Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

প্রাচীন ভারতের গণিতচর্চা

Reading Time: 6 minutes
নিমাই দত্তগুপ্ত
বড়ো গর্বের আমাদের প্রাচীন ভারতের গণিতচর্চার ঐতিহ্য। গণিতচর্চার মধ্যে লুকিয়েছিল বিজ্ঞান। আজ আমরা সকলেই স্বীকার করি মৌলিক বিজ্ঞান হল গণিত। শুধু তা-ই নয় সব বিষয়ের সেরা হল গণিত। সভ্যতার ক্রমবিকাশে গণিতের ভূমিকা যে কোনো বিতর্কের অতীত। এই সত্য উপলব্ধি করে আত্মবিশ্বাসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ বিজ্ঞানের অনুসন্ধান গতিশীল। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে যখন তার মোড় ফিরল এবং মানুষ তারই সৃষ্ট মূর্তির কাছে মাথা নত করতে আরম্ভ করল এবং নিজের লেখা গ্রন্থকে স্বয়ং ঈশ্বরের পবিত্র বাণী বলে মনে করতে শিখল, তখনই মানবতার অবসান হতে লাগল, সেই সঙ্গে বিজ্ঞানের। এ কথা কোনো একটি দেশের, কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না – ছড়িয়ে পড়ল মানবসমাজের অন্তরে।
 
গাণিতিক দিকটি সম্পর্কে প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ‘০’ (শূন্য) এবং ‘.’ (দশমিক)। ভারতেই প্রথম সংখ্যাবিজ্ঞানের নামকরণ আবিষ্কার করা হয়। ভারতের গণিতজ্ঞদের মতো বিশ্বের কোনো গণিতবিজ্ঞানী এই রূপ নামকরণ করতে পারেননি। যেমন ১ (এক), ১০ (দশ), ১০০ (শত), ১০০০ (সহস্র), অযুত (১০ ০০০), নিযুত (১০ ০০০০), প্রযুত (১ ০০০ ০০০), অর্বুদ (১০ ০০০ ০০০), নর্ব্যুদ (১০০ ০০০ ০০০), সমুদ্র (১০০০ ০০০ ০০০), মধ্যে (১০ ০০০ ০০০ ০০০), অন্ত (১০০ ০০০ ০০০ ০০০), পরার্থ (১ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০)।
পঞ্চম শতাব্দীর শেষ ভাগে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দী থেকে আর্যবর্তে গণিত ও জ্যোতিষচর্চার এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। প্রায় ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই অধ্যায় ব্যাপ্ত ছিল। এই শত শত বছর ধরে হিন্দু জ্যোতির্বিদ আর গণিতজ্ঞগণ মৌলিক জ্যোতিষ ও গণিতে বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বরাহ মিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, মহাবীর, শ্রীধর, পদ্মনাভ, ভাস্কর, মনঞ্জল, শ্রীপতি, নারায়ণ প্রমুখ। লক্ষ করার বিষয় ইউরোপের আলেকজান্দ্রিয়ায় ডায়োফ্যান্টাস, প্যাপাস, হাইপোসিয় ও বোয়েথিয়াসের পর গ্রেকো-রোমক গণিতবিজ্ঞানের যখন সমাপ্তি ঘটে তখন ভারতবর্ষে আর্যভট্ট, বরাহ মিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, ভাস্কর প্রমুখ গণিতজ্ঞদের নেতৃত্বে বিজ্ঞান শীর্ষ স্থান দখল করতে সক্রিয় ছিল। এই সময়ই দশমিক স্থান অঙ্কপাতন পদ্ধতি (ডিমড্‌ প্লেস ভ্যালু নোটেশন) ও শূন্যের আবিষ্কার হয়। গণিতের এই দু’টি আবিষ্কারের জন্যই আমরা বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকব।
 
‘গণিত’ অর্থ গণনাবিদ্যা। প্রাচীন ভারতের গণিত বুঝতে হলে বৈদিক ঋষিদের কথা উত্থাপন করতেই হয়। তাঁরা গণিত বলতে পাটিগণিত আর জ্যোতিষকে বুঝতেন। জ্যামিতি ছিল কল্পসূত্রের অন্তর্ভুক্ত। গণিত যে শ্রেষ্ঠ বিষয় সে কথা বৈদিক সাহিত্যে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।
 
বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে বেদি নির্মাণের যজ্ঞ অপরিহার্য ছিল। বেদি নির্মাণে শুধু জ্যামিতির প্রমাণই পাওয়া যায় তা নয়, সেই সময় বীজগণিতেরও প্রাথমিক বিকাশ ঘটেছিল। বেদি সংক্রান্ত জ্যামিতিক সমস্যা থেকে উদ্ভুত এক ঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণের নির্ণেয় ও অনির্ণেয় সমাধানে তাঁরা দক্ষ ছিলেন। জ্যামিতিক পদ্ধতিতে এই সব সমীকরণের সমাধান বের করা হত। সূত্রে ও বাখশালী পাণ্ডুলিপিতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
 
