বাঁধন ছেঁড়ার সাধনে ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউরা
বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদান বিরাট ।নানাদিক থেকে এ বাড়ি থেকেই নবজাগরণের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে । ব্যবসা-বাণিজ্য , ধর্ম ও সমাজসংস্কার , সাহিত্যরচনা , সাহিত্যসভা ও পত্রিকা পরিচালনা , নাচ-গান-অভিনয়-ছবির চর্চা, রাজনৈতিক ভাবনা –সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঠাকুরবাড়ির মানুষজন । শুধু পুরুষ নয়, এগিয়ে এসেছিলেন এ বাড়ির মেয়ে-বউরাও ।
সেকালে মেয়েরা ছিল অন্তঃপুরবাসিনী । বাইরে বেরুনো , অন্য পুরুষের সঙ্গে বাক্যালাপ ছিল নিযিদ্ধ। প্রয়োজনে বাইরে বেরুতে হলে ঘেরাটোপ দেওয়া পালকিতে পাহারাদার নিয়ে যেতে হত। বাইরে বেরোবার পোশাকই ছিল না মেয়েদের । রুদ্ধবদ্ধ অন্তঃপুর থেকে প্রথম বাইরে বেরুলেন জ্ঞানদানন্দিনী । তিনি এ বাড়ির মেয়ে নন , বউ । সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী । বিলেত থেকে ফিরে এসেছেন স্বামী । তাঁর নতুন কর্মক্ষেত্র বোম্বাই । সেখানে তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান । সে কথা শুনে চমকে গেল সবাই । তা চমকাক , এখন শুধু বাবা দেবেন্দ্রনাথের সম্মতির অপেক্ষা । দেবেন্দ্রনাথ দিলেন সম্মতি । কিন্তু বাইরে বেরুবেন কি পোশাক পরে! সেকালে সে পোশাক ছিল না , কেননা মেয়েদের বাইরে বেরুবার চল ছিল না । এক ফরাসি দোকান থেকে তৈরি করানো হল পোশাক । পছন্দ না হলেও তাই পরে যেতে হল জ্ঞানদানন্দিনীকে । দুবছর বাদে তিনি যখন ফিরলেন দেশে তখন তিনি পছন্দসই পোশাক তৈরি করে নিয়েছেন । শাড়ি পরার সে ঢঙের নাম বোম্বাই দস্তুর । শায়া-সেমিজ-ব্লাউজ-জ্যাকেট পরার রীতিও চালু করলেন তিনি । শুধু বোম্বাই নয়, স্বামীর সঙ্গে বিলেতেও গেলেন জ্ঞানদানন্দিনী। চালু করলেন জন্মদিন পালন আর সান্ধ্যভ্রমাণের রীতি । সেই সান্ধ্যভ্রমণের রীতি অনুযায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী ঘোড়ায় চড়ে স্বামীর সঙ্গে গড়ের মাঠে হাওয়া খেয়ে বেড়াতে লাগলেন। হেমেন্দ্রনাথের মেয়ে মনীষা শুধু স্বামীর সঙ্গে বিলেত যান নি , হিন্দু মার্গ সঙ্গীতের শুদ্ধ সুরের জাদুতে তিনি সেখানকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন । দ্বিজেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ হেমলতাও ইউরোপ গিয়েছিলেন । তখন সেখানে বইছিল নারীমুক্তি আন্দোলনের হাওয়া । সে হাওয়া অবশ্য হেমলতাকে প্রভাবিত করে নি । দ্বিজেন্দ্রনাথের দুই নাতনী গীতা আর দীপ্তি ঘুরে আসেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি । হেমেন্দ্রনাথের মেয়ে সুষমা স্বামীর সঙ্গে ঘুরে এসেছিলেন জাপান। তারপর তিনি যান আমেরিকা । ভারতের নারীদের অবস্থা নিয়ে বক্তৃতা দেন সেখানে। সুষমার বোন সুদক্ষিণা বিবাহসূত্রে থাকতেন উত্তরপ্রদেশের হরইদ-বুধাওন-শাহজাহানপুরে ।
রবীন্দ্রনাথ পরিহাস করে নিজেকে স্কুল পালানো ছেলে বলেছেন । প্রথাগত শিক্ষার প্রতি একটা বিরূপতা ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের ছিল । অথচ শিক্ষার প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ । জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার একটা বেগবতী ধারা ছিল বাড়ির ভেতরে । ঠাকুরবাড়ির পুরুষ ও নারীরা প্রত্যেকেই স্বশিক্ষিত । মেয়েদের শিক্ষার প্রতি দেবেন্দ্রনাথ ও তাঁর ছেলেদের নজর ছিল । বাড়িতে অভাব ছিল না নিত্য-নতুন