| 24 অক্টোবর 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

তাল পাতার পাখা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

পাখা শব্দটি পাখ পাখালির সমগোত্রীয়। পাখির পাখা বা পাখনা আছে। আছে উড়োজাহাজেরও। তবে পাখা বলতেই গ্রাম বাংলার মানুষ এখনো গরমে শীতল বাতাস পাওয়ার অবলম্বন হাতপাখা বুঝে। এই পাখা তৈরি ও ব্যবহারের ইতিহাস বহু প্রাচীন। বাঁশ বেতের কাপড়ের এবং তালপাতার পাখা এখনো টিকে আছে। টিকে আছে পুরনো ঐতিহ্য ধারন করে।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল পাঞ্জি হিসেবে দু’মাস মাত্র। কিন্তু আবহাওয়া গরম থাকে প্রায় পাঁচ মাস। চৈত্রের প্রখর রোদ ভাদ্রের কাঠফাটা অথবা জৈষ্ঠের কাঠাল পাকা গরম আবহমান বাংলায় চির পরিচিত। পীড়াদায়ক গরম থেকে সাময়িক স্বস্তির হাতিয়ার পাখা। বিদ্যুৎ তো ঐ সেদিনের। এর আগেও গরম ছিল। বিদ্যুৎ চালিত ফ্যান বা পাখা আজকাল আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ এখনো এ দেশের অধিকাংশ মানুষের নাগালে পৌছেনি। এমন সব অঞ্চলে পাখার সমাদর সেই আগের মতোই আছে।
অতীতে রাজা বাদশারা দরবারে বসতেন। ময়ূরের পালক বা চমৎকার রেশমী কাপড় তৈরী পাখা হাতে ডানে বামে দাঁড়িয়ে থাকতেন দাসদাসী। চামর দুলিয়ে বাতাস করতেন তারা। সাধারণ লোকজন ব্যবহার করতেন বাঁশের, কাপড়ের এবং তাল পাতার পাখা। বিত্তবান লোকের কাছারি বা টঙ্গি ঘরে ছাদ বরাবর কড়ি কাঠে ঝুলানো থাকতো ইয়া বড় কাপড়ের পাখা। নিচে ঝুলতো রশি। রশি টেনে চালানো হতো সেই পাখা। তবে হাত পাখাই সব যুগে ছিল প্রধান।
বাঁশ ফেটে ফেড়ে পাতলা পরত তৈরি করে মহিলারা বানাতেন সুন্দর পাখা। দিতেন রং। বুননে কারুকাজ। এক পাশ ঘেষে ছোট নলের মতো গোলাকার বাঁশ। ছোট প্রজাতির বাঁশের ছিদ্রযুক্ত নলের ভেতর দন্ড। হাতে মুরালেই পাখা চক্রাকারে ঘুরে। গা শীতল হয়। এছাড়াও সাদা কাপড়ে ফুল তুলে বাঁশের ফ্রেমে তৈরি সৌখিন পাখার প্রচলন ছিল। কোনো কোনো পাখায় মিহিসুতায় লেখা হতো সরল দু’এক লাইন পদ্য। পাখা তৈরি ছিল মহিলাদের আয়ের একটি উৎস।
স্বামী বা সন্তান এমনকি নিকট আত্মীয় কেউ গরমের দিনে বাইরে থেকে এসেছেন। মা বা স্ত্রী তখন পাশে এসে দাঁড়াতেন পাখা হাতে। নির্মল স্নেহ মাখা বাতাসের পরশে গা জুড়িয়ে যেতো। এখনো এমন দৃশ্য শুধু নাটকে নয় বাস্তবেও আছে। প্রচন্ড গরমে কেউ কেউ পাখাটা পানিতে ভিজিয়ে বাতাস করতেন। এতে পাখার বাতাস অধিক শীতল হয়। পাখা তৈরিতে তালপাতার ব্যবহার ব্যাপক। তালের পাখা, প্রাণের সখা গরমকালে দিও দেখা। এ পংক্তিটি গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে সুপরিচিত। তালপাতার পাখা তৈরি ও বিক্রি অনেকের জীবিকা হিসেবে এখনো টিকে আছে। তালপাতা, বাঁশের কঞ্চি ও সুই সুতা এ পাখার উপকরণ। প্রথমে তিন চার ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় পাতা। পানি থেকে তুলে রোদে শুকিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে বৃত্তাকারে ছেটে রং করা হয়। একশ’ পাতা থেকে ২০০ পাখা তৈরি করা যায়। পাখা বিক্রি হয় বাজারে, ট্রেনে, বাসে ও মেলায়। তাল গাছ এখন কমে আসছে। তাই এক্ষেত্রে শিল্পীর সংখ্যাও কমে আসছে। তবু চিরায়ত বাংলায় পাখা আজো গরমে শরীর জুড়ায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত