| 27 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

একগুচ্ছ সুজিত দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

আজ ১০ নভেম্বর কবি সুজিত দাসের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

এই যে, শুনছেন?

১। মনস্বী কবিতার আর্টেমিস।

সেক্টর ফাইভে আপনি যতটা আগুন, বাগুইহাটিতে ততটাই হোমমেকার।

স্বচ্ছ কর্পোরেট শার্ট থেকে বেগুনি আভাটুকু সরিয়ে নিলে 

ডাকনামে ডেকে ফেলা যায়।

যেখানে জাভা নেই, কোড নেই, নেই প্রোজেক্ট ডেডলাইন।

লিপটন চা-পাতার সঙ্গে দুধ আর চিনির লিপলক কিস্‌ আছে।

শাশুড়ির আয়া, মুদিখানার ফর্দ, ননদের ভিডিও কল…

এইসব টপকে এখানে আপনার দিকে তাকিয়ে ‘টুউউউউকি’ বলা যায়।

এইখানে, এই জোড়ামন্দিরে আপনার আলো নিভে আসে।

তেঘরিয়া মিনিবাস স্ট্যান্ড পেরোলেই আপনার স্লিং ব্যাগে ঘুমিয়ে পড়েন বিষ্ণু দে।

বিয়েতে চারটে শ্রীজাত পেয়েছিলেন, দু’টো শংকর।

অথচ দেখুন, ‘একদিন হঠাৎ’

এই ফ্রি-ভার্স-এ লেখা কবিতা দিয়ে আপনাকে বধ করে ফেলেছি। কিউট, না?

২।  কলমিবনের উর্বশী।

এই আমার ছুটকো লেখা। ভাতের গন্ধ নেই, বেশ্যাবাড়ির মাটি নেই।

যে কোনও ইস্যুতে কয়েকটি স্তবক লিখে ফেলব, এমন মিস্ত্রিও নই আমি।

আমাকে কি আর খেলা নেওয়া যায়, বলুন?

ভরদুপুরে পাতাকুড়োনি মেয়ের মতো এই যে 

পুকুরে নেমে গেলেন ব্লাউজ ছাড়াই, এই ঢেউ কী করে সামাল দিই, বলুন তো?

সাঁতারের বিভঙ্গ থেকে উঠে আসা কমা, সেমিকোলন আর জোড় বিজোড়ে গাঁথা

উথাল পাথাল শব্দমালা, এরা কেউই…

পিস্তল বুকে ঠেকিয়েও আমাকে দিয়ে একটি সিরিয়াস ফ্যানভাত লেখাতে পারেনি।

স্নান সেরে উঠে এলেন যখন

এবং যখন আমি জেনে গেলাম আপনিই আমার সেই অমনোনীত কবিতা

তখনই ভেতরের সাহসী পাখিটি শিস্‌ দিয়ে ওঠে, ‘তুমি বিবাহিত, না-কি আনুষ্ঠানিক’?

(উৎপল কুমার বসু থেকে এমত কাঁচা চুরির পরও 

সবুজমেরুন শাড়িটি কী নিখুঁত লেপটে রইল ওই গায়েহলুদ আবহে। ভাবা যায়?)

৩। বাংলা কবিতার মহাকাল।

তলচোখে তাকাইনি কোনোদিন।

ফ্রন্টলাইন সৈন্যের মতো আইবল টু আইবল কনট্যাক্ট পছন্দ করে এসেছি বরাবর।

স্বয়ং-খোদা জানেন সেইকথা।

অথচ বাকিদের সেইসব পঙ্‌ক্তিমালা, 

মহাকাল যাদের নিয়ে হা ডু ডু খেলবে, কী অবলীলায় আন্ডারলাইন করে দিচ্ছে 

আপনার উদ্ধত বাঘমুন্ডি, নম্র মুথাঘাস, লাজুক শিরদাঁড়া। স্ক্যান করে নিচ্ছে সবকিছু।

দেখার চোখটিকে এবার বদলাতে হবে, ভাইলোগ।

শিখে নিতে হবে গেরিলা ওয়ারফেয়ার। এক চাউনিতে গিলে ফেলতে হবে আস্ত নদী।

প্রমুখের দলে আর কতদিন, আর কতদিন এক্সট্রার রোলে?

