টিপু সুলতানের কবিতা
আজ ১২ অক্টোবর কবি টিপু সুলতানের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
রাত যেনো গাঁদাফুলের পাঁপড়ি
এ্যারজু বলল,টিপু-সোজা হয়ে দাঁড়ান
যমজ বাহু ঝুলিয়ে আমি পথের গায়ে
হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম-
মাটিবর্তী আলোর মাঝরাত
বৃক্ষঠান-নৈঃশব্দ্য পাখিদের সমতল উৎসব
আমার শরীরাংশে জন্মদাগ এঁকে দেয়
রাত যেনো গাঁদাফুলের পাঁপড়ি,
নরম ভাঁজে ফেঁপে ওঠা জনপদ
এই রাজপথে
এ্যালিফ্যান্ট রোড ধরে কাঁটাবন যাচ্ছি
রিকশার হুডখোলা ঝাঁপ ভীষণ পতন শব্দে বিষন্ন
অনেক ব্যস্ততা,উপুড় চোখে ঝাঁপসা দেখছি
বাটা শোরুমের ভেতর হতে অপরাহ্ন বেরিয়ে আসছে
-শতে শতে,পা গুনে রাখা যায় না,গোপন ইশতেহার
এই রাজপথে তুমিও এসো প্রিয়
মাটিশুদ্ধ পাইনগাছ দণ্ডিত দাড়ে আমার সঙ্গে
তার নবজাতক পাতা বিলিয়ে আসন পেতেছে
বায়ুবাষ্পিত রং চায়ের চুমক সেরে
কোনো এক সমতল ভবনের গ্রন্থাগারে ঢুকে পড়ব
বেয়াড়া বসন্ত ভেঙ্গে
দু’জন দুজনকে পাঠ শেষে শব্দলহরির-বিছানো পথ-
টানটান শহরের নীলক্ষেত হতে ঢাকা ক্যাম্পাস
উঁচু ইমারতির দাগ ধরে হাতিরপুল,বাংলামটর
গোপন উদ্বেগ নির্মাণে শাহবাগ,কালান্তরে চতুর্দিক
তুমি তাকে চিনবে
আপেলের ঠোঁটে কামড় দিলাম
কোনো চিৎকার শোনা গেল না
কোনো কান্না শোনা গেল না
এভাবে পুরোটা ক্ষতদাগে শেষ করলাম
তারপর বাসস্টপে ঝুলে থাকলাম
কখন জীবনবাবু আসবেন
যেখানে দাঁড়ানো তার ধানসিঁড়ি পাড়;
নগরে যে রোদ আমাকে চিনল
সে নাকি জীবনবাবুকেও চেনে-
ক্ষয়ে যাওয়া তাতানো পিচ
আমার পায়ের গোড়ায় এসে
আসনপিঁড়ি পাতল
আমি অনায়াসে চক্ষুলজ্জা গিলে
অনেকটা চওড়া গলায় বললাম
আমাকে ঠকিও না এইবার
এই পথে একজন কবি আসবেন
অনন্ত বৃক্ষের ভূমণ্ড দেয়াল ভেঙ্গে
সন্ধ্যার আলোয় কিংবা পাণ্ডুলিপির ঘরে
হয়ত তার কবিতায় তুমি তাকে চিনবে
নীলরত্ন মৌন আকাশ
শরীরের সুস্বাদু চিনিমাখা নীলরত্ন মৌন আকাশ
তেখাঁজ বরফ, শাদা কাফনের মতো; ছড়ানো-
আলুথালু মাছকাঁটা হ্রদ-শিথিল বৃক্ষ,
বোবাবাতাস পরিযায়ী ডানায় হিমালয়-উর্বর দ্বীপপুঞ্জ
ঘাসের পাখনায় রোদগলা বিকেল-সোনাধান
অদূরে কমলালেবু থোড়-থমথম রাত-নক্ষত্র;
এভাবে,যেভাবে-প্রশস্ত চোখ চমকায়
সৌধ ফসলির অভয়ারণ্য-হাঁটুভর সমুদ্র
হরফের মতো মাটি থেকে বালুকণা-পাথর-নদী,
যুগল বাধা গাঙচিল,ঠোঁটে ঠোঁটে দুই শামুক-