বই ও পত্রিকার । পড়াতে আসতেন দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন শিক্ষিকা । মেয়েদের মধ্যে প্রথম প্রথাগত শিক্ষা লাভ করেন হেমেন্দ্রনাথের মেয়ে প্রতিভা । লরেটো স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী তিনি । স্কুলে পড়েছেন কিন্তু পরীক্ষা দেবার কথা ভাবেন নি । সত্যেন্দ্রনাথের মেয়ে ইন্দিরা ব্যতিক্রম । এ বাড়ির মেয়েদের মধ্যে তিনি প্রথম বি এ পাশ করেন । ফারাসি ভাষায় সুপণ্ডিত স্বামী প্রমথ চৌধুরীর সংস্পর্শে এসে তিনি শিখেছিলেন ফরাসি ভাষা । হেমেন্দ্রনাথের মেয়ে সুষমা কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে পিয়ানোর পরীক্ষা দিয়ে অধিকার করেন প্রথম স্থান । স্বর্ণকুমারীর মেয়ে সরলা ইন্দিরার মতো বি এ পাশ করেন । তারপর সংস্কৃতে এম এ পড়তে শুরু করেন কিনতু পরীক্ষা দিতে পারেন নি । সৌমেন্দ্রনাথের স্ত্রী গুজরাতি মেয়ে শ্রীমতী (সুহাসিনী) পড়াশুনো করেন শান্তিনিকেতনে, তারপর শিশুশিক্ষা বিষয়ে পড়ার জন্য তিনি যান জার্মানি ।
দেবেন্দ্রনাথ ও তাঁর ছেলেরা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রবল স্রোত সৃষ্টি করেছিলেন ঠাকুরবাড়িতে । সাহিত্যরচনার সঙ্গে নাচ-গান-অভিনয়-ছবি আঁকা সবদিকেই উৎসাহ ছিল তাঁদের । ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউদের মধ্যেও এই উৎসাহ সঞ্চারিত হয় । হেমেন্দ্রনাথ তাঁর স্ত্রীকে লেখাপড়া শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে গান শেখানোর ব্যবস্থা করলেন । আপত্তি উঠল । হেমেন্দ্র গ্রাহ্য করলেন না ।স্ত্রী নীপময়ীও উৎসাহী । বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে গান শিখতে শুরু করলেন তিনি । আবার শুধু গান নয়, বাঁয়া তবলা ও করতাল বাজাতে শিখলেন ।অবসর সময়ে আঁকতে লাগলেন ছবি । তাঁর মতো সুগায়িকা ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী ।সেই সঙ্গে অভিনয় ।‘বসন্ত উৎসব’ , ‘অলীকবাবু’ , ‘মানময়ী’ প্রভৃতি নাটকে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কাটে । তাঁর তাঁর একটা ছবি তাঁর স্বামী টাঙিয়ে রেখেছিলেন ঘরের দেওয়ালে । গৃহিনীপনায় আত্মনিবেদিতপ্রাণ রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী খুব বেশি প্রকাশ্যে আসেন নি । ‘রাজা ও রানি’ নাটকে ভাশুরের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। হেমেন্দ্রনাথের মেয়ে প্রতিভা ছিলেন প্রতিভাময়ী । দেশি-বিদেশি উভয় সুরের চর্চা করেন তিনি ।
তাঁর গান শুনে রাজা শৌরীন্দ্রমোহন তাঁকে পুরস্কার দেন । ‘বাল্মীকিপ্রতিভায়’ সরস্বতীরূপে আবির্ভূত হয়ে তিনি সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন । হেমেন্দ্রনাথের আর এক মেয়ে অভিজ্ঞার করুণ গান শুনে পাষাণ হৃদয়ও বিগলিত হত । ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ও ‘মায়ার খেলা’য় তাঁর গান ও অভিনয় সম্পর্কে সেকালের পত্রিকায় উচ্ছ্বসিত প্রশংসা প্রকাশিত হয় । অভিজ্ঞার পরের বোন মনীষা ছিলেন সুরস্রষ্টা । বিদেশে মনীষার পিয়ানোয় আমাদের মার্গ সঙ্গীতের সুর শুনে ম্যাক্সমুলার তাঁকে চিঠি দিয়েছিলেন । স্বর্ণকুমারীর মেয়ে সরলা সাহিত্যসেবা ও দেশসেবার সঙ্গে গানেরও চর্চা করেছেন। পিয়ানো সঙ্গত ও বেহালাবাদনে পটু ছিলেন তিনি । ‘বন্দেমাতরম’ গানের প্রথম সুরকার তিনি এবং এ কাজ তিনি করেন রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে । গুনেন্দ্রনাথের মেয়ে সুনয়নী