এক্সাইড মোড় পেরিয়ে সামান্য ডানদিকে মহাকাল টোল খুলেছেন।

এবারে গভীর কিছু লিখতে হবে। লিখতে হবে মনস্বী তৎসম শব্দাবলি।

তবেই না মহাকালের ক্লাসটিচার রোলকলে ডাকবেন আমাকে, আমার কালজয়ী কবিতাকে।

এই যে শুনছেন?

আমাকে একটু লিফট দেবেন? থোড়ি সি তো লিফট্‌ করা দে। 

চিনার পার্ক আর সিটি সেন্টারের মাঝে একটু স্লো করবেন, ওখানেই মহাকাল। বাংলা কবিতার প্রাচীন মর্গ।

আনপ্লাগড/৯৯

ক্যাথারসিস।

যা হয়।

‘স্নানে যাচ্ছি’ বলে সেই যে নীহারিকা মন্ডলে গেলে, আর দেখা নেই।

ইতোমধ্যে আমি চেনাজানা সব মন্ডল সভাপতি, জোনাল সম্পাদকদের ফোন করলাম, তোমাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য। মনীষার অন্তর্ধান, রহস্যের চোরাবালি, বেদানার লাল এবং ব্যথার প্রজাপতি… সকলের জন্য মিসিং ডায়েরি। তবু স্নানের ঠিকানা লিখে রেখে কোন মিল্‌কি ওয়ে বরাবর হারিয়ে গেলে বলো তো! তোমার দিলকি দয়া হয় না?

যা যা হয়।

এই নিঝুম সন্ধ্যায়, পান্থ পাখিরা ঘরে ফিরছে। একলা ব্যালকনিতে নিঃসঙ্গ কাট্‌গ্লাস আর তার বরফসাদা ফুল। এই স্ফটিক আবহে তুমি কোথাও নেই। ল্যাপটপে একমনে গাইছেন পবন দাস বাউল। সাদা চুল, রিমলেস চশমা। আন্দাজমত বিড্‌সের মালা। উফার স্পিকার থেকে ভেসে আসছে হাস্কি আওয়াজ, ‘দিনদুনিয়ার মালিক খোদা…’

আরো যা যা হয়।

সম্পর্ক নামের এক অলৌকিক ট্র্যাপিজে এ ওকে লুফে নিয়েছি সন্ধের ‘শো’ বরাবর। এখন সার্কাস শেষ। বাঘ সিংহের খেলা বন্ধ, তাও অনেকদিন। খাঁচার বাঘ, আফিং-এর নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা বাঘ, পটকা ফাটানো কাকাতুয়া, সৎ ও খেটে খাওয়া জোকারের লাফঝাঁপ…এসব দেখে কী হাততালিই না ফাটত গ্যালারি থেকে। পুরো মাখম।

তবু পৃথিবীর কোনও সার্কাস অনন্ত নয়।

প্রকাশ্য হাততালিরও একটা সেলফলাইফ আছে।

সিজন শেষে, সার্কাস এবং চেয়ার দুটোই অচল পয়সা।

স্নান, সম্পর্ক এবং সার্কাস, এসব রাজ-মৃগয়া দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়। চেয়ারও।

স্নানে যাচ্ছি বলে ভর সন্ধেবেলায় সেই যে…

আনপ্লাগড/১০০

শঙ্খবাবুর সঙ্গে আমার কোনও একলা ফটো নেই।

একটা ম্যাজিক লন্ঠন বাদ দিলে আমার আর কিছু নেই।

প্রাইভেট বিচ নেই। বোধি, পিপল গাছ, পরমান্ন এবং সুজাতা কোনোটাই নেই। হাতে তাস নেই, ভাতে মাপ আছে। 

একটা ম্যাজিক লন্ঠন ছাড়া আমার আর সব কিছুই আছে।

গোটা করোনেশন ব্রিজ। ডিমা নদী, রাইখর মাছের ঝাঁক, তিতির বনক্ষেত্র। সব আছে। রঙের বিবি আছে, ঢঙের ছবিও।