সুসম্পন্ন রমণী ও পুরুষ হাসছিল-গাঢ় ছায়ায় ডুবে।
আমার শহরের যৌবন
আমার শহরের যৌবন বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।
পিচঢালা রাস্তা,ধূলো ধূসরে ডিমপোজের মতো
চতুর্পাশে শিল্পকার গর্ত,বেহায়া নির্যাতনে আবাসিক রঙ-
রড-কংক্রিটের হাড় গাঁথা মন্দিরশোভিত প্রাসাদ
পুরাতন সিককাটা দ্বিতল জানালায়-আমার পবিত্র নাক
বাঁকান্তর এগুচ্ছে,অহেতুক লুটিয়ে পড়ছে আহত ভাষা
নিজের ভেতর লবণ মাখা বক্তব্য-একটি গোলাপগাছ
যদি সুগন্ধী ফুল ফোটাত,জেগে থাকতাম।ঘুমতাম না।
একজোড়া ঘণ্টা
এই বেদনা বিনির্মাণ শেষে
নির্ঝরা গহিন রাত আমাকে সেলাই করে
বোধপাকা শহরে দাঁড়ানো
সহস্রাধিক ইটচাপা দালান।
উগ্র পা ডোবানো তাঁর শিরবাঁকা বারান্দায়
আমার চোখ ফাঁকা ছুটে যায়
হলুদ আলোর হুক খোলা ল্যাম্পপোস্টের নিচ হতে
ক্রুশকন্যা নাভিকাটা অঙ্গে,
গূঢ়চারী সমতল মুখোমুখি-
আমার হাত থেকে খসে পড়ে-সেকেণ্ডের কাটা
ঘা মেরে চলে মিনিটের ঘরে
একের পরে এক
অতঃপর
আমি একজোড়া ঘন্টা হয়ে উঠি।দীর্ঘ সময়-
ঘাসগুলো তাঁর উঠানে ফড়িং ছড়ায়
চারদিক পৃথিবী।এখানে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে
ধারাপাঠ পড়তে পড়তে বর্ণনা করি
বসন্ত ঠোঁটে অনিন্দ্যসুন্দরের গান-
মোটা বয়সে এই দূরাগত উচ্চাঙ্গসংগীত
আমার কানের নেতি ঝুলে
সমস্ত পাহাড়ের গোপনীয়তা শোনায়-
নীলগিরি দেবতার পায়চারি,দলবেঁধে ফেরা গুড়ো বাতাস
ব্লাডভর্তি ঘন উদ্ভিদ,প্রীতিধানের কণ্ঠস্বর,প্রকৃত পামূল;
ইথারনেটে ঝর্ণাধারা,অদূরে আকাশ
পাহাড় কাটা জ্যোৎস্না চূড়োয় গড়িয়ে যায়
নৈঃশব্দ্যের রোপণ করা শরীর-
চাকমা মেয়ের গোপন ভ্রমণ…
এই প্রণয় শিল্প,বাঙালীর সমতলে
অরণ্যবিথীর জরায়ু ঋতুর গহীনে চাকমা গান
ঘাসগুলো তাঁর উঠানে ফড়িং ছড়ায়!
গণ সমুদ্রচোখ আমাকে পাহারা দেয়
দাগহীন আত্মসমর্পণ,গোটা থানকুনি বাঁক তা দিচ্ছে।
ধূলোর গায়ে-বেদনায়,প্রয়াণে;
দলগুচ্ছ মানুষের কবিতা-
হাতের পাশে মাঠ,ছায়ার পরিভ্রমণ
ছেঁড়া ছেঁড়া গদাঘাত মেঘ
ধূসরপথে শতছিন্ন জময বর্ষার পরাগরেণু,
বিনয়ী রোদ-ঋতুবনে,ভূতভয়,
কবরস্থান উপেক্ষা সকল কবিতার জোড় পা স্কুলে যায়-
ঠাণ্ডা বাতাস,অখণ্ড অবসর,জলপাই রঙের উদ্ভিদ উঠান
কিচিরমিচির ব্যস্ত-চিউমিউ শোরগোল
হাসির টুকরো লেপটানো কমলা লেবু রঙ ধানেধানে,
গণ সমুদ্রচোখ-অগণিত নাবিক পালে
আমাকেও পাহারা দেয়,এ গণভোট মুক্ত বিস্ময়ের!