বৈদিক যুগে জ্যামিতির নাম ছিল শুল্ব। শুল্বকারগণ ঋজুরেখার ক্ষেত্র প্রণয়নে ক্ষেত্রফল ও ঘনফল নিরূপণে বৃত্তকে বর্গে পরিণত করতে মুনশিয়ানার পরিচয় দেন। পরবর্তী যুগে ও সমকালেও এই শিক্ষা বাতিল হয়নি। তাদের একঘাত সমীকরণের এই উদাহরণ নিম্নরূপ – যেমন প্রথম রাশিটি অজানা, দ্বিতীয় রাশিটি তার দ্বিগুণ, তৃতীয় রাশি দ্বিতীয় রাশির তিন গুণ, চতুর্থ রাশি তৃতীয় রাশির চারগুণ। এখন চারটি রাশির ক্ষেত্রফল ১৩২ হলে অজ্ঞাত রাশিটি কত? আমরা যদি আধুনিক পদ্ধতিতে x ধরে সমীকরণটি করি তা হলে কী দাঁড়ায়? x + 2x + 6x + 24x = 132
 
‘শূন্য’ ও ‘দশমিক’, এই দু’টি আবিষ্কার গণিত ও জ্যোতিষীর অগ্রগতিই শুধু সুগম করেননি, পরবর্তী কালে বিজ্ঞানের সর্বাঙ্গীন উন্নতির মূল্যবান মৌলিক সোপান হিসাবে যে কাজ করেছে তা-ও প্রমাণিত। ফলে পূর্ণ সংবলিত নতুন অঙ্ক পাতন পদ্ধতি আবিষ্কার ও সুবিধা বিবেচনা করে প্রচলিত গ্রন্থাদির সংশোধন ও সংস্কার হয়েছিল। বস্তুত এই আবিষ্কার আকস্মিক ছিল না। প্রায় আটশো থেকে হাজার বছরের নানা সংশোধন সংস্কার সাধনের ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিফিলিত হয়েছিল।
 
চিনের আরও এক জন গণিতজ্ঞ ছিলেন সান সুয়ান চিং। তিনি রচনা করেন সান পাটিগণিত। এই গ্রন্থটি চিউ-চ্যাং-এর থেকে বেশি গোছানো ও প্রণালীবদ্ধ। তিনি তিন খণ্ডে বইটি সমাপ্ত করেন।
 
বৈদিক বেদির ক্ষেত্রকে পরিবর্তন করতে হলে কী করতে হবে তার সূত্রও পাওয়া গিয়েছে। তার বিভিন্ন মাত্রার সমীকরণের সমাধান সে যুগে তাঁরা করেছিলেন। সে যুগের যজ্ঞানুষ্ঠানে মহাবেদির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই মহাবেদি হল একটি সমদ্বিবাহু ট্র্যাপিজিয়াম। তার সমাধানও তাঁরা করেছিলেন। এটা হল দ্বিঘাত সমীকরণ। শতপথ ব্রাহ্মণে কতগুলি বিশেষ মান ধরে এই রূপ দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়েছিল।
 
শুল্বকারগণ বিশেষ উন্নতির পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁরা ঋজু রেখার ক্ষেত্র (রেক্টিলিনিয়াল ফিগার) রচনায় ক্ষেত্রফল ও ঘনফল নিরূপণে বৃত্তকে বর্গে পরিণত করে শুল্বশাস্ত্রে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বোধায়ণ অপস্তস্ব প্রমুখ শুল্বকারদের নানান উক্তি থেকে গণিতের তথাকথিত পিথাগোরীয় উপপাদ যে বৈদিক শুল্বকারদের আবিষ্কার তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের উপপাদ্য থেকে জানা গিয়েছে যে, সমকোণী ত্রিভূজের অতিভূজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ফলাফল তার অপর বাহুদ্বয়ের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ফলাফলের সমান।। অপস্তস্ব, বোধায়ণ, কাত্যায়ন প্রমুখ বিখ্যাত বৈদিক শুল্বকারগণ জ্যামিতির বিভিন্ন ক্ষেত্রফল নানা ভাবে অঙ্কিত করেছিলেন।
 
