।

 

আমাদের প্রেমে  কোন গন্তব্য ছিল না,

পাওয়ানা পাওয়ার কোন দ্বন্দ্ব ছিল না,

কেবল শিরায়শিরায় ঘণঘোর আবেগ ছিল

ছিলবুক ভর্তি শর্তহীন ভালোবাসা!

 

কত হাজার কোটি বার বলেছিলে, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’?

অথচ  ‘ভালোবাসি না’ কথাটা যে এতটা শক্তিশালী আমি জানতাম না। 

অব্যর্থ তীরের মতএর একটা আঘাতেই তাসের ঘরের মত হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ল কুড়ি বছরের ভালোবাসা। 

অথচ এই ভালোবাসার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম। 

 

ক্রমশ আমরা অপরিচিতদের ভীড়ে হারিয়ে যাবো

 

ব্রেকআপের পর  বুঝতে পারলাম

তুমি কতটা আমার ছিলে

তোমাকে আর পাব না জানার পর থেকেই বুঝতে পারলাম,

কতটা তোমাকে চাই

 

আজ থেকে আমাদের সত্যিকারের ‘বিচ্ছেদ’ শুরু হল।

জানি, হ্যালো বিউটিফুল’ বলে আর কখনও  তুমি আমায় সম্বোধন করবে না।

আমরা আরকেউ কখনও বলবো না, ‘সি ইউ সুন

আর কখনও কেউ কারও খোঁজ নিয়ে বলবো না, ‘হাউ আর ইউ?’

তোমার নম্বর থেকে আর কখনও ‘গুডমর্নিং’ কিংবা ‘গুডনাইট’ টেক্সট আসবে না। 

 

তোমার চোখের তারায় আর কখনও আমার জন্য ভালোবাসা ঘণিয়ে উঠবে না।

গভীর আকুতি জানিয়েআর কোনদিনতুমি বলবে না,

এভরি মর্নিং আই ওয়ান্ট টু ওকআপ নেক্সট টু ইউ

 

ঠিক কতটা সময় লাগবে তোমায় ভুলতে

বুকের ভেতরেহৃৎপিণ্ডকে ঘিরে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে

তাকে অবজ্ঞা করেইআমায় হয়তো হাসতে হবে প্রতিদিন।

ঠিক কতদিনতোমায় হারানোর শোক আমায় তাড়িয়ে বেড়াবেআমি সত্যি জানি না।

 

এখন আমাদের আর কোন ভবিষ্য পরিকল্পনা নেই।

এই সামারে সাগরে মাছ ধরতে যাবো কিনা,

কিংবা আগামি হপ্তায় যে নতুন মুভি আসছেসেটা দেখতে চাই কিনা,

তুমি আর কখনও জানতেও চাইবে না।

 

সিটির ফ্রেন্চ রেস্টুরেন্ট কিংবা দামি স্টেকহাউসগুলোতে গ্রুপনের অনেক অফার আসবে

ব্রান্চেলান্চে বা ডিনারে তোমার সাথে তোমার জীবনসঙ্গীনীকে দেখা যাবে।

বেকড স্যামনকিংবা ফ্রাই কালামারি অর্ডার করতে গেলে,

আমার কথা হয়তো তোমার তখন মনে পড়বে।

 

এখন থেকে আমাদের মাঝে যোজনযোজন দূরত্ব বাড়বে।

তারপরএকেঅপরকে বহুকাল না দেখতে দেখতে,

ক্রমশ আমরা অপরিচিতদের ভীড়ে হারিয়ে যাবো

 

 

শেষ দেখা রবিবারে

আমাদের প্রথম দেখার দিনক্ষণ আমি কোথাও লিখে রাখিনি।

তখনও ফেইসবুকইনস্টাগ্রাম বা টুইটার আবিস্কার হয়নি,

এমনকিঘটা করে ডাইরিতেও লিপিবদ্ধ করিনি তারিখটা।

কারন দিনটা ছিল বড় সাধারণ। বিশেষত্বহীন

 

আমাদের প্রেম জন্ম  নিয়েছিল ধীরলয়ে,

উত্তমসুচিত্রার আচানক মুখোমুখি ধাক্কা নয়,

চার চোখের প্রথম মিলনেও নয়,

প্রেম জন্ম নিয়েছিলনিরবেনিভৃতে।

সবার অন্তরালে

 

কতশত মাইল পাড়ি দিয়ে

নদীমহাসাগরপাহাড়অরণ্য ডিঙ্গিয়ে সেই রবিবারেতোমার কাছে পৌঁছেছিলাম।

শেষদেখাটা দেখবো বলে। 

বুকের খাঁচার ভেতরে  প্রাণভোমরাটা খুব ছটফট করছিল

 