অসিত হালদারের কাছে শিখেছিলেন ছবি আঁকা । তাঁর পটের ছবি দেশ-বিদেশের বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । লন্ডনের মেয়েদের একটি ক্লাব তাঁর ছবির প্রদর্শনী করে । প্রদর্শনীর আহ্বান এসেছিল ইউরোপের অন্য দেশ থেকেও । সত্যেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ সংজ্ঞা ‘বিসর্জন’ নাটকে গুণবতীর অভিনয় করেন । তবে এসব ব্যাপারে লেগে থাকা তাঁর স্বভাবে ছিল না । নৃত্য প্রশিক্ষণ বা নৃত্যনাট্য পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা । সঙ্গীতসহযোগে নৃত্যের বিশিষ্ট একটি রূপ তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘শাপমোচন’ , ‘চিত্রাঙ্গদা’ , ‘চণ্ডালিকা’য় । দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ অমিতা ‘নটীর পূজা’য় মালতী , ‘তপতী’তে বিক্রমমহিষীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি । দ্বিজেন্দ্রনাথের নাতনি প্রকৃতি জলরঙে ভালো ছবি আঁকতেন । জেসো পেন্টিং , গালা ও মীনার কাজেও দক্ষতা ছিল তাঁর। সুরেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ পূর্ণিমা ছিলেন সংজ্ঞার মতো রন্ধনশিল্প বিশেষজ্ঞ । হিতেন্দ্রনাথের মেয়ে মেধা নৃত্যাভিনয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন । হিতেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ অমিয়া গান শুনে গান শিখেছিলেন । ‘বর্ষামঙ্গল’ , ‘শাপমোচন’ , ‘নটির পূজা’য় তাঁর গান প্রশংসিত হয় । ক্ষিতীন্দ্রনাথের মেয়ে বাণী গান গাইতেন , পিয়ানো বাজাতেন , সুর অবিকল রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুবাদ করতেন ইংরেজিতে ।
সাহিত্যরচনার কাজে স্বর্ণকুমারী-সরলা-ইন্দিরার মতো নামডাক না থাকলেও ঠাকুরবাড়ির অনেক মেয়ে-বউ সে প্রচেষ্টা করে গেছেন । দেবেন্দ্রকন্যা সৌদামিনীর নাম প্রথমেই করতে হয় । তাঁর ‘পিতৃস্মৃতি’ থেকে আমরা দেবেন্দ্রনাথের কয়েকটি চারিত্রিক বৈশিষ্টের সন্ধান পাই । হেমেন্দ্রকন্যা প্রজ্ঞার ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ ঠিক সাহিত্যের অন্তর্গত না হলেও তার মধ্যে যে সাহিত্যগুণ ছিল তা কয়েকটি ক্রমণী দেখলে্ বোঝা যায় । সত্যেন্দ্রকন্যা ইন্দিরা রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা এবং স্বামী প্রমথ চৌধুরীর বেশ কিছু লেখা অনুবাদ করেছেন । ‘স্মৃতিসম্পুট’ নামে তাঁর স্মৃতিকথা সুখপাঠ্য গ্রন্থ । রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখার ধরনকে ‘সমুজ্জ্বল’ বলেছিলেন । রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ক বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন তিনি । হেমেন্দ্রকন্যা শোভনা রূপকথা সংগ্রহে মন দিয়েছিলেন । এই বিষয়ে তাঁর বই ‘ ইন্ডিয়ান নেচার মিথ’ , ‘ দি ওরিয়েন্ট পার্লস’ , ‘টেলস অফ দি গডস’ । শেষ জীবনে তিনি কয়েকটি ভ্রমণকাহিনি রচনা করেন । শোভনার বোন সুষমা বিদেশের নারীদের কৃতিত্বের কথা লিখেছিলেন ‘হ্যারিয়েট রিচার স্টো’ , ‘হ্যারিয়েট মার্টিনো’ , ‘মাদাম দ্য স্টেল’ প্রভৃতি প্রবন্ধে। রবীন্দ্রনাথের দিদি স্বর্ণকুমারীতো বাংলাসাহিত্যের এক বিখ্যাত লেখিকা । ‘দীপনির্বাণ’ , ‘স্নেহলতা’, ‘কাহাকে’ ‘পাকচক্র’ , কনেবদল’ প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক স্বর্ণকুমারীকে বাংলার প্রধম মহিলা ঔপন্যাসিক বলা হয় । স্বর্ণকুমারীর মেয়ে হিরন্ময়ী ‘সখা’, ‘বালক’, ‘ভারতী’ পত্রিকায় লিখেছিলেন বেশ কিছু প্রবন্ধ আর লিখেছিলেন কিছু সনেট । স্বর্ণকুমারীর আর এক মেয়েসরলা সাহিত্য-দেশাত্মবোধক প্রবন্ধ লিখেছিলেন অনেকগুলি । তবে লেখার চেয়ে সাংগঠনিক কাজকর্মে তাঁর উৎসাহ ছিল বেশি । গুণেন্দ্রনাথের মেয়ে বিনয়িনী তাঁর জীবনকাহিনি লেখেছিলেন ‘কাহিনি’ গ্রন্থে ।