তৃষ্ণা বসাকের দুটি কবিতা
আজ ২৯ আগষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক তৃষ্ণা বসাকের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
উত্তর-বেড়াল
আপাতত সব বেড়ালগুলো চলে গেছে,
আমরা এখন আবার আগের মতো বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি,
মাছ ভেজে ভেজে স্তূপাকার করে জানলার পাশে রেখে দিচ্ছি,
আমাদের সমস্ত দামী জিনিস ছড়িয়ে আছে এলোমেলো, ঠিক আগেকার মতো,
পাপোশটা যেমন বরাবর থাকত
তেমনই দরজার সামনেই রেখে দিচ্ছি সকাল হলে,
শুধু শুতে যাবার আগে সন্তর্পণে
একটা একটা করে দরজা খুলে নিচ্ছি,
পা টিপে টিপে রেখে আসছি পেছনের বাগান পেরিয়ে
অনেক দূরের এক গারাজে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা তারার টুকরোগুলো
পাশ কাটিয়ে যখন ঘরে ফিরছি,
তখন রাত একটা অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট ভেজানো তুলোর মতো
অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে,
দরজাহীন ঘরে বেড়াল আঁচড়ানোর শব্দ আমাদের ঘুম ভাঙ্গাবে না আর।
মহানিষ্ক্রমণ
সন্ধ্যা বলতে সেই ছাদের বাগান, যুঁই গন্ধ, জ্যোতিদাদার এস্রাজ
আর তার মধ্যেই আমাকে কবিতা লিখতে হবে।
ফ্লিপকার্টে গোছা গোছা লাশ আসে,
সই করে নিতে নিতে হালিম ঠান্ডা হয়ে যায়,
পুরনো বেড়ালটার একটা নাম দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তাকে অনেকদিন খুঁজে পাওয়া যায় না।
নতুন দুটো বেড়াল, খুব চটপ্টে আর আর সুযোগ সন্ধানী-
কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউই তাদের নাম রাখার উৎসাহ পাই না।
বেড়ালরা খুব বেইমান হয়, ওদের নাম রাখার কোন মানে হয় না।
তাছাড়া ওদের কোন স্মৃতিও থাকে না
-সবচেয়ে বড় কথা আমাদেরই বা কে নাম রেখেছে জন্মে?
এইসব বলি আর বারবার ডোরবেল বাজে,
আর আমরা বারবার গোছা গোছা লাশ রিসিভ করতে ছুটি।
এত কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।
ফলত আমরা তাদের সঙ্গে শুই, খাই, গুলতানি করি,
কোন অতিথি বাথরুমে যেতে চাইলে আমরা পরস্পরের মুখের দিকে তাকাই।
বাথরুমের মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত লাশ দেখে
তাদের পেচ্ছাপ আটকিয়ে যায়,
আর সমস্তই শুরু সেই নেমকখারাম বেড়ালটা থেকে ,
সে কেন ফিরে এল না?
আমাদের দেওয়া নাম নিয়ে, আমাদের সমস্ত ডাক খোঁজ নিয়ে
এই বিপুল তরঙ্গমালায় ভাসতে ভাসতে সে কোথায় চলে গেল কে জানে!

এই সময়ের বাংলা সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ কবি ও কথাকার। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, কল্পবিজ্ঞান, মৈথিলী অনুবাদকর্মে তিনি প্রতিমুহুর্তে পাঠকের সামনে খুলে দিচ্ছেন অনাস্বাদিত জগৎ। জন্ম কলকাতায়। শৈশবে নাটক দিয়ে লেখালেখির শুরু, প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘সামগন্ধ রক্তের ভিতরে’, দেশ, ১৯৯২। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘আবার অমল’ রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯৯৫।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ই. ও এম.টেক তৃষ্ণা পূর্ণসময়ের সাহিত্যকর্মের টানে ছেড়েছেন লোভনীয় অর্থকরী বহু পেশা। সরকারি মুদ্রণ সংস্থায় প্রশাসনিক পদ, উপদেষ্টা বৃত্তি,বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য অকাদেমিতে আঞ্চলিক ভাষায় অভিধান প্রকল্পের দায়িত্বভার- প্রভৃতি বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাঁর লেখনীকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।
প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- পূর্ণেন্দু ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার ২০১২, সম্বিত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩, কবি অমিতেশ মাইতি স্মৃতি সাহিত্য সম্মান ২০১৩, ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) ২০১৩, ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫, সোমেন চন্দ স্মারক সম্মান (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি) ২০১৮, সাহিত্য কৃতি সম্মান (কারিগর) ২০১৯ ও অন্যান্য আরো পুরস্কার।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
বেড়াল না নীলঘন্টা?, একুশ শতক, ২০০২
উলটে মেলো, একুশ শতক, ২০১৩
অজাতক সমগ্র থেকে, কলিকাতা লেটারপ্রেস, ২০১৭
গোপন ট্যাটু, কৃতি, ২০১৮
লাইব্রেরি শার্ট খোলো, কৃতি, ২০১৯
অনুবাদ কবিতা
অজিত আজাদের কবিতা, নবারম্ভ প্রকাশন, ২০১৮
মূল মৈথিলী থেকে অনুবাদ- তৃষ্ণা বসাক
গল্প
ছায়াযাপন, একুশ শতক, ২০০৯
দশটি গল্প, পরশপাথর, ২০১১
নির্বাচিত ২৫টি গল্প, একুশ শতক, ২০১৪
ইয়াকুবমামার ভারতবর্ষ, প্রশাখা প্রকাশনী, ২০১৮
গল্প ৪৯, কৃতি, ২০১৯
উপন্যাস
বাড়িঘর, একুশ শতক, ২০১১
অনুপ্রবেশ, এবং মুশায়েরা,২০১৭
এখানে টাওয়ার নেই, একুশ শতক, ২০১৭
স্বপ্নের শিকারা, এবং মুশায়েরা, ২০১৯
অগ্নিবলয়, আকাশ, ২০২০
প্রবন্ধ
প্রযুক্তি ও নারী- বিবর্তনের প্রতি-ইতিহাস, গাংচিল, ২০১০
মেয়েদের একাল, সেকাল ও চিরকাল, সোপান, ২০২০
প্রযুক্তি
ছাপাখানার অ-আ-ক-খ, শিশু কিশোর আকাদেমি, ২০১০
সহলেখক- সৌমেন বসাক
সম্পাদনা
ভারতীয় ভাষার গল্প, এবং মুশায়েরা,২০১৭
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প, এবং মুশায়েরা, ২০১৭