এক একদিন মনখারাপ থাকে। 

ম্যাকউইলিয়াম হাই-এর শিরীষ পাতায় ভরে যায় ঘরদোর। সমীরবাবু স্যারের কবিতা ট্র্যাফিক সিগন্যালে বেজে ওঠে। বঞ্চুকুমারীর রাস্তায় দুলে ওঠে সরু বাঁশের সাঁকো। হ্যামিলটন ভাটিখানার বাইরে রঙিন ম্যাজিক লন্ঠন। দূরের আঁটিয়াবাড়ি বাগানে মাকনা হাতির তাণ্ডব।  ডিপ্রেশনের নিখুঁত কোলাজ।

এক একদিন দিলখুশ। 

ইনবক্সে মঞ্চসফল সিভিক কবি। মুড়ির বাটিতে মুখরোচক চানাচুর, অড়হর ডালে লাজুক কারিপাতা। ব্যারেজের জল থেকে মাছ মুখে নিয়ে উঠে আসা চতুর পানকৌড়ি। ওদিকে কুলিলাইনে ধামসা মাদল। ওরাওঁ বালিকার কপালে কাচপোকার টিপ। চার্চের মাথায় ম্যাজিক লন্ঠন!

তবু আমার কোনও জাদু লন্ঠন নেই।

হয়ত আমার একটা জাদু লন্ঠন আছে।

নেই নেই করে ক্রাই বেবির মতো কাঁদতে নেই। একটা গোটা রায়ডাক নদী, অর্ধেক ক্যাসলটন এবং কিছু লবণে মুখ রাখা হলুদ প্রজাপতি আমার ন্যাংটোবেলার বন্ধু। এদের নিয়েই বেশ আছি।

দুঃখ এই, শঙ্খবাবুর সঙ্গে আমার কোনও একলা ফটো নেই।

গুড মর্নিং, কলকাতা/২৫

এটাই দস্তুর।

কোথায় থামতে হবে, আমি জানি না। আমি তো জানি না, কেউই কি জানে? এই উনপঞ্চাশে ভাল সেলফি ওঠে না, এই উনপঞ্চাশে গুছিয়ে তেল দেওয়া যায় না, এই পোস্ট মিড লাইফে উচ্চাকাঙ্ক্ষা কমে আসে। যৌনতা বাড়ে তবে চেনামুখে নয়। এমনকী বন্ধুতা, সেটাও হিসেব কষে, সেটাও ফেসবুকে। এটাই দস্তুর।

শুকিয়ে আসা ঊরুতে জিন্স্‌ মানায় না, স্লিভলেস মনে করায় বিগত সন্ধ্যার কথা। এসময়ে কবিতা লিখতে আসা একটা পাপের কাজ। এখন কোনও কবিতা নেই। তরুণ কবিও জানে এ করুণ সময়ে কবিতা লেখার চাইতে চাকরবৃত্তি অনেক সহজ পথ। কী দরকার, বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বাঁকুড়া যাওয়ার, কী দরকার কলকাতার ফুটপাথ বরাবর হেঁটে যাওয়ার, কি দরকার? কবিতার ঈশ্বর যারা, কেউই প্রকাশ্যে কারো পিঠে চুমু, প্লেটে চা, চায়ে ডুবিয়ে খাস্তা বিস্কুট খাননি। ঈশ্বর লুকিয়ে সোনাগাছি গিয়েও ফিরে এসেছেন কমদামি পাউডার আর মেয়েদের খিস্তি গায়ে মেখে। এটাই দস্তুর।

মাননীয় সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, উপ সম্পাদক(পতি/পত্নী নয়)… যে কবিতা আমি পাঠাই সেইসব অপাঠ্য হয় আপনারা ছাপেন, না হয় কেজি দরে বেচে দ্যান। তবু আমি অসন্তুষ্ট। আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না, রাজন। কবি সন্তুষ্ট হলে অসময়ে বৃষ্টি নামে, শেয়ার বাজারে সেন-সেক্স কমে আসে। অসন্তুষ্টি আমার অহংকার, অসন্তুষ্টি আমার পুজোয় চাওয়া নতুন জুতো। এটাই দস্তুর।

