Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ভালোবাসা দিবসের ছোটগল্প: প্রেমের কাহিনি

Reading Time: 3 minutes
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,valobasa dibos
একটা প্রেমের গল্প চাই,ভালোবাসার দিন উপলক্ষে – এই পোস্টটা ফেসবুক মেসেঞ্জার ওপেন করতেই ভেসে উঠল স্ক্রিনে। শৌনক তার ব্লগের জন্য চেয়েছে।
 
ভালোবাসার দিন!প্রেম!ভেবেই হাসি পেল নদীর।
ভালোবাসার আবার কোনও নির্দিষ্ট দিন হয় নাকি!প্রশ্নটা নদী খুব বোকার মতো করেছিল আত্রেয়ীকে।কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় প্রথম শুনেছিল নদী।বাংলা মিডিয়ামে পড়া, একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নদী জানতই না ভালোবাসার জন্য একটা গোটা দিন মজুদ আছে।তাই আত্রেয়ীর মুখে এমন একটা দিন আছে শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল।
আত্রেয়ী নদীর বিপরীত। সে ছোটো থেকে কনভেন্টে পড়া।সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিন ভালোবাসার দিন বলে ধার্য এসব স্কুল জীবন থেকেই জানে।তারও অবাক লাগল নদী এই শব্দ আগে শোনেনি বলে।
সে বলল- আরে ইয়ার তুই কোন জগতে বাস করতিস এতদিন? তোর কি কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই? প্রেম করিস না?
নদী আজন্ম শুনে এসেছে প্রেম করে খারাপ মেয়েরা।প্রেমের বিয়ে টেকে না।প্রেম করলে সমাজে মুখ দেখানো যায় না।
দাদা তো কথায় কথায় হুমকি দেয়, যদি শুনতে পেয়েছি কোনও ছেলের সঙ্গে ভাব ভালোবাসা হচ্ছে, মেরে পিঠের ছাল চামড়া তুলে দেব।
সেই ভয়েই নদী আর ওমুখো হয়নি।আর আত্রেয়ী বলে কিনা প্রেম!
সে খানিকটা বিরসবদনে মুখ নিচু করে বলল- না রে।
সেকি! বলে প্রায় আতঁকে উঠলো আত্রেয়ী। এ মেয়ে বলে কি!কলেজে পড়ছে আর প্রেম করে না,এমনকি চুপি চুপিও প্রেম আসেনি! তাই হয় নাকি!
দাঁড়া এই ভালেনন্টাইন ডে তে তোকে সিংগল থেকে ইন রিলেশনে এনে দেব।
সেই শোনার পর থেকে নদীর ঘুম উড়ে গেছে। রোজ সে চোখের সামনে দেখছে- আমীর খানের মতো দেখতে একটা ছেলে তাকে প্রপোজ করছে,তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পাহাড়ে লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু দাদা ঠিক জানতে পেরে গুন্ডা পাঠিয়েছে ছেলেটাকে মেরে ফেলার জন্য। আর তাকে আটকে রাখছে অন্ধকার কুঠুরিতে।বন্দুকের নল তাকে করেছে ছেলের দিকে,আর সে প্রাণপণে দৌড়ে যাচ্ছে তাকে বাঁচানোর জন্য। তারপর..
আর কিছু ভাবতে পারত না নদী।তার আগেই মা চিৎকার করে উঠত,দয়া করে বিছানাটা গুছিয়ে পড়তে বোসো।নইলে বিয়ে দিয়ে দেব।তখন টের পাবে শুয়ে থাকা কাকে বলে!
ভ্যালেন্টাইন ডে এসে গেল।সেদিন নদী কলেজ যাবে না ঠিক করেছে।কি হবে গিয়ে! সবাই তাদের পছন্দের বয় ফ্রেন্ড, লাভার নিয়ে ঘুরবে,আর সে একা। তার বুকের ভিতরটা চিনচিন করবে,তার থেকে এই ভালো,বাড়িতে থাকা।
কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা হয় কোথায়! সকাল বেলাতেই দাদা বলল,চল আজ তোকে কলেজে দিয়ে আসি।
আজ তো কলেজ যাব না।
কেন?
ক্লাস নাও হতে পারে।
কেন?
না মানে আজ স্যার ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করবেন।
সেটা আবার কি?এমন কোনও ডে আছে বলে তো শুনিনি।
নদী এবার বুকের মধ্যে সাহস এনে বলল,সবকিছু কি আমরা জানি? আমাদের জানার বাইরেও একটা জগত আছে।
দাদা খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে বলল,বেশ।তাহলে যাস না।বরং আজ রাজা এসেছে বহুদিন বাদে। ওকে বাড়িতে ডাকি।এখানেই খেতে বলি।