দেখলামআমার কান্না তোমাকে আর বিচলিত করছে না

আমাকে হারানোর ভয় তোমাকে আগের মত অস্থির করছে না

তখনই বুঝতে পেরেছিলাম

তুমি বড়  নিরুপায়বড়  অসহায়

 

বোধিবৃক্ষে সম্পর্কের সুতোটা তুমিই বেঁধে ছিলে,

সুতোর গেড়োটা নির্মম হাতে ছিঁড়তে হল তোমাকেই।

তুমি গণ্ডি এঁকেছিলে,

খড়িমাটির দাগটুকু আমাকেই চোখের জলে মুছতে হল।

 

একদিন আমাদের বাসর হয়েছিল আফ্রোদিতিকে সাক্ষী করে।

ভালোবাসার বাণী পড়েগলায় মঙ্গলসূত্রঅনামিকায় প্রমিস রিং পরিয়েছিলে তুমি।

আমরা ভুলেই গিয়েছিলামনিষিদ্ধ প্রেমে অভিশাপ থাকে!

তাইতোদেবী আফ্রোদিতিও শেষতক আমাদের বাঁচাতে পারলেন না।

 

আগামীতে আমাদের জীবনে এমন হাজারকোটি রবিবার আসবেযাবে

হাজারো প্রেমিকপ্রেমিকা মিলিত হবে এইসব রবিবারে

কেবলআমাদের জীবনের শেষ রবিবারটা

অভিশপ্ত হয়ে থাকলো প্রেমের ইতিহাসে!

 

এই শহর জানেআমরা কী তুমুল প্রেমে পড়েছিলাম

 

সেইসব দিনের কথা কী চাইলেই ভোলা যায়বল

দুদুটো দশক একেঅপরকে কেমন যাপটেজড়িয়ে বেঁচে ছিলাম আমরা।

 

আমাদের প্রেমে পড়ার কোন যুক্তি ছিল না।

কিন্তু সেই অযৌক্তিক ঘটনাটাই অবশেষে ঘটে গেলো। 

দেখা হলেতুমি কাজঅকাজের নানাবিধ বিষয় নিয়ে  গল্প জুড়তে। 

খুঁজেখুঁজেনামকরা লেখকদের বই এনে আমায় পড়তে  দিতে।

একসময় তোমার সাথে কথা বলাআমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেলো। 

 

এক শীতের শুরুতেআমার জন্মদিনেতোমার পাঠানো ফুল এলো,

একদিনআমার দরজায় তুমি নিজে এসে দাঁড়ালে।

প্রথম অভিসারেরেস্টুরেন্টের নিরালাকোনেতুমি আলগোছে আমার হাত দুটো ছুঁয়েছিলে।

বারকয়েক তোমার দ্বিধান্বিত ঠোঁট ছুঁয়ে ছিল আমার হাত।

 

রোমান্সের উত্তেজনায়পার্ক করা গাড়ির হদিশ দুজনেই ভুলে গিয়েছিলাম।

রাতের আলোআঁধারিতেডাউনটাউনের কানাগলিতেগাড়িটি আমাদের অপেক্ষায় নিশ্চুপ বসেছিল।

গাড়ি খুঁজে পাওয়ার আনন্দেতুমি টুপ করে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলে,

সেই প্রথম!

 

তারপর কত হাজার কোটি বছর কেটে গেছে

আমাদের মনে নেই।

গ্রীষ্ম শেষ হয়ে হেমন্তের পাতাঝরার দিন এসেছে,

বর্ষার ঝরঝর বৃষ্টিবরফঝরা তীব্র শীতেও আমরা প্রেমের উষ্ণতা অটুট রেখেছি।

প্রতিবারনতুন জীবনের উন্মাদনা নিয়েবসন্ত ফিরে এসেছে আমাদের শহরে।

 

আমরা বুঁদ হয়েছিলাম নিজেদের মাঝে!

কত তপ্ত দুপুরে তোমার তপ্ত ঠোঁটের চুমুতে আমার ঠোঁট পুড়েছে,

কত হাজার বার তুমি আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছো আমার মাঝে

তার কী কোন হিসেব আছেতুমি বল?

 

আমরা বড্ড বেহিসেবী প্রেম করেছি। 

বড় বেপরওয়া ঘুরে বেরিয়েছি। 

সাগরেসৈকতেহাটেমাঠেরাস্তায়পার্কেগাড়িতে,  কোথায়কোথায় না চুমু খেয়েছি আমরা!

এই শহর জানে সেইসব ইতিহাস। 

এই শহর জানেআমরা কী তুমুল প্রেমে পড়েছিলাম

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত