আজ ১০ আগষ্ট কবি,কথাসাহিত্যিক সৈয়দ তারিকের জন্মতিথি।ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
এক
রক্তজবা কি ফোটে নি প্রণয়ে ?
গন্ধরাজ কি হাসে নাই ?
পুঞ্জ-পুঞ্জ আলোক জ্বালিয়ে
জোনাকিরা ভালোবাসে নাই ?
ওড়া-চুমু ছুঁড়ে দেয় নি চন্দ্র ?
ধরে নি বাতাস জড়িয়ে ?
কৃষ্ণবিবরে চকমকি ঠোকো
সূর্যকে দূরে সরিয়ে !
দুই
কলাবতী ফুল গোসলে বিভোর
উঠানে তুমুল বৃষ্টিধারা;
ঘরকুনো এক সাপ ঘুমাচ্ছে,
আজব সে আর সৃষ্টিছাড়া।
সোনাব্যাঙগুলো কলকল করে
হেসে ওঠে গূঢ় রসিকতায়;
কুণ্ডলি আরও ঘন করে সাপ –
কাজ নাই আর বেশি কথায়।
তিন
মন ভরে যায় বিষণ্ণতায়
সূর্য যখন নিভন্ত,
খুলে দেখি ফিতা, মমির হৃদয়ে
অবিকল প্রেম জীবন্ত।
আলোর নেকাবে আলো ছিল ঢেকে
পটভূমিকায় ফেরে চাঁদ;
ভায়োলিনে থামে মর্সিয়া সুর
গিটারে তুমুল সেরেনাদ।
চার
সেই কবে এক মোহন বাঁশি
বাজিয়েছিলো কদমতলায়
রক্তে জাগে বৃন্দাবনের টান—
তোমার চোখে দুচোখ রেখে
নিষ্পলকে তাকিয়ে থেকে
অনন্তকাল ডুকরে কাঁদে প্রাণ।
পাঁচ
ঘুম ভাঙতেই টের পাই—
খামোখাই মন খারাপ লাগছে
দূরারোগ্য সে ছোঁয়াচে অসুখ
বুঝি-বা আবার শিরায় জাগছে!
কে নেবে সেবার দায়?
অসুখে অসুখে মিলে মহাসুখ
চিকিৎসা ভেসে যায়।
ছয়
এমন ছিলো না কথা — ডুবে যাবেশৈলশিখর,
এরকম ভেসে যাবে পুরো রাজধানী;
হলুদ, বেগুনি, নীল মেঘে ঢাকা আমারআকাশ :
তোমার দুচোখ ভরা পানি।
নীলাভ দ্যুতিমা জ্বলে; অনুভবে টলোমলো জল;
বাতাসে অবোধ্য স্বর ফিস ফিস কথা বলে যায়।
সে-কোন মর্মরে, বলো!
বেজেছে করুণ বাঁশি অবারিত গাঢ় পূর্ণিমায় ;
সহসা স্বপ্নের ঘোরে করতলে ফুটেছে উৎপল।
গোপন নির্ঝর বয় মৃত্তিকার গভীরে _ অতল;
আকাশে বিদ্যুৎ জ্বলে উজ্জ্বল, সুন্দর _ নিভে যায় :
সে-কোন মর্মরে, বলো!
পরাগ কেশরে বাসন্তী জামা; গাঢ় নীল টিপ
অপরাজিতায়; প্রজাপতি সব সংবিৎ হারা;
দাও হাতছানি!
চৈত্র বাতাসে দু-চোখে স্বপ্ন দিয়ে যায় সাড়া,
কোন গহ্বরে আলাউদ্দীনের মায়াবি প্রদীপ?
কম্প্র আঙুল উদ্গ্রীব ছুঁতে সেই নীল টিপ
কল্প-দ্বীপের বাসিনী হৃদয়ে দ্রুত দেয় নাড়া;
দাও হাতছানি!
আষাঢ়-শ্রাবণ পার হয়ে গেছে, আকাশে শুভ্র মেঘ :
যা-কিছু চেয়েছো তা-ই যদি পাও ফুরাবে যে চাওয়া জানো না কি?
অনুষ্ঠানের পর্ব শেষেই জেগেছিলো উদ্বেগ :
দিবস-রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।
চঞ্চলা আজ কোন অভিঘাতে নিশ্চুপ-নিরাবেগ?
যা-কিছু চেয়েছো তা-ই যদি পাও ফুরাবে যে চাওয়া জানো না কি?
জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে হৃদয়ের ভরবেগ :
দিবস-রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।
শেষ রশ্মির মতো রক্তিম টলোমল ভাবাবেগ :
যা-কিছু চেয়েছো তা-ই যদি পাও ফুরাবে যে চাওয়া জানো না কি?
সড়ক-বাতির ফ্লুরেসেন্ট আলো জ্বেলে রাখে সংবেগ;
দিবস-রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি :
যা-কিছু চেয়েছো তা-ই যদি পাও ফুরাবে যে চাওয়া জানো না কি?
![সৈয়দ তারিক](https://irabotee.com/wp-content/litespeed/avatar/cacf71b0b5151e8ebdf1b7db0f5c4e16.jpg?ver=1736892382)