নদীর বুকটা ধক করে উঠল।এই সেই রাজাদা যাকে একেবারে আমীর খানের মতো দেখতে,নদীর দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকত নিষ্পলক দৃষ্টিতে। কিন্তু ওইটুকুই। তার বেশি আর এগোতে পারেনি।কিছুদিন পর স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে চলে গেছিল রাজাদা।
নদীও তার নিঃশ্বাস চেপে রেখেছিল বুকের মধ্যে।
আর দাদা আজ তাকেই বাড়িতে ডাকছে!কিন্তু রাজাদা এতদিনে নিশ্চয়ই রিলেশনে আছে।বাইরে তো আর এত কড়াকড়ি নেই। ভাবতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল তার।সে ঘরে ঢুকে জানলার দিকে তাকিয়ে রইল উদাস ভাবে।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এক সাধু ছিলেন।তিনি ভালোবাসার কথা বলতেন।তাই তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আর সেই দুঃখে দুটো পাখি আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল।সেই থেকে এই দিনটা বিশ্বজুড়ে তাঁর নামে পালিত হয়।এ দিন ভালোবাসার দিন।
আত্রেয়ীর বলা কথাগুলো তার কানের সামনে ঘুরপাক খেতে লাগল।
দুপুর হবার একটু আগেই রাজা দা এল।সে দূর থেকে উঁকি মেরে দেখল, রাজাদা এখন আরও সুন্দর আরও স্মার্ট। কিন্তু তার চোখ এখন আর তাকে খুঁজবে না নিশ্চয়ই, ভেবেই আবার ঘরে ঢুকে গেল সে।
ভাবতে লাগল প্রেমহীন এক জীবনের কথা। উনিশটা বসন্ত কেটে গেল,কেউ তাকে ভালোবাসল না।নিজের জীবনের প্রতি করুণা হল তার।নিজেকে প্রশ্ন করল,কি করব এ জীবন নিয়ে? ভালবাসাহীন, প্রেমহীন জীবনের কোনও মানে নেই।
আত্রেয়ী বলেছিল,এদিন লাভাররা পরস্পরকে কিছু উপহার দেয় ভালোবেসে।তাকে সামান্য চকলেট দেবার মতোও কেউ নেই। বাবা আর দাদা – এর বাইরে সে আর কোনও পুরুষের সান্নিধ্য পেল না।হয়তো একেবারেই বিয়ে হয়ে যাবে।যাকে চেনে না,জানে না তার সঙ্গে। সে তাকে হয়তো ভালোই বাসবে না।কিন্তু তার হাত পা বাঁধা। প্রেম করে খারাপ মেয়েরা… এই বোধ তার প্রতিটি ইচ্ছেকে রোধ করে দিল।
একটা পায়ের শব্দ। খুব আস্তে হলেও তার কানে এল।কিছুটা চেনা কিছুটা অচেনা শব্দ।সে চুপ করে যেমন দাঁড়িয়ে ছিল জানলার দিকে মুখ করে তেমনি ভাবেই রইল।
একটা হাত তার কাঁধে। সেই স্পর্শে তার শরীর কেঁপে উঠল।তবু সে পিছন ফিরল না।যা হচ্ছে হোক।সে ঘুরে দেখবে না।
পিছন থেকেই সেই স্বর বলে উঠল- নদী তুই আমার হবি?
কথাটা শুনে কেমন অসার লাগতে লাগল তার।কি শুনছে সে!দাদা জানলে…
ঠিক তখনই দাদা বলে উঠল,কি ভেবেছিলি,আমি জানি না কিছুই! নে আজ তোকে ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট দিলাম।
নদী কোনও কথা না বলে দৌড়ে গিয়ে দাদার বুকে মুখ লোকালো।
তারপর আজ পঁচিশ বছর হয়ে গেল।সে মিস নদী থেকে মিসেস নদী ওয়াইফ অফ রাজা।
প্রতি বছরের মতো এবারও রাজা তাকে ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট দিয়েছে। বিছানায় শুয়েই সে টের পেয়েছে রাজা সুটকেস গোছাচ্ছে। এই দিনটায় তারা দুজনে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন সেলিব্রেট করে দাদার সঙ্গে। কারণ রাজার মতে পৃথিবীর সেরা গিফ্ট তাকে তার বন্ধুই দিয়েছে।রিটার্ন গিফ্ট দিতেই হবে।
 
বিছানায় শুয়ে শুয়েই পোস্টের নিচে নিজের গল্পটা লিখল নদী।এ সময়ের প্রথিতযশা কথাশিল্পী।লিখল, যে কোনও সময়ে শুরু হতে পারে প্রেমের গল্পটা।ভালোবাসার মৃত্যু হয় না।তা বহমান স্রোতের মতোই। শুধু কখন স্রোতটা ভাসিয়ে দেবে ভালোবাসায়, তা আগাম জানা যায় না।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>