তাঁদের শুল্বক্ষেত্রগুলিকে বিশ্লেষণ করে পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ বলেছেন, পিথাগোরাসের নামে প্রচলিত উপপাদ্যের প্রথম আবিষ্কর্তা তিনি নন। স্যার টমাস হিথ এই উপপাদ্য আবিষ্কার সম্পর্কে বলেছেন যে, গ্রিস, মিশর, ভারতবর্ষ ও চিনের দাবি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অনুসন্ধান করে জানা গিয়েছে যে, পিথাগোরাস যে এই উপপাদ্যের আবিষ্কর্তা তার কোনো প্রমাণ নেই। পক্ষান্তরে তাঁর অভিমত, এই উপপাদ্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ভাবে আবিষ্কার করার সম্ভাবনা ভারতেরই প্রবল। ডঃ বিভূতিভূষণ দত্ত মনে করেন, পিথাগোরাসের অনেক আগে ভারতীয়রা এই উপপাদ্যের কথা জানতেন। তেত্তিরীয় সংহিতা ও শতপথ ব্রাহ্মণে এই উপপাদ্যের প্রয়োগ দেখা যায়।
 
তা সত্ত্বেও এই বিষয়ে নিশ্চিত কোনো মন্তব্য করা কঠিন। তার কারণ বোধায়ন, আপস্তস্ব, কাত্যায়ন-সহ আরও কয়েক জন শুল্বকারদের কাল/যুগ অনিশ্চিত। সমকালের ঐতিহাসিকরা সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যের ওই রূপ প্রাচীনত্ব স্বীকার করতে রাজি নন। এই বিষয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে আরও বৈজ্ঞানিক অমুসন্ধানের প্রয়োজন। কারণ কাল নির্ণয় সুনিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
 
 
ভারত ও মিশরের মতো চিনের গণিত নিয়ে গবেষণাও সুপ্রাচীন। চিউ-চ্যাং সুয়ানশু বা নয় খণ্ডের পাটিগণিত। এটি হল চিনের প্রাচীনতম গ্রন্থ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে চ্যাংসার নামের এক জন গণিতজ্ঞ এই পাটিগণিতটি প্রতি-সংস্কার করেছিলেন। গ্রন্থটি এখনও সংরক্ষিত। মূল বইয়ের রচয়িতা কে আর কবেই বা রচিত হয়েছিল সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চৈনিক লেখকরা বলেন খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ শতক থেকে ২৬০০ অব্দের মধ্যে গ্রন্থটি রচিত। তাঁদের গাণিতিক জ্ঞান জানার জন্য চিউ-চ্যাং সুনায়শু একটা মূল্যবান গ্রন্থ। এতে আছে ১। ক্ষেত্র জ্যামিতির ভগ্নাংশ, ২। ত্রৈরাশিক নিয়ম (রুল অফ থ্রি) সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন, ৩। পার্টনারশিপ, ৪। বর্গ ও ঘনমূল নির্ণয়, ৫। গণ জ্যামিতি, ৬। বিমিশ্র প্রক্রিয়া, ৭। লাভ ক্ষতির অঙ্ক, ৮। একাধিক অজ্ঞাত রাশি সংবলিত একঘাত সমীকরণ ইত্যাদি। ঐতিহাসিক তথ্যে জানা গিয়েছে, চিনের গণিতজ্ঞরা ভারতের গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপ্তের মতোই গাণিতিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করতেন। চিনারা তখন দ্বিঘাত সমীকরণের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন এবং ধনাত্মক ঋণাত্মক ব্যবহার করতে জানতেন। চিনের আরও এক জন গণিতজ্ঞ ছিলেন সান সুয়ান চিং। তিনি রচনা করেন সান পাটিগণিত। এই গ্রন্থটি চিউ-চ্যাং-এর থেকে বেশি গোছানো ও প্রণালীবদ্ধ। তিনি তিন খণ্ডে বইটি সমাপ্ত করেন। বিষয়ের মধ্যে ছিল অনির্ণেয় সমীকরণ সংখ্যা, ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতির উল্লেখ যোগ্য প্রতিফলন।
 
ভারতের আর্যভট্ট ছিলেন প্রাচীন কালের শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ। ২৩ বছর বয়সে চার অধ্যায়ে ১২৩টি শ্লোকের একটি পুস্তিকা রচনা করেন – ১। দশ গীতিকা, ২। গণিত পাদ, ৩। কালাক্রিয়া, ৪। গোলপাদ। পুস্তিকাটির নাম দেন আর্যভট্টিয়। তিনি গণিত পাদে নানান বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন – বর্গমূল, ঘনমূল, সমান্তর শ্রেণি, ত্রিরাশিক সমীকরণ সমাধান, দ্বিঘাত ইত্যাদি।
 