এই অসময়ে আমার সব ‘জবাহর কোট’ আমি বেচে দিয়েছি। একটাও ‘নমো ড্রেস’ কিনিনি। ফ্যাব ইন্ডিয়ায় যাইনি, তাও বহুকাল। ঝালে ঝোলে অম্বলে, কোনোটাতেই যে ফিট করছি না, প্রভু। অসন্তোষের চাদর গায়ে জড়িয়ে ফেলেছি। ফর্সা বৃত্ত থেকে নাম কাটা গেছে। আমার নিন্দেয় নম্বর বাড়ে, এটাই পাওনা। নাটমন্দিরের কবিও জানেন বক্সিং রিং এ আমি দুধভাত। উনিও শিখে গেছেন কোথায় চটকানো যায়। তবু হে প্রিয় গেস্টাপো, এত জায়গা থাকতে কবিতায় কেন? পান্ডুলিপি পোড়ানোর আগে আপনাকে অক্ষরের সঙ্গে দোস্তি করতে হবে। আপনার হিটলার বলেননি আপনাকে সেইকথা? উনি কি জানেন না পোড়ামাটির ব্লু-প্রিন্ট? অবশ্য এটাই দস্তুর।

আমার আওতায় লিটিল ম্যাগ নেই, হাতে মাগ নেই(ভাতারও না), শীতের কফি মগ নেই, কিচ্ছু নেই। শুধু অসন্তোষ নিয়ে বেঁচে আছি। প্রথম পঙক্তিগুলোর লাইগেশন হয়ে গেছে বহুকাল, ভাবনার জগতে ভ্যাসেকটমি করিয়েছি গত বর্ষায়। তবু এত অবিশ্বাস কেন, গোয়েবলস্‌? প্রকাশ্যে লাইক দিন, ইনবক্সের পিরীতি বালির বাঁধ। বাঁজা কবির ওপর ভরসা রেখে কি লাভ? সে কোনোদিন সন্তানের মুখ চুম্বন করতে শিখবে না, সে আপনার দুয়ারে হাততালি দেবে, সময় এলে আপনার ক্রুশ আপনাকে দিয়েই যে বওয়াবে না, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই বরং এটাই দস্তুর।
*
*
*
*

কোথায় থামতে হবে, আমি জানি না। আমি তো জানি না, কেউই কি জানে?

আনপ্লাগড্‌/৮

প্রিয় জেনারেল,
Valkyrie সিনেমাটা দেখছিলাম একটু আগে। টম ক্রুজের অসাধারণ অভিনয়। নাৎসি জার্মানিতে হিটলারকে অ্যাসাসিনেট করার প্ল্যানটাই এই ছবির স্টোরিলাইন। সেটা নিয়ে লিখছি না, লিখছি জলপাই পোশাকের হিউম্যান ভ্যালুজ নিয়ে। একজন জেনারেল পিস্তলের শেষ দানা অবধি তাঁর যোদ্ধাদের সঙ্গে থাকেন। এটাই অলিভ গ্রিন রঙের কামারাদারি।

প্রিয় জেনারেল,
আপনি আমায় বললেন উত্তরে ক্যু করো। আমি হরবোলা হয়ে গেলাম। দক্ষিণে আপনি সেই পরিযায়ী পাখিদের দানাপানি দিলেন। সর্বাধিনায়ক, সব পাখি ঘরে আসে না। সব নদীও। ব্যাটলফিল্ডে ফিফথ কলাম থাকে। পঞ্চম বাহিনী। এই পঞ্চম যে ‘আর ডি’ নন, জানেন তাও। এই ‘পঞ্চম’ আপনার শিয়রের সমন। গভীর রাতের দুঃস্বপ্ন। জানালার কাচে ঝনঝন করে ওঠা প্রস্তরখন্ড।

প্রিয় জেনারেল,
বরাবর যুদ্ধের কাহিনি আমার পছন্দের বিষয়। Inglourious Basterds মনে আছে? ট্যারান্টিনো। আর ক্রিস্তফ ওয়ালজ-এর অভিনয়? শুঁকে শুঁকে ইহুদি খুঁজে বের করায় তার জুড়ি নেই। এই নির্মম চরিত্রে অভিনয় করার সময়েও কী অনবদ্য হাসি লেগে থাকে ভদ্রলোকের মুখে। শিশুর কপালে বুলেট দেগে দেওয়ার আগেও মুখের পেশিগুলি থেকে হাসি মিলিয়ে যায় না। ভাবা যায়!

