| 19 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ও কবিগুরুর হারিয়ে যাওয়া ঝর্ণা কলম

আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট

সেটা ছিল ১৯১৮ সাল, কবিগুরুর জোড়াসাঁকোর বাড়িতে এক রাতে ঢুকল এক চোর। পাঁচ বছর আগেই কবি নোবেল পেয়েছেন হয়তো সেটা বগলদাবা করতেই তেনার আগমন। কিছু না পেয়ে ব্যাটা ওনার পড়ার ঘর থেকে তাঁর প্রিয় ঝর্ণা কলমটি নিয়ে পালাল ! পরদিন সকালে নজরে আসতে স্বভাবতই মুষড়ে পড়লেন কবি, কত ভালো ভালো রচনা লিখেছেন ঐ কলম দিয়ে! অনুরাগীদের কাছে রোজই একবার করে আক্ষেপ করতেন। এনাদের মাধ্যমেই খবর গেল পুলিশে। একদিন সকালে জোড়াসাঁকো থানার বড়বাবুর আবির্ভাব তাঁর গৃহে, সাথে কোমড়ে দড়ি বাঁধা এক যুবক। তার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয়েছে অনেক চোরাই জিনিসপত্রের সাথে একটি ঝর্ণা কলম। ব্যাটা স্বীকারও করেছে যে সে এটা এই বাড়ি থেকেই হাতিয়েছে।

কলম দেখেই কবি শিশুর মত উচ্ছাসে হাত বাড়ালেন। এবারে বড়বাবু বললেন এটা তো এখন আপনাকে দেওয়া যাবে না স্যার। কোর্টে মামলা উঠবে, সনাক্তকরণের জন্য আপনার ডাক পড়বে তারপর ফেরত পাবেন! কবি আর কথা বাড়ালেন না। যথাসময়ে পুলিশ কোর্ট থেকে তাঁর নামে এল সমন , সাক্ষী হিসাবে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ। বিব্রত কবি জানালেন তাঁর এক পরম অনুরাগীকে যিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি আইন ব্যবসাও করেন। সাফ বলে দিলেন ও কলম ফেরতের জন্য কোর্টে হাজিরা দেবার ঝক্কি তার পোষাবে না।

উকিল বাবুটি তখন বিষয় টি গোচরে আনলেন বিচারকের। ঘটনাচক্রে বিচারক মহম্মদ আনিস সাহেব ছিলেন প্রবল সাহিত্যানুরাগী এবং রবীন্দ্রানুরাগী। শুনেই কোর্ট ইন্সপেক্টর কে ডেকে দিলেন ঝাড়, তুচ্ছ এই ব্যাপারের জন্য কেন কবিকে সমন পাঠানো হয়েছে ? একজন নোবেল পদক প্রাপ্তর জন্য আইনে কি এটুকুও ব্যতিক্রম থাকতে পারে না!

বেচারা কোর্ট বাবু তো ক্ষমাটমা চেয়ে সেদিনই কলম তুলে দিলেন উকিল বাবুর হাতে। পক্ষকালের মধ্যে কলম ফিরে এলো স্বস্থানে । হায়রে, আজ যদি সেদিনের বড়বাবু, উকিল আর বিচারকরা বেঁচে থাকতেন নোবেল টাও নির্ঘাত এতদিনে ফিরে আসত! ‌

উকিল বাবুটি কে ছিলেন জানেন? কবি কৃত্তিবাস ওঝা’র উত্তর পুরুষ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক।
চিনতে পারলেন না তো? ওরে বাবা গায়িকা সুচিত্রা মিত্রের পিতা! ‌

স্বপন সেন
তথ্য সৌজন্যে: অচেনা লালবাজার

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত