Simone de Beauvoir

নারী হয়ে জন্মায় না কেউ—সিমোন দ্য বোভোয়ার

Reading Time: 2 minutes
 
ফরাসি লেখক সিমোন দ্য বোভোয়ার এক নামে অনেক পরিচয় ধারণ করেন। তিনি বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক রাজনৈতিককর্মী, নারীবাদী এবং সামাজিক তত্ত্ববাদীও। তিনি অবশ্য নিজেকে দার্শনিক বলে মানতে নারাজ ছিলেন। তবে নারীবাদী অস্তিত্ববাদ এবং নারীবাদী তত্ত্বের ওপর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে। সিমোন দ্য বোভোয়ারের পরিচিতির পেছনে তাঁর সৃষ্টিকর্মের অবদান যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ব্যক্তিগত মুক্ত জীবনযাপনেরও। তিনি উপন্যাস, প্রবন্ধ ও জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন। এ ছাড়া দর্শনের ওপর লিখেছেন পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা, লিখেছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নানা রকম লেখা। নারীর ওপর দমন-পীড়নের বিশ্লেষণী গ্রন্থ ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ তাঁকে অমর করে রেখেছে। পরবর্তী সময়ের নারীবাদী চেতনার প্রেরণার মতো কাজ করেছে তাঁর লেখা। উপন্যাস ‘শি কেম টু স্টে’ এবং ‘দ্য মান্দারিনস’ তাঁকে বিশ্বপাঠকের কাছে প্রিয় লেখকে পরিণত করেছে। ফরাসি দার্শনিক, লেখক জাঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে সারা জীবনের সম্পর্কও তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে।
 
সিমোন দ্য বোভোয়ারের জন্ম হয়েছিল প্যারিসের এক বুর্জোয়া পরিবারে। প্রথম মহাযুদ্ধে পরিবারের অনেক আর্থিক ক্ষতি হওয়ার পরও তাঁর মা-বাবা বুর্জোয়া অবস্থানটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। বাবা চেয়েছিলেন দুই মেয়েকে নামকরা কোনো কনভেন্ট স্কুলে পড়াবেন। মা খ্রিস্টধর্মের ক্যাথলিক ধারার অনুসারী ছিলেন। ছোটবেলায় দ্য বোভোয়ারের ধর্মীয় বিষয়ে গভীর বিশ্বাস ছিল। তবে কৈশোরের একেবারে গোড়ার দিকেই তিনি ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারান।
 
বুদ্ধি ও মেধার দিক থেকে দ্য বোভোয়ার ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের অগ্রগামী। বুদ্ধির প্রশংসা করে তাঁর বাবা অল্প বয়সেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘সিমোনের চিন্তাভাবনা বয়স্ক মানুষের চিন্তাচেতনার মতো।’ বিয়ে সম্পর্কে আশঙ্কা থাকার কারণে নিজে উপার্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য আরো সহজ হয়ে যায়। এভাবেই স্বাধীন জীবন বেছে নিতে সক্ষম হন।
 
১৯৪৩ সালে প্রকাশ করেন উপন্যাস ‘শি কেম টু স্টে’। তাঁর এ উপন্যাস তৈরি করেছেন ওলগা কোসাকিয়েভিকস এবং ওয়ান্ডা কোসাকিয়েভিকসের সঙ্গে তাঁর এবং সার্ত্রের জটিল সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। উপন্যাসটিতে ধরা হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগের সময়। ১৯৩০-এর দশকে বোভোয়ার রুয়েন সেকেন্ডারিতে পড়াতেন। সেখানেই তিনি ওলগার শিক্ষক ছিলেন। সার্ত্রে একসময় ওলকার প্রতি দুর্বলতা দেখান। তবে ওলগা সার্ত্রের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় বোন ওয়ান্ডার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন সার্ত্রে। এ রকম জটিল সম্পর্কই তুলে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে।
 
আরেক উপন্যাস ‘দ্য মান্দারিন’। এর পটভূমি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষকাল। এখানে চরিত্র হিসেবে এসেছে সিমোন দ্য বোভোয়ার এবং সার্ত্রের নিকটজন, বন্ধুমহলের অনেকে এবং দার্শনিকদের কেউ কেউ। এখানে তিনি অকপটে তুলে ধরেছেন আমেরিকান লেখক নেলসন আলগ্রেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা।
 
১৯৪৯ সালে প্রকাশ করেন দার্শনিক গ্রন্থ ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’। তিনি ইতিহাসের আলোকে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এ বইতে। বইটি তিনি দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন। প্রথমটি ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড মিথস’, দ্বিতীয়টি ‘লিভড এক্সপেরিয়েন্স’। বইটিকে সিমোনের সেরা বইগুলোর অন্যতম মনে করা হয়। নারীবাদী দার্শনিক গ্রন্থেরও সেরা বই হিসেবে গণ্য করা হয় এটিকে। কারণ তাঁর এ বইয়ের প্রভাবেই তৈরি হয় নারীবাদী প্রচার-প্রসারের দ্বিতীয় জোয়ার। ‘নারী হয়ে জন্মায় না কেউ, বড় হতে হতে নারী হয়ে যায়’—এ কথাগুলো উচ্চারণ করার মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো শারীরিক লিঙ্গপরিচয় এবং সামাজিক ও ঐতিহাসিক লিঙ্গপরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, নারীর ওপর দমন-পীড়নের মৌলিক উৎস হলো ঐতিহাসিক ও সামাজিক নিয়ম-কানুন। তিনি বলেন, ‘নারীরা দ্বিতীয় লিঙ্গ—তার কারণ হলো, তাদের পুরুষের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখান—অ্যারিস্টটল বলেন, ‘তাদের মধ্যে কিছু গুণের অভাব আছে বলেই নারীরা নারীসুলভ।’ সেইন্ট টমাস বলেন, ‘পুরুষের ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা বা ঘাটতির নাম হলো নারী।’ তবে বোভোয়ার নিজে মনে করেন, নারীরা পুরুষের মতোই নিজের পছন্দের বিষয় ও পথ বেছে নিতে পারে। নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম তারা।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>