রবীন্দ্রনাথের মেয়েরা লেখার জগতে প্রতিষ্ঠিত হন নি । তবে মীরার ‘স্মৃতিকথা’ তার মধ্যে ব্যতিক্রম । দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ হেমলতা ছিলেন ধর্মপ্রাণা । তাঁর কবিতার বই ‘জ্যোতিঃ’ , ‘অকল্পিতা’ , ‘আলোর পাখি’তে ভগবৎপ্রেমের সুর আছে । সত্যেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ সংজ্ঞার স্মৃতিকথা ‘সেবিকার কৈফিয়ৎ’ । কবিতাও লিখতেন তিনি । তাঁর কবিতার সংকলন ‘কৃপাকণা’ । কাব্যচর্চা করতেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা । রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন ‘কল্পিতাদেবী’ । তাঁর ‘স্মৃতিচিত্র’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ । দ্বিজেন্দ্রনাথের পৌত্র অজিনেন্দ্রের স্ত্রী অমিতা কবিতার মতো চমৎকার গদ্য লিখতেন ।
ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউরা পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করেছেন । সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী সম্পাদনা করেছেন ‘বালক’ পত্রিকা । ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে কাদম্বরী জড়িত থাকলেও তার মূল কর্ণধার ছিলেন স্বর্ণকুমারী । সঙ্গীতপ্রিয় প্রতিভা প্রকাশ করেছিলেন সঙ্গীতবিষয়ক পত্রিকা ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’ । তাঁকে সাহায্য করতেন ইন্দিরা । প্রজ্ঞা সম্পাদনা করেন ‘পুণ্য’ পত্রিকা । ‘ভারতী’ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে স্বর্ণকুমারীকে সাহায্য করতেন তাঁর মেয়ে হিরন্ময়ী । ‘বালক’-‘সাধনা’- ‘পুণ্য’- ‘ভারতী’ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে লিপ্ত ছিলেন সরলা । লেখকদের পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রথা তিনি চালু করেছিলেন ।
সমাজসংস্কার ও রাজনৈতিক আন্দোলনেও এগিয়ে এসেছিলেন ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বউরা । ‘সখিসমিতি’র মাধ্যমে স্বর্ণকুমারী নারীকল্যাণমূলাক কাজ শুরু করেন ।হিন্দুমেলায় মহিলা হিসেবে তিনিই প্রথম যোগ দেন । কংগ্রেস অধিবেশনেও যোগ দেন তিনি । একসময় সে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন । তাঁর মেয়ে সরলা ছিলেন বিবেকানন্দের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ । ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘স্বদেশি স্টোর্স’, ‘ভারত স্ত্রী মহামন্ডল’ তিনিই স্থাপন করেছিলেন । অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন তিনি । পরবর্তীকালে নিখিল ভারত সামাজিক মহাসমিতির সভানেত্রী হন । বিহারের মজঃফরপুরে স্ত্রীশিক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করেন রবীন্দ্রকন্যা মাধুরী । দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ হেমলতা জড়িত ছিলেন ‘বিধবা শিল্পাশ্রম’, ‘সরোজনলিনী নারীমঙ্গল সমিতি’, ‘বসন্তকুমারী বিধবা আশ্রমের’ সঙ্গে। সুরেন্দ্রনাথের মেয়ে মঞ্জুশ্রী তখনকার রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেন । ‘নারী আত্মরক্ষা সমিতি’ তাঁর উদ্যোগে গঠিত হয় ।
[ লেখিকা ইউনেস্কোর ডান্স কাউন্সিলের সদস্য ]