তন্ময় ভট্টাচার্যের কবিতাগুচ্ছ
আজ ১৪ সেপ্টেম্বর কবি ও কথাসাহিত্যিক তন্ময় ভট্টাচার্যের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
মনে পড়ে যায়
ছটফটে বিছানায়
বৃষ্টি পড়ছে। গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ঢেউ।
শহর ভাসছে ভাসানের কোলাহলে।
অন্ধকারকে মশারির ঘরে আটকে রাখছে
রাত দেড়টার অচেনা শরৎকাল।
মঙ্গলঘট সন্তর্পণে আধবুক গঙ্গায়
স্বপ্ন দেখছে। কাঠামোয় ভাঁটা।
ফুরিয়ে আসছে বিন্দু বিন্দু স্রোত।
গাছ থেকে মায় শরীর অবধি
পাতার কবরে ঢেকে গেলো আগমন
তখনই বোধহয় মনে পড়ে যায় সেই কিশোরীর নাম
বিনা দোষে যাকে ভালোবেসে ফেললাম
প্রতিপ্রশ্ন
বদলে যাচ্ছি বলে অনেকেই আঙুল তোলেন
কেউ কি জানেন,তাঁরা কখন কীভাবে কী কারণে
নিজেরাই বদলান
লকগেটে চাপ বাড়ছে
বন্যায় ভেসে যায় যাক
ছোটো-বড়ো জনপদ ও তাদের জনহিত কাজ
এবার বাঁধের মুখ খুলতে হবেই
নইলে বিস্ফোরণে সারা দেশ ফেটে পড়বে
আপনারা লাভাস্রোতে নৌকোই চালাবেন তো?
দেড় বছর ধরে
(১)
কোনোদিন পাশে বসে জোনাকিরা জিজ্ঞাসা করেনি
ভালো আছি কিনা!
আমি জানি একা থাকা মানে কি…
খুব রাতে ছুটে আসা ক্লান্তির মতো
পৃথিবীকে কাঁধে নিয়ে চলেছি…
অথবা কাঁধেই চেপে চলেছি…
বহুদূর…দলছুট…
নির্ঝঞ্ঝাট এই অন্য মেঘের দেশে
সব এক…তবু যেন আলাদা…
পোড়া দেহে ভালোবাসা পোড়েনি।
(২)
যদিও অন্যভাবে,অভ্যেসে সবকিছু পারা যায়।
দশমাস নাড়ি বেঁধে যে আগুন বড়ো করে তুলেছি,
তাতে উত্তাপ নেবো…এর চেয়ে বড়ো কিছু
আছে কি?
যেদিন সময় হলো,সে আগুনে ধর্মতঃ
ছাড়াছাড়ি…লোকে ভাবে বৃষ্টি…
সেদিনও কান্না ছিলো…একলা বাঁচার ভয়…
তবুও ঠিকানা লিখে যাইনি…ইচ্ছে করেই…
ভালোবাসি,তা বলে তো এইভাবে তোকে কাছে চাইনি!
সামান্যই
১
(‘শেষের প্রহর পূর্ণ করে দেবে না কি’)
সমস্ত গ্রাম এসে ঠেকেছে দোঁহার করতলে
তাও ফোঁটা ঝরে যায়
পরতে মৃদুল বাজে – ‘নাই নাই নাই…’
খাতায় ছায়ারা কাঁপে
শতাব্দ, তাকে জানি কোনও এক দুপুরে বোটের
ওপারে গগন ডাকে
এ-ছাদে লালন, বিচরণ…
যাওয়ার সকল থেকে তোমাকে গুছিয়ে রাখি
পরের কবিতাটিতে
স্রোত আর পেল না কারণ!
২
(‘ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা, তাই কি জানি’)
কারণ, তোমাকে সেই ঝড়ভাঙা দুয়ারে প্রথম…
ও-ঘরে নিজের চোখে
ডুবে যেতে দেখেছি পরাণ
মাঝি, কী নোঙর জানো
দাও স্পর্শ, দাও বোধ, ঢেলে দাও সুরে ও কথায়
আমার পরাণ যদি
জোয়ারে ঠিকানা পেতে চায়
আমিও কি পারব না, তোমাকে স্নানের ভেবে
চলে যেতে পরের লেখায়?
৩
(‘কী পাইনি, তারই হিসাব মিলাতে…’)
লেখায় সততা রাখি; আর সব বিকেলে খোয়াই
একটি আকাশ থেকে
মণি ঝরে, মণিগাছ, গাছের শরীরে মাখা ছাই
আমি সে-ছাইয়ের পাশে বালুকণা, মুখ গুঁজে
ভাব যেন দেখি না কিছুই
তোমাকে আকাশ ভেবে, মণি ভেবে, গাছ ভেবে
চোখের ভিতরে নিয়ে শুই
এত যে তুমি’র পরও হাহাকার বেঁচে থাকে
খনিজের ইশারা কোথায়
কবিতাস্বভাব থেকে এই প্রশ্ন টলোমলো
গানের শিয়রে ছুটে যায়
৪
(‘যে পথে যেতে হবে, সে পথে তুমি একা’)
যায় না, পাশেই থাকে; দেখা শুধু পাওয়াটি কঠিন
আখরে সকাল জমে
জমে বা অন্য কারও তাপ
সময় নিজের মতো হেঁটেছে এমন চেরা দিন
পাখির তেমন কোনও দোষ নেই
যা-কিছু খারাপ
নিজের ভিতরে রেখে স্বাভাবিক বলেছি শ্রাবণ
আমার কবিতা থেকে
এইমাত্র উঠে গেল তোমার আঘাত-লাগা মন