 
দশ গীতিকা, কালাক্রিয়া, গোলপাদে আর্যভট্ট নিজের জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই উদ্ভাবনের প্রধান অবলম্বন ছিল সিদ্ধান্ত। কিন্তু আর্যভট্ট মৌলিক পরিবর্তনও করেছেন। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কথা প্রথম তিনিই বলেন। ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর অশাস্ত্রীয় মতবাদের শিক্ষা প্রদানের নিন্দা ও সমালোচনা করেছিলেন। বরাহ মিহিরও আহ্নিক গতিবাদের বিরোধী ছিলেন। আর্যভট্ট পরিবৃত্ত ও উৎকেন্দ্রীয় বৃত্তের সাহায্যে গ্রহগতির ব্যাখ্যা করেন এবং তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কয়েক জন কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
 
দশ গীতিকা, কালাক্রিয়া, গোলপাদে আর্যভট্ট নিজের জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই উদ্ভাবনের প্রধান অবলম্বন ছিল সিদ্ধান্ত। কিন্তু আর্যভট্ট মৌলিক পরিবর্তনও করেছেন। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কথা প্রথম তিনিই বলেন।
 
বরাহ মিহির ছিলেন ভারতের প্লিনি। বরাহ মিহিরের জ্ঞানভাণ্ডার ছিল বিশ্বকোষের মতো ব্যাপক। গণিত, জ্যোতিষ, ফলিত জ্যোতিষ, ভূগোল, প্রাণীবিদ্যা বিভিন্ন বিষয়ে তিনি পণ্ডিত ছিলেন। তবে বরাহমিহিরের ভার যত ছিল ধার তত ছিল না। তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল পঞ্চসিদ্ধান্তিকা। এ ছাড়াও তিনি আরও পাঁচটি জ্যোতিষ সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা করেন। মানুষের ওপর গ্রহের দুষ্ট প্রভাব কাটানোর জন্য দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান পাথর, মণি, মুক্তা, প্রবাল ধারণ করার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেন। প্রকৃতপক্ষে তার মতবাদের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা ভিত্তি নেই।
 
ভাস্কর ছিলেন প্রাচীন ভারতের সম্পদ। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি ছিলেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী গণিতজ্ঞ। ৩৬ বছর বয়সে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ রচনা করেন। বিশেষ ধরনের কয়েকটি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন।
 
ব্রহ্মগুপ্ত ৩০ বছর বয়সে ব্রহ্মস্কুট সিদ্ধান্ত রচনা করেন। দেশ-বিদেশে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। রাহু-কেতুর মতবাদ তিনি পুনরুজ্জীবিত করেন। ব্রহ্মগুপ্ত তীব্র ভাষায় আর্যভট্টের সমালোচনা করেন। তাঁর নিজের গুরুত্বও খুব কম ছিল না।
 
গণিত সার সংগ্রহ রচনা করেন মহাবীর। গুণোত্তর, প্রগতি, দ্বিঘাত সমীকরণের তিন প্রকার সমাধান নির্ণয় করেন। উপবৃত্ত ও ভগ্নাংশ ওই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।
 
 
প্রাচীন ভারতের অন্যান্য গণিতজ্ঞের অবদান প্রাচীন ভারতের গণিতশাস্ত্রকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছিল। তাঁরা ছিলেন শ্রীপতি, শ্রীধর, সত্যানন্দ, ভাস্কর প্রমুখ।
 
ভাস্কর ছিলেন প্রাচীন ভারতের সম্পদ। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি ছিলেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী গণিতজ্ঞ। তাঁর পূর্বপুরুষরা জ্ঞানীগুণী ছিলেন। ৩৬ বছর বয়সে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ রচনা করেন। বিশেষ ধরনের কয়েকটি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। জ্যামিতিতে তাঁর অবদান শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। গ্রহের সূক্ষ্মগতি নির্ণয় ও তলটানের বিষয়টি তিনি জানতেন। তাঁর প্রতিপত্তি ও প্রভাব ভারতে বহু দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
ভারতের প্রাচীন গণিত ও জ্যোতিষচর্চা উদ্ভাবন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। ভারতীয় গণিতজ্ঞরা অবদান গ্রিকদের আগে, মিশর, ব্যাবিলন, বৈদিক যুগের সমসাময়িক ছিল। অবশ্য ঐতিহাসিক তথ্যের অভাবে গণিতশাস্ত্রে চিনের অবদানের কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলা গেল না। তখনই বলা সম্ভব হবে যদি প্রাচীন গণিত আর জ্যোতিষ সম্পর্কে সমস্ত গবেষণার ফল প্রকাশ পায়। তবে ভারত যে প্রাচীন যুগে গণিত বিষয়ের একটি বলিষ্ঠ অংশীদার সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। আমরা যদি সে কথা মাথায় রেখে বিকাশমান যুগে উপযুক্ত হতে পারি তা হলে এই আলোচনা সার্থক হবে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>