ভিঞ্চি দা কেমন হল

Reading Time: 2 minutes
।।উ পা স না স র কা র।।
আদি বোস আদতে তৈরি করেন নতুন এক ফাঁদ, ‘মানুষ মারার ফাঁদ’… তথাকথিত ‘সুপারহিউম্যান ‘ হয়ে ওঠার আস্ফালনে ঘটে চলে একের পর এক ‘কোল্যাটারাল জ্যামেজ’

অভিনয়– রুদ্রনীল ঘোষ, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার

পরিচালনা– সৃজিত মুখোপাধ্যায়

 

থ্রিলার, সিরিয়াল কিলার, অপরাধ প্রবণতা– সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ভিঞ্চি দা ছবিটির জঁর নির্বাচনে এই শব্দগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাইশে শ্রাবণ, চতুষ্কোণের পরে আবারও পরিচালক সিরিয়াল কিলারের গল্প শোনালেন সেলুলয়েডে… কেমন সে গল্প? গল্পের প্রধান মোটিফেই উঠে এসেছে দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎশের ‘উবারমেনশ’ তত্ত্ব। নিৎশের ভাবনাতেই এসেছে ঈশ্বরের মৃত্যু প্রসঙ্গ, এসেছে এই ধারণাও যে, ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটলে সমাজের নিচুতলার মানুষই বেছে নেন ন্যায়বিচারের পথ, হয়ে ওঠেন সুপারম্যান বা উবারমেনশ। সামাজিক ব্যবস্থাপনার তথাকথিত উচ্চবিত্তের প্রতি তখন তাঁদের প্রতিরোধের ভাষা তীব্রতর হয়ে ওঠে। কিন্তু এই ছবিতে উবারমেনশ আসলে কে?

ফাস্ট পার্সন ন্যারেশনে ছবিটির গল্প বলা হয়েছে। ন্যারেটর ভিঞ্চি দা (রুদ্রনীল ঘোষ) স্বয়ং। নাম থেকেই বোঝা যায় কথক নিজে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভক্ত, স্বপ্ন দেখেন বড় শিল্পী হওয়ার, কিন্তু স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যায়। নিখুঁত প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টিস্ট হলেও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সে কোণঠাসা। উপযুক্ত কাজের অভাব, ক্ষোভ, হতাশার মধ্যেও প্রেমিকা জয়া (সোহিনী সরকার)-র প্রতি ভালবাসায় কোনও খামতি নেই। গল্প এগোচ্ছিল বেশ! তবে গল্পের প্লট এতটা লিনিয়ার হলে চলে! আর তা ছাড়া গল্পে হিরো থাকলে অ্যান্টিহিরো কিংবা কখনও-সখনও একজোড়া হিরোর কথাও ভাবা যেতে পারে। যাই হোক, গল্পে তখন আদি বোসের (ঋত্বিক চক্রবর্তী) প্রবেশ। সিনেমায় প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার প্রস্তাবে ভিঞ্চি দা-কে রাজি করালেও, স্বরচিত এই চক্রবূহ্যের অন্তিম পরিণাম কী এবং কোথায়, ছবির স্বার্থে তা পরদার জন্যই তোলা রইল।

রুদ্রনীল এবং ঋত্বিক উভয়েরই অভিনয় যেন একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রতিবিম্বে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার বা বিভাজনের দৃশ্যটি এক কথায় তুখড়। ডি সি ডি ডি পোদ্দার চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্যর অভিনয়কেও বেশ ভালই বলতে হবে। আর সবশেষে ছবির ওপেন এন্ডেড প্যাটার্ন পরবর্তী ক্ষেত্রে নতুন প্লট তৈরি করতে পারবে বলেই মনে হয়।

ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও গল্পের পক্ষে বেশ ভাল। তবে সিনেমা শেষে যে প্রশ্নটা থেকেই যায়, তা হল, ন্যায়বিচারের ভাষা আসলে কী? নিৎশের দার্শনিক ভাবনার ভুল ব্যাখ্যাই কি কোথাও গিয়ে সামাজিক ক্ষতগুলোকে আরও বাড়িয়ে তোলে? ঠিক যেমন হিটলার নিৎশের ভাবাদর্শে প্রভাবিত হয়ে ঘটিয়ে ফেলেছিলেন একের পর এক ‘নরমেধ যজ্ঞ’!

কৃতজ্ঞতাঃ উনিশকুড়ি

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>