প্রিয় জেনারেল,
ফেসবুকে এখন হেমন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুখোপাধ্যায় না, ঋতু। আর এই হেমন্তে কাটা হয়ে গেছে ধান। ধূসর মাঠগুলিতে নেংটি ইঁদুরের দাপাদাপি। ধান, ধান। দু-এক দানা ধানের কী অপার মহিমা! আমি কি করি এখন জেনারেল? যে কাঠের বাড়িতে লুকিয়ে আছি তার ওপরে ক্রিস্তফ ওয়ালজ, নিচে ইঁদুর। ফাঁদটা ভাবুন একবার! আপনি আমাকে টার্গেট প্র্যাকটিস করিয়েছেন, পাখির ডাক শিখিয়েছেন, কাঁধের তারাটিও আপনারই দেওয়া। কিন্তু চক্রব্যূহের রহস্য আপনি শেখাননি।

প্রিয় জেনারেল,
একটার পর একটা দুর্গ দখল হয়ে যাচ্ছে। ওয়ার রুমে এত টেলিফোন(বেজেই চলেছে)। ফুয়েরারের ছবি মাথার ওপর (বাধ্যতামূলক)। আপনার কফি কি ঠান্ডা হয়ে গেল, ক্যাপ্টেন! শিরদাঁড়াও?

না জেনারেল, ‘হের হিটলার’ আমি বলব না। শেষ দানাটা নিজের জন্য। আপনি শিখিয়েছিলেন। একসময়।
Glückwunsch.
অভিনন্দন, প্রিয় জেনারেল।

আনপ্লাগড্‌/১১

‘… তখন সকলের বিদীর্ণ কণ্ঠের গগনভেদী ক্রন্দনে সমস্ত বাড়িটা কাঁপিয়া উঠিল, কিন্তু নীচের ঘরে কিরণময়ী নিরুদ্বেগে ঘুমাইতেই লাগিল।’

‘চরিত্রহীন’-এর কোনও শেষ লাইন নেই। তবু আছে, থাকতে হয়। চরিত্র ব্যাপারটাই পদ্মপাতায় জলের মতন। এই আছে, এই নেই। চরিত্র এক অনন্ত বাইনারি। চরিত্র ঊরুসন্ধির সিঁদুর।
Can’t Help Falling In Love

চরিত্র এলভিস প্রিসলের গান, ভিখিরির খুচরো। থাকলে ঝনঝন করে। জানান দেয়। না থাকলে ‘গগনভেদী ক্রন্দনে’ পাড়া কাঁপাইয়া দেয়। চরিত্র শরৎবাবুর ‘গঙ্গার ঘাটের পাগলি।’ তবু ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।’

আমি চরিত্রের আঁচলে চাবি বেঁধে দিই, চরিত্রের খোঁপায় গুঁজে দিই করঞ্জ ফুল। তার শোওয়ার ঘরে সিগারেট খেতে দ্বিধা করি। লিনেনের শাড়ি ভাঁজ করে রাখি কাঁঠাল কাঠের আলনায়।

তো এই হল ব্যাপার। চরিত্রের গোপন তিল, প্রকাশ্য তিসি ক্ষেতের খবর আমি রাখি। যে সব চরিত্র সামনে আসে না, পর্দার পেছনে পুতুল নাচের ইতিকথা রচনা করে, তাঁদের কথা আলাদা। সব চরিত্র তো কাল্পনিক নয়। দু’একটি চরিত্র আড়াল থেকে বেজে ওঠে ডিজিটাল ডলবিতে। যেভাবে ভগমান দিনে চারবার তথাস্তু বলে, সেইভাবে। কয়েকটি চরিত্র রজস্বলা নারীর মতো। লাজুক, দ্বিধা থরোথরো। মিথ আর মিথ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্যানিটারি ন্যাপকিন। এখন জিএসটি নেই।

তবু ক্যারেকটার আমার বুকশেলফ।
বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা লোকনিন্দার দ্রিমিদ্রিমি।
চরিত্র আমার মঞ্চসফল কবিতা। উইংসের পাশে দাঁড়ানো যতিচিহ্ন।
চরিত্র এক সফল নাট্যকার।
আর আমি নাট্যকারের সন্ধানে ছয়টি চরিত্রের একজন।
Six Characters in Search of an author.

পিরিয়ড।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত