Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

তন্ত্র

Reading Time: 2 minutes

নাহ,আর পারা যাচ্ছে না। এ এক অদ্ভুত জ্বালাতন হয়েছে। এই নিয়ে একমাসে দশ দিন হলো। এবার একটা বিহিত করতেই হবে। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়?

একবছর হলো অংশু আর ওর মা এই বাড়িটাতে এসেছে। অংশু একটু নিরিবিলি পছন্দ করে। তার কিছু কারণ ও আছে। এক তো ছোটবেলা থেকে অভাবের সাথে লড়াই করতে করতে ও ক্লান্ত। লোকজন পছন্দ করে না,তার উপর মা বছর খানেক আগে পাগল হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড়ো কারণ তন্ত্র। তাই সস্তায় এই বাড়িটা পেয়ে ও দুবার ভাবেনি।সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে এই বাড়িটা কিনে ফেলে।

ছোটবেলা থেকে মা একা বড়ো করেছে ওকে। পড়াশোনায় ভালো ছিলো। কষ্টের সাথে যুঝতে যুঝতে আজ অংশু মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।শেষ সাত বছরে সামান্য ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট থেকে আজ এই কেমিক্যাল ল্যাবের টেকনিশিয়ান। বাড়ি কিনেছে। এখন একটাই চিন্তা। মাকে নিয়ে। একটা কাজের লোক ও টেঁকে না। গত একবছরে নয়জন কাজ ছেড়ে গেছে। এখন কেউ নেই। ও সকালে মাকে স্নান করিয়ে খাইয়ে ল্যাবে যায়। আবার সন্ধ্যেবেলা এসে খাওয়ায়। মাঝেমাঝে খুব হতাশ হয়ে পরে ও। ওর জীবনটা সংগ্রাম করতে করতেই কেটে যাবে। বিয়ে করার কথা তো ভাবতেও পারে না। একটাই সঙ্গী …..তন্ত্র।

ছোটো খাটো বাগান ঘেরা বাড়িটা সস্তাতে পেয়ে একটু যে সন্দেহ হয়নি তা না। কিন্তু ওর বাড়িটা নেওয়া দরকার ছিলো। পাঁচ বছর আগে থেকে এক গুরুর থেকে সে এই শিক্ষা নিচ্ছে। এক বছর আগে গুরু জানান যে তার শিক্ষা শেষ। এবার অভ্যাস করতে হবে। তার জন্য এই বাড়িটা একদম ঠিক। এলাকায় মানুষ জন কম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাড়িগুলো। এমনিতেই ও কারো সঙ্গে মেশে না। কথা বলতে ওই মোড়ের চা সিগারেটের দোকানদারের সাথে। ওর সঙ্গেই একটু হৃদ্যতা। তাই এই বাড়িটা ও লুফে নিয়েছিলো। ল্যাবেও ওকে কেউ বিশেষ ঘাঁটায় না। কাজ ভালো করে প্রশংসিত হলেও ,পিছনে লোকে ওকে ছিটেল বলে। ভয় পায়।

আজ সকালে ওই কান্ড দেখে মাথা গরম হয়ে গেছে অংশুর। এই নিয়ে দশদিন বাগানের দশ জায়গায় খোঁড়া পেলো ও। কেউ যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। না,আজ রাতেই ওকে বসতে হবে।আজ আর ল্যাবে গেলো না।দরকারের জিনিস গুলো জোগাড় করে নিলো।মাকে সাবধানে রাখতে হবে। গন্ডগোল না করে। ওর এই তন্ত্র সাধনা মায়ের একদম পছন্দ ছিলো না। পাগল হয়ে গেলেও খুব চিৎকার করে এসব করলে। অথচ মায়ের ঘরেই বসতে হবে। দিক অনুযায়ী ওটাই সঠিক।

সন্ধ্যের পরে মায়ের ঘরে গিয়ে মাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেঁধে দিলো। বুড়ি সামান্য টুঁ শব্দ টাও করলো না।
– একদম চুপচাপ বসে থাকবে। আমার কাজ আছে। জ্বালালে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

আস্তে আস্তে সব গুছিয়ে নিলো। দরকারী নেশাটাও করে নিলো। রাত ঠিক সাড়ে নটায় শুরু হলো মন্ত্রচ্চারণ। ধীরে ধীরে বাহ্যজ্ঞান লোপ পাচ্ছে অংশুর। চারিদিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো মোমবাতিগুলো দপদপ করে জ্বলছে। একটা পাশবিক উত্তেজনায় লাল হয়ে যাচ্ছে অংশুর চোখমুখ।

হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় দরজা টা খুলে গেলো। ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো এক আবছায়া নারীমূর্তি। অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় অংশু বলে উঠলো

– একি? মা তুমি?
– শুধু আমি নই। তোর তন্ত্রসাধনার নেশায় যে নয়জন কাজের লোকের হৃদপিন্ড তুই খুবলে নিয়ে তাদের খুন করেছিস আজ সবাই এসেছে। আজ আমরা মিলিত হয়েছি তোর তন্ত্রশক্তির সাথে লড়বো বলে। বাগানের বিভিন্ন অংশে পুঁতে দেওয়া হৃদপিন্ডরা আজ বেরিয়ে এসে এক হয়েছে। দেখি তোর তন্ত্রের জোর কত!

অংশুর চারদিকে দশটা ছায়ামূর্তি। তারা ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে এক দানবীয় কালো ছায়ায় পরিণত হলো।

দিন তিনেক পরে প্রচন্ড পচা গন্ধ পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে অংশুর পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করে। সামনে চেয়ারে কেমিক্যাল দিয়ে সংরক্ষিত করা এক বৃদ্ধার দেহ বাঁধা। পুরো বাড়ি খুঁজে বাড়ির পিছনদিকে একটা নিজস্ব ল্যাব থেকে মানবদেহ সংরক্ষনের সমস্ত ব্যবস্থা খুঁজে পায় পুলিশ।ল্যাবের দেওয়ালে রঙের তারতম্য দেখে সন্দেহ হওয়ায় দেওয়াল ভেঙে নটি কেমিক্যাল দিয়ে সংরক্ষিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। একটার ও হৃদপিন্ড ছিলো না।বাগানে দশ জায়গায় মাটি খোঁড়া পাওয়া গেলেও সেখানে কিছু পাওয়া যায় নি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>